কন্দ ফসলের মধ্যে ওল পুষ্টিকর ও অর্থকরী ফসল হিসাবে আলুর পরেই স্থান দখল করেছে। যেভাবে এর চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে- অচিরেই অবহেলিতফসল হিসাবে একে আর গণ্য করা যাবেনা। 'ফেমিন ফুড' অথবা দুর্ভিক্ষের খাবার হিসাবে মর্যাদায় ওল শ্রেষ্ঠ।
জাত: কাভুর , সি-৩, সি-৪, দক্ষিণ ভারতের উন্নত জাত। স্থানীয় ভালাে জাত সাঁতরাগাছি।
মেয়াদ: ৬ মাস।
বোনার সময়: চৈত্র-বৈশাখ (এপ্রিল -মে)। রাজ্যের শুকনাে পশ্চিমাঞ্চলে যেমন পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও মালদহ জেলার ঝাড়খন্ড সংলগ্ন শুকনাে ব্লকগুলিতে জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রথম বৃষ্টির সাথে সাথে লাগানাে ভাল।
জমি ও মাটি: উঁচু জমি ও বেলে দোঁয়াশ মাটিতেও ভাল হয়। জলনিকাশি ব্যবস্থা ভালাে থাকা দরকার।
সেচ: এপ্রিল মাসে লাগালে বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত ১০ দিন অন্তর হালকা সেচ দেওয়া ভাল।
সারি ও গাছের দূরত্ব: সারি ও গাছের দূরত্ব ৭৫ সেমি বা ২.৫ ফুট। মাদা করে লাগাতে হবে। গর্তের মাপ ১-১.৫ ঘন ফুট। অর্থাৎ ১৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীর গর্ত করে কাটা মাটির অর্ধেক পরিমাণ জৈব সার দিয়ে মাদার মাটি তৈরি করতে হয়।
বীজের হার: প্রতি গর্তে ৫০০-৭০০ গ্রাম বীজ ওল বসাতে হবে। বীজের হার ৬০-৬২ কুইন্টাল প্রতি হেক্টরে বা ৮০০-১০০০ কেজি প্রতি বিঘায়।
সার: জৈব সার বেশি করে দিতে হবে। প্রতিটি গর্তে ২২.৫ কেজি গােবর সার, ২০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫ গ্রাম সুপার ফসফেট, ১৫ গ্রাম পটাশ সার দিলে ভাল হয়।
সাথি ফসল: ঢেড়শ, বরবটি, লাল শাক, অড়হর ইত্যাদি।
উৎপাদন: ৫৫-৬৫ কুইন্টাল প্রতি বিঘায়। ৪০০-৫০০ কুইন্টাল প্রতি হেক্টরে।
রোগপোকা: রােগের মধ্যে কন্দ পচা (সফট্ রট) ও পাতা ধ্বসা রােগ সাধারণত দেখা যায়। এরােগ দেখা দেওয়া মাত্র ১০-১২ দিন অন্তর টাটকা গোবরের নির্ধ্যাস ৩-৪ বার স্প্রে করলে নিরাময় হয়। এছাড়া বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি নামক জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে নিরাময় হয়।
মন্তব্য: পরিচর্যা খুব কম লাগে। ৬০-৮০ দিন পর ওল গাছের গােড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। বীচনের জন্য ওল চাষ করলে ১৫০ গ্রাম কাটা ওল গােবর জলে ডুবিয়ে ১ ফুট অন্তর লাগাতে হবে। ওলের সজাগ ও বাড়স্ত অগ্রমুকূল (চোখ) যেন প্রতি কাটা অংশে ১-২টি থাকে। ২-৩ ইঞ্চির বেশী গভীরে বীচন লাগালে ফলন কমে যায়। দুই সারি ওলের মাঝে এক সারি অডহর, বরবটি, ঢেড়শ ও লাল শাক সাথি ফসল হিসাবে চাষ করে বাড়তি ফলন পাওয়া যায়। বীচন ওল লাগানাের পর খড় বা শুকনাে পাতা দিয়ে আচ্ছাদন দেওয়া ভালাে। জলনিকাশি ব্যবস্থা ভালাে থাকা দরকার।