এই ব্লগটি সন্ধান করুন

ভৌতবিজ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ভৌতবিজ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২

জলের কয়টি অবস্থা থাকে ও কী কী ?

উত্তর। জলের তিনটি অবস্থা থাকে।

যথা— 

  • কঠিন অবস্থা — বরফ,
  • তরল অবস্থা — জল,
  • গ্যাসীয় অবস্থা— বাষ্প।

জেনে রাখো : পদার্থের চতুর্থ অবস্থা হল পদার্থের প্লাজমা (Plasma) অবস্থা— মহাবিশ্বে 99% পদার্থই এই অবস্থায় থাকে। আবার বোস-আইনস্টাইনের কনডেনসেশান তত্ত্ব অনুযায়ী পদার্থের পঞ্চম অবস্থাটি হল Super cooled অবস্থা বা বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট (BE Condensate) অবস্থা।

নিউক্লীয় বল (Nuclear Force) বল কী? নিউক্লীয় বলের (Nuclear Force) বৈশিষ্ট্য কী? এর উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর | 

নিউক্লীয় বল (Nuclear Force) : পরমাণুর নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে ক্রিয়াশীল যে আকর্ষণ বলের জন্য প্রোটন ও নিউট্রন নিউক্লিয়াসের মধ্যে আবদ্ধ থাকে, তাকে নিউক্লীয় বল (Nuclear Force) বলে।

নিউক্লীয় বলের (Nuclear Force) বৈশিষ্ট্য কী?

  1. নিউক্লীয় বলের অস্তিত্ব শুধুমাত্র নিউক্লিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
  2. এই বলের শুধুমাত্র আকর্ষণ ক্ষমতা আছে, বিকর্ষণ ক্ষমতা নেই।
  3. এই বল কেবলমাত্র নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে 3 ক্রিয়াশীল থাকে।

পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক তড়িগ্রস্ত কণা প্রোটন এবং নিস্তড়িৎ কণা নিউট্রন একইসঙ্গে অবস্থান করে, এই প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে অবিরাম গতিতে চার্জ বিনিময় হয় ফলে প্রোটন নিউট্রনে ও নিউট্রন প্রোটনে পরিণত হয়। এই রূপান্তর এতই দ্রুত হয়, যে ধনাত্মক তড়িগ্রস্ত প্রোটন কণার মধ্যে কুলম্বীয় বিকর্ষণ বল কার্যকরী হয় না। পরিবর্তে প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে এক তীব্র আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। যার ফলে প্রোটন ও নিউট্রন একসঙ্গে নিউক্লিয়াসে অবস্থান করতে পারে এবং পরমাণুর নিউক্লিয়াসটি সুস্থিত হয়। এই বলের মান মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলের প্রায় 1040 গুণ। এই বলের কার্যক্ষমতা প্রায় 1 ফেমটোমিটার (fm, বা 1.0 × 10 − 15 মিটার) মিটারের মধ্যে ক্রিয়াশীল থাকে।

জাপানি বিজ্ঞানী ইউকাওয়ার মতে প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে পাই মেসন কণার আদানপ্রদান হয়। এর ফলে নিউক্লীয় বলের সৃষ্টি হয়।

বুধবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২২

মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক ও ভরসংখ্যার সংজ্ঞা দাও। এদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

উত্তর। 

পরমাণু ক্রমাঙ্ক (Atomic Number): মৌলের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত মোট প্রোটন সংখ্যাকে তার কোনো পরমাণু ক্রমাঙ্ক বলে। যেমন – 6C12 মৌলে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যা 6টি। সুতরাং, এর পরমাণু ক্রমাঙ্ক 6।

ভরসংখ্যা (Mass Number) : কোনো মৌলের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার সমষ্টিকে ওই মৌলের ভরসংখ্যা বলে। যেমন – 6C12 মৌলে 6টি প্রোটন ও 6টি নিউট্রন আছে। সুতরাং, এর ভরসংখ্যা (6 + 6) = 12। অর্থাৎ, ভরসংখ্যা = (প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা)।


পারমাণবিক সংখ্যা ও ভরসংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক :

ধরি, কোনো মৌলের পরমাণুতে p সংখ্যক প্রোটন, n সংখ্যক নিউট্রন আছে। তাহলে মৌলের ভরসংখ্যা M হলে, M = (p + n) । আবার, মৌলের প্রোটন সংখ্যা (p) = পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক।

সুতরাং, ভরসংখ্যা = (পারমাণবিক সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা)।

শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

তরলের স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) কাকে বলে?এটি কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়?

উত্তর।
স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো তরল পদার্থের স্ফুটন শুরু হয় এবং সমগ্র তরল বাষ্পে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত সেই উষ্ণতা স্থির থাকে, তাকে ওই তরলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক বলে।

তরলের স্ফুটনাঙ্ক নিম্নলিখিত বিষয়ের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়—
(i) তরলের প্রকৃতি : তরল পদার্থটি কী ধরনের, তার ওপর তরলের স্ফুটনাঙ্ক নির্ভর করে। উদ্বায়ী তরলের স্ফুটনাঙ্ক কম হয়। 

(ii) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : তরলে কঠিন অপদ্রব্য দ্রবীভূত অবস্থায় থাকলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়। যেমন—লবণ মিশ্রিত থাকায় সমুদ্রজলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C থেকে বেড়ে প্রায় 110°C হয়। আবার গ্যাসীয় অপদ্রব্য উপস্থিত থাকলে, তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। তরল অপদ্রব্যের ক্ষেত্রে মিশ্রণের স্ফুটনাঙ্ক উপাদান তরল দুটির স্ফুটনাঙ্কের মাঝামাঝি হয়।

(iii) তরলের উপরিস্থিত চাপ : তরলের উপরিস্থিত মাধ্যম দ্বারা প্রযুক্ত চাপ, প্রমাণ চাপ অপেক্ষা বেশি হলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি হয়। যেমন— চাপ বৃদ্ধিতে বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক প্রায় 1°C বৃদ্ধি পায়। প্রেশার কুকার, অপারেশনে ব্যবহৃত ছুরি, কাঁচি জীবাণুমুক্ত করার কাজে লাগানো হয়।

একইভাবে তরলের ওপর চাপ হ্রাস পেলে ওই তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায় অর্থাৎ, তরলটি স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা কম উষ্ণতায় ফোটে। এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ঘনীভূত দুধ তৈরি করা হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে বায়ুচাপ কম হওয়ায় জল তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা অনেক কম উষ্ণতায় ফুটতে শুরু করে। যেমন— দার্জিলিং-এ জল প্রায় 93.6°C উন্নতায় ফোটে, ফলে খাদ্যদ্রব্য ভালো সিদ্ধ হয় না। হাড়ের ধাত্রে ও দাঁতের এনামেল, ডেনটিন ও সিমেন্টামে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস মৌলগুলির যৌগ কেলাসাকারে জমা থাকে।

গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন কেন? 

উত্তর।
চাপ বাড়লে বা কমলে বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের গলনাঙ্কের মান পরিবর্তিত হয়। 76 সেমি পারদস্তম্ভের চাপে কোনো পদার্থের গলনাঙ্ক নির্ধারণ করলে তা স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হবে। কিন্তু, চাপ ওই নির্দিষ্ট মানের বেশি বা কম হলে গলনাঙ্ক আর স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হয় না। এজন্য গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন।

অনুরূপ প্রশ্ন : কোনো তরলের স্ফুটনাঙ্ক উল্লেখ করার সময় চাপ উল্লেখ করা উচিত কেন?


প্রশ্ন: বৈদ্যুতিক লাইনে ব্যবহৃত ফিউজের গলনাঙ্ক কম হওয়া দরকার কেন?

উত্তর: বৈদ্যুতিক লাইনের ভোল্টেজ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে অনেক বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হয়। ফলে, তার উত্তপ্ত হয়ে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফিউজ তারের উপাদানের গলনাঙ্ক কম হয়। সেজন্য, ওই তার অল্প উত্তাপে ফিউজ গলেে গিয়ে তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।

পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা আলোচনা করো।

উত্তর। পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্কের মান প্রত্যক্ষভাবে দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে–(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি, (ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপ।

(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের সঙ্গে যদি অন্য কোনো পদার্থ অপদ্রব্য হিসেবে মেশানো হয় তবে অপদ্রব্যের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক স্বাভাবিক গলনাঙ্কের তুলনায় কমে যায়।

উদাহরণ: (a) সোনার সঙ্গে খাদ মেশালে সোনার গলনাঙ্ক কমে। (b) বরফের সঙ্গে লবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মেশালে মিশ্রণের উষ্ণতা 0°C অপেক্ষা অনেক কম (প্রায় – 23°C) হয়। (c) ফিউজ তারে ব্যবহৃত রোজ মেটাল (Pb + Sn + Bi) একটি সংকর ধাতু, যার গলনাঙ্ক প্রায় 95°C যদিও এর উপাদান ধাতুগুলির কোনোটিরই গলনাঙ্ক 210°C-এর কম নয়।


(ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপের প্রভাব : গলনাঙ্কের মান বায়ুমণ্ডলীয় চাপের দ্বারা দু-ভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকেে। 

(a) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি হয় চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ, সেগুলি স্বাভাবিক গলনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি উষ্ণতায় গলে। এক্ষেত্রে, গলনের ফলে যেহেতু আয়তন বৃদ্ধি হয়, তাই চাপ বৃদ্ধিতে গলন প্রক্রিয়া বাধা পায়। সুতরাং, অবস্থান্তর ঘটানোর জন্য উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ গলনাঙ্ক বাড়ে।
উদাহরণ : তামা, রুপো, মোম ইত্যাদি। এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধিতে মোমের গলনাঙ্ক 0.04°C বৃদ্ধি পায়।


(b) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন হ্রাস পায়, চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক হ্রাস পায়। এজাতীয় পদার্থগুলির ক্ষেত্রে, গলনের ফলে আয়তন যেহেতু হ্রাস পায় তাই চাপ বৃদ্ধিতে তাদের আয়তন সংকোচন সহজে হয় অর্থাৎ, গলনাঙ্ক কমে।
উদাহরণ : বরফ, ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি।

লীনতাপ (Latent heat) কাকে বলে? এর প্রকারভেদগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর।
লীনতাপ (Latent heat): একক ভরের কোনো পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ বা অপসারণ করতে হয়, তাকে ওই পদার্থের অবস্থান্তরের লীনতাপ বা লীনতাপ বলা হয়।

প্রকারভেদ: অবস্থাস্তরের সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করে লীনতাপের চার রকম  বর্তমান।
(i) গলনের লীনতাপ,
(ii) কঠিনীভবনের লীনতাপ,
(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ ও
(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ।

(i) গলনের লীনতাপ (Latent heat of fusion) : প্রমাণ চাপে কোনো কঠিন পদার্থের একক ভরের উয়তা স্থির রেখে সমগ্র কঠিন পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োজন হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই পদার্থের গলনের লীনতাপ বলে। যেমন—বরফ গলনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম বা 336× 10 জুল/কেজি।

(ii)কঠিনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of solidification) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো তরল পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরল পদার্থকে কঠিনে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের কঠিনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন— জলের কঠিনীভবনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম।

(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ (Latent heat of vaporization) : প্রমাণ চাপে কোনো তরল পদার্থের একক ভরের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরলকে বাষ্পে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকেই ওই পদার্থের বাষ্পীভবনের লীনতাপ বলা হয়। যেমন— বিশুদ্ধ জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম বা মতান্তরে 540 ক্যালোরি/গ্রাম বা 2268 × 103 জুল/কেজি।

(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of condensation) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো গ্যাসীয় পদার্থের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র গ্যাসীয় পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের ঘনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন—জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম।

জেনে রাখা ভালো: লীনতাপ গ্রহণ বা বর্জনে অণুগুলির বিন্যাস পরিবর্তিত হয়। এই তাপ পদার্থের উয়তা বাড়ায় না বা কমায় না, তাই থার্মোমিটার দ্বারা লীনতাপ মাপা যায় না। ক্যালোরিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে লীনতাপ পরিমাপ করা হয়।

একটি সক্রিয়তামূলক কাজের মাধ্যমে দেখাও যে, চাপ হ্রাসে তরলের স্ফুটনাঙ্ক হ্রাস পায়।

উত্তর।
নিম্নলিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে দেখানো যায়— চাপ কমলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে।

উপকরণ : (i) একটি ইনজেকশন সিরিঞ্জ, (ii) পরিমাণমতো ফুটন্ত জল, (iii) জল গরম করার পাত্র, (iv) বার্নার।

পরীক্ষা পদ্ধতি : (i) পাত্রে পরিমাণমতো জল নিয়ে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করা হল। (ii) জল ফুটতে শুরু করার ঠিক আগের মুহূর্তে ইনজেকশন সিরিঞ্জের মুখটি জলে ডুবিয়ে পিস্টনটি নিজের দিকে টানা হল, যাতে কিছু পরিমাণ উষ্ণ জল সিরিঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে। এই অবস্থায় সিরিঞ্জের অভ্যন্তরে থাকা জলের উষ্ণতা স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অর্থাৎ, 100°C অপেক্ষা কম হয়। (iii) এবার সিরিঞ্জের মুখটি প্রদর্শিত চিত্রের মতো আঙুল দিয়ে চেপে বন্ধ করে সিরিঞ্জের পিস্টন পুনরায় পিছনের দিকে টেনে আনা হল। (iv) এই অবস্থায় জল ফুটতে শুরু করবে। কারণ আঙুল দিয়ে বন্ধ রাখার জন্যে ভেতরের চাপ কমে গেছে। 
সিরিঞ্জ


বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

বরফের চাঁই খোলা অবস্থায় রাখলে তা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় কেন?

উত্তর।
বরফের চাঁই-এর সংলগ্ন বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় এবং বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকে। বরফের চারপাশে এই ভাসমান জলকণাগুলিকেই বরফখণ্ড থেকে নির্গত ধোঁয়া বলে মনে হয়।

তাপ সঞ্চালন কাকে বলে? কী কী পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়?

উত্তর।

তাপ সঞ্চালন (Transmission of heat) : উন্নতর স্থান থেকে অপেক্ষাকৃত কম উস্ন স্থানে তাপ সঞ্চালিত হবার ঘটনাকে তাপ সঞ্চালন বলে। তাপ সঞ্চালন তিনভাবে হতে পারে, যথা—পরিবহণ, পরিচলন ও বিকিরণ।

বাতাসে ধূলিকণার উপস্থিতির সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্পর্ক আছে কি?

উত্তর।
বাতাসে ধূলিকণা উপস্থিত থাকে বলেই মেঘ সৃষ্টি তথা বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। সূর্যের তাপে বড়ো জলাশয়, নদী, সমুদ্রের উপরিতল থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুতে মিশে যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু হালকা হয়ে উপরে ওঠে এবং একসময় বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে এলে ঘনীভবনের ফলে জলবিন্দুতে পরিণত হয় ও বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভেসে বেড়ায়। একেই মেঘ বলে। তাই ধূলিকণা বাতাসে না থাকলে মেঘের অস্তিত্ব থাকত না, ফলে বৃষ্টিও হত না।

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থাকলে শিশির জমে না কেন?

উত্তর।

মেঘমুক্ত আকাশ শিশির জমার পক্ষে উপযুক্ত। কারণ— মেঘের অনুপস্থিতিতে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়। কিন্তু মেঘলা আকাশে ভূপৃষ্ঠ দ্বারা বিকীর্ণ তাপ মেঘের স্তরে প্রতিফলিত হয়ে আবার ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। ফলে, ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বাতাসের উদ্ভূতা কমে শিশিরাঙ্কের নীচে নামতে পারে না। ফলে সহজে শিশির জমে না।

ভালো শিশির পড়ার শর্ত কী?

উত্তর।

ভালো শিশির পড়ার শর্ত হল—
  1. আকাশ পরিষ্কার ও মেঘহীন থাকবে
  2. বায়ুর আর্দ্রতা বেশি হতে হবে,
  3. বাতাস স্থির থাকতে হবে,
  4. তাপের ভালো বিকিরক ও কুপরিবাহী পদার্থের সংস্পর্শে থাকা বস্তু
  5. ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বস্তুর উপস্থিতি।
জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্ক অপেক্ষা কম হলে কী হবে?

উত্তর।
জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ুর উন্নতা শিশিরাঙ্কের নীচে এলে ওই উন্নতার বায়ু আরও কম জলীয়বাষ্প ধরে রাখতে পারবে। জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় রূপান্তরিত হবে। ফলে শিশির, কুয়াশা ইতাদি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটবে।

সন্ধেবেলা শিশির পড়ে না, অথচ গভীর রাতে বা ভোরের দিকে শিশির পড়ে কেন?

উত্তর।
সারাদিন সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ গরম হয় এবং সংলগ্ন বায়ুও গরম হয়। ভূপৃষ্ঠ ঠান্ডা হতে কিছুটা সময় লাগে, সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই ঠান্ডা হয় না। ফলে, ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নামে না, তাই সন্ধেবেলায় শিশির পড়ে না। গভীর রাতে বা ভোরের দিকে ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়। ফলে বায়ুর উষ্ণতা একসময় শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে যায় ও শিশির পড়ে।

শরৎকালের ভোরে খোলা আকাশের নীচে রাখা লোহা ও কাঠের চেয়ারের মধ্যে কোনটিতে প্রথম শিশির জমবে?

উত্তর।
তাপের কুপরিবাহী বস্তুর উপর শিশির দ্রুত জমে। কারণ— এক্ষেত্রে বস্তু দ্রুত তাপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় সংলগ্ন বায়ু সহজে শীতল হয় এবং উয়তা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে শিশির পড়ে। কাঠ কুপরিবাহী পদার্থ হওয়ায় কাঠের উপর প্রথম শিশির দেখা যাবে।

মেঘলা রাতে ভালো শিশির পড়ে না কেন?

উত্তর।
আকাশ মেঘলা থাকলে, ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর থেকে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর ভেদ করে যেতে পারে না, বরং বেশিরভাগ তাপই মেঘ দ্বারা প্রতিফলিত হয়। ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী বায়ুস্তরের উয়তা সহজে শিশিরাঙ্কের নীচে নামতে পারে না। তাই মেঘলা রাতে ভালো শিশির পড়ে না।

বড়ো বড়ো শহরে বা শিল্পাঞ্চলে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয় কেন?

উত্তর।
বড়ো বড়ো শহরে বা শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত বায়ুতে ধুলো ছাড়াও কার্বন, সালফার ইত্যাদির কণা থাকে। এ ছাড়া, কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়াও বায়ুতে এসে মেশে। ফলে, ওই সব অঞ্চলে কুয়াশা হলে তা ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা মিলিয়ে যায় কেন?

উত্তর। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়, ফলে ভূত্বক সংলগ্ন বায়ুর উয়তাও বাড়ে। বর্ধিত উন্নতায় বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ু পুনরায় অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। উত্তপ্ত বায়ু থেকে লীনতাপ সংগ্রহ করে কুয়াশা হিসেবে ভাসমান জলবিন্দুগুলি আবার বাষ্পে পরিণত হয়। তাই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা মিলিয়ে যায়৷

জেনে রাখা ভালো: উৎপত্তিগতভাবে অভিন্ন হওয়ায় মেঘ ও কুয়াশার মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। প্রাকৃতিক ঘনীভবনের ফলেই দুইয়ের উৎপত্তি। শুধুমাত্র তফাত এই যে, কুয়াশার তুলনায় মেঘ বায়ুমণ্ডলের অনেক উপরের স্তরে অবস্থান করে। প্রকৃতপক্ষে মেঘ হল ঊর্ধ্বাকাশের কুয়াশা।

তোমাকে 50°C উষ্ণতার সম্পৃক্ত নুনের দ্রবণ দেওয়া হল। তুমি ওই দ্রবণের উষ্ণতা ধীরে ধীরে কমাতে থাকলে। কী হবে বলো? 

উত্তর:সম্পৃক্ত নুনের দ্রবণের উয়তা কমাতে থাকলে ওই দ্রবণে নুনের দ্রাব্যতা কমে যাবে। ফলে, কিছুটা নুন থিতিয়ে পড়বে। তবে দ্রবণটি এই অবস্থাতেও সম্পৃক্ত থাকবে।

কোনো মহাকাশচারী 20°C উষ্ণতায় জল ফ্লাস্কে করে চাঁদের পৃষ্ঠে নিয়ে গিয়ে ওই জল একটি বিকারে ঢাললে তিনি কী দেখবেন?

উত্তর।
চাঁদে বায়ুমণ্ডলে না থাকায় সেখানে বায়ুচাপ শূন্য। বায়ুশূন্য স্থানে জলের স্ফুটনাঙ্ক তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা অনেক কম। তাই মহাকাশে থাকাকালীন বিকারে জল ঢালার সময় জলের উপর চাপ শুধুমাত্র 20°C উষ্মতার জলীয়বাষ্প চাপের সমান হয়, যা অতি নগণ্য। এই উপেক্ষণীয় চাপে জল দ্রুত ফুটে বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে এবং বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় লীনতাপ বিকারের জল থেকেই সংগ্রহ করে। ফলে বিকারের অবশিষ্ট জলের উষ্ণতা দ্রুত হ্রাস পায় এবং একসময় তা বরফে পরিণত হয়।

রান্নার সময় পাত্রের মুখে ঢাকনা দিয়ে চেপে রান্না করলে খাদ্যবস্তু তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যায় কেন?

উত্তর: পাত্রের মুখে ঢাকনা দিয়ে রাখলে তাপের ফলে উৎপন্ন জলীয়বাষ্প পাত্রের মধ্যেই জমা হয়, বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে না। আর জলীয়বাষ্প যত বাড়ে, বাষ্পচাপও তত বাড়ে। ফলে জলের স্ফুটনাঙ্কও বেড়ে যায় ও খাদ্যবস্তু তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যায়।
যেমন : প্রেশার কুকার

একটি জলপূর্ণ বিকার টেবিলের উপর রেখে বিকারের জলে বাষ্প চালনা করলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপে জল ফোটানো যাবে কি?

উত্তর: এক্ষেত্রে বিকারের জল, সরবরাহ করা বাষ্প থেকে তাপগ্রহণ করে নিজের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। এভাবে যে মুহূর্তে জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অর্থাৎ, 100°C হবে তখন জল ও বাষ্প উভয়ের উষ্ণতা সমান হয়ে যাওয়ায় তাপীয় আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ওই জল বাষ্প থেকে আর তাপ গ্রহণ করতে পারবে না। তাই ওই জল 100°C উষ্ণতায় থেকে যাবে, ফুটবে না ৷

প্রেশার কুকারে খাদ্যবস্তু তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয় কেন?

উত্তর: চাপ বাড়ালে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বাড়ে-প্রেশার কুকারে এই নীতি কাজে লাগানো হয়। প্রেশার কুকারে জলসহ খাদ্যবস্তু নিয়ে ঢাকনাটি বায়ু নিরুদ্ধভাবে বন্ধ করে তাপ দেওয়া হয়। এর ফলে উৎপন্ন জলীয়বাষ্প পাত্রের মধ্যে জমা হতে থাকে ও বাষ্পচাপ ক্রমশ বাড়ে। এখন পিন ভাল্বটিকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে ভিতরের বাষ্পচাপ 2 বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সমান হয়। এই চাপে জলের স্ফুটনাঙ্ক প্রায় 120°C হয়। এই উচ্চ তাপমাত্রায় ফুটন্ত জলে খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয় ও রান্না দ্রুত হয়।

চাপ বাড়ালে স্ফুটন প্রক্রিয়া বাধা পাবে, নাকি স্ফুটন প্রক্রিয়ার সাহায্য হবে?

উত্তর।
স্ফুটনে তরল বাষ্পীভূত হয়। অর্থাৎ, আয়তনে প্রসারিত হয়। চাপ বাড়ালে আয়তন প্রসারণ বাধা পাবে। তাই চাপ বাড়ালে স্ফুটন প্রক্রিয়া বাধা পাবে এবং স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যাবে।

মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১

বরফ গলনের লীনতাপ 80 ক্যালোরি/গ্রাম হলেও জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম এই পার্থক্যের কারণ কী ?

উত্তর। কোনো পদার্থের কঠিন থেকে তরলে রূপান্তরিত হওয়ার সময় আন্তরাণবিক ব্যবধান বৃদ্ধি যতটা হয়, তরল থেকে গ্যাসে পরিণত হলে ওই ব্যবধান অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, দ্বিতীয়ক্ষেত্রে এই আন্তরাণবিক আকর্ষণের বিরুদ্ধে অনেক বেশি কৃতকার্য করতে হয়। এই কার্যের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয় লীনতাপ। তাই গলন অপেক্ষা বাষ্পীভবনের লীনতাপের মান যে-কোনো পদার্থের ক্ষেত্রেই বেশি হয়।

শীতকালে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগানো হয় কেন?

উত্তর:
শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকে। জলীয়বাষ্পের ঘাটতি পূরণ করার জন্য বায়ুমণ্ডল আমাদের দেহের উন্মুক্ত মাংসল অংশ, যেমন ঠোঁট, চামড়া ইত্যাদি থেকে জলীয়বাষ্প শোষণ করে। ফলে অংশগুলির আর্দ্রতা কমে যায় এবং অংশগুলি শুষ্ক ও খসখসে হয়ে পড়ে। তাই ঠোঁট ফাটে। গ্লিসারিন অনুদ্বায়ী তরল বলে ফাটা ঠোটে বা চামড়ায় লাগালে তা বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প শোষণ করে এবং ঠোট থেকে জলীয়বাষ্পের বাষ্পায়নে বাধা দেয়। ফলে ঠোঁট ও চামড়ার আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং সেগুলি ফেটে যায় না বা খসখসে হয় না।


গ্রীষ্মকালে কুকুর জিভ বের করে হাঁপায় কেন?

উত্তর:

কুকুরের স্বেদগ্রন্থি(ঘর্মগ্রন্থী) তার জিভে থাকে। শারীরিক পরিশ্রমে বিক্রিয়াজাত পদার্থ হিসেবে উৎপন্ন জল বা রেচনের মাধ্যমে বিপাকজাত পদার্থ হিসেবে উৎপন্ন জলীয় পদার্থ (ঘাম) অপসারণের জন্য কুকুর তার জিভ বাইরে বের করে রাখে। ওই জল জিভ সংলগ্ন অংশ থেকে প্রয়োজনীয় লীনতাপ শোষণ করে বাষ্পীভূত হয়, ফলে দেহের অতিরিক্ত তাপ অপসারিত হয়, যা শরীরের উষ্ণতা কমায়। এতে কুকুর আরাম বোধ করে।


গরম চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করার জন্য তুমি কী করবে? কেন করবে?

উত্তর। গরম চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করার জন্য ডিশে বা প্লেটে ঢেলে নিতে হবে। এতে চায়ের উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেড়ে যাওয়ায় বাষ্পায়ন দ্রুত হবে। বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীনতাপ মুলত গরম চা থেকেই সংগৃহীত হয় বলে চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যাবে।

গরমকালে ঘামে ভেজা শরীরে হাওয়ার সামনে দাঁড়ালে আরাম হয় কেন? সেই সময় ঘাম কি শুকিয়ে যায়? ঘামের এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য কী দরকার? এবং তা কোথা থেকে পায়? 

উত্তর।
গরমকালে ঘামে ভেজা শরীরে হাওয়ার সামনে দাঁড়ালে দেহে শীতলতার অনুভূতি হয়। তাই আরাম লাগে। সেই সময় ঘাম শুকিয়ে যায় অর্থাৎ, বাষ্পীভূত হয়। ঘামের এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য লীনতাপ দরকার।
ঘাম বাষ্প হওয়ার জন্য যে লীনতাপের দরকার হয়, ঘাম তা দেহ থেকে শোষণ করে।

বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১

বর্ষাকালে ভিজে জামাকাপড় শুকোতে দেরি হয়। কিন্তু শীতকালে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় কেন?

উত্তর:
বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় বাষ্পীভবনের হার কমে যায় তাই ভিজে জামাকাপড় শুকোতে দেরি হয়। কিন্তু শীতকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্প কম থাকে বলে বাষ্পীভবনের হার বেশি হয়। তাই ভিজে জামাকাপড় থেকে জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে, শীতকালে ভিজে জামাকাপড় বর্ষাকালের তুলনায় তাড়াতাড়ি শুকোয় ৷

দুটি একই মাপের কাপড়কে একইরকমভাবে জলে ডোবাও। দুটি টুকরোকেই একইরকমভাবে নিংড়ে নাও। এবার একটি কাপড়ের টুকরোকে কয়েকটি ভাজ করে শুকোতে দাও। তার পাশে অন্য কাপড়ের টুকরোটিকে না ভাঁজ করে সম্পূর্ণ খুলে শুকোতে দাও। কোন্ কাপড়টি আগে শুকিয়ে গেল? ঘটনাটি থেকে কী সিদ্ধান্ত নিতে পারো?

উত্তর:
সম্পূর্ণ খুলে শুকোতে দেওয়া কাপড়টি আগে শুকিয়ে যাবে।

ঘটনাটি থেকে বলা যায়, জল তার উপরিতল থেকে বাষ্পে পরিণত হয়। তরলের উপরিতলের ক্ষেত্রফল যত বাড়ে তরলের বাষ্পীভবন তত দ্রুত হয়। একারণে ভাজ করা কাপড়টি পরে শুকাবে, কারণ তার উপরিতলের ক্ষেত্রফল কম। আর খুলে শুকোতে দেওয়া কাপড়টি দ্রুত শুকোবে, কারণ তার উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেশি।

পারদ থার্মোমিটারের কুণ্ডে ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখলে কী দেখা যায়? 

উত্তর। থার্মোমিটারের কুণ্ডে ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখলে ভিজে কাপড়ের জল কুণ্ড ও কুণ্ডে থাকা পারদ থেকে লীনতাপ শোষণ করে বাষ্পীভূত হয়। ফলে, পারদের উষ্ণতা কমে গিয়ে পারদসূত্র নীচে নেমে আসে।


একটি পাত্রে জল নিয়ে তা উনুনে বসিয়ে ফোটাতে থাকলে কী দেখা যাবে? কেন? 

উত্তর:

একসময় সমস্ত জল ফুটতে ফুটতে শেষ হয়ে যায় ও পাত্রটি খালি হয়ে যায়।
উনুনে বসিয়ে পাত্রের জল ফোটালে সমস্ত জল ফুটতে ফুটতে বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। তাই পাত্রটি খালি হয়ে যায়।


বাষ্পায়নের ফলে শীতলতার উৎপত্তির কারণ কী?

উত্তর:
তরল বাষ্পে রূপান্তরিত হওয়ার সময় তাকে বাষ্পীভবনের লীনতাপ সরবরাহ করতে হয়। বাষ্পায়নের সময় বাইরে থেকে তাপ সরবরাহের সুযোগ না থাকায় তরল নিজ দেহ বা সংলগ্ন পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় লীনতাপ সংগ্রহ করে বাষ্পীভূত হয়। তাই তরল বা তার কাছাকাছি অংশের বায়ু বা অন্যান্য বস্তু শীতল হয়ে পড়ে।


পারিপার্শ্বিক উষ্ণতা 0°C বা তার কম হলে বিশুদ্ধ বরফ গলতে পারে না কেন(ধরে নেওয়া যাক অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত আছে)? 

উত্তর:
বিশুদ্ধ বরফ গলনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম। বরফ গলার সময় এই প্রয়োজনীয় লীনতাপ পরিপার্শ্ব থেকে গ্রহণ করে। কিন্তু পরিপার্শ্বের উষ্ণতা 0°C বা তার কম হলে বরফ লীনতাপ সংগ্রহ করতে পারে না। তাই বরফ গলতে পারে না।


বরফ টুকরোর মধ্যে গর্ত করে জল রাখলে ওই জল জমে বরফ হয় না কেন?

উত্তর:
বরফ টুকরোর মধ্যে গর্ত করে জল রাখলে, ওই গর্তে ঢালা জল এবং বরফের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য থাকায়, ওই জল তাপ বর্জন করে শীতল হবে এবং সেই তাপ গ্রহণ করে কিছু পরিমাণ বরফ গলবে। এই তাপীয় আদানপ্রদানের ফলে, উষ্ণতা কমতে কমতে যখন 0°C হয়, তখন জল আর তাপ বর্জন করতে সক্ষম হবে না, কারণ উষ্ণতা সমান হলে তাপীয় সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাপের আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় 0°C উষ্ণতায় থাকা জল কঠিনে অর্থাৎ, বরফে রূপান্তরিত হতে প্রয়োজনীয় লীনতাপ সংলগ্ন পরিবেশে অর্থাৎ বরফে বর্জন করতে ব্যর্থ হবে, ফলে ওই জল জমে বরফ হয় না।


সূর্য থেকে পৃথিবীতে কোন্ পদ্ধতিতে তাপ আসে? তোমার সিদ্ধান্তের কারণ কী?

উত্তর:

সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে বিকিরণ পদ্ধতিতে। সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে বেশিরভাগ অংশেই কোনো জড় মাধ্যমের অস্তিত্ব নেই। একমাত্র বিকিরণ পদ্ধতিতেই কোনো মাধ্যম ছাড়া তাপ সঞ্চালিত হয় ৷ পরিবহণও পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যমের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে, সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে বিকিরণ প্রণালীতে।


আইসক্রিমের বাক্সে বা রেফ্রিজারেটরের(Refrigerator) দেয়ালে দুটি স্তর থাকে কেন?

উত্তর:
আইসক্রিমের বাক্স বা রেফ্রিজারেটরের(Refrigerator) বহিরাবরণ দুই দেয়ালবিশিষ্ট হয়। এই দুই দেয়ালের মধ্যবর্তী অংশ তাপের কুপরিবাহী কাচতন্তু (Glasswood) দ্বারা পূর্ণ থাকে। কাচতন্তুর মধ্যবর্তী ফাকা অংশে থাকে বায়ু। বায়ু ও কাচতন্তু উভয়ই তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় পরিবহণ বা পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ সহজে বাক্স বা রেফ্রিজারেটরের ভিতর আসতে পারে না। তাই আইসক্রিম সহজে গলে যায় না এবং রেফ্রিজারেটরের অভ্যন্তরও দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠান্ডা থাকে।



শীতপ্রধান দেশগুলিতে গ্রিন হাউসে (Green house) গাছপালা সতেজ থাকে কেন? 

উত্তর:
শীতপ্রধান দেশগুলিতে শৌখিন গাছপালা, সবজি, ফল ইত্যাদি সতেজ রাখার জন্য কাচের ঘর বা গ্রিন হাউসে(Green House) রাখা হয়। কাচ মাধ্যমে তাপীয় বিকিরণ ঘটায় দিনেরবেলায় সূর্য থেকে আসা ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য কাচ ভেদ করে ঘরের ভিতর আসে ও গাছপালা সালোকসংশ্লেষ করে। কিন্তু ঘরের ভিতরে থাকা গাছপালা অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণতায় বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাপ বিকিরণ করে যা কাচ ভেদ করে বাইরে যেতে পারে না, ফলে ঘরের ভেতর যথেষ্ট গরম থাকে এবং উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকে। এ কারণে গ্রিন হাউসের মধ্যে গাছপালা সতেজ থাকে।

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

মাছ সংরক্ষণের জন্য বিশুদ্ধ বরফ না দিয়ে নুন-মেশানো বরফ দেওয়া হয় কেন?

উত্তর:
বিশুদ্ধ বরফের উষ্ণতা 0°C। কিন্তু বরফ ও নুন 3:1 ওজন অনুপাতে মেশালে উৎপন্ন মিশ্রণের উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে হয় প্রায় –23°C। এই নিম্ন উষ্ণতায় ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অণুজীব বেঁচে থাকতে পারে না বলে এই মিশ্রণের সাহায্যে মাছ-মাংস ইত্যাদি দীর্ঘ সময়ের জন্য অবিকৃত রাখা সম্ভব। এই কারণেই এক্ষেত্রে নুন-মেশানো বরফ ব্যবহার করা হয়।

থার্মোফ্লাস্কের দুই দেয়ালের অভ্যন্তর বায়ুশূন্য ও চকচকে করা হয় কেন?

থার্মোফ্লাস্কের দুই দেয়ালের অভ্যন্তর বায়ুশূন্য ও চকচকে করা হয়- কারণ,
  • কাচ তাপের কুপরিবাহী এবং কাচপাত্র ও ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যবর্তী স্থান নরম কুপরিবাহী দিয়ে পৃথক থাকার ফলে এবং পাত্রের মুখে থাকা কর্কের ছিপিও অন্তরক পদার্থ হওয়ায়, পরিবহণ পদ্ধতিতে বাইরের বায়ুর সঙ্গে ফ্লাস্কে রাখা তরলের তাপীয় আদানপ্রদান ঘটতে পারে না।
  • আবার কাচপাত্রের দুটি দেয়াল প্রায় বায়ুশূন্য থাকায় পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ ভিতরে যেতে বা ভিতর থেকে বাইরে আসতে পারে না।
  • কাচের দেয়াল দুটির মুখোমুখি অংশ পারদ বা রূপোর প্রলেপ লাগিয়ে চকচকে করা হয়। ফলে, বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ স্যালন ঘটার সময় মসৃণ পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলিত হয়ে যায়, ফলে এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনও ব্যাহত হয়।

সুতরাং, সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়াই কার্যকরী হওয়ার সুযোগ না থাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য ফ্লাস্কের অভ্যন্তর এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে তাপের গ্রহণ ও বর্জন ঘটে না। ফলে, উষ্ণতাও অপরিবর্তিত থাকে।


বাল্ব জ্বালালে সবদিকেই কি তার তাপ ছড়িয়ে যায়? এখানে কোন্ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে?

উত্তর:
বাল্ব জ্বালালে সবদিকেই তার তাপ ছড়িয়ে যায়।
এক্ষেত্রে বিকিরণ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে। পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হবে না। কারণ — বায়ু তাপের কুপরিবাহী। এই তাপ সঞ্চালন পরিচলন পদ্ধতিতেও হবে না। কারণ, এক্ষেত্রে একই সঙ্গে সবদিকেই তাপ পরিবাহিত হয়। কিন্তু পরিচলন পদ্ধতিতে কেবলমাত্র উপরের দিকে তাপ পরিবাহিত হয়।


জলচর প্রাণীরা গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে জলের কোন্ স্তরে থাকতে আরাম বোধ করে? জলের ওপরের স্তরে নাকি নীচের স্তরে?

উত্তর:

যে সমস্ত প্রাণীরা জলে থাকে তারা গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে অর্থাৎ, সবসময়ই জলের নীচের স্তরে থাকতে আরাম বোধ করে। কারণ— জল তাপের কুপরিবাহী বলে গ্রীষ্মকালে পরিবেশের প্রচণ্ড তাপে জলের উপরিভাগ গরম হয়ে গেলেও সেই তাপ জলের নীচের স্তর অবধি পৌঁছোয় না। আবার, শীতকালে উপরিভাগের জল তাপ বর্জন করে ঠান্ডা হয়ে গেলেও জলের নীচের স্তর জলের উপরিস্তর পেরিয়ে তাপ বর্জন করতে পারে না। তাই জলের নীচের স্তর গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা এবং শীতকালে গরম থাকে। তাই জলচর প্রাণীরা শীতল রক্তবিশিষ্ট হওয়ায় সবসময়ই জলের নীচের স্তরে থাকে।


ফুটন্ত জলের মধ্যে একটি কাঠের স্কেল ডুবিয়ে দেওয়া হল। (i) বেশ কিছুক্ষণ পর ওই কাঠের স্কেলের যে দিকটা জল থেকে বেরিয়ে আছে সেই দিকটা হাত দিয়ে ধরতে পারা যাবে কি? (ii) ওই ফুটন্ত জলে একটি স্টিলের চামচের একপ্রান্ত ডোবালে কিছুক্ষণ পর অন্যপ্রান্তটি ধরে থাকা যাবে কি? তোমার উত্তর দুটির কারণ ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর:

(i) প্রথম ক্ষেত্রে, কাঠের স্কেলের জল থেকে বেরিয়ে আসা দিকটি হাত দিয়ে ধরা যাবে।

তাপের পরিবাহীতা

(ii) দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, স্টিলের চামচটির অন্যপ্রান্ত হাত দিয়ে ধরা যাবে না। 

কারণ— প্রথম ক্ষেত্রে কাঠের স্কেলের উষ্ণপ্রান্ত থেকে কম উষ্ণতর প্রান্তে খুব কম তাপ প্রবাহিত হয়েছে। তাই অন্যপ্রান্তটি হাত দিয়ে ধরা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু স্টিলের চামচের ক্ষেত্রে বেশি উষ্ণতর প্রান্ত থেকে কম উষ্ণতর প্রান্তে অনেক বেশি তাপ প্রবাহিত হয়েছে। ফলে, কম উষ্ণতর প্রান্তটিও উষ্ণ হয়ে গেছে। তাই স্টিলের চামচটির অন্যপ্রান্ত ধরে থাকা যায়নি। অর্থাৎ, কাঠের মধ্যে দিয়ে তাপ সহজে প্রবাহিত না হলেও স্টিলের মধ্যে দিয়ে হয়।


একটি দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের ধারণা ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর:

শীতকালে জ্বলন্ত উনুনের পাশে দাঁড়ালে বা উনুন থেকে সামান্য দূরে হাত রাখলে দেহ বা হাত উত্তপ্ত হয়। উনুনের আগুনের শিখার যে-কোনো একপাশে শিখা থেকে সামান্য দুরে দেশলাই কাঠির বারুদযুক্ত অংশটি ধরলে কিছু সময় পর সেটি জ্বলে ওঠে। এক্ষেত্রে বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে তাপ পরিবহণ পদ্ধতিতে হাত বা দেশলাই কাঠিতে আসতে পারে না।

আবার বায়ুর যে অংশ জ্বলন্ত উনুনের উপর আছে, সেই বায়ু উয় ও হালকা হয়ে আরও উপরের দিকে ওঠে এবং সাময়িকভাবে সৃষ্ট শূন্যস্থান করতে পার্শ্ববর্তী স্থানের শীতল ও ভারীপূরণ বায়ু উনুনের দিকে ছুটে আসে। সুতরাং, পরিচলন পদ্ধতিতেও হাত বা দেশলাই কাঠিতে তাপ স্থানান্তরিত হয় না।

আগুনের পাশে হাত
তাই, অনুমান করা যায় উনুন ও ব্যক্তির মাঝে থাকা মাধ্যমে সাহায্য ছাড়াই বা তাকে কোনোভাবে প্রভাবিত না করেই এক্ষেত্রে তাপ উন্নতর থেকে শীতলতর বস্তুতে সঞ্চালিত হতে সক্ষম হয়েছে। তাপীয় আদানপ্রদানের এই পদ্ধতিকে বলা হয় বিকিরণ।


জেনে রাখা ভালো : বিকীর্ণ তাপ আলোর মতোই একপ্রকার তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ। এদের মধ্যে পার্থক্য শুধুমাত্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য (দৃশ্যমান আলো : 4000Å - 7000Å , বিকীর্ণ তাপ : 8000Å - 10000Å) । আলো আমাদের চোখে দর্শন অনুভূতি সৃষ্টি করে, অন্যদিকে বিকীর্ণ তাপের প্রভাবে আমাদের শরীর উত্তপ্ত হয়।

সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১

থার্মোফ্লাস্কের(Thermoflask) গঠন ও কার্যনীতি চিত্রসহ বর্ণনা করো।

উত্তর:

থার্মোফ্লাস্ক (Thermoflask) একটি যন্ত্রব্যবস্থা, যার দ্বারা কোনো তরল পদার্থের উষ্ণতা দীর্ঘসময়ের জন্য অপরিবর্তিত রাখা যায়।

বিশেষভাবে নির্মিত এই চোঙাকৃতি পাত্রে রাখা উষ্ণ বা শীতল তরল দীর্ঘসময়ের জন্য উষ্ণ বা শীতল থাকে। আবিষ্কারক ইংরেজ বিজ্ঞানী জেমস্ ডিওয়ারের নাম অনুসারে একে অনেকসময় ডিওয়ার ফ্লাস্কও বলা হয়।


গঠন:
  • এটি একটি দুই দেয়ালবিশিষ্ট কাচের পাত্র, যাদের মধ্যবর্তী স্থান প্রায় বায়ুশূন্য।
  • ভিতরের দেয়ালের বাইরের দিকে এবং বাইরের দেয়ালের ভিতর দিকে রুপো বা পারদের প্রলেপ দেওয়া থাকে এবং তলগুলি ভালো করে পালিশ করে মসৃণ করা হয়।
  • ফ্লাস্কের সরু মুখ কর্কের তৈরি ছিপি দিয়ে বন্ধ করা হয়। কাচপাত্র ভঙ্গুর হওয়ায় সুরক্ষা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, সেটি একটি স্প্রিং-এর ওপর বসিয়ে একটি ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যে রাখা হয়।
  • বহিরাবরণ ও কাচপাত্রের মধ্যবর্তী অংশ শোলা, ফেল্ট বা তুলা ইত্যাদি নরম কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে পূর্ণ করা থাকে।
  • একটি প্যাঁচযুক্ত প্লাস্টিকের ঢাকনার সাহায্যে পাত্রের ওপরের অংশ ঢেকে রাখা হয়।





কার্যনীতি:
  • কাচ তাপের কুপরিবাহী এবং কাচপাত্র ও ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যবর্তী স্থান নরম কুপরিবাহী দিয়ে পৃথক থাকার ফলে এবং পাত্রের মুখে থাকা কর্কের ছিপিও অন্তরক পদার্থ হওয়ায়, পরিবহণ পদ্ধতিতে বাইরের বায়ুর সঙ্গে ফ্লাস্কে রাখা তরলের তাপীয় আদানপ্রদান ঘটতে পারে না।
  • আবার কাচপাত্রের দুটি দেয়াল প্রায় বায়ুশূন্য থাকায় পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ ভিতরে যেতে বা ভিতর থেকে বাইরে আসতে পারে না।
  • কাচের দেয়াল দুটির মুখোমুখি অংশ পারদ বা রূপোর প্রলেপ লাগিয়ে চকচকে করা হয়। ফলে, বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ স্যালন ঘটার সময় মসৃণ পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলিত হয়ে যায়, ফলে এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনও ব্যাহত হয়।

সুতরাং, সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়াই কার্যকরী হওয়ার সুযোগ না থাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য ফ্লাস্কের অভ্যন্তর এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে তাপের গ্রহণ ও বর্জন ঘটে না। ফলে, উষ্ণতাও অপরিবর্তিত থাকে।

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

বাড়ি বানানোর উপাদানগুলি তাপের কুপরিবাহী হওয়ার দরকার কেন?

উত্তর:

বাড়ি বানানোর উপাদানগুলি তাপের কুপরিবাহী হওয়া দরকার। কারণ— উপাদানগুলি তাপের কুপরিবাহী হলে শীতকালে ঘরের ভিতর থেকে তাপ বাইরে যেতে পারবে না, ফলে ঘর গরম থাকবে আবার গ্রীষ্মকালে বাইরের তাপ ঘরের ভিতরে আসতে পারবে না। ফলে, ঘর ঠান্ডা থাকবে। একই কারণে খড়ের চালওয়ালা মাটির বাড়ি গ্রীষ্মকালে যেমন ঠান্ডা শীতকালে তেমন গরম থাকে।

শীতকালে পাখিরা কখনো কখনো পালক ফুলিয়ে বসে থাকে কেন?

উত্তর:

পালক ফুলিয়ে বসলে ঢুকে যায়। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে দেহের তাপ বাইরে যেতে পারে না, বা বাইরের ঠান্ডা বায়ু ভিতরে আসতে পারে না। ফলে, দেহ গরম থাকে। তাই, শীতকালে পাখিরা পালক ফুলিয়ে বসে থাকে।

পাখি
ইগলু কী? এটি বরফ দিয়ে তৈরি করা হয় কেন ?

উত্তর:
গ্রিনল্যান্ডের থুলে অঞ্চলে এস্কিমোদের বাসস্থানকে ইগলু (Igloo) বলে।
ইগলু বরফ দিয়ে তৈরি করা হয়, কারণ— বরফ তাপের কুপরিবাহী এবং ওই অঞ্চলে সহজলভ্য। তাই বরফের মধ্যে দিয়ে তাপ চলাচল করে না এবং ইগলুর ভিতরটা গরম থাকে। ফলে ওই শীতল অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রচণ্ড ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পায়।
Igloo

তোমার কাছে গরম খাবার অনেকক্ষণ ধরে গরম রাখার পাত্র (যেমন— ফ্লাস্ক) নেই। অথচ কোনো গরম খাবার তোমাকে অনেকক্ষণ গরম রাখতে হবে। তুমি কী কী করবে? কেন করবে?

উত্তর:

দুই খণ্ড মোটা কাগজের টুকরোর মধ্যবর্তী অংশ শুকনো কাপড়, তুলো (ফেল্ট) বা পশম জাতীয় পদার্থ দ্বারা পূর্ণ করে একটি তাপরোধী মোড়ক তৈরি করে তার মধ্যে গরম খাবার রাখলে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য গরম থাকবে।

কারণ—কাগজ ও তুলো সহজলভ্য এবং তাপের কুপরিবাহী পদার্থ। দুটি কাগজখণ্ডের মাঝে তুলো থাকায় তার মধ্যে আবদ্ধ বায়ুও একটি কুপরিবাহী আস্তরণ গঠন করে, সুতরাং এই ব্যবস্থা অবলম্বন করলে পরিবহণ, পরিচলন ও বিকিরণ পদ্ধতিতে গরম খাদ্যবস্তু থেকে পরিবেশে তাপ সঞ্চালন হয় না। সুতরাং, ব্যবস্থাটি একটি থার্মোফ্লাস্কের মতো আচরণ করে এবং খাদ্যবস্তু দীর্ঘসময় পর্যন্ত গরম থাকে।

তুমি যে বাড়িতে থাকো তার দেয়ালগুলি ও ছাদ যদি টিনের হত, তবে কী কী সুবিধা হত আর কী কী অসুবিধা হত?

উত্তর:

সুবিধা: 
১। বাড়ির দেয়াল ও ছাদ টিনের হলে সহজেই খুব কম খরচে বাড়ি তৈরি করা যেত।
২। টিন অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় ধাতু হওয়ায় বায়ুর অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্পের সঙ্গে সহজে বিক্রিয়া করে না, ফলে মরচে পড়া বা প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

অসুবিধা: টিনের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা যথেষ্ট বেশি হওয়ায় গ্রীষ্মকালে বাইরের বায়ু থেকে তাপ দ্রুত ও অধিক পরিমাণে ঘরে প্রবেশ করে এবং শীতকালে ঘরের ভিতরের আবদ্ধ বায়ু থেকে তাপ দ্রুত বাইরে পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ, গ্রীষ্মকালে ঘর প্রচণ্ড গরম এবং শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়ে যাবে।

শীতকালে বদ্ধঘরে হ্যারিকেন বা আগুন জ্বালিয়ে শোয়া বিপজ্জনক কেন?

উত্তর:
হ্যারিকেন বা আগুন জ্বালালে কেরোসিন বা কয়লার দহনে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসও তৈরি হয়। শীতকালে দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় বদ্ধঘরে অক্সিজেন চলাচলও করতে পারে না। ফলে, বিষাক্ত গ্যাসগুলির পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরের বাসিন্দাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই শীতকালে বদ্ধঘরে হ্যারিকেন বা আগুন জ্বালিয়ে শোয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক।

জ্বলন্ত উনুনের পাশের দিকে হাত রাখলে যত গরম লাগে উনুনের উপরের দিকে হাত রাখলে অনেক বেশি গরম লাগে। কেন এমন হয় বলো?

উত্তর:
জ্বলন্ত উনুনের উপরের দিকে যে বায়ুর স্তর থাকে, তা উনুনের তাপে উত্তপ্ত হয় ও আয়তনে প্রসারিত হয়। ফলে ওই বায়ুর ঘনত্ব কমে যায় ও বায়ু হালকা হয়। এই গরম ও হালকা বায়ু উপরে উঠে গেলে উপরের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ও ভারী বায়ু উনুনের পাশ দিয়ে পৃথিবীর টানে নীচে নেমে আসে। তাই জ্বলন্ত উনুনের পাশে হাত রাখলে যত গরম লাগে উনুনের উপরের দিকে হাত রাখলে তার চেয়ে অনেক বেশি গরম লাগে।

 

শীতকালে আমরা উলের তৈরি পোশাক পরি কেন?

উত্তর:

উলের পোশাকে সুতোর মাঝে মাঝে বায়ু আটকে থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে, দেহ থেকে তাপ বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে না বা বাইরের ঠান্ডা বায়ু দেহে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে, দেহ গরম থাকে। একারণে, শীতকালে আমরা উলের পোশাক পরি।


শীতকালে হাতি গায়ে ধুলো মাখে কেন?

উত্তর:

হাতি গায়ে ধুলো মাখলে তার গা ও ধুলোর মাঝে একটি বায়ুস্তর তৈরি হয়। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে দেহ থেকে বেরিয়ে আসা তাপ বায়ুর স্তর ভেদ করে বাইরে যেতে পারে না। ফলে হাতির আরাম লাগে। একারণে শীতকালে হাতি গায়ে ধুলো মাখে।


বরফ যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন বরফের গায়ে কাঠের গুঁড়ো মাখানো হয় কেন? বা চট জড়িয়ে দেওয়া হয় কেন?

উত্তর:

বরফের গায়ে কাঠের গুঁড়ো মাখালে বা চট জড়িয়ে দিলে কাঠের গুঁড়োর ফাকে ফাকে বা চটের সুতোর ফাকে ফাকে বায়ু ঢুকে যায়। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে বাইরে থেকে তাপ বরফে ঢুকতে পারে না, তাই বরফ গলে যায় না। একারণে বরফ যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন বরফের গায়ে কাঠের গুঁড়ো মাখানো হয় বা চট জড়িয়ে দেওয়া হয়।



শীতকালে সুতোর তৈরি একটি মোটা জামা পরলে গরম লাগে। কিন্তু, তার বদলে একই ধরনের সুতো দিয়ে তৈরি দুটি পাতলা জামা পরলে আরও বেশি গরম লাগে কেন?
উত্তর:

সুতোর তৈরি একটি মোটা জামা পরলে সুতোর ফাঁকে ফাকে যে পরিমাণ বায়ু আটকে থাকে, তার বদলে এই ধরনের সুতো দিয়ে তৈরি দুটি পাতলা জামা পরলে আরো বেশি পরিমাণ বায়ু আটকে থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে যত বেশি বায়ু আটকে থাকবে, দেহ থেকে তত কম তাপ বেরিয়ে আসতে পারবে। আবার দেহ থেকে যত কম তাপ বেরোবে দেহ তত গরম থাকবে। তাই শীতকালে একটি জামার পরিবর্তে দুটি জামা পরলে বেশি গরম লাগে।


দুধ গরম করলে উথলে ওঠে কেন?

উত্তর। উষ্ণতা বৃদ্ধিতে কঠিন পদার্থের আয়তনের তুলনায় তরল পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি বেশি হয়। দুধ গরম করার সময় দুধের ওপর তৈলাক্ত পদার্থের সর পড়ে। এই সর ভেদ করে জলীয়বাষ্প বাইরে আসতে পারে না, ফলে দুধ উথলে ওঠে।



ভৌত ধর্ম ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে কোন্ ধর্ম দ্বারা পদার্থের শনাক্তকরণ অধিক গ্রহণযোগ্য ও কেন?

উত্তর । ভৌত ধর্ম দ্বারা কোনো পদার্থের শনাক্তকরণে তা অপচয় বা নষ্ট হয় না কিন্তু এই ধর্মের সাহায্যে পদার্থকে আংশিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। অন্যদিকে, রাসায়নিক ধর্ম দ্বারা কোনো পদার্থের শনাক্তকরণে পদার্থের পরিবর্তন ঘটে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই ধর্মের সাহায্যে পদার্থের গঠন সংক্রান্ত ধারণা পাওয়া যায় যা পদার্থকে নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। তাই, ভৌত ধর্ম ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে রাসায়নিক ধর্ম দ্বারা পদার্থের শনাক্তকরণ অধিক গ্রহণযোগ্য৷


পুকুরের জলে একটি গাছের কী ধরনের প্রতিবিম্ব গঠিত হয়?

উত্তর | জলাশয়ের উপরিতল সমতল দর্পণের মতো আচরণ করে, তাই গাছ থেকে আগত রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে প্রতিবিম্ব গঠন করে। যেহেতু সমতল দর্পণে গঠিত প্রতিবিম্ব অসদ্ ও সমশীর্ষ হয়, তাই এক্ষেত্রেও গঠিত প্রতিবিম্ব অসদ্ ও সমশীর্ষ হবে।


বস্তুর দূরত্ব ও প্রতিবিম্বের দূরত্ব সমান হওয়াকে ব্যবহার করে প্রতিবিম্ব আঁকলে প্রতিবিম্ব আঁকা কখনও শেষ হবে কি?

উত্তর। এক্ষেত্রে গঠিত প্রতিবিম্বের সংখ্যা অসীম। তাই, বস্তু দূরত্ব = প্রতিবিম্ব দূরত্ব এই সম্পর্ক ব্যবহার করে প্রতিবিম্ব আঁকতে থাকলে প্রতিবিম্ব আঁকা কখনোই শেষ হবে না।

অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের শর্তগুলি বিবৃত করো।

উত্তর। অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের শর্ত প্রধানত দুটি। যথা—

১। আলোকরশ্মিকে অবশ্যই ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমের দিকে এসে দুই মাধ্যমের বিভেদতলে আপতিত হতে হবে।

২। নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর ক্ষেত্রে ঘন মাধ্যমে আপতন কোণের মান মাধ্যমদ্বয়ের সংকট কোণ অপেক্ষা বেশি হতে হবে।

অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন না ঘটলে আমরা কী কী দেখতে পেতাম না?

অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন না ঘটলে আলো সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে দেখা যেত না। যেমন — মরু অঞ্চলে ও শীতকালীন দেশে মরীচিকা, রত্ন হিসেবে হীরকের ঔজ্জ্বল্য, কচুপাতার উপর অবস্থিত জলের ফোঁটা চকচকে দেখানো, গ্রীষ্মের দিনে উত্তপ্ত রাস্তা জলে ভেজা ভ্রম হওয়া ইত্যাদি।


কাচের ফাটলে আলো পড়লে সেই স্থান চকচক করে কেন?

কাচে ফাটল থাকলে ওই অংশটি অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল লাগে। এর কারণ পূর্ণ প্রতিফলন। ওই ফাটলযুক্ত অংশের মধ্যে বায়ু পূর্ণ থাকে। আলোকরশ্মি কাচ (ঘনমাধ্যম) থেকে বায়ুতে (লঘুমাধ্যম) মাধ্যমদ্বয়ের সংকট কোণ অপেক্ষা বেশি কোণে আপতিত হলে বিভেদতল থেকে পূর্ণ প্রতিফলিত হয়। এই প্রতিফলনে বিভেদতলের ভূমিকা প্রতিফলকের মতো হয় বলে, ফাটল ধরা অংশটি চকচকে দেখায়।


আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক ও পরম প্রতিসরাঙ্ক বলতে কী বোঝায়?

আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক (Relative refractive index) : দুটি আলোকীয় মাধ্যমের যে-কোনো একটির সাপেক্ষে অন্য মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে প্রথম মাধ্যম সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বা আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক বলে।
যেমন— a মাধ্যম সাপেক্ষে b আলোকীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক aμb

পরম প্রতিসরাঙ্ক (Absolute refractive index): শূন্যস্থান সাপেক্ষে যে-কোনো আলোকীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক বলা হয়।

জেনে রাখো: পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে পাওয়া গেছে, বায়ুমাধ্যমে পরম প্রতিসরাঙ্কের মান1.00029, যা প্রায় শূন্যস্থানের পরম প্রতিসরাঙ্কের সমান। তাই সাধারণভাবে কোনো আলোকীয় মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক হল বায়ু মাধ্যম সাপেক্ষে তার প্রতিসরাঙ্ক।

রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১

পদার্থ (Matter) কাকে বলে?

উত্তর | যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, যাদের ভর আছে, যারা কিছুটা স্থান দখল করে, যাদের আকার পরিবর্তনে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা আছে, যারা গতিশীল বা স্থিতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইলে বাধা দেয়, তাকে পদার্থ বলে।

উদাহরণ: কাচ, কাঠ, জল, বায়ু প্রভৃতি।

জেনে রাখো : বস্তুর একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতি থাকে। কিন্তু পদার্থের নির্দিষ্ট কোনো আকার বা আকৃতি থাকে না। পদার্থ দিয়ে বস্তু গঠিত হয়। কাঠের চেয়ার হল বস্তু এবং কাঠ হল পদার্থ।


পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম কাকে বলে? রাসায়নিক ধর্মের সাহায্যে পদার্থকে কীভাবে শনাক্ত করা যায় ?

রাসায়নিক ধর্ম (Chemical properties) : যেসব ধর্ম থেকে পদার্থের মূল গঠনের এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়, সেইসব ধর্মকে পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম বলে।

রাসায়নিক ধর্মের সাহায্যে পদার্থের শনাক্তকরণ : রাসায়নিক ধর্মের সাহায্যে কোনো পদার্থকে শনাক্ত করতে হলে পদার্থের ওপর বায়ু, জল, তাপপ্রয়োগ, তড়িৎক্রিয়া, অ্যাসিড, ক্ষার বা ক্ষারক, অন্যান্য কতকগুলি পদার্থের সংযোগে পদার্থের গঠনের কী পরিবর্তন হয় এবং কী কী নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

(i) বায়ুর ক্রিয়া : বাতাসের সংস্পর্শে এসে পদার্থের নানা ধরনের পরিবর্তন হয়। যেমন—আর্দ্র বায়ুতে একটুকরো চকচকে লোহা ফেলে রাখলে মরচে উৎপন্ন হয়। সোনা, রুপো বায়ুতে ফেলে রাখলে কোনো পরিবর্তন হয় না।

(ii) জলের ক্রিয়া : জলের সঙ্গে বিভিন্ন পদার্থের বিক্রিয়া লক্ষ করে পদার্থকে শনাক্ত করা যায়। যেমন—সোডিয়াম বা পটাশিয়াম-এর মতো ধাতু জলের সংস্পর্শে এলেই তীব্র বিক্রিয়া করে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন করে এবং আগুন জ্বলে ওঠে। একটুকরো সোনা বা রুপোকে জলে ফেললে কোনো পরিবর্তন হয় না৷


আইসোটোপ(Isotope) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

আইসাটোপ (Isotope): একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণু যাদের পারমাণবিক সংখ্যা এক, কিন্তু নিউক্লিয়াসে ভিন্ন সংখ্যক নিউট্রন থাকার জন্য ভরসংখ্যা আলাদা হয়, তাদের পরস্পরের আইসোটোপ বা সমস্থানিক বলে। যেমন— ক্লোরিনের দুটি আইসোটোপ হল— 17Cl35 এবং 17Cl37

জেনে রাখো: গ্রিক ভাষায় ‘iso' শব্দের অর্থ হল সমান এবং ‘topes' শব্দের অর্থ হল অবস্থান। আইসোটোপগুলি পর্যায় সারণিতে একই ঘরে অবস্থান করে বলে এদের সমস্থানিক বলে।

আইসোটোপের বৈশিষ্ট্যঃ
  1. কোনো মৌলের আইসোটোপগুলির পারমাণবিক সংখ্যা অর্থাৎ, প্রোটন সংখ্যা বা ইলেকট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা আলাদা হওয়ায় ভরসংখ্যা আলাদা হয়।
  2. এদের ইলেকট্রন বিন্যাস একইরকম হওয়ায় এদের রাসায়নিক ধর্ম এক হয়। 
  3. এদের ইলেকট্রন বিন্যাস একইরকম হওয়ায় এদের যোজ্যতা সমান হয়। 
  4. এদের ভৌত ধর্ম, যেমন- ঘনত্ব, ভর, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক ইত্যাদি ভিন্ন হয়।

জেনে রাখা ভালোঃ চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যানসার ও টিউমার চিকিৎসায় আয়োডিনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ (l131) ব্যবহার করা হয়। এমনকি গাছ, পুরোনো শিলা এবং পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করতেও কার্বনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ (C14) ব্যবহৃত হয়।


প্রতিসরাঙ্ক কাকে বলে?

প্রতিসরাঙ্ক (Refractive index) : প্রতিসরাঙ্ক হল কোনো আলোকীয় মাধ্যমের উপাদানের এমন একটি ধর্ম, যার মানের ওপর ওই মাধ্যমে প্রবেশ করা অর্থাৎ, প্রতিসৃত আলোকরশ্মির গতির অভিমুখ এবং ওই মাধ্যমে আলোর বেগের মান নির্ভর করে।

প্রশ্ন | প্রতিসরাঙ্কের ভিত্তিতে আলোকীয় মাধ্যম কয় প্রকার ও কী কী? তাদের সংজ্ঞা দাও।

উত্তর  | প্রতিসরাঙ্কের ভিত্তিতে আলোকীয় মাধ্যম দুপ্রকার, যথা— (i) ঘন মাধ্যম, (ii) লঘু মাধ্যম।

ঘন মাধ্যম (Denser medium) : দুটি ভিন্ন আলোকীয় মাধ্যমের ভিতর যার পরম প্রতিসরাঙ্কের মান বেশি, তাকে ঘনতর বা ঘন মাধ্যম বলে।

লঘু মাধ্যম (Rarer medium) : যে মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্কের মান তুলনামূলকভাবে কম, তাকে লঘু মাধ্যম বলে।

অনুরূপ প্রশ্ন : আলোর ক্ষেত্রে একটি মাধ্যমের থেকে অন্য একটি মাধ্যম বেশি ঘন না লঘু তা কীভাবে ঠিক হয় ?

প্রশ্নঃ প্রতিসরাঙ্কের মান কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

উত্তর |  প্রতিসরাঙ্কের মান তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে,

(i) মাধ্যমদ্বয়ের প্রকৃতি,
(ii) ব্যবহৃত আলোর বর্ণ,
(iii) মাধ্যমদ্বয়ের উষ্ণতা

প্রশ্নঃ বায়ু সাপেক্ষে কাচের প্রতিসরাঙ্ক 1.5 বলতে কী বোঝায়?

উত্তর | বক্তব্যটির অর্থ এই যে, আলোকরশ্মি বায়ু থেকে কাচে প্রতিসৃত হলে আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত হয় 1.5। অথবা নির্দিষ্ট বর্ণের আলোকরশ্মির জন্য বায়ু মাধ্যমে ও কাচ মাধ্যমে আলোর বেগের অনুপাত হয় 1.5।

প্রশ্নঃ তৈলাক্ত কাগজকে সামান্য স্বচ্ছ দেখায় কেন?

উত্তর | সাধারণ কাগজের তল অমসৃণ বলে সেই তলে আপতিত আলোকরশ্মির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে এবং সেটি প্রায় অস্বচ্ছ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তবে তৈলাক্ত কাগজের পৃষ্ঠে পাতলা তেলের স্তর থাকে এবং এই কাগজের উপরিতলে আলোকরশ্মি এসে পড়লে তার একটি অংশ প্রতিসৃত হয়। অর্থাৎ, প্রতিসরণ ঘটার জন্যই তৈলাক্ত কাগজ অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ বলে মনে হয়।


তাপের সুপরিবাহী(Good Conductor) ও কুপরিবাহী পদার্থ(Bad Conductor) কাকে বলে উদাহরণসহ বোঝাও।

উত্তর:

তাপ পরিবহণের ভিত্তিতে পদার্থ দু-প্রকার।

সুপরিবাহী পদার্থ (Good conductor): যে সকল পদার্থ সহজে তাদের নিজেদের মধ্য দিয়ে উষ্ণ অংশ থেকে শীতল অংশে তাপ সঞ্চালিত করে, তাদের তাপের সুপরিবাহী পদার্থ বা সংক্ষেপে পরিবাহী বলে।

উদাহরণ: লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, রুপো ইত্যাদি ধাতু এবং পারদ, গ্রাফাইট, গ্যাস কার্বন ইত্যাদি অধাতু।

কুপরিবাহী পদার্থ (Bad conductor): যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সহজে এক অংশ থেকে অন্যত্র সঞ্চালিত হতে পারে না, তাদের কুপরিবাহী বা অন্তরক পদার্থ বলে। কুপরিবাহী পদার্থগুলির তাপ হস্তান্তরের ক্ষমতা নগণ্য বা উপেক্ষণীয় হয়।

উদাহরণ: কাঠ, প্লাস্টিক, মোম, রবার, বিশুদ্ধ জল, কর্ক, ইট, তুলা, কাগজ প্রভৃতি।


জাড্য (Inertia) কাকে বলে? ভৌতাবস্থানুযায়ী পদার্থ কয় প্রকার ও কী কী?

জাড্য (Inertia) কাকে বলে?

উত্তর। জাড্য (Inertia) : জড়বস্তুর ধর্ম হল এই যে, সেটি যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকতে চায়। অর্থাৎ, স্থিরবস্তু চিরকাল স্থির থাকতে চায় এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল অবস্থায় থাকতে চায়। জড়বস্তুর এই ধর্মকে জাড্য বলে। জাড্য দু-প্রকার–

(i) স্থিতি জাড্য, (ii) গতি জাড্য ।


ভৌতাবস্থানুযায়ী পদার্থ কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ পদার্থ তিন প্রকার, যথা— (i) কঠিন (Solid), (ii) তরল (Liquid), (iii) গ্যাসীয় (Gas)। যেমন— লোহা কঠিন পদার্থ, জল তরল পদার্থ, বায়ু গ্যাসীয় পদার্থ।

বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

মোটা কাগজের ঠোঙা বানিয়ে জল রেখে আগুনে শিখায় ধরলে জল ফোটানো যাবে কি?

উত্তর:

মোটা কাগজের ঠোঙা বানিয়ে তাতে জল ঢেলে আগুনের শিখায় ধরলে জল ফোটানো যাবে না। কারণ— মোটা কাগজের মধ্যে দিয়ে তাপ তাড়াতাড়ি জলে যেতে পারবে না এবং আগুনের শিখার সংস্পর্শে থাকা কাগজের অংশটি খুব তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়ে যাবে। ফলে, কাগজটি পুড়ে যাবে।


শিশির কাকে বলে?

উত্তর | রাত্রে তাপ বিকিরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ এবং তার সংলগ্ন বস্তুগুলির উষ্ণতা যখন ক্রমশ কমে তখন ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরও শীতল হয়। অবশেষে উষ্ণতা একটি নির্দিষ্ট মানে অর্থাৎ, শিশিরাঙ্কে পৌছোলে, শীতল বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়। । বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কেরও নীচে নেমে গেলে, স্বাভাবিকভাবেই বায়ু তার ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত জলীয়বাষ্পকে আর নিজের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে পারে না। বায়ু দ্বারা পরিত্যক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ছোটো ছোটো জলবিন্দুর আকারে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন ঘাস, পাতা ইত্যাদির উপরে জমা হয়। একেই শিশির (Dew) বলে।
শিশির

পাতলা কাগজের পাত্রে কীভাবে জল ফোটানো যায় ?

উত্তর:

প্রথমে খাতার পৃষ্ঠার মাপের একটি পাতলা কাগজের চোঙ বা ফানেল তৈরী করে তার মধ্যে জল রাখা হল। এবার জলসহ
কাগজের পাতলা দিকটি আগুনের শিখায় ধরলে, কিছুক্ষণের মধ্যেই জল ফুটতে থাকে অথচ কাগজটি জ্বলে যায় না। এক্ষেত্রে, পাতলা কাগজের মধ্যে দিয়ে তাপ খুব তাড়াতাড়ি জলে চলে যায়। ফলে, জল স্ফুটনাঙ্কে পৌছে গেলেও কাগজটি তার জ্বলনাঙ্কে পৌঁছোয় না। তাই পাতলা কাগজের পাত্রে জল ফোটানো যাবে।


প্রশ্ন: সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক থাকে কি? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর | সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক থাকে না। যেমন অনিয়তাকার বা অকেলাসিত কঠিন পদার্থের (কাচ, মোম, মাখন ইত্যাদি) এবং মিশ্র পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক থাকে না, পরিবর্তে এদের গলনাঙ্কের নির্দিষ্ট পাল্লা থাকে।

সাধারণ বায়ুচাপে উদ্বায়ী পদার্থগুলির ক্ষেত্রে গলনাঙ্কের অস্তিত্ব থাকে না।
কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থকে (HgO, CaCO) উচ্চ উষ্ণতায় উত্তপ্ত করার ফলে বিয়োজিত হয়ে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। 

এদের ক্ষেত্রে গলনাঙ্কের ধারণা প্রযোজ্য নয়।



প্রশ্ন: ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে যে মূর্তিগুলি তৈরি করা হয় তা বিশেষ ধাতু ব্যবহার করে তৈরি করা হয় কেন ?

উত্তর | ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে মূর্তি তৈরি করার সময় সেইসব বিশেষ ধাতু ব্যবহার করা হয়, যারা তরল অবস্থা থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে। এর ফলে, ছাঁচের সূক্ষ্ম কোনাগুলিতেও ধাতুগুলি পৌঁছোতে পারে ও মূর্তির ধারগুলি খুব সূক্ষ্ম হয়। যেমন—ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি।



প্রশ্ন: দুটি বরফের টুকরো একসঙ্গে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে তারা জোড়া লেগে যায়। কেন এমন হয় ?

উত্তর | বরফের গলনের ফলে যে জল উৎপন্ন হয় তার আয়তন বরফের আয়তনের তুলনায় কম। চাপ বাড়ালে গলনে সুবিধা হয়। তাই চাপ বৃদ্ধি করলে বরফের গলনাঙ্ক হ্রাস পায়। দুটি বরফের টুকরো একসঙ্গে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে সংযোগস্থলে বরফের গলনাঙ্ক কমে ও বরফ গলে একসময় জলে পরিণত হয়। চাপ উঠিয়ে নিলে গলনাঙ্ক আবার বাড়ে ও গলে যাওয়া জল আবার বরফে পরিণত হয়। ফলে, বরফের টুকরো দুটি জুড়ে যায়।


বাষ্পায়ন (Evaporation) কাকে বলে? বাষ্পায়নের হার কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

উত্তর।
বাষ্পায়ন(Evaporation): যে-কোনো উষ্ণতায় তরলের উপরিতল থেকে তরলের ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে বাষ্পায়ন বলে।

বাষ্পায়নের হার নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে—

(i) তরলের প্রকৃতি : এক-একটি তরলের ক্ষেত্রে বাষ্পায়নের হার এক-একরকম। যে তরলের স্ফুটনাঙ্ক ঘরের উয়তার যত কাছাকাছি হয়, তার বাষ্পায়নের হার তত বেশি হয়। যেমন ইথারের স্ফুটনাঙ্ক 35°C, আর জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C।

(ii) তরলের উপরিতলের বিস্তৃতি : তরলের উপরিতলের বিস্তৃতি বা ক্ষেত্রফল যত বেশি হয়, বাষ্পায়নের হারও তত বেশি হয়।

(iii) তরলের উদ্ভূতা : তরল ও তরল সংলগ্ন বায়ুর উহ্ণতা বাড়লে বাষ্পায়ন দ্রুত হয়। তাই ভিজে কাপড় রোদের তাপে যত তাড়াতাড়ি শুকায়, শীতল ছায়ায় ততটা শুকায় না।

(iv) বায়ুর শুষ্কতা : বায়ু যত শুষ্ক হয়, তার বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতাও তত বেশি হয়।

(v) বায়ু চলাচল : তরলের ওপর বায়ু সঞ্চালন বাড়লে বাষ্পায়ন দ্রুত হারে হয়। যেমন—ঘরের ভিজে মেঝে তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য আমরা ফ্যান চালাই বা কালির লেখা তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য আমরা ফুঁ দিই।

(vi) তরলের ওপর বায়ুর চাপ : বায়ুমণ্ডলীয় চাপ যত কম হয়, বাষ্পায়নের হার তত বেশি হয়। তাই বাষ্পায়নের হার বাড়াতে তরলের ওপর বায়ুর চাপ কমাতে হয়।

শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১

জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে—এই ঘটনার দুটি করে সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ করো।

সুবিধা :
১। জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে। তাই জল জমে বরফে পরিণত হলে উৎপন্ন বরফের ঘনত্ব জল অপেক্ষা কম হওয়ায় বরফ জলে ভাসে। এই ঘটনার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে দেখা যায়, শীতকালীন দেশগুলিতে বড়ো নদী বা হ্রদের জলের উপরিতল বরফে পরিণত হলেও নীচের অংশে সর্বোচ্চ 4°C উষ্ণতায় জল থাকে। বরফ ও জল উভয়েই তাপের কুপরিবাহী হওয়ার ফলে ওই অংশের জল তাপ বর্জন করে আরও ঠান্ডা হয়ে বরফে পরিণত হতে পারে না। ফলে ওই স্থানের জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণীরা চরম শীতার্ত পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে।


২। কৃষিজমির ফাক বা ফাটলের মাঝে জমে থাকা জল প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হলে, আয়তনে বৃদ্ধি পেতে চায় এবং সংশ্লিষ্ট মাটির স্তরের গায়ে বল প্রয়োগ করে। এই বলের ক্রিয়ায় মাটি প্রাকৃতিক উপায়ে নরম ও ঝুরঝুরে হয়ে যায়, ফলে কৃষিকাজের সুবিধা হয়।


অসুবিধা :
১। শীতপ্রধান দেশে মোটরগাড়ির রেডিয়েটর পাইপে থাকা জল জমে বরফে পরিণত হয়। ওই বরফ আয়তনে প্রসারিত হয়ে পাইপের দেয়ালে চাপ দেয়। সেই চাপে অনেকসময় ওই পাইপ ফেটে যায়। একই কারণে শীতের দেশগুলিতে জল সরবরাহের পাইপগুলি (মূলত গরম জল সরবরাহকারী) ফেটে গিয়ে থাকে।


২। পাহাড়ি অঞ্চলে পাথরের ফাক বা ফাটলে জমে থাকা জল উষ্ণতা হ্রাসের ফলে বরফে পরিণত হয় এবং আয়তনে বাড়তে চায়। পাথরের ভিতরের তলগুলিতে প্রচণ্ড বল প্রয়োগ করে। এই বলের প্রভাবে পাথর অনেকসময় ফেটে যায়, যে কারণে পাহাড়ি স্থানে মাঝেমাঝেই ধস নামতে দেখা যায়।


গলনাঙ্ক(Melting Point) ও হিমাঙ্ক(Freezing Point) বলতে কী বোঝায়? এদের মধ্যে সম্পর্ক কী? 

গলনাঙ্ক (Melting point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় সমসত্ত্ব কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হতে শুরু করে এবং গলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে উন্নতা স্থির থাকে, সেই উয়তাকে ওই পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। যেমন—প্রমাণ বায়ুচাপে বিশুদ্ধ বরফের গলনাঙ্ক 0°C বা 273KI

হিমাঙ্ক (Freezing point) : প্রমাণ বায়ুচাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বিশুদ্ধ তরল পদার্থ সম্পূর্ণ জমে কঠিনে পরিবর্তিত হতে শুরু করে এবং সমগ্র তরলের অবস্থান্তর সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত উয়তা অপরিবর্তিত থাকে, তাকে ওই তরলের হিমাঙ্ক বলে। যেমন—বিশুদ্ধ জলের প্রমাণ বায়ুচাপে হিমাঙ্ক বা স্বাভাবিক হিমাঙ্ক হল 0°C বা 273K।

গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের সম্পর্ক : বিশুদ্ধ এবং কেলাসাকার গঠনযুক্ত পদার্থের ক্ষেত্রে গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের মান সাধারণভাবে সমান (যেমন—বরফ ও জলের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের মান 0°C) ।

কিন্তু মিশ্র পদার্থ এবং অনিয়তাকার গঠনসম্পন্ন অর্থাৎ, অকেলাসাকার কঠিন পদার্থের (যেমন— কাচ, মোম, পিচ, মাখন | ইত্যাদি) নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের অস্তিত্ব নেই।


একটি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার সাহায্যে দেখাও যে, গলনে পদার্থের আয়তন পরিবর্তন হয়।


গলনে পদার্থের আয়তন পরিবর্তিত হয়— তা নিম্নলিখিত পরীক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে দেখানো যায়।

উপকরণ : (i) দুটি টেস্টটিউব, (ii) কিছু পরিমাণ মোম, (iii) পরিমাণমতো জল, (iv) বরফ, (v) বার্নার।

পরীক্ষা পদ্ধতি : (i) দুটি টেস্টটিউবের মধ্যে একটিতে কিছুটা মোম এবং অন্যটিতে একটি বড়ো বরফের টুকরো নেওয়া হল। (ii) দুটি টেস্টটিউবকে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করে মোম ও বরফকে সম্পূর্ণ গলানো হল এবং প্রথমটিতে, একটুকরো মোম ও দ্বিতীয়টিতে, একটি ছোটো বরফের টুকরো ফেলে দেওয়া হল।

মোমবাতি ও বরফের গলন

পর্যবেক্ষণ : কঠিন মোমের টুকরোটি তরল মোমের মধ্যে ফেলা মাত্র নিমজ্জিত হয় এবং গলিত মোমের সংস্পর্শে থেকে দ্রুত গলে তরলে রূপান্তরিত হয়। বরফের টুকরোটি বরফগলা জলের ওপর আয়তনের সামান্য (প্রায় 12 অংশ) বাইরে রেখে ভেসে থাকে।

ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত : কঠিন মোমের টুকরো গলিত মোমে সম্পূর্ণ ডুবে যায়, সুতরাং, কঠিন মোমের ঘনত্ব তরল মোম অপেক্ষা বেশি। যেহেতু, আয়তন বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট ভরের পদার্থের ঘনত্ব হ্রাস পায়। সুতরাং, সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, গলনের ফলে মোমের আয়তন বৃদ্ধি ঘটেছে।

একইভাবে বরফের টুকরো জলে ফেললে তা আংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসে। যা প্রমাণ করে, বরফের ঘনত্ব জল অপেক্ষা কম। সুতরাং, বোঝা যায় যে, জল জমে বরফ হলে আয়তনে বাড়ে অর্থাৎ, বরফের গলনে আয়তন সংকুচিত হয়।



পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রমী উদাহরণ দাও।

কর্পূর, ন্যাপথলিন, নিশাদল প্রভৃতি কঠিন পদার্থ তাপ প্রয়োগে তরল না হয়ে, সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। এদের বাষ্পকে শীতল করলে, এগুলি পুনরায় কঠিন অবস্থায় ফিরে আসে।

উল্লেখ্য, প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ঊর্ধ্বপাতনযোগ্য পদার্থগুলির ক্ষেত্রে তরল অবস্থার অস্তিত্ব না থাকলেও বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তারতম্য ঘটিয়ে এদের প্রত্যেকটিকেই তরল অবস্থায় প্রকৃতিতে পাওয়া সম্ভব।


সেঁক দেওয়ার বোতলে তরল হিসেবে গরম জল ব্যবহার করা হয় কেন?

তরল পদার্থগুলির মধ্যে জলের আপেক্ষিক তাপ সর্বোচ্চ এবং কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় সকল পদার্থের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই কারণে, একই ভরের অন্যান্য তরলের তুলনায় সমপরিমাণ উয়তা বৃদ্ধি ঘটাতে জল বেশি পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে। সেই কারণে সেঁক দেওয়ার বোতল বা হটব্যাগে ব্যবহৃত হওয়ার সময় নির্দিষ্ট হারে তাপ বর্জন করলেও, উচ্চ আপেক্ষিক তাপের কারণে জলের উয়তা হ্রাস হয় সব থেকে কম। অর্থাৎ, তাপগ্রহণ এবং ধারণক্ষমতা উভয়ই বেশি হওয়ায় গরম জল ঠান্ডা হতে বেশি সময় নেয়। তা ছাড়াও একই পরিমাণ তাপগ্রহণে উষ্ণতা বৃদ্ধি কম হওয়ায় জলকে শরীরের সংস্পর্শে রাখাও সুবিধাজনক হয়। তাই সেঁক দেওয়ার কাজে জল ব্যবহৃত হয়।


একটি কেটলি ও তার মধ্যে রাখা জল 80°C উন্নতা থেকে শীতল হয়ে 40°C উষ্মতায় এল। কেটলি ও জল কি সমপরিমাণে তাপ বর্জন করল?

ধরা যাক, কেটলির ভর m1 কেটলির উপাদানের আপেক্ষিক তাপ = s এবং কেটলিতে রাখা জলের ভর =m2

সুতরাং, কেটলি কর্তৃক বর্জিত তাপ = m1s*(80–40) = 40m1s ক্যালোরি,

এবং জল কর্তৃক বর্জিত তাপ = m2s*(80–40) = 40m2s ক্যালোরি

এখানে 40 m1s ক্যালোরি ও 40m2s ক্যালোরি আলাদা আলাদা পরিমাণ তাপকে নির্দেশ করছে। সুতরাং, কেটলি ও জল কখনোই সমপরিমাণ তাপ বর্জন করবে না।


 আপেক্ষিক তাপকে আপেক্ষিক বলা হয় কেন?

আপেক্ষিক তাপের মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পদার্থের (জলের) আপেক্ষিক তাপের মান (1)-কে প্রামাণ্য (Reference) ধরা হয়। এখন প্রমাণ পদার্থটি জল ছাড়া অন্য কিছু হলে পরীক্ষাধীন পদার্থের আপেক্ষিক তাপও ভিন্ন হবে। কোনো পদার্থের আপেক্ষিক তাপ (s) অর্থাৎ, সমানুপাতিক ধ্রুবক Q/mt -র মান জলের উপাদানগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তুলনা করে নির্ণয় করা হয় বলে, এই ধ্রুবকটিকে আপেক্ষিক তাপ বলা হয়।


গলন ও কঠিনীভবনের ফলে আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয় বোঝাও। 

গলন ও কঠিনীভবনের ফলে আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয় বোঝাও। 

উত্তরঃ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলে অধিকাংশ পদার্থের আয়তন বেড়ে যায় এবং তরল থেকে কঠিন হলে আয়তন কমে যায়।

যেমন – মোম

কিন্তু কিছু কিছু পদার্থ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলো আয়তন কমে যায় ও তরল থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তন বেড়ে যায়।

যেমন— জল ।


হিমমিশ্র(Freezing mixture) কী? উদাহরণ দাও। এর কয়েকটি ব্যবহার লেখো। 

হিমমিশ্র (Freezing mixture)

একাধিক পদার্থের উপযুক্ত মিশ্রণ ঘটিয়ে মিশ্রণের উপাদানগুলি অপেক্ষা অনেক নিম্ন উন্নতার সৃষ্টি করা সম্ভব। এই জাতীয় মিশ্রণগুলিকে সাধারণভাবে হিমমিশ্র বা Freezing mixture বলে অভিহিত করা হয়।

উদাহরণঃ বরফচূর্ণ ও খাদ্যলবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মিশিয়ে হিমমিশ্র উৎপন্ন করা যায়, যার উষ্ণতা প্রায় – 23°C হয়।





বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১

ঘড়িতে কোয়ার্টজ লেখা থাকে কেন?

সব ঘড়িতে 'কোয়ার্টজ' লেখা থাকে না। যে ঘড়িতে কোয়ার্টজ কেলাস(Crystal) থাকে সেই ঘড়িতে কোয়ার্টজ লেখা থাকে।

কোয়ার্টজ হল এধরণেরর প্রাকৃতিক খনিজ। এক ধরণের শিলা বলতে পারেন।

প্রাকৃতিক উপায়ে প্রাপ্ত কোয়ার্টজকে বিশেষভাবে কাটা হয়(X-Y কাট)। দেখতে অনেকটা টিউনিং ফর্কের মতো।
Quartz Crystal
                                                                
                                                                            Crystal

কোয়ার্টজ কেলাসের একটি দারুণ লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটি সুনির্দিষ্ট কম্পাঙ্কে কাঁপতে থাকে। পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রার পরিবর্তন না হলে এই কম্পন খুবই সুনির্দিষ্ট।

মানে ছবিটার মত আকৃতিতে যদি কাটা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট ভোল্টেজে যুক্ত করা হয় তাহলে কোয়ার্টজ সেকেন্ডে 2^15 বার অর্থাৎ এক সেকেন্ডে 32768 বার করে কাঁপতে থাকে।

কয়েকদশক ধরে ব্যবহার করলেও এই কম্পাঙ্কের হেরফের হয় না। ফলে কোয়ার্টজ ঘড়ির সময়ের ত্রুটিও খুব কম হয়।

উপরোক্ত কম্পাঙ্কের সাথে একটি স্টেপার মোটর যুক্ত আর উপযুক্ত গিয়ার যুক্ত করে ওই কম্পাঙ্ককে এক সেকেন্ড হিসেবে ক্যালিব্রেট করা হয়।

যেহেতু কম্পাঙ্ক 2 এর ঘাত(2^15) তাই ডিজিটাল ঘড়িতেও এই কেলাস সহজেই নির্ভুল ভাবে ব্যবহার করা হয়। আধুনিক দামী কোয়ার্টজ ঘড়িতে সময় নির্ভুল রাখার জন্যে একটি অতিরিক্ত ডিজিটাল কারেকশন সার্কিটও ব্যবহার করা হয়।

সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০

কুলম্বের সূত্র (Coulomb's law) | তড়িৎ বিভব কাকে বলে, বুঝিয়ে দাও। তড়িৎ বিভবের মাত্রা

কুলম্বের সূত্র (Coulomb's law)

i) দুটি স্থির বিন্দু আধানের মধ্যে কার্যকর আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল আধানদ্বয়ের পরিমাণের গুণফলের সমানুপাতিক এবং

ii) তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক।

এই বল আধানদ্বয়ের সংযােজী রেখা বরাবর ক্রিয়া করে এবং এর মান আধানগুলি যে মাধ্যমে অবস্থিত হয় তার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
Photo : Coulomb's Law

ধরা যাক, দুটি আধান q1, ও q2 পরস্পর থেকে r দূরত্বে অবস্থিত। এদের মধ্যে কার্যকর বলের মান F হলে, কুলম্বের সূত্রানুযায়ী,

F ∝ q1q2  এবং F ∝ 1/r2 অর্থাৎ F ∝ q1q2/r2,

গাণিতিক ভাবে, 

Photo : Mathematical Expression of Coulomb's Law
যেখানে k একটি ধ্রুবক যার মান F, q1, q2, ও r-এর এককের উপর এবং যে মাধ্যমে আধান দুটি অবস্থিত তার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এই  ধ্রুবকটিকে বলা হয় স্থির তড়িৎ বল ধ্রুবক বা কুলম্ব ধ্রুবক। বায়ুর ক্ষেত্রে CGS পদ্ধতিতে k = 1 হয়। সেক্ষেত্রে সূত্রটিকে লেখা যায়, F =(q1q2)/r2 


তড়িৎ বিভব কাকে বলে, বুঝিয়ে দাও। 

তড়িৎ বিজ্ঞানে তড়িৎ বিভব’-এর ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তড়িৎ প্রবাহমাত্রা মান ও প্রবাহের অভিমুখ নির্ধারণের জন্য তড়িৎ বিভব’ তথা বিভব পার্থক্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রয়োজন।

তড়িৎ বিভবঃ কোনাে পরিবাহী তড়িদাহিত হলে ওই পরিবাহী অন্য কোনাে পরিবাহীকে তড়িৎ দিতে পারে কিংবা অন্য কোনাে পরিবাহী থেকে তড়িৎ নিতে পারে। পরিবাহীর এই রকম তড়িৎ অবস্থাকে ওর তড়িৎ বিভব বলা হয়।

উচ্চ বিভব ও নিম্ন বিভবঃ কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ধনাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি উচ্চবিভবে আছে বলা হয় এবং অনুরূপভাবে কোনাে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ঋণাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি নিম্নবিভবে আছে বলা হয়। এখন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সর্বদা ইলেকট্রন (ঋণাত্মক আধানে আহিত)-এর গতির অভিমুখ বিপরীত দিকে হয়।

বিভবপার্থক্যঃ দুটি সমজাতীয় বা বিপরীত জাতীয় তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর মধ্যে বিভবের যে পার্থক্য হয়, তাকে ওদের বিভব প্রভেদ বা বিভব পার্থক্য (potential difference) বলা হয়।

কার্যের ধারণা থেকে বিভবের ধারণাঃ
অসীম দূরত্ব থেকে একটি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কার্য করতে হয় তাকে ওই বিন্দুর তড়িৎ বিভব বলে। 

গাণিতিকভাবে, অসীম দূরত্ব থেকে +Q একক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যদি একক কার্য করতে W কৃতকার্য হয় তবে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব হয়, V=W/Q একক।
অতএব, তড়িৎ বিভব = কৃতকার্য/আধান।

রাশিঃ কার্য এবং আধান উভয়ই স্কেলার রাশি হওয়ায় তড়িৎ বিভব স্কেলার রাশি।

তড়িৎ বিভবের মাত্রা=
[কার্যের মাত্রা/আধানের মাত্রা] =[ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1]

তড়িৎ বিভবের এককঃ তড়িৎ বিভবের CGS একক হল esu বা স্ট্যাটভােল্ট (statvolt) এবং SI ও ব্যবহারিক একক হল ভোল্ট (volt)।

তড়িৎবিভব মাপক যন্ত্রের নামঃ ভোল্টামিটার(Voltameter)

একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।
এই কোশের বিভব পার্থক্য নির্ভর করবে কোশের অভ্যন্তরীণ রোধ এবং সংযুক্ত রোধের উপর। 

1 volt = 1/300 esu বিভব।

কোনাে বিন্দুর তড়িৎবিভব 1 V বলতে বােঝায় অসীম দূরত্ব থেকে একটি 1 C ধনাত্মক আধানকে ওই বিন্দুতে আনতে 1 জুল কার্য করতে হবে।
1 ভোল্ট = 1 জুল /1 কুলম্ব 

কার্যের ধারণা থেকে বিভবভেদের ধারণাঃ দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভবপার্থক্য হল একটি বিন্দু থেকে অপর বিন্দুটিতে একক ধনাত্মক আধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ।

বিভবভেদের এককঃ বিভবপ্রভেদের SI ও ব্যবহারিক একক হল ভােল্ট (Volt)।

দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভবপ্রভেদ 1 V বলতে বােঝায় এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে 1C ধনাত্মক আধান নিয়ে যেতে 1 জুল কার্য করতে হয়। 

জেনে রাখা ভালো, পৃথিবীর তড়িৎবিভবের মান শূন্য ধরা হয়। একটি বস্তু ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বলতে বােঝায় বস্তুটির বিভব পৃথিবীর বিভবের তুলনায় বেশি এবং একটি বস্তু ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বলতে বােঝায় বস্তুটির বিভব পৃথিবীর বিভবের তুলনায় কম।


স্থির তড়িৎ ও চল তড়িৎ। তড়িৎ আধানের একক ও মাত্রা। 

তড়িদাধান (Electric charge)

দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণে বস্তু দুটিতে তড়িতের সঞ্চার হয় এবং যখনই কোনাে বস্তুতে তড়িতের সঞ্চার ঘটে, তখন বলা হয় যে, বস্তুটি তড়িদাহিত হয়েছে।

তড়িৎ দুই ধরনের, যথা

(i) স্থির তড়িৎ (Static electricity) এবং

(ii) চলতড়িৎ (Current electricity)।

যে তড়িৎ উৎপত্তিস্থলেই স্থির অবস্থায় আবদ্ধ থাকে এবং সেই স্থান থেকে অন্যত্র যেতে পারে না তাকে বলা হয় স্থির তড়িৎ এবং যে তড়িৎ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে তাকে বলা হয় চল তড়িৎ। 

যে ভৌত ধর্মের জন্য কোনাে বস্তু কণাকে একটি তড়িৎচৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে কণাটি একটি বল অনুভব করে তাকেই তড়িদাধান বলে। তড়িদাধান দুই প্রকার হয়- (i) ধনাত্মক ও (ii) ঋণাত্মক

যে-কোনাে বস্তুর আহিতকরণের ব্যাখ্যা করা যায় ইলেকট্রনের আধিক্য বা ঘাটতির সাহায্যে। দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণের ফলে একটি বস্তু থেকে অন্যটিতে ইলেকট্রনের স্থানান্তর ঘটে। যে বস্তুটি ইলেকট্রন হারায় সেই বস্তুটি ধনাত্মক আধান গ্রস্ত হয়। যে বস্তুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেটি ঋণাত্মক আধানগ্রস্ত হয়।

আধানের মাত্রা ও এককঃ

  • গাণিতিক ভাবে তড়িৎ আধানকে Ampere*Second দ্বারা প্রকাশ করা যায়। তাই তড়িদাধানের মাত্রা [IT];
  • তড়িদাধানের CGS একক esu বা স্ট্যাটকুলম্ব
  • তড়িদাধানের SI একক হল কুলম্ব (C)।

1 C = 3 x 109 esu বা স্ট্যাটকুলম্ব

তড়িৎ আধান কী ধরণের রাশিঃ স্কেলার রাশি 


তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা EMF।

তড়িচ্চালক বল এবং তড়িৎচালক বলের উৎস হিসেবে তড়িৎ কোষ (Electromotive force and electric cell as a source of EMF)।

কোনাে স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে হলে যেমন বল প্রয়ােগ করতে হয়, তেমনই কোনাে পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহমাত্রা সৃষ্টি করার জন্য বা প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি বলের প্রয়ােজনীয়তার কথা ভাবা যায়। একেই বলা হয় তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা সংক্ষেপে EMF।

একথা মনে রাখা আবশ্যক যে, ভিন্ন বিভবযুক্ত দুটি বস্তুকে একটি পরিবাহী দ্বারা যুক্ত করলে উচ্চ বিভবযুক্ত বস্তু থেকে নিম্ন বিভবযুক্ত বস্তুতে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয়ে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার সৃষ্টি করবে। সুতরাং, বিভব পার্থক্যের কারণে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। কাজেই তড়িচ্চালক বল কে নিম্নলিখিতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়—

তড়িৎচালক বলের সংজ্ঞাঃ যার প্রভাবে বা যে কারণে তড়িৎ বর্তনীর কোনাে অংশে রাসায়নিক শক্তি বা অন্য কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় তড়িচ্চালক বল (EMF)।

তড়িচ্চালক বলের এককঃ তড়িচ্চালক বলের SI এবং ব্যবহারিক একক ভােল্ট(Volt)। 

তড়িচ্চালক বল কোন ধরনের রাশিঃ এটি একটি স্কেলার রাশি। 

তড়িচ্চালক বলের মাত্রাঃ তড়িৎচালক বলকে গাণিতিক ভাবে SI পদ্ধতিতে জুল/কুলম্ব বলা যেতে পারে। অর্থাৎ তড়িৎচালক বলের মাত্রা হবে [কার্যের মাত্রা]/[আধাানের মাত্রা] = [ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1

তড়িৎচালক বলের উৎসঃ তড়িৎচালক বলের উৎস হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কোনাে না কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ডায়নামাে, তাপযুগ্ম, তড়িৎ কোশ, আলোক-তড়িৎ কোশ প্রভৃতি হল তড়িচ্চালক বলের উৎস।

তড়িচ্চালক বল মাপার যন্ত্রঃ পোটেনশিওমিটার ।

কার্য করার জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তির উৎস হিসেবে তড়িৎকোশঃ

সচল যন্ত্রাংশবিহীন তড়িৎ উৎসই হল তড়িৎকোশ। তড়িৎকোশ রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে বর্তনীতে স্থায়ী তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে।

বিচ্ছিন্ন বা মুক্ত অবস্থায় কোনাে তড়িৎকোশের তড়িদ্দার দুটির মধ্যে যে বিভবপার্থক্যের সৃষ্টি হয় তাকেই বলা হয় কোশটির তড়িৎচ্চালক বল। একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।

কোনাে কোষের তড়িচ্চালক বল 1.5 ভোল্ট বলতে বােঝায় যে, কোষের ধনাত্মক মেরু থেকে ঋণাত্মক মেরুতে 1 কুলম্ব তড়িদাধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ হয় 1.5 জুল।


মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০

রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ (Stoichiometric Equations) | রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একটি পারমাণবিক ঘটনা বলা হয় কেন?

 রাসায়নিক গণনাঃ কোনাে রাসায়নিক সংকেত বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ থেকে বিভিন্ন পদার্থের ভর, আয়তন, বাষ্প ঘনত্ব ইত্যাদি নির্ণয় করাকে রাসায়নিক গণনা বলে।

রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ (Stoichiometric Equations) 

বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরমাণু সংখ্যার সমতা বজায় রেখে চিহ্ন ও সংকেতের সাহায্যে কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে।

উদাহরণঃ  হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়। এখানে বিক্রিয়ক হল হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থ হল হাইড্রোজেন ক্লোরাইড। বিক্রিয়াটির রাসায়নিক সমীকরণ হল H2 + Cl2= 2HCl

রাসায়নিক সমীকরণের তাৎপর্যঃ  রাসায়নিক সমীকরণ থেকে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি জানা যায়।

গুণগত তথ্যঃ রাসায়নিক সমীকরণের গুণগত তথ্য হিসেবে জানা যায় -

1) বিকারক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের সংকেত ও নাম।

2) বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থগুলো উপস্থিত মৌলের নাম ও চিহ্ন। 3 বিকারক ও বিক্রিয়ক পদার্থের আণবিক সংযুক্তি।

পরিমাণগত তথ্যঃ পরিমাণগত তথ্য হিসেবে রাসায়নিক সমীকরণ থেকে জানা যায়ঃ

1) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থের অণু ও পরমাণুর সংখ্যা।

2) বিকারক ও উৎপন্ন পদার্থসমূহের ওজন ও তাদের অনুপাত।

3) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থ গ্যাসীয় হলে সমচাপ ও উয়তায় এদের আয়তনগত অনুপাত।

4) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থের ভরের সমতা সাপেক্ষে ভর সংরক্ষণ সূত্রের সত্যতা।

উদাহরণঃ 2H2 + O2=2H2O এই সমীকরণ থেকে আমরা যে যে তথ্য পাই সেগুলি নীচে দেওয়া হলঃ

গুণগত তথ্যঃ

1) বিকারকের নাম হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এবং তাদের সংকেত যথাক্রমে H2 ও O2। বিক্রিয়াজাত পদার্থ হল জল ও তার সংকেত H2O।

2) হাইড্রোজেনের চিহ্ন হল H এবং অক্সিজেনের চিহ্ন হল O।

3) জল হল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মৌলের একটি যৌগিক পদার্থ।

পরিমাণগত তথ্যঃ

1) 2-অণু হাইড্রোজেন এবং 1 -অণু অক্সিজেনের পারস্পরিক বিক্রিয়ায় 2-অণু জল গঠিত হয়। 4-পরমাণু হাইড্রোজেন এবং 2-পরমাণু অক্সিজেন, মােট 6টি পরমাণু দিয়ে 2-অণু জল সৃষ্টি হয়।

2)

2H2                +               O2      =       2H2

2x2x1= 4        +        2x16=32  =       2(2x1+16)=32

4 ভাগ ওজনের হাইড্রোজেন 32 ভাগ ওজনের অক্সিজেনের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে 36 ভাগ জল উৎপন্ন করে।H2, O2 H2O-এর ওজনগত অনুপাত হল 4: 32:36 বা 1: 8:9 ।

3) গ্যাসীয় অবস্থায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন যুক্ত হয়ে স্টিম উৎপন্ন করলে যদি প্রত্যেকটির আয়তন উষ্ণতা ও চাপে নির্ণীত হয়, তবে তাদের আয়তনগত অনুপাত হয় 2 : 1 : 2।

4) 4 ভাগ ভরের H এবং 32 ভাগ ভরের O অর্থাৎ মােট 36 ভাগ ভরের বিক্রিয়ক উৎপন্ন করে 36 ভাগ ভরের জল অর্থাৎ বিক্রিয়াজাত পদার্থ। উভয়পক্ষে মােট ভরের পরিমাণ সমান হওয়ায় নিশ্চিতরূপে জানা গেল যে, ভরের সংরক্ষণ সূত্র মান্য হয়।


কেরোসিন বা কয়লা পুড়তে অক্সিজেন চাই। কিন্তু খােলা হাওয়ায় কেরােসিন বা কয়লা কি নিজে নিজ জ্বলে ওঠে?

রাসায়নিক বিক্রিয়ার অন্যতম প্রয়ােজনীয় প্রভাবক হল তাপ। কেরোসিন বা কয়লার দহনের জন্য প্রয়ােজনীয় উষ্ণতা খােলা হাওয়ায় থাকে না, তাই উপযুক্ত তাপের অভাবে এই সকল দাহ্য পদার্থ নিজে নিজে জ্বলে ওঠে না।


রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একটি পারমাণবিক ঘটনা বলা হয় কেন?

উত্তর। 

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণু অংশগ্রহণ করে। বিক্রিয়ায় সম্পূর্ণ নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থের অণু গঠিত হলেও বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণকারী পদার্থের পরমাণুর সংখ্যা ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরমাণুসংখ্যা সর্বদা সমান থাকে। বিক্রিয়ার আগে ও পরে মােট ভর সমান থাকে। তাই বলা যায়, রাসায়নিক বিক্রিয়া একটি পারমাণবিক ঘটনা।

তড়িৎ প্রবাহমাত্রা কাকে বলে? তড়িৎ প্রবাহমাত্রার একক কী?

 তড়িৎ প্রবাহমাত্রা (Electric Current)

তড়িৎচালক বলের প্রভাবে কোনাে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে রক্ত ইলেকট্রনের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহই হল তড়িৎপ্রবাহ। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ধনাত্মক আধানের প্রবাহের অভিমুখ কি তড়িৎ প্রবাহমাত্রার অভিমুখ ধরা হয়। কাজেই পরিবাহীর মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহ যে অভিমুখে ঘটে তড়িৎ প্রবাহ মাত্রার অভিমুখ তার বিপরীত দিকে ধরা হয়।

Photo: Current
তড়িৎ প্রবাহমাত্রা 

তড়িৎ প্রবাহমাত্রাঃ

পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয় তাকে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা বলা হয়।

পরিবাহীর কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যদি t সেকেন্ড সময়ে Q পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তবে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা হয় I = Q/t অর্থাৎ, প্রবাহমাত্রা = আধান/সময়

রাশিঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রার শুধু মান আছে, তাই এটি একটি স্কেলার রাশি।

তড়িৎ প্রবাহমাত্রার এককঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রা CGS একক হল emu (Electromagnetic unit) এবং SI পদ্ধতিতে ব্যবহারিক একক হল অ্যাম্পিয়ার (A)। 

কোনাে পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে 1 সেকেন্ডে 1 কুলম্ব আধান প্রবাহিত হলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহমাত্রা হয় 1 অ্যাম্পিয়ার (A)।

1 emu প্রবাহমাত্রা = 10 A প্রবাহমাত্রা

তড়িৎ প্রবাহ দুই ধরনের হয়, যেমন-

1) সমপ্রবাহ(Direct current or DC) এবং 

2) পরবর্তী প্রবাহ(Alternating Current or AC) 

1) সমপ্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সবসময় একই দিকে হয়।

তড়িৎকোশ সমপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। 

2) পরিবর্তী প্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হয়।

AC ডায়নামোর সাহায্যে পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করা যায়।

আকার ও অবস্থান অনুসারে সৌরজগতের ধারণা

সৌরজগতের বড় বড় গ্রহগুলো দূরে অবস্থিত একথা ঠিক নয়। সূর্য থেকে আসতে আসতে দূরে গেলে যে ক্রম আমরা পাই সেটা হল, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো। যদিও বর্তমানে প্লুটোকে গ্রহের পর্যায়ে ধরা হয়না, কারণ এর আকার অন্যান্য গ্রহের তুলনায় অনেক ছোটো। একে বরং বামন গ্রহ বা Dwarf Planet বলা হয়।

যাই হোক, আকারের ক্রম অনুসারে ছোটো থেকে বড় সাজালে যে ক্রম আমরা পাই তা হলো,

প্লুটো, বুধ, মঙ্গল, শুক্র, নেপচুন, পৃথিবী, ইউরেনাস, শনি, বৃহস্পতি

পৃথিবীর তুলনায় কোন গ্রহ কতটুকু বড়ো বা ছোটো এবং প্রত্যেকটি গ্রহের আনুমানিক ব্যাস নীচে দেওয়া হলো।


গ্রহের নাম ব্যাস পৃথিবীর কত গুণ
প্লুটো(Pluto) (বামন গ্রহ) ব্যাস = 4879.4 কিমি পৃথিবীর আকারের 0.38 গুণ
মঙ্গল(Mars) ব্যাস = 6787 কিমি পৃথিবীর আকারের 0.53 গুণ
শুক্র(Venus) ব্যাস = 12,104 কিমি পৃথিবীর আকারের 0.95 গুণ
পৃথিবী(Earth) ব্যাস = 12,756 কিমি পৃথিবীর আকারের 1.00 গুণ
নেপচুন(Neptune) ব্যাস = 49,528 কিমি পৃথিবীর আকারের 3.88 গুণ
ইউরেনাস (Uranus) ব্যাস = 51,118 কিমি পৃথিবীর আকারের 4.00 গুণ
শনি(Saturn) ব্যাস = 120,660 কিমি পৃথিবীর আকারের 9.45 গুণ
বৃহস্পতি(Jupiter) ব্যাস =142,800 কিমি পৃথিবীর আকারের 11.2 গুণ
অবস্থান ও আকার অনুযায়ী সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের চিত্র।

Photo: Solar System

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০

অনুঘটক কাকে বলে? একটি উদাহরণের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এর প্রভাব বুঝিয়ে দাও।

অনুঘটক (Catalyst) : যেসব রাসায়নিক পদার্থ কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় স্বল্প পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার বেগকে ত্বরান্বিত করে, কিন্তু বিক্রিয়া শেষে নিজে ভর ও ধর্মে অপরিবর্তিত থাকে, সেইসব পদার্থকে অনুঘটক বলে। কেন O2 প্রস্তুতিতে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড, H2SO4 প্রস্তুতিতে ভ্যানাডিয়াম পেন্টক্সাইড ইত্যাদি। 

 উদাহরণঃ পরীক্ষাগারে শুধুমাত্র পটাশিয়াম ক্লোরেটকে প্রায় ৬৩০°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে, এটি খুব ধীরে ধীরে বিয়ােজিত হয়ে পটাশিয়াম ক্লোরাইড ও অল্প পরিমাণ অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এভাবে অতি উচ্চ তাপমাত্রায় অক্সিজেন উৎপাদনের সময়ে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে এবং উৎপন্ন অক্সিজেনের পরিমাণ ও তুলনামূলক ভাবে কম হয়। তাছাড়া ৬৩০°C  তাপমাত্রা সৃষ্টি করতে যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার হয়, তা অর্থনৈতিক নয়। 

দেখা গেছে , পরীক্ষাগারে ৪ ভাগ ওজনের পটাশিয়াম ক্লোরেটের সঙ্গে ১ ভাগ ওজনের ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড মিশিয়ে দিলে খুব কম তাপমাত্রায় (২৩০°C-২৫০°C) অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড এর ভর ও ধর্ম অপরিবর্তিত থাকে, শুধুমাত্র বিক্রিয়ার বেগ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, অক্সিজেন প্রস্তুতির এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড অনুঘটকের কাজ করে।

2KClO3+[MnO2,230°-250°C] = 2KCI +3O2(গ্যাস)+[MnO2]

অনুঘটকের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী জানতে এখানে ক্লিক করুন। 


Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts