নিউক্লীয় বলের (Nuclear Force) বৈশিষ্ট্য কী?
- নিউক্লীয় বলের অস্তিত্ব শুধুমাত্র নিউক্লিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
- এই বলের শুধুমাত্র আকর্ষণ ক্ষমতা আছে, বিকর্ষণ ক্ষমতা নেই।
- এই বল কেবলমাত্র নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে 3 ক্রিয়াশীল থাকে।
নিউক্লীয় বলের (Nuclear Force) বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর।
পরমাণু ক্রমাঙ্ক (Atomic Number): মৌলের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত মোট প্রোটন সংখ্যাকে তার কোনো পরমাণু ক্রমাঙ্ক বলে। যেমন – 6C12 মৌলে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যা 6টি। সুতরাং, এর পরমাণু ক্রমাঙ্ক 6।
ভরসংখ্যা (Mass Number) : কোনো মৌলের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার সমষ্টিকে ওই মৌলের ভরসংখ্যা বলে। যেমন – 6C12 মৌলে 6টি প্রোটন ও 6টি নিউট্রন আছে। সুতরাং, এর ভরসংখ্যা (6 + 6) = 12। অর্থাৎ, ভরসংখ্যা = (প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা)।
পারমাণবিক সংখ্যা ও ভরসংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক :
ধরি, কোনো মৌলের পরমাণুতে p সংখ্যক প্রোটন, n সংখ্যক নিউট্রন আছে। তাহলে মৌলের ভরসংখ্যা M হলে, M = (p + n) । আবার, মৌলের প্রোটন সংখ্যা (p) = পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক।
সুতরাং, ভরসংখ্যা = (পারমাণবিক সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা)।
অণু (Molecule) কাকে বলে?
অণু (Molecule) : মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যার মধ্যে ওই মৌলের সমস্ত ধর্ম বজায় থাকে, যা স্বাধীনভাবে থাকতে পারে, তাকে ওই মৌলের বা যৌগের অণু বলে। যেমন – হাইড্রোজেন অণু (H2), অক্সিজেন অণু (O2) ইত্যাদি।
এটি কয় প্রকার ও কী কী?
অণু দু-প্রকার। যথা — মৌলিক অণু ও যৌগিক অণু।
অণুর অস্তিত্ব কল্পনা করে কোন্ বিজ্ঞানী ডালটনের পরমাণুবাদের ত্রুটি সংশোধন করেন?
অণুর অস্তিত্ব কল্পনা করে বিজ্ঞানী অ্যামেদিও অ্যাভোগাড্রো ডালটনের পরমাণুবাদের ত্রুটি সংশোধন করেন।
হীরক চকচকে ও কঠিন হলেও অধাতু ব্যাখ্যা করো।
হীরক চকচকে ও কঠিন হলেও অধাতু। কারণ -
হাইড্রোজেন তড়িৎ ধনাত্মক হলেও ধাতু নয় কেন?
হাইড্রোজেন তড়িৎ ধনাত্মক হলেও ধাতু নয়, কারণ—
ডালটনের পরমাণুবাদ (Dalton's Atomic Theory) কাকে বলে? ডালটনের পরমাণুবাদ বিবৃত করো।
উত্তর।
একটি পাত্রে জল নিয়ে তা উনুনে বসিয়ে ফোটাতে থাকলে কী দেখা যাবে? কেন?
উত্তর:
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন না ঘটলে আমরা কী কী দেখতে পেতাম না?
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন না ঘটলে আলো সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে দেখা যেত না। যেমন — মরু অঞ্চলে ও শীতকালীন দেশে মরীচিকা, রত্ন হিসেবে হীরকের ঔজ্জ্বল্য, কচুপাতার উপর অবস্থিত জলের ফোঁটা চকচকে দেখানো, গ্রীষ্মের দিনে উত্তপ্ত রাস্তা জলে ভেজা ভ্রম হওয়া ইত্যাদি।
উত্তর:
বায়ুচলন (Ventilation) কী? পরিচলন স্রোতকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে ঘরের বায়ুচলন অব্যাহত রাখা হয় ?
বায়ুচলন (Ventilation):
উদাহরণ : বিশুদ্ধ বরফ স্বাভাবিক বায়ুচাপে 0°C উষ্মতায় গলে জলে পরিণত হয়।
উদাহরণ : প্রমাণ বায়ুচাপে বিশুদ্ধ জল 100°C উষ্মতায় ফুটে বাষ্পে রূপান্তরিত হয়।
উদাহরণ : স্বাভাবিক বায়ুচাপে 100°C উষ্মতায় জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলে রূপান্তরিত হয়।
উদাহরণ : স্বাভাবিক বায়ুচাপে বিশুদ্ধ জল 0°C উষ্মতায় জমে বরফ উৎপন্ন করে।
উদাহরণ : কর্পূর, নিশাদল, আয়োডিন, ন্যাপথলিন ইত্যাদির কঠিন থেকে বাষ্পে পরিবর্তন।
উদাহরণ : CO2 বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শুষ্ক বরফ (CO2) উৎপাদন, কর্পূর, নিশাদল ইত্যাদির বাষ্প থেকে সরাসরি কঠিনে রূপান্তর।
কেটলির বাইরে থাকা বায়ু বা পরিবেশের উষ্ণতা কেটলির মধ্যে থাকা ফুটন্ত জলের উষ্ণতার তুলনায় অনেক কম। তাই স্টিম বর্ণহীন গ্যাসীয় পদার্থ হলেও কেটলি থেকে নির্গত হওয়ার পর আপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণাগুলি বাষ্পের সঙ্গে বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এগুলির উপর সাদা আলো পড়ে প্রতিফলিত হয় বলে স্টিম সাদা দেখায়।
বস্তু দুটির উষ্ণতা আলাদা হবে। তার কারণ নিম্নরূপ : ধরা যাক, দুটি বস্তুরই ভর m, Q পরিমাণ তাপ দেওয়াতে বস্তু দুটির উন্নতা বৃদ্ধি হল t1°C ও t2°C এবং ওদের আপেক্ষিক তাপ যথাক্রমে s1, ও s2, । সুতরাং, প্রথম বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ Q = ms1t1 এবং দ্বিতীয় বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ Q = ms2t2 ।
অতএব, ms1t1= ms2t2 বা, s1/t1= s2t2
বা, s1/s2 = t2/t1
সুতরাং, উম্লতা বৃদ্ধি আপেক্ষিক তাপের ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ, যে পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বেশি, তার উয়তা বৃদ্ধি কম এবং যার আপেক্ষিক তাপ কম, তার উয়তা বৃদ্ধি বেশি হবে।
গলন ও কঠিনীভবনের ফলে আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয় বোঝাও।
গলন ও কঠিনীভবনের ফলে আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয় বোঝাও।
উত্তরঃ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলে অধিকাংশ পদার্থের আয়তন বেড়ে যায় এবং তরল থেকে কঠিন হলে আয়তন কমে যায়।
যেমন – মোম।
কিন্তু কিছু কিছু পদার্থ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলো আয়তন কমে যায় ও তরল থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তন বেড়ে যায়।
যেমন— জল ।
হিমমিশ্র(Freezing mixture) কী? উদাহরণ দাও। এর কয়েকটি ব্যবহার লেখো।
হিমমিশ্র (Freezing mixture)
একাধিক পদার্থের উপযুক্ত মিশ্রণ ঘটিয়ে মিশ্রণের উপাদানগুলি অপেক্ষা অনেক নিম্ন উন্নতার সৃষ্টি করা সম্ভব। এই জাতীয় মিশ্রণগুলিকে সাধারণভাবে হিমমিশ্র বা Freezing mixture বলে অভিহিত করা হয়।
উদাহরণঃ বরফচূর্ণ ও খাদ্যলবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মিশিয়ে হিমমিশ্র উৎপন্ন করা যায়, যার উষ্ণতা প্রায় – 23°C হয়।
এটি মেট্রিক পদ্ধতির সংক্ষিপ্তকরণ। আসল শব্দটি হলো একটি গ্রীক শব্দ, কিলো যার অর্থ হলো হাজার। মেট্রিক পদ্ধতিতে কিলো ব্যবহার করা হয়: এক কিলোগ্রাম বা 1k গ্রাম অর্থাৎ এক হাজার গ্রাম। সেই একই ধারণা থেকে K অক্ষরটি তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শুধুমাত্র ইউনিট বা একক বদল করে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হয়।
যেমন:
5k গ্রাম মানে 5000 গ্রাম, তেমনি
5k টাকা মানে 5000 টাকা।
5k বাইট মানে 5000 বাইট।
কুলম্বের সূত্র (Coulomb's law)
i) দুটি স্থির বিন্দু আধানের মধ্যে কার্যকর আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল আধানদ্বয়ের পরিমাণের গুণফলের সমানুপাতিক এবং
ii) তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক।
F ∝ q1q2 এবং F ∝ 1/r2 অর্থাৎ F ∝ q1q2/r2,
গাণিতিক ভাবে,
স্থির তড়িৎ ও চল তড়িৎ। তড়িৎ আধানের একক ও মাত্রা।
তড়িদাধান (Electric charge)
দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণে বস্তু দুটিতে তড়িতের সঞ্চার হয় এবং যখনই কোনাে বস্তুতে তড়িতের সঞ্চার ঘটে, তখন বলা হয় যে, বস্তুটি তড়িদাহিত হয়েছে।
তড়িৎ দুই ধরনের, যথা
(i) স্থির তড়িৎ (Static electricity) এবং
(ii) চলতড়িৎ (Current electricity)।
যে তড়িৎ উৎপত্তিস্থলেই স্থির অবস্থায় আবদ্ধ থাকে এবং সেই স্থান থেকে অন্যত্র যেতে পারে না তাকে বলা হয় স্থির তড়িৎ এবং যে তড়িৎ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে তাকে বলা হয় চল তড়িৎ।
যে ভৌত ধর্মের জন্য কোনাে বস্তু কণাকে একটি তড়িৎচৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে কণাটি একটি বল অনুভব করে তাকেই তড়িদাধান বলে। তড়িদাধান দুই প্রকার হয়- (i) ধনাত্মক ও (ii) ঋণাত্মক।
যে-কোনাে বস্তুর আহিতকরণের ব্যাখ্যা করা যায় ইলেকট্রনের আধিক্য বা ঘাটতির সাহায্যে। দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণের ফলে একটি বস্তু থেকে অন্যটিতে ইলেকট্রনের স্থানান্তর ঘটে। যে বস্তুটি ইলেকট্রন হারায় সেই বস্তুটি ধনাত্মক আধান গ্রস্ত হয়। যে বস্তুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেটি ঋণাত্মক আধানগ্রস্ত হয়।
আধানের মাত্রা ও এককঃ
1 C = 3 x 109 esu বা স্ট্যাটকুলম্ব
তড়িৎ আধান কী ধরণের রাশিঃ স্কেলার রাশি
তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা EMF।
তড়িচ্চালক বল এবং তড়িৎচালক বলের উৎস হিসেবে তড়িৎ কোষ (Electromotive force and electric cell as a source of EMF)।
কোনাে স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে হলে যেমন বল প্রয়ােগ করতে হয়, তেমনই কোনাে পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহমাত্রা সৃষ্টি করার জন্য বা প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি বলের প্রয়ােজনীয়তার কথা ভাবা যায়। একেই বলা হয় তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা সংক্ষেপে EMF।
একথা মনে রাখা আবশ্যক যে, ভিন্ন বিভবযুক্ত দুটি বস্তুকে একটি পরিবাহী দ্বারা যুক্ত করলে উচ্চ বিভবযুক্ত বস্তু থেকে নিম্ন বিভবযুক্ত বস্তুতে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয়ে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার সৃষ্টি করবে। সুতরাং, বিভব পার্থক্যের কারণে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। কাজেই তড়িচ্চালক বল কে নিম্নলিখিতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়—
তড়িৎচালক বলের সংজ্ঞাঃ যার প্রভাবে বা যে কারণে তড়িৎ বর্তনীর কোনাে অংশে রাসায়নিক শক্তি বা অন্য কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় তড়িচ্চালক বল (EMF)।
তড়িচ্চালক বলের এককঃ তড়িচ্চালক বলের SI এবং ব্যবহারিক একক ভােল্ট(Volt)।
তড়িচ্চালক বল কোন ধরনের রাশিঃ এটি একটি স্কেলার রাশি।
তড়িচ্চালক বলের মাত্রাঃ তড়িৎচালক বলকে গাণিতিক ভাবে SI পদ্ধতিতে জুল/কুলম্ব বলা যেতে পারে। অর্থাৎ তড়িৎচালক বলের মাত্রা হবে [কার্যের মাত্রা]/[আধাানের মাত্রা] = [ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1]
তড়িৎচালক বলের উৎসঃ তড়িৎচালক বলের উৎস হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কোনাে না কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ডায়নামাে, তাপযুগ্ম, তড়িৎ কোশ, আলোক-তড়িৎ কোশ প্রভৃতি হল তড়িচ্চালক বলের উৎস।
তড়িচ্চালক বল মাপার যন্ত্রঃ পোটেনশিওমিটার ।
কার্য করার জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তির উৎস হিসেবে তড়িৎকোশঃ
সচল যন্ত্রাংশবিহীন তড়িৎ উৎসই হল তড়িৎকোশ। তড়িৎকোশ রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে বর্তনীতে স্থায়ী তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে।
বিচ্ছিন্ন বা মুক্ত অবস্থায় কোনাে তড়িৎকোশের তড়িদ্দার দুটির মধ্যে যে বিভবপার্থক্যের সৃষ্টি হয় তাকেই বলা হয় কোশটির তড়িৎচ্চালক বল। একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।
কোনাে কোষের তড়িচ্চালক বল 1.5 ভোল্ট বলতে বােঝায় যে, কোষের ধনাত্মক মেরু থেকে ঋণাত্মক মেরুতে 1 কুলম্ব তড়িদাধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ হয় 1.5 জুল।
গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট
বায়ুমণ্ডলে মূলত CO2-এর ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে বলে গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট।
ব্যাখ্যাঃ গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট হল পরিবেশকে দূষিত করার একটি অন্যতম পদ্ধতি। ইংরেজি গ্রিনহাউস শব্দটির অর্থ হল গাছপালা পরিচর্যার জন্য কাচের ঘর। এই কাচের ঘরের মধ্যে দিয়ে সুর্যের আলাে যেমন ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আকারে অবাধে প্রবেশ করে এবং ওই ঘরের তাপমাত্রা বাড়ায় তেমনই পৃথিবীকে বিশাল কাচের ঘরের মতাে বা গ্রিনহাউসের মতাে ঘিরে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। সৌরশক্তি এই বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের ভিতর দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় এবং পুনরায় বৃহৎ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি (infrared ray) রূপে মহাশূনে ফিরে যাওয়ার সময় কিছু তাপশক্তি আবদ্ধ হয়। ফলে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
গ্রিনহাউস গ্যাসঃ বায়ুমণ্ডলে যে সমস্ত গ্যাসের উপস্থিতির জন্য গ্রিনহাউস ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।
যেমন CO2 (প্রধান), জলীয় বাষ্প, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে বড়াে বড়াে শহর যেমন—
দিল্লি, মুম্বই, কলকাতায় অরণ্য নিধনের ফলে অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যান চলাচলে CO-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার উষ্ণতা 4°C থেকে 6°C বেড়েছে। মনে রাখবে O2 এবং N2 গ্রিনহাউস গ্যাস নয়।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিঃ গ্রিনহাউসের প্রভাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে বেড়ে চলেছে। যেমন— 1850 থেকে 1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে 0.5°C।
আবার, 1900 থেকে 2000 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়েছে 1°C। সুতরাং, প্রাকৃতিক পরিবেশ যে ক্রমশ গরম হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান অবস্থাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।
গ্রিনহাউস প্রভাব ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলাফলঃ
গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে কার্যকারী এবং দৈনন্দিন জীবনে রূপায়িত করা সম্ভব এমন কিছু উপায়ঃ
রাসায়নিক গণনাঃ কোনাে রাসায়নিক সংকেত বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ থেকে বিভিন্ন পদার্থের ভর, আয়তন, বাষ্প ঘনত্ব ইত্যাদি নির্ণয় করাকে রাসায়নিক গণনা বলে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ (Stoichiometric Equations)
বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরমাণু সংখ্যার সমতা বজায় রেখে চিহ্ন ও সংকেতের সাহায্যে কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে।
উদাহরণঃ হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়। এখানে বিক্রিয়ক হল হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থ হল হাইড্রোজেন ক্লোরাইড। বিক্রিয়াটির রাসায়নিক সমীকরণ হল H2 + Cl2= 2HCl
রাসায়নিক সমীকরণের তাৎপর্যঃ রাসায়নিক সমীকরণ থেকে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি জানা যায়।
গুণগত তথ্যঃ রাসায়নিক সমীকরণের গুণগত তথ্য হিসেবে জানা যায় -
1) বিকারক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের সংকেত ও নাম।
2) বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থগুলো উপস্থিত মৌলের নাম ও চিহ্ন। 3 বিকারক ও বিক্রিয়ক পদার্থের আণবিক সংযুক্তি।
পরিমাণগত তথ্যঃ পরিমাণগত তথ্য হিসেবে রাসায়নিক সমীকরণ থেকে জানা যায়ঃ
1) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থের অণু ও পরমাণুর সংখ্যা।
2) বিকারক ও উৎপন্ন পদার্থসমূহের ওজন ও তাদের অনুপাত।
3) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থ গ্যাসীয় হলে সমচাপ ও উয়তায় এদের আয়তনগত অনুপাত।
4) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থের ভরের সমতা সাপেক্ষে ভর সংরক্ষণ সূত্রের সত্যতা।
উদাহরণঃ 2H2 + O2=2H2O এই সমীকরণ থেকে আমরা যে যে তথ্য পাই সেগুলি নীচে দেওয়া হলঃ
গুণগত তথ্যঃ
1) বিকারকের নাম হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এবং তাদের সংকেত যথাক্রমে H2 ও O2। বিক্রিয়াজাত পদার্থ হল জল ও তার সংকেত H2O।
2) হাইড্রোজেনের চিহ্ন হল H এবং অক্সিজেনের চিহ্ন হল O।
3) জল হল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মৌলের একটি যৌগিক পদার্থ।
পরিমাণগত তথ্যঃ
1) 2-অণু হাইড্রোজেন এবং 1 -অণু অক্সিজেনের পারস্পরিক বিক্রিয়ায় 2-অণু জল গঠিত হয়। 4-পরমাণু হাইড্রোজেন এবং 2-পরমাণু অক্সিজেন, মােট 6টি পরমাণু দিয়ে 2-অণু জল সৃষ্টি হয়।
2)
2H2 + O2 = 2H2O
2x2x1= 4 + 2x16=32 = 2(2x1+16)=32
4 ভাগ ওজনের হাইড্রোজেন 32 ভাগ ওজনের অক্সিজেনের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে 36 ভাগ জল উৎপন্ন করে।H2, O2 H2O-এর ওজনগত অনুপাত হল 4: 32:36 বা 1: 8:9 ।
3) গ্যাসীয় অবস্থায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন যুক্ত হয়ে স্টিম উৎপন্ন করলে যদি প্রত্যেকটির আয়তন উষ্ণতা ও চাপে নির্ণীত হয়, তবে তাদের আয়তনগত অনুপাত হয় 2 : 1 : 2।
4) 4 ভাগ ভরের H এবং 32 ভাগ ভরের O অর্থাৎ মােট 36 ভাগ ভরের বিক্রিয়ক উৎপন্ন করে 36 ভাগ ভরের জল অর্থাৎ বিক্রিয়াজাত পদার্থ। উভয়পক্ষে মােট ভরের পরিমাণ সমান হওয়ায় নিশ্চিতরূপে জানা গেল যে, ভরের সংরক্ষণ সূত্র মান্য হয়।
কেরোসিন বা কয়লা পুড়তে অক্সিজেন চাই। কিন্তু খােলা হাওয়ায় কেরােসিন বা কয়লা কি নিজে নিজ জ্বলে ওঠে?
রাসায়নিক বিক্রিয়ার অন্যতম প্রয়ােজনীয় প্রভাবক হল তাপ। কেরোসিন বা কয়লার দহনের জন্য প্রয়ােজনীয় উষ্ণতা খােলা হাওয়ায় থাকে না, তাই উপযুক্ত তাপের অভাবে এই সকল দাহ্য পদার্থ নিজে নিজে জ্বলে ওঠে না।
রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একটি পারমাণবিক ঘটনা বলা হয় কেন?
উত্তর।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণু অংশগ্রহণ করে। বিক্রিয়ায় সম্পূর্ণ নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থের অণু গঠিত হলেও বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণকারী পদার্থের পরমাণুর সংখ্যা ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরমাণুসংখ্যা সর্বদা সমান থাকে। বিক্রিয়ার আগে ও পরে মােট ভর সমান থাকে। তাই বলা যায়, রাসায়নিক বিক্রিয়া একটি পারমাণবিক ঘটনা।
তড়িৎ প্রবাহমাত্রা (Electric Current)
তড়িৎচালক বলের প্রভাবে কোনাে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে রক্ত ইলেকট্রনের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহই হল তড়িৎপ্রবাহ। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ধনাত্মক আধানের প্রবাহের অভিমুখ কি তড়িৎ প্রবাহমাত্রার অভিমুখ ধরা হয়। কাজেই পরিবাহীর মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহ যে অভিমুখে ঘটে তড়িৎ প্রবাহ মাত্রার অভিমুখ তার বিপরীত দিকে ধরা হয়।
![]() |
তড়িৎ প্রবাহমাত্রা |
তড়িৎ প্রবাহমাত্রাঃ
পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয় তাকে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা বলা হয়।
পরিবাহীর কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যদি t সেকেন্ড সময়ে Q পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তবে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা হয় I = Q/t অর্থাৎ, প্রবাহমাত্রা = আধান/সময়
রাশিঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রার শুধু মান আছে, তাই এটি একটি স্কেলার রাশি।
তড়িৎ প্রবাহমাত্রার এককঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রা CGS একক হল emu (Electromagnetic unit) এবং SI পদ্ধতিতে ব্যবহারিক একক হল অ্যাম্পিয়ার (A)।
কোনাে পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে 1 সেকেন্ডে 1 কুলম্ব আধান প্রবাহিত হলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহমাত্রা হয় 1 অ্যাম্পিয়ার (A)।
1 emu প্রবাহমাত্রা = 10 A প্রবাহমাত্রা
তড়িৎ প্রবাহ দুই ধরনের হয়, যেমন-
1) সমপ্রবাহ(Direct current or DC) এবং
2) পরবর্তী প্রবাহ(Alternating Current or AC)
1) সমপ্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সবসময় একই দিকে হয়।
তড়িৎকোশ সমপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে।
2) পরিবর্তী প্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হয়।
AC ডায়নামোর সাহায্যে পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করা যায়।
সৌরজগতের বড় বড় গ্রহগুলো দূরে অবস্থিত একথা ঠিক নয়। সূর্য থেকে আসতে আসতে দূরে গেলে যে ক্রম আমরা পাই সেটা হল, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো। যদিও বর্তমানে প্লুটোকে গ্রহের পর্যায়ে ধরা হয়না, কারণ এর আকার অন্যান্য গ্রহের তুলনায় অনেক ছোটো। একে বরং বামন গ্রহ বা Dwarf Planet বলা হয়।
যাই হোক, আকারের ক্রম অনুসারে ছোটো থেকে বড় সাজালে যে ক্রম আমরা পাই তা হলো,
প্লুটো, বুধ, মঙ্গল, শুক্র, নেপচুন, পৃথিবী, ইউরেনাস, শনি, বৃহস্পতি।
পৃথিবীর তুলনায় কোন গ্রহ কতটুকু বড়ো বা ছোটো এবং প্রত্যেকটি গ্রহের আনুমানিক ব্যাস নীচে দেওয়া হলো।
গ্রহের নাম | ব্যাস | পৃথিবীর কত গুণ |
---|---|---|
প্লুটো(Pluto) (বামন গ্রহ) | ব্যাস = 4879.4 কিমি | পৃথিবীর আকারের 0.38 গুণ |
মঙ্গল(Mars) | ব্যাস = 6787 কিমি | পৃথিবীর আকারের 0.53 গুণ |
শুক্র(Venus) | ব্যাস = 12,104 কিমি | পৃথিবীর আকারের 0.95 গুণ |
পৃথিবী(Earth) | ব্যাস = 12,756 কিমি | পৃথিবীর আকারের 1.00 গুণ |
নেপচুন(Neptune) | ব্যাস = 49,528 কিমি | পৃথিবীর আকারের 3.88 গুণ |
ইউরেনাস (Uranus) | ব্যাস = 51,118 কিমি | পৃথিবীর আকারের 4.00 গুণ |
শনি(Saturn) | ব্যাস = 120,660 কিমি | পৃথিবীর আকারের 9.45 গুণ |
বৃহস্পতি(Jupiter) | ব্যাস =142,800 কিমি | পৃথিবীর আকারের 11.2 গুণ |
অনুঘটক (Catalyst) : যেসব রাসায়নিক পদার্থ কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় স্বল্প পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার বেগকে ত্বরান্বিত করে, কিন্তু বিক্রিয়া শেষে নিজে ভর ও ধর্মে অপরিবর্তিত থাকে, সেইসব পদার্থকে অনুঘটক বলে। কেন O2 প্রস্তুতিতে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড, H2SO4 প্রস্তুতিতে ভ্যানাডিয়াম পেন্টক্সাইড ইত্যাদি।
উদাহরণঃ পরীক্ষাগারে শুধুমাত্র পটাশিয়াম ক্লোরেটকে প্রায় ৬৩০°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে, এটি খুব ধীরে ধীরে বিয়ােজিত হয়ে পটাশিয়াম ক্লোরাইড ও অল্প পরিমাণ অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এভাবে অতি উচ্চ তাপমাত্রায় অক্সিজেন উৎপাদনের সময়ে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে এবং উৎপন্ন অক্সিজেনের পরিমাণ ও তুলনামূলক ভাবে কম হয়। তাছাড়া ৬৩০°C তাপমাত্রা সৃষ্টি করতে যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার হয়, তা অর্থনৈতিক নয়।
দেখা গেছে , পরীক্ষাগারে ৪ ভাগ ওজনের পটাশিয়াম ক্লোরেটের সঙ্গে ১ ভাগ ওজনের ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড মিশিয়ে দিলে খুব কম তাপমাত্রায় (২৩০°C-২৫০°C) অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড এর ভর ও ধর্ম অপরিবর্তিত থাকে, শুধুমাত্র বিক্রিয়ার বেগ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, অক্সিজেন প্রস্তুতির এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড অনুঘটকের কাজ করে।
2KClO3+[MnO2,230°-250°C] = 2KCI +3O2(গ্যাস)+[MnO2]
অনুঘটকের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী জানতে এখানে ক্লিক করুন।
উত্তর: এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...