এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

তরলের স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) কাকে বলে?এটি কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়?

উত্তর।
স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো তরল পদার্থের স্ফুটন শুরু হয় এবং সমগ্র তরল বাষ্পে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত সেই উষ্ণতা স্থির থাকে, তাকে ওই তরলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক বলে।

তরলের স্ফুটনাঙ্ক নিম্নলিখিত বিষয়ের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়—
(i) তরলের প্রকৃতি : তরল পদার্থটি কী ধরনের, তার ওপর তরলের স্ফুটনাঙ্ক নির্ভর করে। উদ্বায়ী তরলের স্ফুটনাঙ্ক কম হয়। 

(ii) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : তরলে কঠিন অপদ্রব্য দ্রবীভূত অবস্থায় থাকলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়। যেমন—লবণ মিশ্রিত থাকায় সমুদ্রজলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C থেকে বেড়ে প্রায় 110°C হয়। আবার গ্যাসীয় অপদ্রব্য উপস্থিত থাকলে, তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। তরল অপদ্রব্যের ক্ষেত্রে মিশ্রণের স্ফুটনাঙ্ক উপাদান তরল দুটির স্ফুটনাঙ্কের মাঝামাঝি হয়।

(iii) তরলের উপরিস্থিত চাপ : তরলের উপরিস্থিত মাধ্যম দ্বারা প্রযুক্ত চাপ, প্রমাণ চাপ অপেক্ষা বেশি হলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি হয়। যেমন— চাপ বৃদ্ধিতে বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক প্রায় 1°C বৃদ্ধি পায়। প্রেশার কুকার, অপারেশনে ব্যবহৃত ছুরি, কাঁচি জীবাণুমুক্ত করার কাজে লাগানো হয়।

একইভাবে তরলের ওপর চাপ হ্রাস পেলে ওই তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায় অর্থাৎ, তরলটি স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা কম উষ্ণতায় ফোটে। এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ঘনীভূত দুধ তৈরি করা হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে বায়ুচাপ কম হওয়ায় জল তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা অনেক কম উষ্ণতায় ফুটতে শুরু করে। যেমন— দার্জিলিং-এ জল প্রায় 93.6°C উন্নতায় ফোটে, ফলে খাদ্যদ্রব্য ভালো সিদ্ধ হয় না। হাড়ের ধাত্রে ও দাঁতের এনামেল, ডেনটিন ও সিমেন্টামে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস মৌলগুলির যৌগ কেলাসাকারে জমা থাকে।

গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন কেন? 

উত্তর।
চাপ বাড়লে বা কমলে বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের গলনাঙ্কের মান পরিবর্তিত হয়। 76 সেমি পারদস্তম্ভের চাপে কোনো পদার্থের গলনাঙ্ক নির্ধারণ করলে তা স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হবে। কিন্তু, চাপ ওই নির্দিষ্ট মানের বেশি বা কম হলে গলনাঙ্ক আর স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হয় না। এজন্য গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন।

অনুরূপ প্রশ্ন : কোনো তরলের স্ফুটনাঙ্ক উল্লেখ করার সময় চাপ উল্লেখ করা উচিত কেন?


প্রশ্ন: বৈদ্যুতিক লাইনে ব্যবহৃত ফিউজের গলনাঙ্ক কম হওয়া দরকার কেন?

উত্তর: বৈদ্যুতিক লাইনের ভোল্টেজ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে অনেক বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হয়। ফলে, তার উত্তপ্ত হয়ে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফিউজ তারের উপাদানের গলনাঙ্ক কম হয়। সেজন্য, ওই তার অল্প উত্তাপে ফিউজ গলেে গিয়ে তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।

পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা আলোচনা করো।

উত্তর। পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্কের মান প্রত্যক্ষভাবে দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে–(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি, (ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপ।

(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের সঙ্গে যদি অন্য কোনো পদার্থ অপদ্রব্য হিসেবে মেশানো হয় তবে অপদ্রব্যের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক স্বাভাবিক গলনাঙ্কের তুলনায় কমে যায়।

উদাহরণ: (a) সোনার সঙ্গে খাদ মেশালে সোনার গলনাঙ্ক কমে। (b) বরফের সঙ্গে লবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মেশালে মিশ্রণের উষ্ণতা 0°C অপেক্ষা অনেক কম (প্রায় – 23°C) হয়। (c) ফিউজ তারে ব্যবহৃত রোজ মেটাল (Pb + Sn + Bi) একটি সংকর ধাতু, যার গলনাঙ্ক প্রায় 95°C যদিও এর উপাদান ধাতুগুলির কোনোটিরই গলনাঙ্ক 210°C-এর কম নয়।


(ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপের প্রভাব : গলনাঙ্কের মান বায়ুমণ্ডলীয় চাপের দ্বারা দু-ভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকেে। 

(a) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি হয় চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ, সেগুলি স্বাভাবিক গলনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি উষ্ণতায় গলে। এক্ষেত্রে, গলনের ফলে যেহেতু আয়তন বৃদ্ধি হয়, তাই চাপ বৃদ্ধিতে গলন প্রক্রিয়া বাধা পায়। সুতরাং, অবস্থান্তর ঘটানোর জন্য উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ গলনাঙ্ক বাড়ে।
উদাহরণ : তামা, রুপো, মোম ইত্যাদি। এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধিতে মোমের গলনাঙ্ক 0.04°C বৃদ্ধি পায়।


(b) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন হ্রাস পায়, চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক হ্রাস পায়। এজাতীয় পদার্থগুলির ক্ষেত্রে, গলনের ফলে আয়তন যেহেতু হ্রাস পায় তাই চাপ বৃদ্ধিতে তাদের আয়তন সংকোচন সহজে হয় অর্থাৎ, গলনাঙ্ক কমে।
উদাহরণ : বরফ, ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি।

লীনতাপ (Latent heat) কাকে বলে? এর প্রকারভেদগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর।
লীনতাপ (Latent heat): একক ভরের কোনো পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ বা অপসারণ করতে হয়, তাকে ওই পদার্থের অবস্থান্তরের লীনতাপ বা লীনতাপ বলা হয়।

প্রকারভেদ: অবস্থাস্তরের সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করে লীনতাপের চার রকম  বর্তমান।
(i) গলনের লীনতাপ,
(ii) কঠিনীভবনের লীনতাপ,
(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ ও
(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ।

(i) গলনের লীনতাপ (Latent heat of fusion) : প্রমাণ চাপে কোনো কঠিন পদার্থের একক ভরের উয়তা স্থির রেখে সমগ্র কঠিন পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োজন হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই পদার্থের গলনের লীনতাপ বলে। যেমন—বরফ গলনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম বা 336× 10 জুল/কেজি।

(ii)কঠিনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of solidification) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো তরল পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরল পদার্থকে কঠিনে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের কঠিনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন— জলের কঠিনীভবনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম।

(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ (Latent heat of vaporization) : প্রমাণ চাপে কোনো তরল পদার্থের একক ভরের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরলকে বাষ্পে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকেই ওই পদার্থের বাষ্পীভবনের লীনতাপ বলা হয়। যেমন— বিশুদ্ধ জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম বা মতান্তরে 540 ক্যালোরি/গ্রাম বা 2268 × 103 জুল/কেজি।

(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of condensation) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো গ্যাসীয় পদার্থের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র গ্যাসীয় পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের ঘনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন—জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম।

জেনে রাখা ভালো: লীনতাপ গ্রহণ বা বর্জনে অণুগুলির বিন্যাস পরিবর্তিত হয়। এই তাপ পদার্থের উয়তা বাড়ায় না বা কমায় না, তাই থার্মোমিটার দ্বারা লীনতাপ মাপা যায় না। ক্যালোরিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে লীনতাপ পরিমাপ করা হয়।

একটি সক্রিয়তামূলক কাজের মাধ্যমে দেখাও যে, চাপ হ্রাসে তরলের স্ফুটনাঙ্ক হ্রাস পায়।

উত্তর।
নিম্নলিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে দেখানো যায়— চাপ কমলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে।

উপকরণ : (i) একটি ইনজেকশন সিরিঞ্জ, (ii) পরিমাণমতো ফুটন্ত জল, (iii) জল গরম করার পাত্র, (iv) বার্নার।

পরীক্ষা পদ্ধতি : (i) পাত্রে পরিমাণমতো জল নিয়ে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করা হল। (ii) জল ফুটতে শুরু করার ঠিক আগের মুহূর্তে ইনজেকশন সিরিঞ্জের মুখটি জলে ডুবিয়ে পিস্টনটি নিজের দিকে টানা হল, যাতে কিছু পরিমাণ উষ্ণ জল সিরিঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে। এই অবস্থায় সিরিঞ্জের অভ্যন্তরে থাকা জলের উষ্ণতা স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অর্থাৎ, 100°C অপেক্ষা কম হয়। (iii) এবার সিরিঞ্জের মুখটি প্রদর্শিত চিত্রের মতো আঙুল দিয়ে চেপে বন্ধ করে সিরিঞ্জের পিস্টন পুনরায় পিছনের দিকে টেনে আনা হল। (iv) এই অবস্থায় জল ফুটতে শুরু করবে। কারণ আঙুল দিয়ে বন্ধ রাখার জন্যে ভেতরের চাপ কমে গেছে। 
সিরিঞ্জ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts