এই ব্লগটি সন্ধান করুন

রসায়ন বিজ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রসায়ন বিজ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২

নিউক্লীয় বল (Nuclear Force) বল কী? নিউক্লীয় বলের (Nuclear Force) বৈশিষ্ট্য কী? এর উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর | 

নিউক্লীয় বল (Nuclear Force) : পরমাণুর নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে ক্রিয়াশীল যে আকর্ষণ বলের জন্য প্রোটন ও নিউট্রন নিউক্লিয়াসের মধ্যে আবদ্ধ থাকে, তাকে নিউক্লীয় বল (Nuclear Force) বলে।

নিউক্লীয় বলের (Nuclear Force) বৈশিষ্ট্য কী?

  1. নিউক্লীয় বলের অস্তিত্ব শুধুমাত্র নিউক্লিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
  2. এই বলের শুধুমাত্র আকর্ষণ ক্ষমতা আছে, বিকর্ষণ ক্ষমতা নেই।
  3. এই বল কেবলমাত্র নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে 3 ক্রিয়াশীল থাকে।

পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক তড়িগ্রস্ত কণা প্রোটন এবং নিস্তড়িৎ কণা নিউট্রন একইসঙ্গে অবস্থান করে, এই প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে অবিরাম গতিতে চার্জ বিনিময় হয় ফলে প্রোটন নিউট্রনে ও নিউট্রন প্রোটনে পরিণত হয়। এই রূপান্তর এতই দ্রুত হয়, যে ধনাত্মক তড়িগ্রস্ত প্রোটন কণার মধ্যে কুলম্বীয় বিকর্ষণ বল কার্যকরী হয় না। পরিবর্তে প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে এক তীব্র আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। যার ফলে প্রোটন ও নিউট্রন একসঙ্গে নিউক্লিয়াসে অবস্থান করতে পারে এবং পরমাণুর নিউক্লিয়াসটি সুস্থিত হয়। এই বলের মান মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলের প্রায় 1040 গুণ। এই বলের কার্যক্ষমতা প্রায় 1 ফেমটোমিটার (fm, বা 1.0 × 10 − 15 মিটার) মিটারের মধ্যে ক্রিয়াশীল থাকে।

জাপানি বিজ্ঞানী ইউকাওয়ার মতে প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে পাই মেসন কণার আদানপ্রদান হয়। এর ফলে নিউক্লীয় বলের সৃষ্টি হয়।

বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১

বর্ষাকালে ভিজে জামাকাপড় শুকোতে দেরি হয়। কিন্তু শীতকালে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় কেন?

উত্তর:
বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় বাষ্পীভবনের হার কমে যায় তাই ভিজে জামাকাপড় শুকোতে দেরি হয়। কিন্তু শীতকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্প কম থাকে বলে বাষ্পীভবনের হার বেশি হয়। তাই ভিজে জামাকাপড় থেকে জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে, শীতকালে ভিজে জামাকাপড় বর্ষাকালের তুলনায় তাড়াতাড়ি শুকোয় ৷

দুটি একই মাপের কাপড়কে একইরকমভাবে জলে ডোবাও। দুটি টুকরোকেই একইরকমভাবে নিংড়ে নাও। এবার একটি কাপড়ের টুকরোকে কয়েকটি ভাজ করে শুকোতে দাও। তার পাশে অন্য কাপড়ের টুকরোটিকে না ভাঁজ করে সম্পূর্ণ খুলে শুকোতে দাও। কোন্ কাপড়টি আগে শুকিয়ে গেল? ঘটনাটি থেকে কী সিদ্ধান্ত নিতে পারো?

উত্তর:
সম্পূর্ণ খুলে শুকোতে দেওয়া কাপড়টি আগে শুকিয়ে যাবে।

ঘটনাটি থেকে বলা যায়, জল তার উপরিতল থেকে বাষ্পে পরিণত হয়। তরলের উপরিতলের ক্ষেত্রফল যত বাড়ে তরলের বাষ্পীভবন তত দ্রুত হয়। একারণে ভাজ করা কাপড়টি পরে শুকাবে, কারণ তার উপরিতলের ক্ষেত্রফল কম। আর খুলে শুকোতে দেওয়া কাপড়টি দ্রুত শুকোবে, কারণ তার উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেশি।

পারদ থার্মোমিটারের কুণ্ডে ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখলে কী দেখা যায়? 

উত্তর। থার্মোমিটারের কুণ্ডে ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখলে ভিজে কাপড়ের জল কুণ্ড ও কুণ্ডে থাকা পারদ থেকে লীনতাপ শোষণ করে বাষ্পীভূত হয়। ফলে, পারদের উষ্ণতা কমে গিয়ে পারদসূত্র নীচে নেমে আসে।


একটি পাত্রে জল নিয়ে তা উনুনে বসিয়ে ফোটাতে থাকলে কী দেখা যাবে? কেন? 

উত্তর:

একসময় সমস্ত জল ফুটতে ফুটতে শেষ হয়ে যায় ও পাত্রটি খালি হয়ে যায়।
উনুনে বসিয়ে পাত্রের জল ফোটালে সমস্ত জল ফুটতে ফুটতে বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। তাই পাত্রটি খালি হয়ে যায়।


বাষ্পায়নের ফলে শীতলতার উৎপত্তির কারণ কী?

উত্তর:
তরল বাষ্পে রূপান্তরিত হওয়ার সময় তাকে বাষ্পীভবনের লীনতাপ সরবরাহ করতে হয়। বাষ্পায়নের সময় বাইরে থেকে তাপ সরবরাহের সুযোগ না থাকায় তরল নিজ দেহ বা সংলগ্ন পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় লীনতাপ সংগ্রহ করে বাষ্পীভূত হয়। তাই তরল বা তার কাছাকাছি অংশের বায়ু বা অন্যান্য বস্তু শীতল হয়ে পড়ে।


পারিপার্শ্বিক উষ্ণতা 0°C বা তার কম হলে বিশুদ্ধ বরফ গলতে পারে না কেন(ধরে নেওয়া যাক অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত আছে)? 

উত্তর:
বিশুদ্ধ বরফ গলনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম। বরফ গলার সময় এই প্রয়োজনীয় লীনতাপ পরিপার্শ্ব থেকে গ্রহণ করে। কিন্তু পরিপার্শ্বের উষ্ণতা 0°C বা তার কম হলে বরফ লীনতাপ সংগ্রহ করতে পারে না। তাই বরফ গলতে পারে না।


বরফ টুকরোর মধ্যে গর্ত করে জল রাখলে ওই জল জমে বরফ হয় না কেন?

উত্তর:
বরফ টুকরোর মধ্যে গর্ত করে জল রাখলে, ওই গর্তে ঢালা জল এবং বরফের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য থাকায়, ওই জল তাপ বর্জন করে শীতল হবে এবং সেই তাপ গ্রহণ করে কিছু পরিমাণ বরফ গলবে। এই তাপীয় আদানপ্রদানের ফলে, উষ্ণতা কমতে কমতে যখন 0°C হয়, তখন জল আর তাপ বর্জন করতে সক্ষম হবে না, কারণ উষ্ণতা সমান হলে তাপীয় সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাপের আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় 0°C উষ্ণতায় থাকা জল কঠিনে অর্থাৎ, বরফে রূপান্তরিত হতে প্রয়োজনীয় লীনতাপ সংলগ্ন পরিবেশে অর্থাৎ বরফে বর্জন করতে ব্যর্থ হবে, ফলে ওই জল জমে বরফ হয় না।


সূর্য থেকে পৃথিবীতে কোন্ পদ্ধতিতে তাপ আসে? তোমার সিদ্ধান্তের কারণ কী?

উত্তর:

সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে বিকিরণ পদ্ধতিতে। সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে বেশিরভাগ অংশেই কোনো জড় মাধ্যমের অস্তিত্ব নেই। একমাত্র বিকিরণ পদ্ধতিতেই কোনো মাধ্যম ছাড়া তাপ সঞ্চালিত হয় ৷ পরিবহণও পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যমের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে, সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে বিকিরণ প্রণালীতে।


আইসক্রিমের বাক্সে বা রেফ্রিজারেটরের(Refrigerator) দেয়ালে দুটি স্তর থাকে কেন?

উত্তর:
আইসক্রিমের বাক্স বা রেফ্রিজারেটরের(Refrigerator) বহিরাবরণ দুই দেয়ালবিশিষ্ট হয়। এই দুই দেয়ালের মধ্যবর্তী অংশ তাপের কুপরিবাহী কাচতন্তু (Glasswood) দ্বারা পূর্ণ থাকে। কাচতন্তুর মধ্যবর্তী ফাকা অংশে থাকে বায়ু। বায়ু ও কাচতন্তু উভয়ই তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় পরিবহণ বা পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ সহজে বাক্স বা রেফ্রিজারেটরের ভিতর আসতে পারে না। তাই আইসক্রিম সহজে গলে যায় না এবং রেফ্রিজারেটরের অভ্যন্তরও দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠান্ডা থাকে।



শীতপ্রধান দেশগুলিতে গ্রিন হাউসে (Green house) গাছপালা সতেজ থাকে কেন? 

উত্তর:
শীতপ্রধান দেশগুলিতে শৌখিন গাছপালা, সবজি, ফল ইত্যাদি সতেজ রাখার জন্য কাচের ঘর বা গ্রিন হাউসে(Green House) রাখা হয়। কাচ মাধ্যমে তাপীয় বিকিরণ ঘটায় দিনেরবেলায় সূর্য থেকে আসা ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য কাচ ভেদ করে ঘরের ভিতর আসে ও গাছপালা সালোকসংশ্লেষ করে। কিন্তু ঘরের ভিতরে থাকা গাছপালা অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণতায় বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাপ বিকিরণ করে যা কাচ ভেদ করে বাইরে যেতে পারে না, ফলে ঘরের ভেতর যথেষ্ট গরম থাকে এবং উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকে। এ কারণে গ্রিন হাউসের মধ্যে গাছপালা সতেজ থাকে।

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১

"হীরে চুম্বন করলে মানুষের মৃত্যু হয়" - এই কথাটি কতটা যুক্তিযুক্ত?


ছোটো উত্তর : কথাটা যতোটা সত্য ততটাই মিথ্যে।

বড় উত্তর :

পৃথিবীর সব থেকে কঠিন মৌলিক পদার্থের নাম কি জানেন? হীরে বা হীরা। চুম্বন তো দূরের কথা, হীরে চুষে চুষে আপনার প্রাণ পাখি বেরিয়ে যেতে পারে কিন্তু হীরের একটা অণু বা পরমাণু আপনি সেখান থেকে বের করতে পারবেন না।

আরেকটু উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি। হাইড্রোক্লোরিক/সালফিউরিক এসিডের 50 শতাংশ দ্রবণ মানুষের হাত পুড়িয়ে দিতে পারে, মুহূর্তের মধ্যে। কিন্তু এই এসিডের 100 শতাংশের দ্রবণে হীরে ডুবিয়ে রাখলেও হীরের গায়ে দাগ কাটতে পারে না। সাধারন ঘরের তাপ ও চাপে হীরা কোনো রাসায়নিকের সাথে বিক্রিয়া করে না। এমনকী, একটা হীরা কাটার জন্যে আরেকটা শক্ত হীরা ব্যবহার করা হয়।

তবে, আগেকার মুভি বা গল্পের বইয়ে কেন দেখাতো, হীরের আংটি চুম্বন করলে মানুষ মারা যায়। আসলে, সেখানে অর্ধসত্য বলা হয়। আগেকার দিনে গুপ্তচর বা রাজা বা রানীরা হীরার বা সাধারণ আংটির মধ্যে খুবই বিষাক্ত বিষ লুকিয়ে রাখতেন।

বিষ রাখার জন্যে এর থেকে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে বলুন। ধরুন কোনো গুপ্তচর ফাঁদে পড়ে গেলো, চারিদিক ঘিরে নেওয়া হয়েছে। গুপ্তচর বৃত্তির সাজা কিন্তু খুব কঠিন হতো। তাই তারা ধরা পড়ার আগেই হাতের আংটি চুম্বন করে নিতো, খুব তাড়াতাড়ি। শরীরের অন্য অংশে বিষ লুকিয়ে রাখা ও প্রয়োজনে তার ব্যবহার করা খুব দুঃসাধ্যের।

একইভাবে রাজা বা রানীরা অন্য রাজার হাতে বন্দি হওয়ার আগে, আত্মসম্মান রক্ষার জন্যে, আংটি চুম্বন করে আত্মহত্যা করতেন।

যেহেতু অধিকাংশ মুভি বা গল্পে এইরকম দৃশ্যে রাজা বা রানীকে আংটি চুম্বন করে মরতে দেখা যেতো, সাধারণ মানুষের মনে হতো, হীরার আংটি চুম্বন করে মরলেন, রাজা বা রানী(রাজা বা রানীর হাতের আংটি হীরার হবে, এমন চিন্তা মাথায় আসা নিরর্থক নয়)।

তবে প্রাচীন কালে অনেকে দাঁতের মাঝে বা জামা/পোশাকের কলারের কোনায় বিশেষ "থলির" সাহায্যে বিষ লুকিয়ে রাখতেন। শোনা যায় পটাশিয়াম সায়ানাইড রাখা হতো, যেটা খেলে মানুষ মুহূর্তের মধ্যে মারা যেতে পারে।

মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০২০

ইনজেকশন দেওয়ার সময় হাওয়া ঢুকে গেলে কী সমস্যা হয়?


 ইনজেকশান বা স্যালাইন নেওয়ার সময়ে ওষুধের সাথে সাথে, রক্তের মধ্যে হাওয়া, বুদবুদের আকারে ঢুকে যেতে পারে। খুব কম পরিমাণ হাওয়া ঢুকলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

কিন্তু বড়ো আকারের হাওয়ার বুদবুদ ঢুকে গেলে, ভয়ের কারণ হতেও পারে।

এবার দেখা যাক, "বড়ো আকার" মানে কতো বড়ো। সেটাও নির্ভর করে কোন ধরণের রক্তনালীতে হাওয়া ঢুকছে।

আমাদের শরীরে সাধারণত দুই ধরণের রক্তনালী আছে।ধমনী(Artery) ও শিরা(Vein)। ধমনীর সাধারণ সংজ্ঞা হলো, যে রক্তবাহী নালী দিয়ে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে তাকে ধমনী(Artery) বলে । অন্যদিকে যে রক্তবাহী নালী দিয়ে সারা শরীর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত বাহিত হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায়(আবার শুদ্ধ হয়ে অক্সিজেন সমৃদ্ধ হওয়ার জন্যে) তাকে শিরা(Vein) বলে ।

শিরা আর ধমনীর গঠনগত পার্থক্যও আছে। কার্যগত এবং গঠনগত পার্থক্যের জন্যে হাওয়ার বুদবুদ ধমনী বা শিরাতে প্রবেশ করলে আলাদা আলাদা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এবার ধরা যাক হাওয়ার বুদবুদের আকার "খুব" বড়ো। মানে বুদবুদটি রক্তবাহী নালী রুদ্ধ বা ব্লক করে দিতে পারে, যেটা কখনোই কাম্য নয়। নিচের ছবিটা লক্ষ্য করুন।


দেখে আন্দাজ করাই যায়, বুদবুদ যদি এতটাই বড়ো হয়, যেটা সাধারণ রক্ত চলাচল ব্যাহত করে তাহলে সেটা প্রাণঘাতি হতেও পারে। আর এই বুদবুদের কারণে রক্তবাহ বন্ধ হওয়ার ঘটনা কে মেডিকেল টার্মে Air Embolism বা Gas Embolism বলা হয়।

যদি বুদবুদের আকার ছোটো হয় তাহলে বুদবুদ পুরো রক্তনালী( শিরা হোক বা ধমনী) বন্ধ করতে পারেনা, এবং কোনো সমস্যা হওয়ার কথাও না।

এখানে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার। শিরা বা ধমনীর ভেতরের ব্যাস শরীরের একেক জায়গায় একেক রকম।

মানে বুদবুদ শরীরের এক অংশে "ছোটো" হলেও হয়তো অন্য অংশে গিয়ে সেখানে ব্লকেজ করতে পারে। সে ক্ষেত্রেও embolism ঘটতে পারে।

তাহলে কি Embolism হলেই মৃত্যু অনিবার্য?

এর ছোটো উত্তর হলো, "না"। বড়ো উত্তর এরকম।

ধরা যাক, হাতের নালীতে ইনজেকশন দেওয়ার সময় "বড়ো" আকারের বুদবুদ চলে গেলো রক্তের মধ্যে, এবং সেটা হাতের মধ্যেই Embolism সৃষ্টি করলো। মানে হাতের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো। আপনি কি মরে যাবেন? কখনোই না, হয় তো হাত অসাড় হয়ে যাবে কিছুক্ষণের জন্যে। হাওয়ার বুদবুদ বের করে নিলেই আবার হাত সুস্থ হয়ে যাবে।

Photo of Injection

এবার ধরা যাক, কোনোভাবে এই বুদবুদ শরীরের সেই অঙ্গগুলোতে পৌঁছলো যেখানে এক মিনিটের জন্যে রক্ত না গেলে প্রাণ সংশয় হতে পারে। যেমন ধরা যাক, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড বা কিডনি। যেহেতু এই সমস্ত অঙ্গগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল তাই এগুলোতে Air বা Gas Embolism হলে মানুষের মৃত্যু ঘটতেই পারে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের রক্তসংহনতন্ত্রের মধ্যে দুই-তিন মিলিলিটার আকারের হাওয়ার বুদবুদ প্রাণঘাতি হতে পারে। ফুসফুসীয় শিরাতে 0.৫ থেকে এক মিলি মিললিটার আকারের হাওয়ার বুদবুদ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে, যেটা মৃত্যুর কারণ ও হতে পারে।

বুদবুদের আকারের ধারণা দেওয়ার জন্যে উপরে একটি অতি প্রচলিত ৩ মিলিলিটার সিরিঞ্জের ছবি দেওয়া হলো।

সমীক্ষায় দেখা গেছে শতকরা ৫৭ ভাগ হাড়ের সার্জন (Orthopedic surgeon) ছোটো বা বড়ো Air Embolism এর ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। যারা স্কুবা ডাইভিং করে থাকেন, তাদের মধ্যে এই Air বা Gas Embolism এর ঘটনা সব থেকে বেশি লক্ষ্য করা যায়।


এই ধরণের আরও অনেক কিছু জানতে পড়তে থাকুন আমাদের ব্লগ সহজ পাঠ । 

সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০

কুলম্বের সূত্র (Coulomb's law) | তড়িৎ বিভব কাকে বলে, বুঝিয়ে দাও। তড়িৎ বিভবের মাত্রা

কুলম্বের সূত্র (Coulomb's law)

i) দুটি স্থির বিন্দু আধানের মধ্যে কার্যকর আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল আধানদ্বয়ের পরিমাণের গুণফলের সমানুপাতিক এবং

ii) তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক।

এই বল আধানদ্বয়ের সংযােজী রেখা বরাবর ক্রিয়া করে এবং এর মান আধানগুলি যে মাধ্যমে অবস্থিত হয় তার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
Photo : Coulomb's Law

ধরা যাক, দুটি আধান q1, ও q2 পরস্পর থেকে r দূরত্বে অবস্থিত। এদের মধ্যে কার্যকর বলের মান F হলে, কুলম্বের সূত্রানুযায়ী,

F ∝ q1q2  এবং F ∝ 1/r2 অর্থাৎ F ∝ q1q2/r2,

গাণিতিক ভাবে, 

Photo : Mathematical Expression of Coulomb's Law
যেখানে k একটি ধ্রুবক যার মান F, q1, q2, ও r-এর এককের উপর এবং যে মাধ্যমে আধান দুটি অবস্থিত তার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এই  ধ্রুবকটিকে বলা হয় স্থির তড়িৎ বল ধ্রুবক বা কুলম্ব ধ্রুবক। বায়ুর ক্ষেত্রে CGS পদ্ধতিতে k = 1 হয়। সেক্ষেত্রে সূত্রটিকে লেখা যায়, F =(q1q2)/r2 


তড়িৎ বিভব কাকে বলে, বুঝিয়ে দাও। 

তড়িৎ বিজ্ঞানে তড়িৎ বিভব’-এর ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তড়িৎ প্রবাহমাত্রা মান ও প্রবাহের অভিমুখ নির্ধারণের জন্য তড়িৎ বিভব’ তথা বিভব পার্থক্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রয়োজন।

তড়িৎ বিভবঃ কোনাে পরিবাহী তড়িদাহিত হলে ওই পরিবাহী অন্য কোনাে পরিবাহীকে তড়িৎ দিতে পারে কিংবা অন্য কোনাে পরিবাহী থেকে তড়িৎ নিতে পারে। পরিবাহীর এই রকম তড়িৎ অবস্থাকে ওর তড়িৎ বিভব বলা হয়।

উচ্চ বিভব ও নিম্ন বিভবঃ কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ধনাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি উচ্চবিভবে আছে বলা হয় এবং অনুরূপভাবে কোনাে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ঋণাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি নিম্নবিভবে আছে বলা হয়। এখন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সর্বদা ইলেকট্রন (ঋণাত্মক আধানে আহিত)-এর গতির অভিমুখ বিপরীত দিকে হয়।

বিভবপার্থক্যঃ দুটি সমজাতীয় বা বিপরীত জাতীয় তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর মধ্যে বিভবের যে পার্থক্য হয়, তাকে ওদের বিভব প্রভেদ বা বিভব পার্থক্য (potential difference) বলা হয়।

কার্যের ধারণা থেকে বিভবের ধারণাঃ
অসীম দূরত্ব থেকে একটি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কার্য করতে হয় তাকে ওই বিন্দুর তড়িৎ বিভব বলে। 

গাণিতিকভাবে, অসীম দূরত্ব থেকে +Q একক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যদি একক কার্য করতে W কৃতকার্য হয় তবে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব হয়, V=W/Q একক।
অতএব, তড়িৎ বিভব = কৃতকার্য/আধান।

রাশিঃ কার্য এবং আধান উভয়ই স্কেলার রাশি হওয়ায় তড়িৎ বিভব স্কেলার রাশি।

তড়িৎ বিভবের মাত্রা=
[কার্যের মাত্রা/আধানের মাত্রা] =[ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1]

তড়িৎ বিভবের এককঃ তড়িৎ বিভবের CGS একক হল esu বা স্ট্যাটভােল্ট (statvolt) এবং SI ও ব্যবহারিক একক হল ভোল্ট (volt)।

তড়িৎবিভব মাপক যন্ত্রের নামঃ ভোল্টামিটার(Voltameter)

একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।
এই কোশের বিভব পার্থক্য নির্ভর করবে কোশের অভ্যন্তরীণ রোধ এবং সংযুক্ত রোধের উপর। 

1 volt = 1/300 esu বিভব।

কোনাে বিন্দুর তড়িৎবিভব 1 V বলতে বােঝায় অসীম দূরত্ব থেকে একটি 1 C ধনাত্মক আধানকে ওই বিন্দুতে আনতে 1 জুল কার্য করতে হবে।
1 ভোল্ট = 1 জুল /1 কুলম্ব 

কার্যের ধারণা থেকে বিভবভেদের ধারণাঃ দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভবপার্থক্য হল একটি বিন্দু থেকে অপর বিন্দুটিতে একক ধনাত্মক আধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ।

বিভবভেদের এককঃ বিভবপ্রভেদের SI ও ব্যবহারিক একক হল ভােল্ট (Volt)।

দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভবপ্রভেদ 1 V বলতে বােঝায় এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে 1C ধনাত্মক আধান নিয়ে যেতে 1 জুল কার্য করতে হয়। 

জেনে রাখা ভালো, পৃথিবীর তড়িৎবিভবের মান শূন্য ধরা হয়। একটি বস্তু ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বলতে বােঝায় বস্তুটির বিভব পৃথিবীর বিভবের তুলনায় বেশি এবং একটি বস্তু ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বলতে বােঝায় বস্তুটির বিভব পৃথিবীর বিভবের তুলনায় কম।


স্থির তড়িৎ ও চল তড়িৎ। তড়িৎ আধানের একক ও মাত্রা। 

তড়িদাধান (Electric charge)

দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণে বস্তু দুটিতে তড়িতের সঞ্চার হয় এবং যখনই কোনাে বস্তুতে তড়িতের সঞ্চার ঘটে, তখন বলা হয় যে, বস্তুটি তড়িদাহিত হয়েছে।

তড়িৎ দুই ধরনের, যথা

(i) স্থির তড়িৎ (Static electricity) এবং

(ii) চলতড়িৎ (Current electricity)।

যে তড়িৎ উৎপত্তিস্থলেই স্থির অবস্থায় আবদ্ধ থাকে এবং সেই স্থান থেকে অন্যত্র যেতে পারে না তাকে বলা হয় স্থির তড়িৎ এবং যে তড়িৎ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে তাকে বলা হয় চল তড়িৎ। 

যে ভৌত ধর্মের জন্য কোনাে বস্তু কণাকে একটি তড়িৎচৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে কণাটি একটি বল অনুভব করে তাকেই তড়িদাধান বলে। তড়িদাধান দুই প্রকার হয়- (i) ধনাত্মক ও (ii) ঋণাত্মক

যে-কোনাে বস্তুর আহিতকরণের ব্যাখ্যা করা যায় ইলেকট্রনের আধিক্য বা ঘাটতির সাহায্যে। দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণের ফলে একটি বস্তু থেকে অন্যটিতে ইলেকট্রনের স্থানান্তর ঘটে। যে বস্তুটি ইলেকট্রন হারায় সেই বস্তুটি ধনাত্মক আধান গ্রস্ত হয়। যে বস্তুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেটি ঋণাত্মক আধানগ্রস্ত হয়।

আধানের মাত্রা ও এককঃ

  • গাণিতিক ভাবে তড়িৎ আধানকে Ampere*Second দ্বারা প্রকাশ করা যায়। তাই তড়িদাধানের মাত্রা [IT];
  • তড়িদাধানের CGS একক esu বা স্ট্যাটকুলম্ব
  • তড়িদাধানের SI একক হল কুলম্ব (C)।

1 C = 3 x 109 esu বা স্ট্যাটকুলম্ব

তড়িৎ আধান কী ধরণের রাশিঃ স্কেলার রাশি 


তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা EMF।

তড়িচ্চালক বল এবং তড়িৎচালক বলের উৎস হিসেবে তড়িৎ কোষ (Electromotive force and electric cell as a source of EMF)।

কোনাে স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে হলে যেমন বল প্রয়ােগ করতে হয়, তেমনই কোনাে পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহমাত্রা সৃষ্টি করার জন্য বা প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি বলের প্রয়ােজনীয়তার কথা ভাবা যায়। একেই বলা হয় তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা সংক্ষেপে EMF।

একথা মনে রাখা আবশ্যক যে, ভিন্ন বিভবযুক্ত দুটি বস্তুকে একটি পরিবাহী দ্বারা যুক্ত করলে উচ্চ বিভবযুক্ত বস্তু থেকে নিম্ন বিভবযুক্ত বস্তুতে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয়ে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার সৃষ্টি করবে। সুতরাং, বিভব পার্থক্যের কারণে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। কাজেই তড়িচ্চালক বল কে নিম্নলিখিতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়—

তড়িৎচালক বলের সংজ্ঞাঃ যার প্রভাবে বা যে কারণে তড়িৎ বর্তনীর কোনাে অংশে রাসায়নিক শক্তি বা অন্য কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় তড়িচ্চালক বল (EMF)।

তড়িচ্চালক বলের এককঃ তড়িচ্চালক বলের SI এবং ব্যবহারিক একক ভােল্ট(Volt)। 

তড়িচ্চালক বল কোন ধরনের রাশিঃ এটি একটি স্কেলার রাশি। 

তড়িচ্চালক বলের মাত্রাঃ তড়িৎচালক বলকে গাণিতিক ভাবে SI পদ্ধতিতে জুল/কুলম্ব বলা যেতে পারে। অর্থাৎ তড়িৎচালক বলের মাত্রা হবে [কার্যের মাত্রা]/[আধাানের মাত্রা] = [ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1

তড়িৎচালক বলের উৎসঃ তড়িৎচালক বলের উৎস হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কোনাে না কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ডায়নামাে, তাপযুগ্ম, তড়িৎ কোশ, আলোক-তড়িৎ কোশ প্রভৃতি হল তড়িচ্চালক বলের উৎস।

তড়িচ্চালক বল মাপার যন্ত্রঃ পোটেনশিওমিটার ।

কার্য করার জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তির উৎস হিসেবে তড়িৎকোশঃ

সচল যন্ত্রাংশবিহীন তড়িৎ উৎসই হল তড়িৎকোশ। তড়িৎকোশ রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে বর্তনীতে স্থায়ী তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে।

বিচ্ছিন্ন বা মুক্ত অবস্থায় কোনাে তড়িৎকোশের তড়িদ্দার দুটির মধ্যে যে বিভবপার্থক্যের সৃষ্টি হয় তাকেই বলা হয় কোশটির তড়িৎচ্চালক বল। একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।

কোনাে কোষের তড়িচ্চালক বল 1.5 ভোল্ট বলতে বােঝায় যে, কোষের ধনাত্মক মেরু থেকে ঋণাত্মক মেরুতে 1 কুলম্ব তড়িদাধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ হয় 1.5 জুল।


বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০২০

গ্রিনহাউস প্রভাব বা ইফেক্ট | Greenhouse Effect in Bengali

গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট

বায়ুমণ্ডলে মূলত CO2-এর ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে বলে গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট। 

ব্যাখ্যাঃ গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট হল পরিবেশকে দূষিত করার একটি অন্যতম পদ্ধতি। ইংরেজি গ্রিনহাউস শব্দটির অর্থ হল গাছপালা পরিচর্যার জন্য কাচের ঘর। এই কাচের ঘরের মধ্যে দিয়ে সুর্যের আলাে যেমন ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আকারে অবাধে প্রবেশ করে এবং ওই ঘরের তাপমাত্রা বাড়ায় তেমনই পৃথিবীকে বিশাল কাচের ঘরের মতাে বা গ্রিনহাউসের মতাে ঘিরে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। সৌরশক্তি এই বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের ভিতর দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় এবং পুনরায় বৃহৎ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি (infrared ray) রূপে মহাশূনে ফিরে যাওয়ার সময় কিছু তাপশক্তি আবদ্ধ হয়। ফলে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

গ্রিনহাউস গ্যাসঃ বায়ুমণ্ডলে যে সমস্ত গ্যাসের উপস্থিতির জন্য গ্রিনহাউস ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।

যেমন CO2 (প্রধান), জলীয় বাষ্প, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে বড়াে বড়াে শহর যেমন—

দিল্লি, মুম্বই, কলকাতায় অরণ্য নিধনের ফলে অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যান চলাচলে CO-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার উষ্ণতা 4°C থেকে 6°C বেড়েছে। মনে রাখবে O2 এবং N2 গ্রিনহাউস গ্যাস নয়।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিঃ গ্রিনহাউসের প্রভাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে বেড়ে চলেছে। যেমন— 1850 থেকে 1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে 0.5°C।

আবার, 1900 থেকে 2000 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়েছে 1°C। সুতরাং, প্রাকৃতিক পরিবেশ যে ক্রমশ গরম হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান অবস্থাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।

গ্রিনহাউস প্রভাব ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলাফলঃ

  1. পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ আরও বেশি করে গলবে।
  2. বরফ গলা জল সমুদ্রের জলে যুক্ত হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি করবে।
  3. সমুদ্রপৃষ্ঠের জলতল বাড়ার জন্য উপকূলের নীচু জমি জলমগ্ন হবে।
  4. ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশের কিছু অংশ জলে ডুবে যাবে।
  5. উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে দাবানলের দ্বারা বনভূমি নষ্ট হবে।

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে কার্যকারী এবং দৈনন্দিন জীবনে রূপায়িত করা সম্ভব এমন কিছু উপায়ঃ

  1. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমালে CO2-এর উৎপাদন হ্রাস পাবে। সেই দিকে লক্ষ রেখেই অপ্রচলিত বা পুনর্নবীকরণযােগ্য শক্তির ব্যবহারে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।
  2. গ্রিনহাউস প্রভাবকে হ্রাস করার জন্য বনভূমি একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বনভূমি সংরক্ষণে যথেষ্ট নজর দিতে হবে। অর্থাৎ, বনভূমি ধ্বংস না করে আরও নতুন বনভূমি সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে। 
  3. ক্লোরােফ্লুরােকার্বন জাতীয় পদার্থের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। সম্ভব হলে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০

রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ (Stoichiometric Equations) | রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একটি পারমাণবিক ঘটনা বলা হয় কেন?

 রাসায়নিক গণনাঃ কোনাে রাসায়নিক সংকেত বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ থেকে বিভিন্ন পদার্থের ভর, আয়তন, বাষ্প ঘনত্ব ইত্যাদি নির্ণয় করাকে রাসায়নিক গণনা বলে।

রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ (Stoichiometric Equations) 

বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরমাণু সংখ্যার সমতা বজায় রেখে চিহ্ন ও সংকেতের সাহায্যে কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে।

উদাহরণঃ  হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়। এখানে বিক্রিয়ক হল হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থ হল হাইড্রোজেন ক্লোরাইড। বিক্রিয়াটির রাসায়নিক সমীকরণ হল H2 + Cl2= 2HCl

রাসায়নিক সমীকরণের তাৎপর্যঃ  রাসায়নিক সমীকরণ থেকে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি জানা যায়।

গুণগত তথ্যঃ রাসায়নিক সমীকরণের গুণগত তথ্য হিসেবে জানা যায় -

1) বিকারক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের সংকেত ও নাম।

2) বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থগুলো উপস্থিত মৌলের নাম ও চিহ্ন। 3 বিকারক ও বিক্রিয়ক পদার্থের আণবিক সংযুক্তি।

পরিমাণগত তথ্যঃ পরিমাণগত তথ্য হিসেবে রাসায়নিক সমীকরণ থেকে জানা যায়ঃ

1) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থের অণু ও পরমাণুর সংখ্যা।

2) বিকারক ও উৎপন্ন পদার্থসমূহের ওজন ও তাদের অনুপাত।

3) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থ গ্যাসীয় হলে সমচাপ ও উয়তায় এদের আয়তনগত অনুপাত।

4) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থের ভরের সমতা সাপেক্ষে ভর সংরক্ষণ সূত্রের সত্যতা।

উদাহরণঃ 2H2 + O2=2H2O এই সমীকরণ থেকে আমরা যে যে তথ্য পাই সেগুলি নীচে দেওয়া হলঃ

গুণগত তথ্যঃ

1) বিকারকের নাম হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এবং তাদের সংকেত যথাক্রমে H2 ও O2। বিক্রিয়াজাত পদার্থ হল জল ও তার সংকেত H2O।

2) হাইড্রোজেনের চিহ্ন হল H এবং অক্সিজেনের চিহ্ন হল O।

3) জল হল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মৌলের একটি যৌগিক পদার্থ।

পরিমাণগত তথ্যঃ

1) 2-অণু হাইড্রোজেন এবং 1 -অণু অক্সিজেনের পারস্পরিক বিক্রিয়ায় 2-অণু জল গঠিত হয়। 4-পরমাণু হাইড্রোজেন এবং 2-পরমাণু অক্সিজেন, মােট 6টি পরমাণু দিয়ে 2-অণু জল সৃষ্টি হয়।

2)

2H2                +               O2      =       2H2

2x2x1= 4        +        2x16=32  =       2(2x1+16)=32

4 ভাগ ওজনের হাইড্রোজেন 32 ভাগ ওজনের অক্সিজেনের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে 36 ভাগ জল উৎপন্ন করে।H2, O2 H2O-এর ওজনগত অনুপাত হল 4: 32:36 বা 1: 8:9 ।

3) গ্যাসীয় অবস্থায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন যুক্ত হয়ে স্টিম উৎপন্ন করলে যদি প্রত্যেকটির আয়তন উষ্ণতা ও চাপে নির্ণীত হয়, তবে তাদের আয়তনগত অনুপাত হয় 2 : 1 : 2।

4) 4 ভাগ ভরের H এবং 32 ভাগ ভরের O অর্থাৎ মােট 36 ভাগ ভরের বিক্রিয়ক উৎপন্ন করে 36 ভাগ ভরের জল অর্থাৎ বিক্রিয়াজাত পদার্থ। উভয়পক্ষে মােট ভরের পরিমাণ সমান হওয়ায় নিশ্চিতরূপে জানা গেল যে, ভরের সংরক্ষণ সূত্র মান্য হয়।


কেরোসিন বা কয়লা পুড়তে অক্সিজেন চাই। কিন্তু খােলা হাওয়ায় কেরােসিন বা কয়লা কি নিজে নিজ জ্বলে ওঠে?

রাসায়নিক বিক্রিয়ার অন্যতম প্রয়ােজনীয় প্রভাবক হল তাপ। কেরোসিন বা কয়লার দহনের জন্য প্রয়ােজনীয় উষ্ণতা খােলা হাওয়ায় থাকে না, তাই উপযুক্ত তাপের অভাবে এই সকল দাহ্য পদার্থ নিজে নিজে জ্বলে ওঠে না।


রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একটি পারমাণবিক ঘটনা বলা হয় কেন?

উত্তর। 

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণু অংশগ্রহণ করে। বিক্রিয়ায় সম্পূর্ণ নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থের অণু গঠিত হলেও বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণকারী পদার্থের পরমাণুর সংখ্যা ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরমাণুসংখ্যা সর্বদা সমান থাকে। বিক্রিয়ার আগে ও পরে মােট ভর সমান থাকে। তাই বলা যায়, রাসায়নিক বিক্রিয়া একটি পারমাণবিক ঘটনা।

তড়িৎ প্রবাহমাত্রা কাকে বলে? তড়িৎ প্রবাহমাত্রার একক কী?

 তড়িৎ প্রবাহমাত্রা (Electric Current)

তড়িৎচালক বলের প্রভাবে কোনাে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে রক্ত ইলেকট্রনের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহই হল তড়িৎপ্রবাহ। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ধনাত্মক আধানের প্রবাহের অভিমুখ কি তড়িৎ প্রবাহমাত্রার অভিমুখ ধরা হয়। কাজেই পরিবাহীর মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহ যে অভিমুখে ঘটে তড়িৎ প্রবাহ মাত্রার অভিমুখ তার বিপরীত দিকে ধরা হয়।

Photo: Current
তড়িৎ প্রবাহমাত্রা 

তড়িৎ প্রবাহমাত্রাঃ

পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয় তাকে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা বলা হয়।

পরিবাহীর কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যদি t সেকেন্ড সময়ে Q পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তবে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা হয় I = Q/t অর্থাৎ, প্রবাহমাত্রা = আধান/সময়

রাশিঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রার শুধু মান আছে, তাই এটি একটি স্কেলার রাশি।

তড়িৎ প্রবাহমাত্রার এককঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রা CGS একক হল emu (Electromagnetic unit) এবং SI পদ্ধতিতে ব্যবহারিক একক হল অ্যাম্পিয়ার (A)। 

কোনাে পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে 1 সেকেন্ডে 1 কুলম্ব আধান প্রবাহিত হলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহমাত্রা হয় 1 অ্যাম্পিয়ার (A)।

1 emu প্রবাহমাত্রা = 10 A প্রবাহমাত্রা

তড়িৎ প্রবাহ দুই ধরনের হয়, যেমন-

1) সমপ্রবাহ(Direct current or DC) এবং 

2) পরবর্তী প্রবাহ(Alternating Current or AC) 

1) সমপ্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সবসময় একই দিকে হয়।

তড়িৎকোশ সমপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। 

2) পরিবর্তী প্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হয়।

AC ডায়নামোর সাহায্যে পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করা যায়।

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০

অনুঘটক কাকে বলে? একটি উদাহরণের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এর প্রভাব বুঝিয়ে দাও।

অনুঘটক (Catalyst) : যেসব রাসায়নিক পদার্থ কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় স্বল্প পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার বেগকে ত্বরান্বিত করে, কিন্তু বিক্রিয়া শেষে নিজে ভর ও ধর্মে অপরিবর্তিত থাকে, সেইসব পদার্থকে অনুঘটক বলে। কেন O2 প্রস্তুতিতে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড, H2SO4 প্রস্তুতিতে ভ্যানাডিয়াম পেন্টক্সাইড ইত্যাদি। 

 উদাহরণঃ পরীক্ষাগারে শুধুমাত্র পটাশিয়াম ক্লোরেটকে প্রায় ৬৩০°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে, এটি খুব ধীরে ধীরে বিয়ােজিত হয়ে পটাশিয়াম ক্লোরাইড ও অল্প পরিমাণ অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এভাবে অতি উচ্চ তাপমাত্রায় অক্সিজেন উৎপাদনের সময়ে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে এবং উৎপন্ন অক্সিজেনের পরিমাণ ও তুলনামূলক ভাবে কম হয়। তাছাড়া ৬৩০°C  তাপমাত্রা সৃষ্টি করতে যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার হয়, তা অর্থনৈতিক নয়। 

দেখা গেছে , পরীক্ষাগারে ৪ ভাগ ওজনের পটাশিয়াম ক্লোরেটের সঙ্গে ১ ভাগ ওজনের ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড মিশিয়ে দিলে খুব কম তাপমাত্রায় (২৩০°C-২৫০°C) অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড এর ভর ও ধর্ম অপরিবর্তিত থাকে, শুধুমাত্র বিক্রিয়ার বেগ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, অক্সিজেন প্রস্তুতির এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড অনুঘটকের কাজ করে।

2KClO3+[MnO2,230°-250°C] = 2KCI +3O2(গ্যাস)+[MnO2]

অনুঘটকের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী জানতে এখানে ক্লিক করুন। 


রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অনুঘটন (Catalysis) কাকে বলে? অনুঘটকের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? রাসায়নিক বিক্রিয়া কাকে বলে? বিক্রিয়া ও বিক্রিয়াজাত পদার্থ বলতে কী বোঝায়? একটি উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ

যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অনুঘটক সামান্য পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার গতিকে ত্বরান্বিত করে, কিন্তু বিক্রিয়া শেষে নিজে অপরিবর্তিত থাকে, সেই বিক্রিয়াকে অনুঘটন বলে।


অনুঘটকের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? 

অনুঘটকের বৈশিষ্ট্যগুলি হল : 

  1. অনুঘটক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার পর বিক্রিয়া শেষে নিজে অপরিবর্তিত থাকে।
  2. অনুঘটক বিক্রিয়ার বেগ বাড়াতে-কমাতে পারে।
  3. কোনাে বিক্রিয়ায় এদের উপযােগিতা পরীক্ষার সাহায্যে নির্ণয় করতে হয়, বিক্রিয়ার সমীকরণ দেখলেই বলা যায় না।
  4. এরা কোনাে বিক্রিয়াকে শুরু বা শেষ করতে পারে না। 
  5. বিক্রিয়ক পদার্থগুলির তুলনায় প্রয়ােজনীয় অনুঘটকের পরিমাণ খুব কম হয়। 
  6. রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কঠিন অনুঘটকের সূক্ষ্ম গুঁড়ো ব্যবহৃত হয় বলে অনুঘটকের ক্ষেত্রফল বাড়ে, ফলে অনুঘটকের কার্যকারিতা বাড়ে।
  7. সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিক্রিয়াকে একটি নির্দিষ্ট অনুঘটক প্রভাবিত করে, ভিন্ন ভিন্ন বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন অনুঘটকের দরকার হয়।

রাসায়নিক বিক্রিয়া কাকে বলে? বিক্রিয়া ও বিক্রিয়াজাত পদার্থ বলতে কী বোঝায়? একটি উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও।

রাসায়নিক বিক্রিয়া (Chemical Reaction) : যে প্রক্রিয়ায় কোন পদার্থ বিয়োজিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট। এক বা একাধিক পদার্থ উৎপন্ন করে বা একাধিক পদার্থ পরম্পর। যুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্মবিশিষ্ট এক বা একাধিক পদার্থ গঠন করে, সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় রাসায়নিক বিক্রিয়া।

বিক্রিয়ক (Reactant) : রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যেসব পদার্থ অংশগ্রহণ করে এবং যেসব পদার্থের অণুর রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মের অন্য পদার্থ উৎপন্ন হয়, তাকে বিক্রিয়ক বলে।

বিক্রিয়াজাত পদার্থ (Product) : রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এক বা একাধিক বিক্রিয়ক পরস্পর বিক্রিয়া করে যে ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট নতুন পদার্থ উৎপন্ন করে, তাকে বিক্রিয়াজাত পদার্থ বলে।

নীচে একটি উদাহরণের সাহায্যে বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থ বােঝানাে হলঃ

N2 (গ্যাস) + 3H2(গ্যাস) = 2NH3 (গ্যাস)

নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেনের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হয়।

এখানে নাইট্রোজেন (N2) ও হাইড্রোজেন (H2) হল বিক্রিয়ক কারণ- এরা পরস্পর রাসায়নিক বিক্রিয়া করে নতুন পদার্থ অ্যামোনিয়া উৎপন্ন করেছে। সুতরাং, অ্যামোনিয়া (NH3) হল বিক্রিয়াজাত পদার্থ। এক্ষেত্রে, বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থ গুলি গ্যাসীয়।


রাসায়নিক বিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? 

উত্তর।

রাসায়নিক বিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি হল :

  1. রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থের সমস্ত ধর্ম লােপ পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয়।
  2. একধরনের পদার্থ অন্য ধরনের পদার্থে পরিণত হলে মােট ভর অপরিবর্তিত থাকে। এটা ভরের নিত্যতা সূত্র। 
  3. বিক্রিয়ক পদার্থ এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থের মােট পরমাণু সংখ্যা সর্বদা নির্দিষ্ট থাকে। 
  4. বিক্রিয়ক পদার্থগুলি নির্দিষ্ট ওজন অনুপাতে পরস্পর যুক্ত হয়ে বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন করে। 
  5. বিক্রিয়ক পদার্থের অণুর গঠন বিক্রিয়াজাত পদার্থের অণুর গঠনের থেকে পৃথক হয়। 
  6. বিক্রিয়ক পদার্থের স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে।
  7. প্রক্রিয়ায় তাপের উদ্ভব বা শােষণ হবেই।
  8. রাসায়নিক বিক্রিয়া চলাকালীন বর্ণ পরিবর্তন, গ্যাস নির্গমন, অধঃক্ষেপণ, তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটতে পারে। 
  9. এটি একটি পারমাণবিক ঘটনা যাতে পরমাণু গুলি অংশগ্রহণ করে।
  10. রাসায়নিক বিক্রিয়া আলো, চাপ, তাপ, তড়িৎ, দ্রাবক ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয়। 


যথেষ্ট জল, বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড, মাটির খনিজ সব পেলেও কি একটা টবের গাছ অন্ধকারে খাদ্য তৈরি করতে পারবে? 

উত্তর।

গাছের খাদ্য তৈরি করতে পর্যাপ্ত জল, বায়ুর কার্বন ডাই-অক্সাইড, মাটির খনিজ উপাদান ছাড়াও দরকার হয় সূর্যালোকের। সূর্যালােকের উপস্থিতিতে গাছ ক্লোরোফিলের সাহায্যে পাতায় শর্করাজাতীয় খাদ্য উৎপন্ন করে। টবের গাছকে তাই অন্ধকারে রেখে দিলে উপযুক্ত আলাের অভাবে খাদ্য তৈরি করতে পারবে না।


ভৌতরাশি কাকে বলে? 

ভৌতরাশির সংজ্ঞাঃ বস্তু বা বস্তুর উপাদান সম্পর্কিত যেকোনো পরিমেয় ধর্মই হলো ভৌতরাশি।

উদাহরণঃ দৈর্ঘ্য, ভর, যেহেতু পরিমাপযোগ্য, তাই তারা প্রত্যেকে একেকটা ভৌতরাশি। বিজ্ঞানে দৈর্ঘ্য, ভর ও সময় ছাড়াও অসংখ্য ভৌতরাশি আছে। ক্ষেত্রফল, আয়তন, বেগ, বল, ভরবেগ, কার্য ইত্যাদি এরূপ কয়েকটি ভৌতরাশি।


Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts