এই ব্লগটি সন্ধান করুন

পদার্থবিজ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পদার্থবিজ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২

নিউক্লীয় বল (Nuclear Force) বল কী? নিউক্লীয় বলের (Nuclear Force) বৈশিষ্ট্য কী? এর উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর | 

নিউক্লীয় বল (Nuclear Force) : পরমাণুর নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে ক্রিয়াশীল যে আকর্ষণ বলের জন্য প্রোটন ও নিউট্রন নিউক্লিয়াসের মধ্যে আবদ্ধ থাকে, তাকে নিউক্লীয় বল (Nuclear Force) বলে।

নিউক্লীয় বলের (Nuclear Force) বৈশিষ্ট্য কী?

  1. নিউক্লীয় বলের অস্তিত্ব শুধুমাত্র নিউক্লিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
  2. এই বলের শুধুমাত্র আকর্ষণ ক্ষমতা আছে, বিকর্ষণ ক্ষমতা নেই।
  3. এই বল কেবলমাত্র নিউট্রন ও প্রোটনের মধ্যে 3 ক্রিয়াশীল থাকে।

পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক তড়িগ্রস্ত কণা প্রোটন এবং নিস্তড়িৎ কণা নিউট্রন একইসঙ্গে অবস্থান করে, এই প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে অবিরাম গতিতে চার্জ বিনিময় হয় ফলে প্রোটন নিউট্রনে ও নিউট্রন প্রোটনে পরিণত হয়। এই রূপান্তর এতই দ্রুত হয়, যে ধনাত্মক তড়িগ্রস্ত প্রোটন কণার মধ্যে কুলম্বীয় বিকর্ষণ বল কার্যকরী হয় না। পরিবর্তে প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে এক তীব্র আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। যার ফলে প্রোটন ও নিউট্রন একসঙ্গে নিউক্লিয়াসে অবস্থান করতে পারে এবং পরমাণুর নিউক্লিয়াসটি সুস্থিত হয়। এই বলের মান মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলের প্রায় 1040 গুণ। এই বলের কার্যক্ষমতা প্রায় 1 ফেমটোমিটার (fm, বা 1.0 × 10 − 15 মিটার) মিটারের মধ্যে ক্রিয়াশীল থাকে।

জাপানি বিজ্ঞানী ইউকাওয়ার মতে প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে পাই মেসন কণার আদানপ্রদান হয়। এর ফলে নিউক্লীয় বলের সৃষ্টি হয়।

বুধবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২২

মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক ও ভরসংখ্যার সংজ্ঞা দাও। এদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

উত্তর। 

পরমাণু ক্রমাঙ্ক (Atomic Number): মৌলের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত মোট প্রোটন সংখ্যাকে তার কোনো পরমাণু ক্রমাঙ্ক বলে। যেমন – 6C12 মৌলে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যা 6টি। সুতরাং, এর পরমাণু ক্রমাঙ্ক 6।

ভরসংখ্যা (Mass Number) : কোনো মৌলের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার সমষ্টিকে ওই মৌলের ভরসংখ্যা বলে। যেমন – 6C12 মৌলে 6টি প্রোটন ও 6টি নিউট্রন আছে। সুতরাং, এর ভরসংখ্যা (6 + 6) = 12। অর্থাৎ, ভরসংখ্যা = (প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা)।


পারমাণবিক সংখ্যা ও ভরসংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক :

ধরি, কোনো মৌলের পরমাণুতে p সংখ্যক প্রোটন, n সংখ্যক নিউট্রন আছে। তাহলে মৌলের ভরসংখ্যা M হলে, M = (p + n) । আবার, মৌলের প্রোটন সংখ্যা (p) = পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক।

সুতরাং, ভরসংখ্যা = (পারমাণবিক সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা)।

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২১

অণু (Molecule) কাকে বলে? এটি কয় প্রকার ও কী কী? অণুর অস্তিত্ব কল্পনা করে কোন্ বিজ্ঞানী ডালটনের পরমাণুবাদের ত্রুটি সংশোধন করেন?

অণু (Molecule) কাকে বলে?

অণু (Molecule) : মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যার মধ্যে ওই মৌলের সমস্ত ধর্ম বজায় থাকে, যা স্বাধীনভাবে থাকতে পারে, তাকে ওই মৌলের বা যৌগের অণু বলে। যেমন – হাইড্রোজেন অণু (H2), অক্সিজেন অণু (O2) ইত্যাদি।

এটি কয় প্রকার ও কী কী? 

অণু দু-প্রকার। যথা — মৌলিক অণু ও যৌগিক অণু।

অণুর অস্তিত্ব কল্পনা করে কোন্ বিজ্ঞানী ডালটনের পরমাণুবাদের ত্রুটি সংশোধন করেন?

অণুর অস্তিত্ব কল্পনা করে বিজ্ঞানী অ্যামেদিও অ্যাভোগাড্রো ডালটনের পরমাণুবাদের ত্রুটি সংশোধন করেন।

রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১

হীরক চকচকে ও কঠিন হলেও অধাতু ব্যাখ্যা করো।

হীরক চকচকে ও কঠিন হলেও অধাতু ব্যাখ্যা করো।

হীরক চকচকে ও কঠিন হলেও অধাতু। কারণ -

  1. হীরক তড়িতের কুপরিবাহী ও আম্লিক অক্সাইড (CO2) উৎপন্ন করে।
  2. লঘু অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না।

হাইড্রোজেন তড়িৎ ধনাত্মক হলেও ধাতু নয় কেন?

হাইড্রোজেন তড়িৎ ধনাত্মক হলেও ধাতু নয়, কারণ—

  1. ঘরের উষ্ণতায় এটি গ্যাস।
  2. এটি তাপ ও তড়িতের কুপরিবাহী।
  3. অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে প্রশম অক্সাইড (H2O) উৎপন্ন করে।
  4. অ্যাসিডের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না।

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

ডালটনের পরমাণুবাদ (Dalton's Atomic Theory) কাকে বলে? ডালটনের পরমাণুবাদ বিবৃত করো।

ডালটনের পরমাণুবাদ (Dalton's Atomic Theory) কাকে বলে? ডালটনের পরমাণুবাদ বিবৃত করো।

উত্তর।

প্রকৃতির মধ্যে অবস্থিত মৌলগুলির পরমাণুর পরিচয়, ধর্ম, কীভাবে তারা পরস্পর যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে সে বিষয়ে বিজ্ঞানী জন ডালটন 1808 খ্রিস্টাব্দে একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন। একে বলা হয় ডালটনের পরমাণুবাদ।

ডালটলের পরমাণুবাদ তত্ত্বটি নিম্নরূপ-
  • সমস্ত মৌলিক পদার্থ অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র, নিরেট কণা দ্বারা গঠিত। এই ক্ষুদ্রতম কণাই হল পরমাণু।
  • পরমাণু অবিভাজ্য, অর্থাৎ, কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা পরমাণুকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না।
  • কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা পরমাণুর আকার, ওজন ও ধর্মের পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
  • একটি মৌলিক পদার্থের প্রত্যেকটি পরমাণুর ওজন ও ধর্ম একই হয়।
  • বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুর ওজন ও ধর্ম আলাদা হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা যৌগ গঠনের সময় বিভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলি পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাতে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। 
  • যৌগ গঠনের সময় পরমাণু সর্বদা পূর্ণসংখ্যায় যুক্ত হয়, ভগ্নাংশে যুক্ত হয় না। কারণ – পরমাণু অবিভাজ্য। 


শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

তরলের স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) কাকে বলে?এটি কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়?

উত্তর।
স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো তরল পদার্থের স্ফুটন শুরু হয় এবং সমগ্র তরল বাষ্পে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত সেই উষ্ণতা স্থির থাকে, তাকে ওই তরলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক বলে।

তরলের স্ফুটনাঙ্ক নিম্নলিখিত বিষয়ের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়—
(i) তরলের প্রকৃতি : তরল পদার্থটি কী ধরনের, তার ওপর তরলের স্ফুটনাঙ্ক নির্ভর করে। উদ্বায়ী তরলের স্ফুটনাঙ্ক কম হয়। 

(ii) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : তরলে কঠিন অপদ্রব্য দ্রবীভূত অবস্থায় থাকলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়। যেমন—লবণ মিশ্রিত থাকায় সমুদ্রজলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C থেকে বেড়ে প্রায় 110°C হয়। আবার গ্যাসীয় অপদ্রব্য উপস্থিত থাকলে, তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। তরল অপদ্রব্যের ক্ষেত্রে মিশ্রণের স্ফুটনাঙ্ক উপাদান তরল দুটির স্ফুটনাঙ্কের মাঝামাঝি হয়।

(iii) তরলের উপরিস্থিত চাপ : তরলের উপরিস্থিত মাধ্যম দ্বারা প্রযুক্ত চাপ, প্রমাণ চাপ অপেক্ষা বেশি হলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি হয়। যেমন— চাপ বৃদ্ধিতে বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক প্রায় 1°C বৃদ্ধি পায়। প্রেশার কুকার, অপারেশনে ব্যবহৃত ছুরি, কাঁচি জীবাণুমুক্ত করার কাজে লাগানো হয়।

একইভাবে তরলের ওপর চাপ হ্রাস পেলে ওই তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায় অর্থাৎ, তরলটি স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা কম উষ্ণতায় ফোটে। এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ঘনীভূত দুধ তৈরি করা হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে বায়ুচাপ কম হওয়ায় জল তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা অনেক কম উষ্ণতায় ফুটতে শুরু করে। যেমন— দার্জিলিং-এ জল প্রায় 93.6°C উন্নতায় ফোটে, ফলে খাদ্যদ্রব্য ভালো সিদ্ধ হয় না। হাড়ের ধাত্রে ও দাঁতের এনামেল, ডেনটিন ও সিমেন্টামে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস মৌলগুলির যৌগ কেলাসাকারে জমা থাকে।

গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন কেন? 

উত্তর।
চাপ বাড়লে বা কমলে বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের গলনাঙ্কের মান পরিবর্তিত হয়। 76 সেমি পারদস্তম্ভের চাপে কোনো পদার্থের গলনাঙ্ক নির্ধারণ করলে তা স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হবে। কিন্তু, চাপ ওই নির্দিষ্ট মানের বেশি বা কম হলে গলনাঙ্ক আর স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হয় না। এজন্য গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন।

অনুরূপ প্রশ্ন : কোনো তরলের স্ফুটনাঙ্ক উল্লেখ করার সময় চাপ উল্লেখ করা উচিত কেন?


প্রশ্ন: বৈদ্যুতিক লাইনে ব্যবহৃত ফিউজের গলনাঙ্ক কম হওয়া দরকার কেন?

উত্তর: বৈদ্যুতিক লাইনের ভোল্টেজ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে অনেক বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হয়। ফলে, তার উত্তপ্ত হয়ে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফিউজ তারের উপাদানের গলনাঙ্ক কম হয়। সেজন্য, ওই তার অল্প উত্তাপে ফিউজ গলেে গিয়ে তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।

পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা আলোচনা করো।

উত্তর। পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্কের মান প্রত্যক্ষভাবে দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে–(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি, (ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপ।

(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের সঙ্গে যদি অন্য কোনো পদার্থ অপদ্রব্য হিসেবে মেশানো হয় তবে অপদ্রব্যের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক স্বাভাবিক গলনাঙ্কের তুলনায় কমে যায়।

উদাহরণ: (a) সোনার সঙ্গে খাদ মেশালে সোনার গলনাঙ্ক কমে। (b) বরফের সঙ্গে লবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মেশালে মিশ্রণের উষ্ণতা 0°C অপেক্ষা অনেক কম (প্রায় – 23°C) হয়। (c) ফিউজ তারে ব্যবহৃত রোজ মেটাল (Pb + Sn + Bi) একটি সংকর ধাতু, যার গলনাঙ্ক প্রায় 95°C যদিও এর উপাদান ধাতুগুলির কোনোটিরই গলনাঙ্ক 210°C-এর কম নয়।


(ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপের প্রভাব : গলনাঙ্কের মান বায়ুমণ্ডলীয় চাপের দ্বারা দু-ভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকেে। 

(a) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি হয় চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ, সেগুলি স্বাভাবিক গলনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি উষ্ণতায় গলে। এক্ষেত্রে, গলনের ফলে যেহেতু আয়তন বৃদ্ধি হয়, তাই চাপ বৃদ্ধিতে গলন প্রক্রিয়া বাধা পায়। সুতরাং, অবস্থান্তর ঘটানোর জন্য উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ গলনাঙ্ক বাড়ে।
উদাহরণ : তামা, রুপো, মোম ইত্যাদি। এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধিতে মোমের গলনাঙ্ক 0.04°C বৃদ্ধি পায়।


(b) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন হ্রাস পায়, চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক হ্রাস পায়। এজাতীয় পদার্থগুলির ক্ষেত্রে, গলনের ফলে আয়তন যেহেতু হ্রাস পায় তাই চাপ বৃদ্ধিতে তাদের আয়তন সংকোচন সহজে হয় অর্থাৎ, গলনাঙ্ক কমে।
উদাহরণ : বরফ, ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি।

লীনতাপ (Latent heat) কাকে বলে? এর প্রকারভেদগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর।
লীনতাপ (Latent heat): একক ভরের কোনো পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ বা অপসারণ করতে হয়, তাকে ওই পদার্থের অবস্থান্তরের লীনতাপ বা লীনতাপ বলা হয়।

প্রকারভেদ: অবস্থাস্তরের সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করে লীনতাপের চার রকম  বর্তমান।
(i) গলনের লীনতাপ,
(ii) কঠিনীভবনের লীনতাপ,
(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ ও
(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ।

(i) গলনের লীনতাপ (Latent heat of fusion) : প্রমাণ চাপে কোনো কঠিন পদার্থের একক ভরের উয়তা স্থির রেখে সমগ্র কঠিন পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োজন হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই পদার্থের গলনের লীনতাপ বলে। যেমন—বরফ গলনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম বা 336× 10 জুল/কেজি।

(ii)কঠিনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of solidification) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো তরল পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরল পদার্থকে কঠিনে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের কঠিনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন— জলের কঠিনীভবনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম।

(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ (Latent heat of vaporization) : প্রমাণ চাপে কোনো তরল পদার্থের একক ভরের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরলকে বাষ্পে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকেই ওই পদার্থের বাষ্পীভবনের লীনতাপ বলা হয়। যেমন— বিশুদ্ধ জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম বা মতান্তরে 540 ক্যালোরি/গ্রাম বা 2268 × 103 জুল/কেজি।

(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of condensation) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো গ্যাসীয় পদার্থের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র গ্যাসীয় পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের ঘনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন—জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম।

জেনে রাখা ভালো: লীনতাপ গ্রহণ বা বর্জনে অণুগুলির বিন্যাস পরিবর্তিত হয়। এই তাপ পদার্থের উয়তা বাড়ায় না বা কমায় না, তাই থার্মোমিটার দ্বারা লীনতাপ মাপা যায় না। ক্যালোরিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে লীনতাপ পরিমাপ করা হয়।

একটি সক্রিয়তামূলক কাজের মাধ্যমে দেখাও যে, চাপ হ্রাসে তরলের স্ফুটনাঙ্ক হ্রাস পায়।

উত্তর।
নিম্নলিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে দেখানো যায়— চাপ কমলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে।

উপকরণ : (i) একটি ইনজেকশন সিরিঞ্জ, (ii) পরিমাণমতো ফুটন্ত জল, (iii) জল গরম করার পাত্র, (iv) বার্নার।

পরীক্ষা পদ্ধতি : (i) পাত্রে পরিমাণমতো জল নিয়ে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করা হল। (ii) জল ফুটতে শুরু করার ঠিক আগের মুহূর্তে ইনজেকশন সিরিঞ্জের মুখটি জলে ডুবিয়ে পিস্টনটি নিজের দিকে টানা হল, যাতে কিছু পরিমাণ উষ্ণ জল সিরিঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে। এই অবস্থায় সিরিঞ্জের অভ্যন্তরে থাকা জলের উষ্ণতা স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অর্থাৎ, 100°C অপেক্ষা কম হয়। (iii) এবার সিরিঞ্জের মুখটি প্রদর্শিত চিত্রের মতো আঙুল দিয়ে চেপে বন্ধ করে সিরিঞ্জের পিস্টন পুনরায় পিছনের দিকে টেনে আনা হল। (iv) এই অবস্থায় জল ফুটতে শুরু করবে। কারণ আঙুল দিয়ে বন্ধ রাখার জন্যে ভেতরের চাপ কমে গেছে। 
সিরিঞ্জ


মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১

বরফ গলনের লীনতাপ 80 ক্যালোরি/গ্রাম হলেও জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম এই পার্থক্যের কারণ কী ?

উত্তর। কোনো পদার্থের কঠিন থেকে তরলে রূপান্তরিত হওয়ার সময় আন্তরাণবিক ব্যবধান বৃদ্ধি যতটা হয়, তরল থেকে গ্যাসে পরিণত হলে ওই ব্যবধান অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, দ্বিতীয়ক্ষেত্রে এই আন্তরাণবিক আকর্ষণের বিরুদ্ধে অনেক বেশি কৃতকার্য করতে হয়। এই কার্যের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয় লীনতাপ। তাই গলন অপেক্ষা বাষ্পীভবনের লীনতাপের মান যে-কোনো পদার্থের ক্ষেত্রেই বেশি হয়।

শীতকালে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগানো হয় কেন?

উত্তর:
শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকে। জলীয়বাষ্পের ঘাটতি পূরণ করার জন্য বায়ুমণ্ডল আমাদের দেহের উন্মুক্ত মাংসল অংশ, যেমন ঠোঁট, চামড়া ইত্যাদি থেকে জলীয়বাষ্প শোষণ করে। ফলে অংশগুলির আর্দ্রতা কমে যায় এবং অংশগুলি শুষ্ক ও খসখসে হয়ে পড়ে। তাই ঠোঁট ফাটে। গ্লিসারিন অনুদ্বায়ী তরল বলে ফাটা ঠোটে বা চামড়ায় লাগালে তা বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প শোষণ করে এবং ঠোট থেকে জলীয়বাষ্পের বাষ্পায়নে বাধা দেয়। ফলে ঠোঁট ও চামড়ার আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং সেগুলি ফেটে যায় না বা খসখসে হয় না।


গ্রীষ্মকালে কুকুর জিভ বের করে হাঁপায় কেন?

উত্তর:

কুকুরের স্বেদগ্রন্থি(ঘর্মগ্রন্থী) তার জিভে থাকে। শারীরিক পরিশ্রমে বিক্রিয়াজাত পদার্থ হিসেবে উৎপন্ন জল বা রেচনের মাধ্যমে বিপাকজাত পদার্থ হিসেবে উৎপন্ন জলীয় পদার্থ (ঘাম) অপসারণের জন্য কুকুর তার জিভ বাইরে বের করে রাখে। ওই জল জিভ সংলগ্ন অংশ থেকে প্রয়োজনীয় লীনতাপ শোষণ করে বাষ্পীভূত হয়, ফলে দেহের অতিরিক্ত তাপ অপসারিত হয়, যা শরীরের উষ্ণতা কমায়। এতে কুকুর আরাম বোধ করে।


গরম চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করার জন্য তুমি কী করবে? কেন করবে?

উত্তর। গরম চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করার জন্য ডিশে বা প্লেটে ঢেলে নিতে হবে। এতে চায়ের উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেড়ে যাওয়ায় বাষ্পায়ন দ্রুত হবে। বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীনতাপ মুলত গরম চা থেকেই সংগৃহীত হয় বলে চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যাবে।

গরমকালে ঘামে ভেজা শরীরে হাওয়ার সামনে দাঁড়ালে আরাম হয় কেন? সেই সময় ঘাম কি শুকিয়ে যায়? ঘামের এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য কী দরকার? এবং তা কোথা থেকে পায়? 

উত্তর।
গরমকালে ঘামে ভেজা শরীরে হাওয়ার সামনে দাঁড়ালে দেহে শীতলতার অনুভূতি হয়। তাই আরাম লাগে। সেই সময় ঘাম শুকিয়ে যায় অর্থাৎ, বাষ্পীভূত হয়। ঘামের এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য লীনতাপ দরকার।
ঘাম বাষ্প হওয়ার জন্য যে লীনতাপের দরকার হয়, ঘাম তা দেহ থেকে শোষণ করে।

বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১

বর্ষাকালে ভিজে জামাকাপড় শুকোতে দেরি হয়। কিন্তু শীতকালে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় কেন?

উত্তর:
বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় বাষ্পীভবনের হার কমে যায় তাই ভিজে জামাকাপড় শুকোতে দেরি হয়। কিন্তু শীতকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্প কম থাকে বলে বাষ্পীভবনের হার বেশি হয়। তাই ভিজে জামাকাপড় থেকে জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে, শীতকালে ভিজে জামাকাপড় বর্ষাকালের তুলনায় তাড়াতাড়ি শুকোয় ৷

দুটি একই মাপের কাপড়কে একইরকমভাবে জলে ডোবাও। দুটি টুকরোকেই একইরকমভাবে নিংড়ে নাও। এবার একটি কাপড়ের টুকরোকে কয়েকটি ভাজ করে শুকোতে দাও। তার পাশে অন্য কাপড়ের টুকরোটিকে না ভাঁজ করে সম্পূর্ণ খুলে শুকোতে দাও। কোন্ কাপড়টি আগে শুকিয়ে গেল? ঘটনাটি থেকে কী সিদ্ধান্ত নিতে পারো?

উত্তর:
সম্পূর্ণ খুলে শুকোতে দেওয়া কাপড়টি আগে শুকিয়ে যাবে।

ঘটনাটি থেকে বলা যায়, জল তার উপরিতল থেকে বাষ্পে পরিণত হয়। তরলের উপরিতলের ক্ষেত্রফল যত বাড়ে তরলের বাষ্পীভবন তত দ্রুত হয়। একারণে ভাজ করা কাপড়টি পরে শুকাবে, কারণ তার উপরিতলের ক্ষেত্রফল কম। আর খুলে শুকোতে দেওয়া কাপড়টি দ্রুত শুকোবে, কারণ তার উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেশি।

পারদ থার্মোমিটারের কুণ্ডে ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখলে কী দেখা যায়? 

উত্তর। থার্মোমিটারের কুণ্ডে ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখলে ভিজে কাপড়ের জল কুণ্ড ও কুণ্ডে থাকা পারদ থেকে লীনতাপ শোষণ করে বাষ্পীভূত হয়। ফলে, পারদের উষ্ণতা কমে গিয়ে পারদসূত্র নীচে নেমে আসে।


একটি পাত্রে জল নিয়ে তা উনুনে বসিয়ে ফোটাতে থাকলে কী দেখা যাবে? কেন? 

উত্তর:

একসময় সমস্ত জল ফুটতে ফুটতে শেষ হয়ে যায় ও পাত্রটি খালি হয়ে যায়।
উনুনে বসিয়ে পাত্রের জল ফোটালে সমস্ত জল ফুটতে ফুটতে বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। তাই পাত্রটি খালি হয়ে যায়।


বাষ্পায়নের ফলে শীতলতার উৎপত্তির কারণ কী?

উত্তর:
তরল বাষ্পে রূপান্তরিত হওয়ার সময় তাকে বাষ্পীভবনের লীনতাপ সরবরাহ করতে হয়। বাষ্পায়নের সময় বাইরে থেকে তাপ সরবরাহের সুযোগ না থাকায় তরল নিজ দেহ বা সংলগ্ন পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় লীনতাপ সংগ্রহ করে বাষ্পীভূত হয়। তাই তরল বা তার কাছাকাছি অংশের বায়ু বা অন্যান্য বস্তু শীতল হয়ে পড়ে।


পারিপার্শ্বিক উষ্ণতা 0°C বা তার কম হলে বিশুদ্ধ বরফ গলতে পারে না কেন(ধরে নেওয়া যাক অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত আছে)? 

উত্তর:
বিশুদ্ধ বরফ গলনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম। বরফ গলার সময় এই প্রয়োজনীয় লীনতাপ পরিপার্শ্ব থেকে গ্রহণ করে। কিন্তু পরিপার্শ্বের উষ্ণতা 0°C বা তার কম হলে বরফ লীনতাপ সংগ্রহ করতে পারে না। তাই বরফ গলতে পারে না।


বরফ টুকরোর মধ্যে গর্ত করে জল রাখলে ওই জল জমে বরফ হয় না কেন?

উত্তর:
বরফ টুকরোর মধ্যে গর্ত করে জল রাখলে, ওই গর্তে ঢালা জল এবং বরফের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য থাকায়, ওই জল তাপ বর্জন করে শীতল হবে এবং সেই তাপ গ্রহণ করে কিছু পরিমাণ বরফ গলবে। এই তাপীয় আদানপ্রদানের ফলে, উষ্ণতা কমতে কমতে যখন 0°C হয়, তখন জল আর তাপ বর্জন করতে সক্ষম হবে না, কারণ উষ্ণতা সমান হলে তাপীয় সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাপের আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় 0°C উষ্ণতায় থাকা জল কঠিনে অর্থাৎ, বরফে রূপান্তরিত হতে প্রয়োজনীয় লীনতাপ সংলগ্ন পরিবেশে অর্থাৎ বরফে বর্জন করতে ব্যর্থ হবে, ফলে ওই জল জমে বরফ হয় না।


সূর্য থেকে পৃথিবীতে কোন্ পদ্ধতিতে তাপ আসে? তোমার সিদ্ধান্তের কারণ কী?

উত্তর:

সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে বিকিরণ পদ্ধতিতে। সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে বেশিরভাগ অংশেই কোনো জড় মাধ্যমের অস্তিত্ব নেই। একমাত্র বিকিরণ পদ্ধতিতেই কোনো মাধ্যম ছাড়া তাপ সঞ্চালিত হয় ৷ পরিবহণও পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যমের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে, সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে বিকিরণ প্রণালীতে।


আইসক্রিমের বাক্সে বা রেফ্রিজারেটরের(Refrigerator) দেয়ালে দুটি স্তর থাকে কেন?

উত্তর:
আইসক্রিমের বাক্স বা রেফ্রিজারেটরের(Refrigerator) বহিরাবরণ দুই দেয়ালবিশিষ্ট হয়। এই দুই দেয়ালের মধ্যবর্তী অংশ তাপের কুপরিবাহী কাচতন্তু (Glasswood) দ্বারা পূর্ণ থাকে। কাচতন্তুর মধ্যবর্তী ফাকা অংশে থাকে বায়ু। বায়ু ও কাচতন্তু উভয়ই তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় পরিবহণ বা পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ সহজে বাক্স বা রেফ্রিজারেটরের ভিতর আসতে পারে না। তাই আইসক্রিম সহজে গলে যায় না এবং রেফ্রিজারেটরের অভ্যন্তরও দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠান্ডা থাকে।



শীতপ্রধান দেশগুলিতে গ্রিন হাউসে (Green house) গাছপালা সতেজ থাকে কেন? 

উত্তর:
শীতপ্রধান দেশগুলিতে শৌখিন গাছপালা, সবজি, ফল ইত্যাদি সতেজ রাখার জন্য কাচের ঘর বা গ্রিন হাউসে(Green House) রাখা হয়। কাচ মাধ্যমে তাপীয় বিকিরণ ঘটায় দিনেরবেলায় সূর্য থেকে আসা ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য কাচ ভেদ করে ঘরের ভিতর আসে ও গাছপালা সালোকসংশ্লেষ করে। কিন্তু ঘরের ভিতরে থাকা গাছপালা অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণতায় বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাপ বিকিরণ করে যা কাচ ভেদ করে বাইরে যেতে পারে না, ফলে ঘরের ভেতর যথেষ্ট গরম থাকে এবং উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকে। এ কারণে গ্রিন হাউসের মধ্যে গাছপালা সতেজ থাকে।

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের শর্তগুলি বিবৃত করো।

উত্তর। অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের শর্ত প্রধানত দুটি। যথা—

১। আলোকরশ্মিকে অবশ্যই ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমের দিকে এসে দুই মাধ্যমের বিভেদতলে আপতিত হতে হবে।

২। নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর ক্ষেত্রে ঘন মাধ্যমে আপতন কোণের মান মাধ্যমদ্বয়ের সংকট কোণ অপেক্ষা বেশি হতে হবে।

অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন না ঘটলে আমরা কী কী দেখতে পেতাম না?

অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন না ঘটলে আলো সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে দেখা যেত না। যেমন — মরু অঞ্চলে ও শীতকালীন দেশে মরীচিকা, রত্ন হিসেবে হীরকের ঔজ্জ্বল্য, কচুপাতার উপর অবস্থিত জলের ফোঁটা চকচকে দেখানো, গ্রীষ্মের দিনে উত্তপ্ত রাস্তা জলে ভেজা ভ্রম হওয়া ইত্যাদি।


কাচের ফাটলে আলো পড়লে সেই স্থান চকচক করে কেন?

কাচে ফাটল থাকলে ওই অংশটি অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল লাগে। এর কারণ পূর্ণ প্রতিফলন। ওই ফাটলযুক্ত অংশের মধ্যে বায়ু পূর্ণ থাকে। আলোকরশ্মি কাচ (ঘনমাধ্যম) থেকে বায়ুতে (লঘুমাধ্যম) মাধ্যমদ্বয়ের সংকট কোণ অপেক্ষা বেশি কোণে আপতিত হলে বিভেদতল থেকে পূর্ণ প্রতিফলিত হয়। এই প্রতিফলনে বিভেদতলের ভূমিকা প্রতিফলকের মতো হয় বলে, ফাটল ধরা অংশটি চকচকে দেখায়।


আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক ও পরম প্রতিসরাঙ্ক বলতে কী বোঝায়?

আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক (Relative refractive index) : দুটি আলোকীয় মাধ্যমের যে-কোনো একটির সাপেক্ষে অন্য মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে প্রথম মাধ্যম সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বা আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক বলে।
যেমন— a মাধ্যম সাপেক্ষে b আলোকীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক aμb

পরম প্রতিসরাঙ্ক (Absolute refractive index): শূন্যস্থান সাপেক্ষে যে-কোনো আলোকীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক বলা হয়।

জেনে রাখো: পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে পাওয়া গেছে, বায়ুমাধ্যমে পরম প্রতিসরাঙ্কের মান1.00029, যা প্রায় শূন্যস্থানের পরম প্রতিসরাঙ্কের সমান। তাই সাধারণভাবে কোনো আলোকীয় মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক হল বায়ু মাধ্যম সাপেক্ষে তার প্রতিসরাঙ্ক।

বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

মোটা কাগজের ঠোঙা বানিয়ে জল রেখে আগুনে শিখায় ধরলে জল ফোটানো যাবে কি?

উত্তর:

মোটা কাগজের ঠোঙা বানিয়ে তাতে জল ঢেলে আগুনের শিখায় ধরলে জল ফোটানো যাবে না। কারণ— মোটা কাগজের মধ্যে দিয়ে তাপ তাড়াতাড়ি জলে যেতে পারবে না এবং আগুনের শিখার সংস্পর্শে থাকা কাগজের অংশটি খুব তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়ে যাবে। ফলে, কাগজটি পুড়ে যাবে।


শিশির কাকে বলে?

উত্তর | রাত্রে তাপ বিকিরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ এবং তার সংলগ্ন বস্তুগুলির উষ্ণতা যখন ক্রমশ কমে তখন ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরও শীতল হয়। অবশেষে উষ্ণতা একটি নির্দিষ্ট মানে অর্থাৎ, শিশিরাঙ্কে পৌছোলে, শীতল বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়। । বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কেরও নীচে নেমে গেলে, স্বাভাবিকভাবেই বায়ু তার ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত জলীয়বাষ্পকে আর নিজের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে পারে না। বায়ু দ্বারা পরিত্যক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ছোটো ছোটো জলবিন্দুর আকারে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন ঘাস, পাতা ইত্যাদির উপরে জমা হয়। একেই শিশির (Dew) বলে।
শিশির

পাতলা কাগজের পাত্রে কীভাবে জল ফোটানো যায় ?

উত্তর:

প্রথমে খাতার পৃষ্ঠার মাপের একটি পাতলা কাগজের চোঙ বা ফানেল তৈরী করে তার মধ্যে জল রাখা হল। এবার জলসহ
কাগজের পাতলা দিকটি আগুনের শিখায় ধরলে, কিছুক্ষণের মধ্যেই জল ফুটতে থাকে অথচ কাগজটি জ্বলে যায় না। এক্ষেত্রে, পাতলা কাগজের মধ্যে দিয়ে তাপ খুব তাড়াতাড়ি জলে চলে যায়। ফলে, জল স্ফুটনাঙ্কে পৌছে গেলেও কাগজটি তার জ্বলনাঙ্কে পৌঁছোয় না। তাই পাতলা কাগজের পাত্রে জল ফোটানো যাবে।


প্রশ্ন: সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক থাকে কি? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর | সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক থাকে না। যেমন অনিয়তাকার বা অকেলাসিত কঠিন পদার্থের (কাচ, মোম, মাখন ইত্যাদি) এবং মিশ্র পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক থাকে না, পরিবর্তে এদের গলনাঙ্কের নির্দিষ্ট পাল্লা থাকে।

সাধারণ বায়ুচাপে উদ্বায়ী পদার্থগুলির ক্ষেত্রে গলনাঙ্কের অস্তিত্ব থাকে না।
কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থকে (HgO, CaCO) উচ্চ উষ্ণতায় উত্তপ্ত করার ফলে বিয়োজিত হয়ে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। 

এদের ক্ষেত্রে গলনাঙ্কের ধারণা প্রযোজ্য নয়।



প্রশ্ন: ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে যে মূর্তিগুলি তৈরি করা হয় তা বিশেষ ধাতু ব্যবহার করে তৈরি করা হয় কেন ?

উত্তর | ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে মূর্তি তৈরি করার সময় সেইসব বিশেষ ধাতু ব্যবহার করা হয়, যারা তরল অবস্থা থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে। এর ফলে, ছাঁচের সূক্ষ্ম কোনাগুলিতেও ধাতুগুলি পৌঁছোতে পারে ও মূর্তির ধারগুলি খুব সূক্ষ্ম হয়। যেমন—ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি।



প্রশ্ন: দুটি বরফের টুকরো একসঙ্গে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে তারা জোড়া লেগে যায়। কেন এমন হয় ?

উত্তর | বরফের গলনের ফলে যে জল উৎপন্ন হয় তার আয়তন বরফের আয়তনের তুলনায় কম। চাপ বাড়ালে গলনে সুবিধা হয়। তাই চাপ বৃদ্ধি করলে বরফের গলনাঙ্ক হ্রাস পায়। দুটি বরফের টুকরো একসঙ্গে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে সংযোগস্থলে বরফের গলনাঙ্ক কমে ও বরফ গলে একসময় জলে পরিণত হয়। চাপ উঠিয়ে নিলে গলনাঙ্ক আবার বাড়ে ও গলে যাওয়া জল আবার বরফে পরিণত হয়। ফলে, বরফের টুকরো দুটি জুড়ে যায়।


বাষ্পায়ন (Evaporation) কাকে বলে? বাষ্পায়নের হার কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

উত্তর।
বাষ্পায়ন(Evaporation): যে-কোনো উষ্ণতায় তরলের উপরিতল থেকে তরলের ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে বাষ্পায়ন বলে।

বাষ্পায়নের হার নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে—

(i) তরলের প্রকৃতি : এক-একটি তরলের ক্ষেত্রে বাষ্পায়নের হার এক-একরকম। যে তরলের স্ফুটনাঙ্ক ঘরের উয়তার যত কাছাকাছি হয়, তার বাষ্পায়নের হার তত বেশি হয়। যেমন ইথারের স্ফুটনাঙ্ক 35°C, আর জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C।

(ii) তরলের উপরিতলের বিস্তৃতি : তরলের উপরিতলের বিস্তৃতি বা ক্ষেত্রফল যত বেশি হয়, বাষ্পায়নের হারও তত বেশি হয়।

(iii) তরলের উদ্ভূতা : তরল ও তরল সংলগ্ন বায়ুর উহ্ণতা বাড়লে বাষ্পায়ন দ্রুত হয়। তাই ভিজে কাপড় রোদের তাপে যত তাড়াতাড়ি শুকায়, শীতল ছায়ায় ততটা শুকায় না।

(iv) বায়ুর শুষ্কতা : বায়ু যত শুষ্ক হয়, তার বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতাও তত বেশি হয়।

(v) বায়ু চলাচল : তরলের ওপর বায়ু সঞ্চালন বাড়লে বাষ্পায়ন দ্রুত হারে হয়। যেমন—ঘরের ভিজে মেঝে তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য আমরা ফ্যান চালাই বা কালির লেখা তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য আমরা ফুঁ দিই।

(vi) তরলের ওপর বায়ুর চাপ : বায়ুমণ্ডলীয় চাপ যত কম হয়, বাষ্পায়নের হার তত বেশি হয়। তাই বাষ্পায়নের হার বাড়াতে তরলের ওপর বায়ুর চাপ কমাতে হয়।

রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১

বিকিরণ (Radiation) কাকে বলে? এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর:

বিকিরণ (Radiation): যে পদ্ধতিতে জড় মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই বা মাধ্যম থাকলেও সেই মাধ্যমকে উত্তপ্ত না করে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গরূপে এক স্থান থেকে অন্যত্র তাপ সঞ্চালিত হয় তাকেই বিকিরণ বলে। বিকিরণ পদ্ধতিতে সংবাহিত তাপকে বিকীর্ণ তাপ বলে।

বৈশিষ্ট্য(Characteristics):
  1. বিকীর্ণ তাপ, উৎস থেকে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের আকারে চারদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
  2. বিকীর্ণ তাপ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গতিশীল হওয়ার সময়ে মাধ্যমকে উত্তপ্ত করে না, কিন্তু যেসব বস্তু দ্বারা এটি বাধাপ্রাপ্ত হয় তাদেরকে উত্তপ্ত করে।
  3. বিকীর্ণ তাপ সরলরেখায় চলে।
  4. শূন্যস্থানে বিকীর্ণ তাপের বেগ শূন্যস্থানে আলোর বেগের (3×10 মি/সে) সমান।
  5. তাপ সঞ্চালনের দ্রুততম পদ্ধতি। বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যস্তবর্গের সূত্র ইত্যাদি মান্য করে।
  6. বিকীর্ণ তাপ ফোটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর ক্রিয়া করে।

পরিচলন স্রোত(Convection Current) কাকে বলে? গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে তাপের পরিচলনের ফলে যে বায়ুপ্রবাহ হয় তা পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও। 

পরিচলন স্রোত (Convection current): তরল বা গ্যাসের কোনো অংশ উত্তপ্ত হলে হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এবং ওপরের ঠান্ডা ও ভারী অংশ নীচে নেমে আসে। এর ফলে তরল বা গ্যাসের মধ্যে যে চক্রাকার স্রোত সৃষ্টি হয়, তাকে পরিচলন স্রোত বলে। যেমন— সমুদ্রবায়ু, স্থলবায়ু।

গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে তাপের পরিচলনের ফলে যে বায়ুপ্রবাহ হয় তা নিম্নলিখিত পরীক্ষা দ্বারা দেখানো যায়।

উপকরণ : (i) একটি কাচের চিমনি, (ii) জলপূর্ণ কাচের বাটি, (iii) একটি T আকৃতিযুক্ত কার্ডবোর্ডের টুকরো, (iv) মোমবাতি, (v) ধূপ।

পরীক্ষা পদ্ধতি-1
(i) কাচের বাটিটির ভিতরে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে খাড়াভাবে বসানো হল। (ii) বাটিটিকে আংশিক জলপূর্ণ করে, কাচের চিমনি দিয়ে মোমবাতিটিকে ঘিরে রাখা হল।

পর্যবেক্ষণ: কিছুক্ষণ পর দেখা গেল যে, মোমবাতিটি ক্রমশ নিষ্প্রভ হয়ে আসছে এবং একসময় নিভে গেছে।

ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত: চিমনির ভিতরের বায়ু জ্বলন্ত মোমবাতি থেকে তাপ পেয়ে উত্তপ্ত হয় এবং হালকা হয়ে উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। চিমনির নীচে জল থাকায় বাইরের বায়ু চিমনির ভিতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়, চিমনির উপর থেকে বায়ু প্রবেশ করতে পারে না। তাই অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বাতিটি নিভে যায়।পরিচলন স্রোত পরীক্ষার ছবি

পরীক্ষা পদ্ধতি-2
এই অবস্থায় চিমনিটি তুলে বাতিটি আবার জ্বালানো হল এবং বাতিটি ঘিরে চিমনিটিকে আগের মতো বসানো হল। চিমনির মুখে T আকৃতির কার্ডবোর্ডটি মাঝামাঝি অবস্থানে রেখে, ওর খোলামুখের ঠিক ওপরে একটি জ্বলন্ত ধূপ ধরা হল।

গ্যাসের মধ্যে তাপের পরিচলনের পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল, মোমবাতিটি নিভছে না এবং ধূপের ধোঁয়া কার্ডবোর্ডের একটি দিক দিয়ে চিমনির ভিতর প্রবেশ করে, অপর পাশ দিয়ে চিমনি থেকে বেরিয়ে আসছে।

ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত : T আকারের কার্ডবোর্ডটি চিমনির খোলা মুখের আয়তনকে দুটি প্রকোষ্ঠে ভাগ করে যার একটি দিয়ে মোমবাতির শিখার তাপে উত্তপ্ত গরম বায়ু হালকা হয়ে বেরিয়ে যায় এবং তার ফলে সৃষ্ট শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য বাইরের অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু ও ধূপের ধোঁয়া অন্য প্রকোষ্ঠ দিয়ে চিমনিতে প্রবেশ করে। এই পদ্ধতিতে বায়ুতে যে পরিচলন প্রবাহ সৃষ্টি হয়, তার প্রভাবেই চিমনির অভ্যন্তরে মোমবাতিটি জ্বলতে পারে।


বায়ুচলন (Ventilation) কী? পরিচলন স্রোতকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে ঘরের বায়ুচলন অব্যাহত রাখা হয় ?

বায়ুচলন (Ventilation):

বদ্ধঘরে নিশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত দূষিত ও অস্বাস্থ্যকর বায়ুর অপসারণ এবং ঘরের দিকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর বায়ুপ্রবাহের সরবরাহ অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে গৃহীত ব্যবস্থা বা উপায়কেই বায়ুচলন বলে।

আমাদের নিশ্বাসের সঙ্গে যে বায়ু বেরিয়ে যায় তা ঘরের বায়ুর চেয়ে বেশি উষ্ণ ও আর্দ্র হওয়ায় হালকা হয়। ফলে এই বায়ু উপরে উঠে যায় এবং ঘরের দেয়ালে, ছাদের ঠিক নীচে থাকা ফাঁক বা ঘুলঘুলি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বাইরের ঠান্ডা ও অক্সিজেনযুক্ত বায়ু দরজা ও জানলা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। ফলে, ঘরের বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক থাকে। এভাবে পরিচলন স্রোতকে কাজে লাগিয়ে ঘরের বায়ুচলন অব্যাহত রাখা হয়।


পরিচলন(Convection) পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের দুটি সীমাবদ্ধতা লেখো।

 পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের সীমাবদ্ধতাগুলি হল— 
(i) কঠিন পদার্থের অণুগুলি পরস্পর দৃঢ় সংঘবদ্ধভাবে থাকে বলে কঠিনের মধ্যে পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হয় না।
(ii) যে স্থানে অভিকর্ষ বল নেই, সেখানে পরিচলনের দ্বারা তাপ সঞ্চালন সম্ভব নয়।



পরিচলন(Convection) পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর:

পরিচলন (Convection): যে পদ্ধতিতে তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলি নিজেরা স্থান পরিবর্তন করে উষ্ণ অংশ থেকে তাপ বহন করে শীতল অংশে স্থানান্তরিত করে, তাপ সঞ্চালনের সেই পদ্ধতিকে বলা হয় পরিচলন।

বৈশিষ্ট্য:
  1. পরিচলন পদ্ধতিতে মূলত তরল ও গ্যাসীয় পদার্থে তাপ সঞ্চালন হয়।
  2. এই পদ্ধতিতে তাপ চলাচলের জন্যজড় মাধ্যমের উপস্থিতি অপরিহার্য।
  3. এক্ষেত্রে তরল বা গ্যাসের অণুগুলি নিজেরাই স্থানচ্যুত হয়ে মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যত্র তাপ বহন করে নিয়ে যায়।
  4. এই প্রণালীতে তাপ শুধুমাত্র নীচ থেকে উপরের দিকে সঞ্চালিত হতে পারে— অন্য কোনো দিকে নয়।
  5. অভিকর্ষের অনুপস্থিতিতে বা অভিকর্ষহীন স্থানে এই প্রণালীতে তাপ সঞ্চালন সম্ভব নয়।

পরিবহণ(Conduction) পদ্ধতি কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।


পরিবহণ (Conduction) : যে পদ্ধতিতে তাপ একই বস্তুর উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে সঞ্চালিত হয়, কিন্তু ওই বস্তু বা বস্তুগুলির অণুগুলি স্থানচ্যুত হয় না, সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় পরিবহণ।

বৈশিষ্ট্য:
১। তাপ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যমের উপস্থিতি অপরিহার্য।
২। শূন্যস্থানে কোনো মাধ্যম না থাকায় এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন সম্ভব নয়।
৩। কঠিন, তরল, গ্যাসীয় সবরকম পদার্থেই এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হয়। এর মধ্যে কঠিন পদার্থের পরিবহণ ক্ষমতা সর্বাধিক।
৪। পারদ ছাড়া অন্যান্য সব তরলের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা নগণ্য৷ গ্যাসের ক্ষেত্রে তা আরও কম।
৫। তাপ সঞ্চালনের সময় মাধ্যমের উত্তপ্ত কণাগুলির স্থানচ্যুতি হয় না।
৬। অণু, পরমাণু ও মুক্ত ইলেকট্রনগুলি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় বলে ধাতুগুলির তাপ পরিবহণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ হয়।

বৃষ্টির মধ্যে চলমান গাড়ির উইন্ড স্ক্রিন (Wind screen) ও জানলার কাচের ভিতরের পৃষ্ঠ আবছা হয়ে যায় কেন?

বৃষ্টিতে গাড়ির কাচ ঠান্ডা হয়ে যায়। এই ঠান্ডা কাচের সংস্পর্শে এসে গাড়ির ভিতরের বায়ুতে অবস্থিত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয় ও ছোটো ছোটো জলবিন্দুর আকারে সামনের গাড়ির কাচ অর্থাৎ, উইন্ড স্ক্রিনের ভিতরের দিকে জমা হয়। একইভাবে জানলার কাচের ভিতরের পৃষ্ঠেও জলীয়বাষ্প জমা হয়। তাই উইন্ড স্ক্রিন ও জানলার কাচের ভিতরের পৃষ্ঠ আবছা হয়ে যায়।


উত্তর:

কেটলির বাইরে থাকা বায়ু বা পরিবেশের উষ্ণতা কেটলির মধ্যে থাকা ফুটন্ত জলের উষ্ণতার তুলনায় অনেক কম। তাই স্টিম বর্ণহীন গ্যাসীয় পদার্থ হলেও কেটলি থেকে নির্গত হওয়ার পর আপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণাগুলি বাষ্পের সঙ্গে বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এগুলির উপর সাদা আলো পড়ে প্রতিফলিত হয় বলে স্টিম সাদা দেখায়।


বাতাসে ধূলিকণার উপস্থিতির সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্পর্ক আছে কি?

বাতাসে ধূলিকণা উপস্থিত থাকে বলেই মেঘ সৃষ্টি তথা বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। সূর্যের তাপে বড়ো জলাশয়, নদী, সমুদ্রের উপরিতল থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুতে মিশে যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু হালকা হয়ে উপরে ওঠে এবং একসময় বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে এলে ঘনীভবনের ফলে জলবিন্দুতে পরিণত হয় ও বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভেসে বেড়ায়। একেই মেঘ বলে। তাই ধূলিকণা বাতাসে না থাকলে মেঘের অস্তিত্ব থাকত না, ফলে বৃষ্টিও হত না।


অবস্থান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন কাকে বলে?এর প্রকারভেদগুলি কী কী ? 

তাপপ্রয়োগ বা অপসারণের দ্বারা পদার্থের এক ভৌত অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অবস্থান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন (Change of state)।

পদার্থের সাধারণ ভৌত অবস্থা মূলত তিনটি—কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়।
এই বিভিন্ন রূপগুলির একটি থেকে অন্যটিতে অবস্থান্তর প্রক্রিয়াকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—

(i) গলন (Melting) : স্থির উন্নতায় কঠিন পদার্থের তাপগ্রহণের ফলে তরলে রূপান্তরের ঘটনা।

উদাহরণ : বিশুদ্ধ বরফ স্বাভাবিক বায়ুচাপে 0°C উষ্মতায় গলে জলে পরিণত হয়।

(ii) বাষ্পীভবন (Vaporization) : যে-কোনো উস্লতায় অথবা স্থির উন্নতায় তরল ফুটে বাষ্প উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া।

উদাহরণ : প্রমাণ বায়ুচাপে বিশুদ্ধ জল 100°C উষ্মতায় ফুটে বাষ্পে রূপান্তরিত হয়।

(iii) ঘনীভবন (Condensation) : নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট উন্নতায় বাষ্পের তাপ অপসারণের ফলে তরলে রূপান্তর।

উদাহরণ : স্বাভাবিক বায়ুচাপে 100°C উষ্মতায় জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলে রূপান্তরিত হয়।

(iv) কঠিনীভবন (Solidification) : নির্দিষ্ট উন্নতায় তরল পদার্থ জমে কঠিনে পরিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়া।

উদাহরণ : স্বাভাবিক বায়ুচাপে বিশুদ্ধ জল 0°C উষ্মতায় জমে বরফ উৎপন্ন করে।


(v) ঊর্ধ্বপাতন (Sublimation) : তাপপ্রয়োগের ফলে যে-কোনো উন্নতায় কঠিন পদার্থের সরাসরি বাষ্পে রূপান্তর। সংশ্লিষ্ট পদার্থগুলিকে বলা হয় ঊর্ধ্বপাতনযোগ্য পদার্থ।

উদাহরণ : কর্পূর, নিশাদল, আয়োডিন, ন্যাপথলিন ইত্যাদির কঠিন থেকে বাষ্পে পরিবর্তন।

(vi) অবক্ষেপণ(De-sublimation) : যে প্রক্রিয়ায়বাষ্পতাপবর্জন করে সরাসরি কঠিন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে অবক্ষেপণ বলে।  

উদাহরণ : CO2 বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শুষ্ক বরফ (CO2) উৎপাদন, কর্পূর, নিশাদল ইত্যাদির বাষ্প থেকে সরাসরি কঠিনে রূপান্তর।

 

 
 
স্টিম বর্ণহীন কিন্তু ফুটন্ত জলপূর্ণ কেটলির মুখ থেকে সাদা বর্ণের স্টিম নির্গত হয় কেন?

কেটলির বাইরে থাকা বায়ু বা পরিবেশের উষ্ণতা কেটলির মধ্যে থাকা ফুটন্ত জলের উষ্ণতার তুলনায় অনেক কম। তাই স্টিম বর্ণহীন গ্যাসীয় পদার্থ হলেও কেটলি থেকে নির্গত হওয়ার পর আপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণাগুলি বাষ্পের সঙ্গে বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এগুলির উপর সাদা আলো পড়ে প্রতিফলিত হয় বলে স্টিম সাদা দেখায়। 


একই ভরের দুটি বস্তুতে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ দেওয়া হল। ওদের উষ্ণতা কি একই হবে? কেন? 

বস্তু দুটির উষ্ণতা আলাদা হবে। তার কারণ নিম্নরূপ : ধরা যাক, দুটি বস্তুরই ভর m, Q পরিমাণ তাপ দেওয়াতে বস্তু দুটির উন্নতা বৃদ্ধি হল t1°C ও t2°C এবং ওদের আপেক্ষিক তাপ যথাক্রমে s1, ও s2, । সুতরাং, প্রথম বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ Q = ms1t1 এবং দ্বিতীয় বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ Q = ms2t2 ।

অতএব, ms1t1= ms2t2 বা, s1/t1= s2t2

বা, s1/s2 = t2/t1

সুতরাং, উম্লতা বৃদ্ধি আপেক্ষিক তাপের ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ, যে পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বেশি, তার উয়তা বৃদ্ধি কম এবং যার আপেক্ষিক তাপ কম, তার উয়তা বৃদ্ধি বেশি হবে।

শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১

জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে—এই ঘটনার দুটি করে সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ করো।

সুবিধা :
১। জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে। তাই জল জমে বরফে পরিণত হলে উৎপন্ন বরফের ঘনত্ব জল অপেক্ষা কম হওয়ায় বরফ জলে ভাসে। এই ঘটনার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে দেখা যায়, শীতকালীন দেশগুলিতে বড়ো নদী বা হ্রদের জলের উপরিতল বরফে পরিণত হলেও নীচের অংশে সর্বোচ্চ 4°C উষ্ণতায় জল থাকে। বরফ ও জল উভয়েই তাপের কুপরিবাহী হওয়ার ফলে ওই অংশের জল তাপ বর্জন করে আরও ঠান্ডা হয়ে বরফে পরিণত হতে পারে না। ফলে ওই স্থানের জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণীরা চরম শীতার্ত পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে।


২। কৃষিজমির ফাক বা ফাটলের মাঝে জমে থাকা জল প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হলে, আয়তনে বৃদ্ধি পেতে চায় এবং সংশ্লিষ্ট মাটির স্তরের গায়ে বল প্রয়োগ করে। এই বলের ক্রিয়ায় মাটি প্রাকৃতিক উপায়ে নরম ও ঝুরঝুরে হয়ে যায়, ফলে কৃষিকাজের সুবিধা হয়।


অসুবিধা :
১। শীতপ্রধান দেশে মোটরগাড়ির রেডিয়েটর পাইপে থাকা জল জমে বরফে পরিণত হয়। ওই বরফ আয়তনে প্রসারিত হয়ে পাইপের দেয়ালে চাপ দেয়। সেই চাপে অনেকসময় ওই পাইপ ফেটে যায়। একই কারণে শীতের দেশগুলিতে জল সরবরাহের পাইপগুলি (মূলত গরম জল সরবরাহকারী) ফেটে গিয়ে থাকে।


২। পাহাড়ি অঞ্চলে পাথরের ফাক বা ফাটলে জমে থাকা জল উষ্ণতা হ্রাসের ফলে বরফে পরিণত হয় এবং আয়তনে বাড়তে চায়। পাথরের ভিতরের তলগুলিতে প্রচণ্ড বল প্রয়োগ করে। এই বলের প্রভাবে পাথর অনেকসময় ফেটে যায়, যে কারণে পাহাড়ি স্থানে মাঝেমাঝেই ধস নামতে দেখা যায়।


গলনাঙ্ক(Melting Point) ও হিমাঙ্ক(Freezing Point) বলতে কী বোঝায়? এদের মধ্যে সম্পর্ক কী? 

গলনাঙ্ক (Melting point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় সমসত্ত্ব কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হতে শুরু করে এবং গলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে উন্নতা স্থির থাকে, সেই উয়তাকে ওই পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। যেমন—প্রমাণ বায়ুচাপে বিশুদ্ধ বরফের গলনাঙ্ক 0°C বা 273KI

হিমাঙ্ক (Freezing point) : প্রমাণ বায়ুচাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বিশুদ্ধ তরল পদার্থ সম্পূর্ণ জমে কঠিনে পরিবর্তিত হতে শুরু করে এবং সমগ্র তরলের অবস্থান্তর সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত উয়তা অপরিবর্তিত থাকে, তাকে ওই তরলের হিমাঙ্ক বলে। যেমন—বিশুদ্ধ জলের প্রমাণ বায়ুচাপে হিমাঙ্ক বা স্বাভাবিক হিমাঙ্ক হল 0°C বা 273K।

গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের সম্পর্ক : বিশুদ্ধ এবং কেলাসাকার গঠনযুক্ত পদার্থের ক্ষেত্রে গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের মান সাধারণভাবে সমান (যেমন—বরফ ও জলের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের মান 0°C) ।

কিন্তু মিশ্র পদার্থ এবং অনিয়তাকার গঠনসম্পন্ন অর্থাৎ, অকেলাসাকার কঠিন পদার্থের (যেমন— কাচ, মোম, পিচ, মাখন | ইত্যাদি) নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের অস্তিত্ব নেই।


একটি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার সাহায্যে দেখাও যে, গলনে পদার্থের আয়তন পরিবর্তন হয়।


গলনে পদার্থের আয়তন পরিবর্তিত হয়— তা নিম্নলিখিত পরীক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে দেখানো যায়।

উপকরণ : (i) দুটি টেস্টটিউব, (ii) কিছু পরিমাণ মোম, (iii) পরিমাণমতো জল, (iv) বরফ, (v) বার্নার।

পরীক্ষা পদ্ধতি : (i) দুটি টেস্টটিউবের মধ্যে একটিতে কিছুটা মোম এবং অন্যটিতে একটি বড়ো বরফের টুকরো নেওয়া হল। (ii) দুটি টেস্টটিউবকে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করে মোম ও বরফকে সম্পূর্ণ গলানো হল এবং প্রথমটিতে, একটুকরো মোম ও দ্বিতীয়টিতে, একটি ছোটো বরফের টুকরো ফেলে দেওয়া হল।

মোমবাতি ও বরফের গলন

পর্যবেক্ষণ : কঠিন মোমের টুকরোটি তরল মোমের মধ্যে ফেলা মাত্র নিমজ্জিত হয় এবং গলিত মোমের সংস্পর্শে থেকে দ্রুত গলে তরলে রূপান্তরিত হয়। বরফের টুকরোটি বরফগলা জলের ওপর আয়তনের সামান্য (প্রায় 12 অংশ) বাইরে রেখে ভেসে থাকে।

ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত : কঠিন মোমের টুকরো গলিত মোমে সম্পূর্ণ ডুবে যায়, সুতরাং, কঠিন মোমের ঘনত্ব তরল মোম অপেক্ষা বেশি। যেহেতু, আয়তন বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট ভরের পদার্থের ঘনত্ব হ্রাস পায়। সুতরাং, সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, গলনের ফলে মোমের আয়তন বৃদ্ধি ঘটেছে।

একইভাবে বরফের টুকরো জলে ফেললে তা আংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসে। যা প্রমাণ করে, বরফের ঘনত্ব জল অপেক্ষা কম। সুতরাং, বোঝা যায় যে, জল জমে বরফ হলে আয়তনে বাড়ে অর্থাৎ, বরফের গলনে আয়তন সংকুচিত হয়।



পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রমী উদাহরণ দাও।

কর্পূর, ন্যাপথলিন, নিশাদল প্রভৃতি কঠিন পদার্থ তাপ প্রয়োগে তরল না হয়ে, সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। এদের বাষ্পকে শীতল করলে, এগুলি পুনরায় কঠিন অবস্থায় ফিরে আসে।

উল্লেখ্য, প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ঊর্ধ্বপাতনযোগ্য পদার্থগুলির ক্ষেত্রে তরল অবস্থার অস্তিত্ব না থাকলেও বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তারতম্য ঘটিয়ে এদের প্রত্যেকটিকেই তরল অবস্থায় প্রকৃতিতে পাওয়া সম্ভব।


সেঁক দেওয়ার বোতলে তরল হিসেবে গরম জল ব্যবহার করা হয় কেন?

তরল পদার্থগুলির মধ্যে জলের আপেক্ষিক তাপ সর্বোচ্চ এবং কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় সকল পদার্থের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই কারণে, একই ভরের অন্যান্য তরলের তুলনায় সমপরিমাণ উয়তা বৃদ্ধি ঘটাতে জল বেশি পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে। সেই কারণে সেঁক দেওয়ার বোতল বা হটব্যাগে ব্যবহৃত হওয়ার সময় নির্দিষ্ট হারে তাপ বর্জন করলেও, উচ্চ আপেক্ষিক তাপের কারণে জলের উয়তা হ্রাস হয় সব থেকে কম। অর্থাৎ, তাপগ্রহণ এবং ধারণক্ষমতা উভয়ই বেশি হওয়ায় গরম জল ঠান্ডা হতে বেশি সময় নেয়। তা ছাড়াও একই পরিমাণ তাপগ্রহণে উষ্ণতা বৃদ্ধি কম হওয়ায় জলকে শরীরের সংস্পর্শে রাখাও সুবিধাজনক হয়। তাই সেঁক দেওয়ার কাজে জল ব্যবহৃত হয়।


একটি কেটলি ও তার মধ্যে রাখা জল 80°C উন্নতা থেকে শীতল হয়ে 40°C উষ্মতায় এল। কেটলি ও জল কি সমপরিমাণে তাপ বর্জন করল?

ধরা যাক, কেটলির ভর m1 কেটলির উপাদানের আপেক্ষিক তাপ = s এবং কেটলিতে রাখা জলের ভর =m2

সুতরাং, কেটলি কর্তৃক বর্জিত তাপ = m1s*(80–40) = 40m1s ক্যালোরি,

এবং জল কর্তৃক বর্জিত তাপ = m2s*(80–40) = 40m2s ক্যালোরি

এখানে 40 m1s ক্যালোরি ও 40m2s ক্যালোরি আলাদা আলাদা পরিমাণ তাপকে নির্দেশ করছে। সুতরাং, কেটলি ও জল কখনোই সমপরিমাণ তাপ বর্জন করবে না।


 আপেক্ষিক তাপকে আপেক্ষিক বলা হয় কেন?

আপেক্ষিক তাপের মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পদার্থের (জলের) আপেক্ষিক তাপের মান (1)-কে প্রামাণ্য (Reference) ধরা হয়। এখন প্রমাণ পদার্থটি জল ছাড়া অন্য কিছু হলে পরীক্ষাধীন পদার্থের আপেক্ষিক তাপও ভিন্ন হবে। কোনো পদার্থের আপেক্ষিক তাপ (s) অর্থাৎ, সমানুপাতিক ধ্রুবক Q/mt -র মান জলের উপাদানগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তুলনা করে নির্ণয় করা হয় বলে, এই ধ্রুবকটিকে আপেক্ষিক তাপ বলা হয়।


গলন ও কঠিনীভবনের ফলে আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয় বোঝাও। 

গলন ও কঠিনীভবনের ফলে আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয় বোঝাও। 

উত্তরঃ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলে অধিকাংশ পদার্থের আয়তন বেড়ে যায় এবং তরল থেকে কঠিন হলে আয়তন কমে যায়।

যেমন – মোম

কিন্তু কিছু কিছু পদার্থ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলো আয়তন কমে যায় ও তরল থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তন বেড়ে যায়।

যেমন— জল ।


হিমমিশ্র(Freezing mixture) কী? উদাহরণ দাও। এর কয়েকটি ব্যবহার লেখো। 

হিমমিশ্র (Freezing mixture)

একাধিক পদার্থের উপযুক্ত মিশ্রণ ঘটিয়ে মিশ্রণের উপাদানগুলি অপেক্ষা অনেক নিম্ন উন্নতার সৃষ্টি করা সম্ভব। এই জাতীয় মিশ্রণগুলিকে সাধারণভাবে হিমমিশ্র বা Freezing mixture বলে অভিহিত করা হয়।

উদাহরণঃ বরফচূর্ণ ও খাদ্যলবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মিশিয়ে হিমমিশ্র উৎপন্ন করা যায়, যার উষ্ণতা প্রায় – 23°C হয়।





বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১

"হীরে চুম্বন করলে মানুষের মৃত্যু হয়" - এই কথাটি কতটা যুক্তিযুক্ত?


ছোটো উত্তর : কথাটা যতোটা সত্য ততটাই মিথ্যে।

বড় উত্তর :

পৃথিবীর সব থেকে কঠিন মৌলিক পদার্থের নাম কি জানেন? হীরে বা হীরা। চুম্বন তো দূরের কথা, হীরে চুষে চুষে আপনার প্রাণ পাখি বেরিয়ে যেতে পারে কিন্তু হীরের একটা অণু বা পরমাণু আপনি সেখান থেকে বের করতে পারবেন না।

আরেকটু উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি। হাইড্রোক্লোরিক/সালফিউরিক এসিডের 50 শতাংশ দ্রবণ মানুষের হাত পুড়িয়ে দিতে পারে, মুহূর্তের মধ্যে। কিন্তু এই এসিডের 100 শতাংশের দ্রবণে হীরে ডুবিয়ে রাখলেও হীরের গায়ে দাগ কাটতে পারে না। সাধারন ঘরের তাপ ও চাপে হীরা কোনো রাসায়নিকের সাথে বিক্রিয়া করে না। এমনকী, একটা হীরা কাটার জন্যে আরেকটা শক্ত হীরা ব্যবহার করা হয়।

তবে, আগেকার মুভি বা গল্পের বইয়ে কেন দেখাতো, হীরের আংটি চুম্বন করলে মানুষ মারা যায়। আসলে, সেখানে অর্ধসত্য বলা হয়। আগেকার দিনে গুপ্তচর বা রাজা বা রানীরা হীরার বা সাধারণ আংটির মধ্যে খুবই বিষাক্ত বিষ লুকিয়ে রাখতেন।

বিষ রাখার জন্যে এর থেকে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে বলুন। ধরুন কোনো গুপ্তচর ফাঁদে পড়ে গেলো, চারিদিক ঘিরে নেওয়া হয়েছে। গুপ্তচর বৃত্তির সাজা কিন্তু খুব কঠিন হতো। তাই তারা ধরা পড়ার আগেই হাতের আংটি চুম্বন করে নিতো, খুব তাড়াতাড়ি। শরীরের অন্য অংশে বিষ লুকিয়ে রাখা ও প্রয়োজনে তার ব্যবহার করা খুব দুঃসাধ্যের।

একইভাবে রাজা বা রানীরা অন্য রাজার হাতে বন্দি হওয়ার আগে, আত্মসম্মান রক্ষার জন্যে, আংটি চুম্বন করে আত্মহত্যা করতেন।

যেহেতু অধিকাংশ মুভি বা গল্পে এইরকম দৃশ্যে রাজা বা রানীকে আংটি চুম্বন করে মরতে দেখা যেতো, সাধারণ মানুষের মনে হতো, হীরার আংটি চুম্বন করে মরলেন, রাজা বা রানী(রাজা বা রানীর হাতের আংটি হীরার হবে, এমন চিন্তা মাথায় আসা নিরর্থক নয়)।

তবে প্রাচীন কালে অনেকে দাঁতের মাঝে বা জামা/পোশাকের কলারের কোনায় বিশেষ "থলির" সাহায্যে বিষ লুকিয়ে রাখতেন। শোনা যায় পটাশিয়াম সায়ানাইড রাখা হতো, যেটা খেলে মানুষ মুহূর্তের মধ্যে মারা যেতে পারে।

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

হাজার'-এর ইংরেজি 'থাউস্যান্ড', কিন্তু হাজারকে সংক্ষেপে 'T' না বলে 'K' কেন বলা হয়?

k meaning

এটি মেট্রিক পদ্ধতির সংক্ষিপ্তকরণ। আসল শব্দটি হলো একটি গ্রীক শব্দ, কিলো যার অর্থ হলো হাজার। মেট্রিক পদ্ধতিতে কিলো ব্যবহার করা হয়: এক কিলোগ্রাম বা 1k গ্রাম অর্থাৎ এক হাজার গ্রাম। সেই একই ধারণা থেকে K অক্ষরটি তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শুধুমাত্র ইউনিট বা একক বদল করে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হয়।

যেমন:

5k গ্রাম মানে 5000 গ্রাম, তেমনি

5k টাকা মানে 5000 টাকা।

5k বাইট মানে 5000 বাইট।

সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০

কুলম্বের সূত্র (Coulomb's law) | তড়িৎ বিভব কাকে বলে, বুঝিয়ে দাও। তড়িৎ বিভবের মাত্রা

কুলম্বের সূত্র (Coulomb's law)

i) দুটি স্থির বিন্দু আধানের মধ্যে কার্যকর আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল আধানদ্বয়ের পরিমাণের গুণফলের সমানুপাতিক এবং

ii) তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক।

এই বল আধানদ্বয়ের সংযােজী রেখা বরাবর ক্রিয়া করে এবং এর মান আধানগুলি যে মাধ্যমে অবস্থিত হয় তার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
Photo : Coulomb's Law

ধরা যাক, দুটি আধান q1, ও q2 পরস্পর থেকে r দূরত্বে অবস্থিত। এদের মধ্যে কার্যকর বলের মান F হলে, কুলম্বের সূত্রানুযায়ী,

F ∝ q1q2  এবং F ∝ 1/r2 অর্থাৎ F ∝ q1q2/r2,

গাণিতিক ভাবে, 

Photo : Mathematical Expression of Coulomb's Law
যেখানে k একটি ধ্রুবক যার মান F, q1, q2, ও r-এর এককের উপর এবং যে মাধ্যমে আধান দুটি অবস্থিত তার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এই  ধ্রুবকটিকে বলা হয় স্থির তড়িৎ বল ধ্রুবক বা কুলম্ব ধ্রুবক। বায়ুর ক্ষেত্রে CGS পদ্ধতিতে k = 1 হয়। সেক্ষেত্রে সূত্রটিকে লেখা যায়, F =(q1q2)/r2 


তড়িৎ বিভব কাকে বলে, বুঝিয়ে দাও। 

তড়িৎ বিজ্ঞানে তড়িৎ বিভব’-এর ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তড়িৎ প্রবাহমাত্রা মান ও প্রবাহের অভিমুখ নির্ধারণের জন্য তড়িৎ বিভব’ তথা বিভব পার্থক্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রয়োজন।

তড়িৎ বিভবঃ কোনাে পরিবাহী তড়িদাহিত হলে ওই পরিবাহী অন্য কোনাে পরিবাহীকে তড়িৎ দিতে পারে কিংবা অন্য কোনাে পরিবাহী থেকে তড়িৎ নিতে পারে। পরিবাহীর এই রকম তড়িৎ অবস্থাকে ওর তড়িৎ বিভব বলা হয়।

উচ্চ বিভব ও নিম্ন বিভবঃ কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ধনাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি উচ্চবিভবে আছে বলা হয় এবং অনুরূপভাবে কোনাে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ঋণাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি নিম্নবিভবে আছে বলা হয়। এখন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সর্বদা ইলেকট্রন (ঋণাত্মক আধানে আহিত)-এর গতির অভিমুখ বিপরীত দিকে হয়।

বিভবপার্থক্যঃ দুটি সমজাতীয় বা বিপরীত জাতীয় তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর মধ্যে বিভবের যে পার্থক্য হয়, তাকে ওদের বিভব প্রভেদ বা বিভব পার্থক্য (potential difference) বলা হয়।

কার্যের ধারণা থেকে বিভবের ধারণাঃ
অসীম দূরত্ব থেকে একটি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কার্য করতে হয় তাকে ওই বিন্দুর তড়িৎ বিভব বলে। 

গাণিতিকভাবে, অসীম দূরত্ব থেকে +Q একক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যদি একক কার্য করতে W কৃতকার্য হয় তবে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব হয়, V=W/Q একক।
অতএব, তড়িৎ বিভব = কৃতকার্য/আধান।

রাশিঃ কার্য এবং আধান উভয়ই স্কেলার রাশি হওয়ায় তড়িৎ বিভব স্কেলার রাশি।

তড়িৎ বিভবের মাত্রা=
[কার্যের মাত্রা/আধানের মাত্রা] =[ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1]

তড়িৎ বিভবের এককঃ তড়িৎ বিভবের CGS একক হল esu বা স্ট্যাটভােল্ট (statvolt) এবং SI ও ব্যবহারিক একক হল ভোল্ট (volt)।

তড়িৎবিভব মাপক যন্ত্রের নামঃ ভোল্টামিটার(Voltameter)

একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।
এই কোশের বিভব পার্থক্য নির্ভর করবে কোশের অভ্যন্তরীণ রোধ এবং সংযুক্ত রোধের উপর। 

1 volt = 1/300 esu বিভব।

কোনাে বিন্দুর তড়িৎবিভব 1 V বলতে বােঝায় অসীম দূরত্ব থেকে একটি 1 C ধনাত্মক আধানকে ওই বিন্দুতে আনতে 1 জুল কার্য করতে হবে।
1 ভোল্ট = 1 জুল /1 কুলম্ব 

কার্যের ধারণা থেকে বিভবভেদের ধারণাঃ দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভবপার্থক্য হল একটি বিন্দু থেকে অপর বিন্দুটিতে একক ধনাত্মক আধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ।

বিভবভেদের এককঃ বিভবপ্রভেদের SI ও ব্যবহারিক একক হল ভােল্ট (Volt)।

দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভবপ্রভেদ 1 V বলতে বােঝায় এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে 1C ধনাত্মক আধান নিয়ে যেতে 1 জুল কার্য করতে হয়। 

জেনে রাখা ভালো, পৃথিবীর তড়িৎবিভবের মান শূন্য ধরা হয়। একটি বস্তু ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বলতে বােঝায় বস্তুটির বিভব পৃথিবীর বিভবের তুলনায় বেশি এবং একটি বস্তু ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বলতে বােঝায় বস্তুটির বিভব পৃথিবীর বিভবের তুলনায় কম।


স্থির তড়িৎ ও চল তড়িৎ। তড়িৎ আধানের একক ও মাত্রা। 

তড়িদাধান (Electric charge)

দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণে বস্তু দুটিতে তড়িতের সঞ্চার হয় এবং যখনই কোনাে বস্তুতে তড়িতের সঞ্চার ঘটে, তখন বলা হয় যে, বস্তুটি তড়িদাহিত হয়েছে।

তড়িৎ দুই ধরনের, যথা

(i) স্থির তড়িৎ (Static electricity) এবং

(ii) চলতড়িৎ (Current electricity)।

যে তড়িৎ উৎপত্তিস্থলেই স্থির অবস্থায় আবদ্ধ থাকে এবং সেই স্থান থেকে অন্যত্র যেতে পারে না তাকে বলা হয় স্থির তড়িৎ এবং যে তড়িৎ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে তাকে বলা হয় চল তড়িৎ। 

যে ভৌত ধর্মের জন্য কোনাে বস্তু কণাকে একটি তড়িৎচৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে কণাটি একটি বল অনুভব করে তাকেই তড়িদাধান বলে। তড়িদাধান দুই প্রকার হয়- (i) ধনাত্মক ও (ii) ঋণাত্মক

যে-কোনাে বস্তুর আহিতকরণের ব্যাখ্যা করা যায় ইলেকট্রনের আধিক্য বা ঘাটতির সাহায্যে। দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণের ফলে একটি বস্তু থেকে অন্যটিতে ইলেকট্রনের স্থানান্তর ঘটে। যে বস্তুটি ইলেকট্রন হারায় সেই বস্তুটি ধনাত্মক আধান গ্রস্ত হয়। যে বস্তুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেটি ঋণাত্মক আধানগ্রস্ত হয়।

আধানের মাত্রা ও এককঃ

  • গাণিতিক ভাবে তড়িৎ আধানকে Ampere*Second দ্বারা প্রকাশ করা যায়। তাই তড়িদাধানের মাত্রা [IT];
  • তড়িদাধানের CGS একক esu বা স্ট্যাটকুলম্ব
  • তড়িদাধানের SI একক হল কুলম্ব (C)।

1 C = 3 x 109 esu বা স্ট্যাটকুলম্ব

তড়িৎ আধান কী ধরণের রাশিঃ স্কেলার রাশি 


তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা EMF।

তড়িচ্চালক বল এবং তড়িৎচালক বলের উৎস হিসেবে তড়িৎ কোষ (Electromotive force and electric cell as a source of EMF)।

কোনাে স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে হলে যেমন বল প্রয়ােগ করতে হয়, তেমনই কোনাে পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহমাত্রা সৃষ্টি করার জন্য বা প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি বলের প্রয়ােজনীয়তার কথা ভাবা যায়। একেই বলা হয় তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা সংক্ষেপে EMF।

একথা মনে রাখা আবশ্যক যে, ভিন্ন বিভবযুক্ত দুটি বস্তুকে একটি পরিবাহী দ্বারা যুক্ত করলে উচ্চ বিভবযুক্ত বস্তু থেকে নিম্ন বিভবযুক্ত বস্তুতে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয়ে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার সৃষ্টি করবে। সুতরাং, বিভব পার্থক্যের কারণে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। কাজেই তড়িচ্চালক বল কে নিম্নলিখিতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়—

তড়িৎচালক বলের সংজ্ঞাঃ যার প্রভাবে বা যে কারণে তড়িৎ বর্তনীর কোনাে অংশে রাসায়নিক শক্তি বা অন্য কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় তড়িচ্চালক বল (EMF)।

তড়িচ্চালক বলের এককঃ তড়িচ্চালক বলের SI এবং ব্যবহারিক একক ভােল্ট(Volt)। 

তড়িচ্চালক বল কোন ধরনের রাশিঃ এটি একটি স্কেলার রাশি। 

তড়িচ্চালক বলের মাত্রাঃ তড়িৎচালক বলকে গাণিতিক ভাবে SI পদ্ধতিতে জুল/কুলম্ব বলা যেতে পারে। অর্থাৎ তড়িৎচালক বলের মাত্রা হবে [কার্যের মাত্রা]/[আধাানের মাত্রা] = [ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1

তড়িৎচালক বলের উৎসঃ তড়িৎচালক বলের উৎস হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কোনাে না কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ডায়নামাে, তাপযুগ্ম, তড়িৎ কোশ, আলোক-তড়িৎ কোশ প্রভৃতি হল তড়িচ্চালক বলের উৎস।

তড়িচ্চালক বল মাপার যন্ত্রঃ পোটেনশিওমিটার ।

কার্য করার জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তির উৎস হিসেবে তড়িৎকোশঃ

সচল যন্ত্রাংশবিহীন তড়িৎ উৎসই হল তড়িৎকোশ। তড়িৎকোশ রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে বর্তনীতে স্থায়ী তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে।

বিচ্ছিন্ন বা মুক্ত অবস্থায় কোনাে তড়িৎকোশের তড়িদ্দার দুটির মধ্যে যে বিভবপার্থক্যের সৃষ্টি হয় তাকেই বলা হয় কোশটির তড়িৎচ্চালক বল। একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।

কোনাে কোষের তড়িচ্চালক বল 1.5 ভোল্ট বলতে বােঝায় যে, কোষের ধনাত্মক মেরু থেকে ঋণাত্মক মেরুতে 1 কুলম্ব তড়িদাধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ হয় 1.5 জুল।


বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০২০

গ্রিনহাউস প্রভাব বা ইফেক্ট | Greenhouse Effect in Bengali

গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট

বায়ুমণ্ডলে মূলত CO2-এর ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে বলে গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট। 

ব্যাখ্যাঃ গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট হল পরিবেশকে দূষিত করার একটি অন্যতম পদ্ধতি। ইংরেজি গ্রিনহাউস শব্দটির অর্থ হল গাছপালা পরিচর্যার জন্য কাচের ঘর। এই কাচের ঘরের মধ্যে দিয়ে সুর্যের আলাে যেমন ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আকারে অবাধে প্রবেশ করে এবং ওই ঘরের তাপমাত্রা বাড়ায় তেমনই পৃথিবীকে বিশাল কাচের ঘরের মতাে বা গ্রিনহাউসের মতাে ঘিরে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। সৌরশক্তি এই বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের ভিতর দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় এবং পুনরায় বৃহৎ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি (infrared ray) রূপে মহাশূনে ফিরে যাওয়ার সময় কিছু তাপশক্তি আবদ্ধ হয়। ফলে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

গ্রিনহাউস গ্যাসঃ বায়ুমণ্ডলে যে সমস্ত গ্যাসের উপস্থিতির জন্য গ্রিনহাউস ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।

যেমন CO2 (প্রধান), জলীয় বাষ্প, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে বড়াে বড়াে শহর যেমন—

দিল্লি, মুম্বই, কলকাতায় অরণ্য নিধনের ফলে অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যান চলাচলে CO-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার উষ্ণতা 4°C থেকে 6°C বেড়েছে। মনে রাখবে O2 এবং N2 গ্রিনহাউস গ্যাস নয়।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিঃ গ্রিনহাউসের প্রভাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে বেড়ে চলেছে। যেমন— 1850 থেকে 1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে 0.5°C।

আবার, 1900 থেকে 2000 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়েছে 1°C। সুতরাং, প্রাকৃতিক পরিবেশ যে ক্রমশ গরম হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান অবস্থাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।

গ্রিনহাউস প্রভাব ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলাফলঃ

  1. পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ আরও বেশি করে গলবে।
  2. বরফ গলা জল সমুদ্রের জলে যুক্ত হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি করবে।
  3. সমুদ্রপৃষ্ঠের জলতল বাড়ার জন্য উপকূলের নীচু জমি জলমগ্ন হবে।
  4. ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশের কিছু অংশ জলে ডুবে যাবে।
  5. উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে দাবানলের দ্বারা বনভূমি নষ্ট হবে।

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে কার্যকারী এবং দৈনন্দিন জীবনে রূপায়িত করা সম্ভব এমন কিছু উপায়ঃ

  1. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমালে CO2-এর উৎপাদন হ্রাস পাবে। সেই দিকে লক্ষ রেখেই অপ্রচলিত বা পুনর্নবীকরণযােগ্য শক্তির ব্যবহারে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।
  2. গ্রিনহাউস প্রভাবকে হ্রাস করার জন্য বনভূমি একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বনভূমি সংরক্ষণে যথেষ্ট নজর দিতে হবে। অর্থাৎ, বনভূমি ধ্বংস না করে আরও নতুন বনভূমি সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে। 
  3. ক্লোরােফ্লুরােকার্বন জাতীয় পদার্থের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। সম্ভব হলে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০

রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ (Stoichiometric Equations) | রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একটি পারমাণবিক ঘটনা বলা হয় কেন?

 রাসায়নিক গণনাঃ কোনাে রাসায়নিক সংকেত বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ থেকে বিভিন্ন পদার্থের ভর, আয়তন, বাষ্প ঘনত্ব ইত্যাদি নির্ণয় করাকে রাসায়নিক গণনা বলে।

রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ (Stoichiometric Equations) 

বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরমাণু সংখ্যার সমতা বজায় রেখে চিহ্ন ও সংকেতের সাহায্যে কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে।

উদাহরণঃ  হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়। এখানে বিক্রিয়ক হল হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থ হল হাইড্রোজেন ক্লোরাইড। বিক্রিয়াটির রাসায়নিক সমীকরণ হল H2 + Cl2= 2HCl

রাসায়নিক সমীকরণের তাৎপর্যঃ  রাসায়নিক সমীকরণ থেকে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি জানা যায়।

গুণগত তথ্যঃ রাসায়নিক সমীকরণের গুণগত তথ্য হিসেবে জানা যায় -

1) বিকারক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের সংকেত ও নাম।

2) বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থগুলো উপস্থিত মৌলের নাম ও চিহ্ন। 3 বিকারক ও বিক্রিয়ক পদার্থের আণবিক সংযুক্তি।

পরিমাণগত তথ্যঃ পরিমাণগত তথ্য হিসেবে রাসায়নিক সমীকরণ থেকে জানা যায়ঃ

1) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থের অণু ও পরমাণুর সংখ্যা।

2) বিকারক ও উৎপন্ন পদার্থসমূহের ওজন ও তাদের অনুপাত।

3) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থ গ্যাসীয় হলে সমচাপ ও উয়তায় এদের আয়তনগত অনুপাত।

4) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থের ভরের সমতা সাপেক্ষে ভর সংরক্ষণ সূত্রের সত্যতা।

উদাহরণঃ 2H2 + O2=2H2O এই সমীকরণ থেকে আমরা যে যে তথ্য পাই সেগুলি নীচে দেওয়া হলঃ

গুণগত তথ্যঃ

1) বিকারকের নাম হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এবং তাদের সংকেত যথাক্রমে H2 ও O2। বিক্রিয়াজাত পদার্থ হল জল ও তার সংকেত H2O।

2) হাইড্রোজেনের চিহ্ন হল H এবং অক্সিজেনের চিহ্ন হল O।

3) জল হল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মৌলের একটি যৌগিক পদার্থ।

পরিমাণগত তথ্যঃ

1) 2-অণু হাইড্রোজেন এবং 1 -অণু অক্সিজেনের পারস্পরিক বিক্রিয়ায় 2-অণু জল গঠিত হয়। 4-পরমাণু হাইড্রোজেন এবং 2-পরমাণু অক্সিজেন, মােট 6টি পরমাণু দিয়ে 2-অণু জল সৃষ্টি হয়।

2)

2H2                +               O2      =       2H2

2x2x1= 4        +        2x16=32  =       2(2x1+16)=32

4 ভাগ ওজনের হাইড্রোজেন 32 ভাগ ওজনের অক্সিজেনের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে 36 ভাগ জল উৎপন্ন করে।H2, O2 H2O-এর ওজনগত অনুপাত হল 4: 32:36 বা 1: 8:9 ।

3) গ্যাসীয় অবস্থায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন যুক্ত হয়ে স্টিম উৎপন্ন করলে যদি প্রত্যেকটির আয়তন উষ্ণতা ও চাপে নির্ণীত হয়, তবে তাদের আয়তনগত অনুপাত হয় 2 : 1 : 2।

4) 4 ভাগ ভরের H এবং 32 ভাগ ভরের O অর্থাৎ মােট 36 ভাগ ভরের বিক্রিয়ক উৎপন্ন করে 36 ভাগ ভরের জল অর্থাৎ বিক্রিয়াজাত পদার্থ। উভয়পক্ষে মােট ভরের পরিমাণ সমান হওয়ায় নিশ্চিতরূপে জানা গেল যে, ভরের সংরক্ষণ সূত্র মান্য হয়।


কেরোসিন বা কয়লা পুড়তে অক্সিজেন চাই। কিন্তু খােলা হাওয়ায় কেরােসিন বা কয়লা কি নিজে নিজ জ্বলে ওঠে?

রাসায়নিক বিক্রিয়ার অন্যতম প্রয়ােজনীয় প্রভাবক হল তাপ। কেরোসিন বা কয়লার দহনের জন্য প্রয়ােজনীয় উষ্ণতা খােলা হাওয়ায় থাকে না, তাই উপযুক্ত তাপের অভাবে এই সকল দাহ্য পদার্থ নিজে নিজে জ্বলে ওঠে না।


রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একটি পারমাণবিক ঘটনা বলা হয় কেন?

উত্তর। 

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণু অংশগ্রহণ করে। বিক্রিয়ায় সম্পূর্ণ নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থের অণু গঠিত হলেও বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণকারী পদার্থের পরমাণুর সংখ্যা ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরমাণুসংখ্যা সর্বদা সমান থাকে। বিক্রিয়ার আগে ও পরে মােট ভর সমান থাকে। তাই বলা যায়, রাসায়নিক বিক্রিয়া একটি পারমাণবিক ঘটনা।

তড়িৎ প্রবাহমাত্রা কাকে বলে? তড়িৎ প্রবাহমাত্রার একক কী?

 তড়িৎ প্রবাহমাত্রা (Electric Current)

তড়িৎচালক বলের প্রভাবে কোনাে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে রক্ত ইলেকট্রনের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহই হল তড়িৎপ্রবাহ। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ধনাত্মক আধানের প্রবাহের অভিমুখ কি তড়িৎ প্রবাহমাত্রার অভিমুখ ধরা হয়। কাজেই পরিবাহীর মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহ যে অভিমুখে ঘটে তড়িৎ প্রবাহ মাত্রার অভিমুখ তার বিপরীত দিকে ধরা হয়।

Photo: Current
তড়িৎ প্রবাহমাত্রা 

তড়িৎ প্রবাহমাত্রাঃ

পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয় তাকে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা বলা হয়।

পরিবাহীর কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যদি t সেকেন্ড সময়ে Q পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তবে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা হয় I = Q/t অর্থাৎ, প্রবাহমাত্রা = আধান/সময়

রাশিঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রার শুধু মান আছে, তাই এটি একটি স্কেলার রাশি।

তড়িৎ প্রবাহমাত্রার এককঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রা CGS একক হল emu (Electromagnetic unit) এবং SI পদ্ধতিতে ব্যবহারিক একক হল অ্যাম্পিয়ার (A)। 

কোনাে পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে 1 সেকেন্ডে 1 কুলম্ব আধান প্রবাহিত হলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহমাত্রা হয় 1 অ্যাম্পিয়ার (A)।

1 emu প্রবাহমাত্রা = 10 A প্রবাহমাত্রা

তড়িৎ প্রবাহ দুই ধরনের হয়, যেমন-

1) সমপ্রবাহ(Direct current or DC) এবং 

2) পরবর্তী প্রবাহ(Alternating Current or AC) 

1) সমপ্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সবসময় একই দিকে হয়।

তড়িৎকোশ সমপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। 

2) পরিবর্তী প্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হয়।

AC ডায়নামোর সাহায্যে পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করা যায়।

আকার ও অবস্থান অনুসারে সৌরজগতের ধারণা

সৌরজগতের বড় বড় গ্রহগুলো দূরে অবস্থিত একথা ঠিক নয়। সূর্য থেকে আসতে আসতে দূরে গেলে যে ক্রম আমরা পাই সেটা হল, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো। যদিও বর্তমানে প্লুটোকে গ্রহের পর্যায়ে ধরা হয়না, কারণ এর আকার অন্যান্য গ্রহের তুলনায় অনেক ছোটো। একে বরং বামন গ্রহ বা Dwarf Planet বলা হয়।

যাই হোক, আকারের ক্রম অনুসারে ছোটো থেকে বড় সাজালে যে ক্রম আমরা পাই তা হলো,

প্লুটো, বুধ, মঙ্গল, শুক্র, নেপচুন, পৃথিবী, ইউরেনাস, শনি, বৃহস্পতি

পৃথিবীর তুলনায় কোন গ্রহ কতটুকু বড়ো বা ছোটো এবং প্রত্যেকটি গ্রহের আনুমানিক ব্যাস নীচে দেওয়া হলো।


গ্রহের নাম ব্যাস পৃথিবীর কত গুণ
প্লুটো(Pluto) (বামন গ্রহ) ব্যাস = 4879.4 কিমি পৃথিবীর আকারের 0.38 গুণ
মঙ্গল(Mars) ব্যাস = 6787 কিমি পৃথিবীর আকারের 0.53 গুণ
শুক্র(Venus) ব্যাস = 12,104 কিমি পৃথিবীর আকারের 0.95 গুণ
পৃথিবী(Earth) ব্যাস = 12,756 কিমি পৃথিবীর আকারের 1.00 গুণ
নেপচুন(Neptune) ব্যাস = 49,528 কিমি পৃথিবীর আকারের 3.88 গুণ
ইউরেনাস (Uranus) ব্যাস = 51,118 কিমি পৃথিবীর আকারের 4.00 গুণ
শনি(Saturn) ব্যাস = 120,660 কিমি পৃথিবীর আকারের 9.45 গুণ
বৃহস্পতি(Jupiter) ব্যাস =142,800 কিমি পৃথিবীর আকারের 11.2 গুণ
অবস্থান ও আকার অনুযায়ী সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের চিত্র।

Photo: Solar System

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০

অনুঘটক কাকে বলে? একটি উদাহরণের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এর প্রভাব বুঝিয়ে দাও।

অনুঘটক (Catalyst) : যেসব রাসায়নিক পদার্থ কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় স্বল্প পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার বেগকে ত্বরান্বিত করে, কিন্তু বিক্রিয়া শেষে নিজে ভর ও ধর্মে অপরিবর্তিত থাকে, সেইসব পদার্থকে অনুঘটক বলে। কেন O2 প্রস্তুতিতে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড, H2SO4 প্রস্তুতিতে ভ্যানাডিয়াম পেন্টক্সাইড ইত্যাদি। 

 উদাহরণঃ পরীক্ষাগারে শুধুমাত্র পটাশিয়াম ক্লোরেটকে প্রায় ৬৩০°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে, এটি খুব ধীরে ধীরে বিয়ােজিত হয়ে পটাশিয়াম ক্লোরাইড ও অল্প পরিমাণ অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এভাবে অতি উচ্চ তাপমাত্রায় অক্সিজেন উৎপাদনের সময়ে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে এবং উৎপন্ন অক্সিজেনের পরিমাণ ও তুলনামূলক ভাবে কম হয়। তাছাড়া ৬৩০°C  তাপমাত্রা সৃষ্টি করতে যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার হয়, তা অর্থনৈতিক নয়। 

দেখা গেছে , পরীক্ষাগারে ৪ ভাগ ওজনের পটাশিয়াম ক্লোরেটের সঙ্গে ১ ভাগ ওজনের ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড মিশিয়ে দিলে খুব কম তাপমাত্রায় (২৩০°C-২৫০°C) অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড এর ভর ও ধর্ম অপরিবর্তিত থাকে, শুধুমাত্র বিক্রিয়ার বেগ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, অক্সিজেন প্রস্তুতির এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড অনুঘটকের কাজ করে।

2KClO3+[MnO2,230°-250°C] = 2KCI +3O2(গ্যাস)+[MnO2]

অনুঘটকের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী জানতে এখানে ক্লিক করুন। 


Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts