এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সাধারণ জ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সাধারণ জ্ঞান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২

জলের কয়টি অবস্থা থাকে ও কী কী ?

উত্তর। জলের তিনটি অবস্থা থাকে।

যথা— 

  • কঠিন অবস্থা — বরফ,
  • তরল অবস্থা — জল,
  • গ্যাসীয় অবস্থা— বাষ্প।

জেনে রাখো : পদার্থের চতুর্থ অবস্থা হল পদার্থের প্লাজমা (Plasma) অবস্থা— মহাবিশ্বে 99% পদার্থই এই অবস্থায় থাকে। আবার বোস-আইনস্টাইনের কনডেনসেশান তত্ত্ব অনুযায়ী পদার্থের পঞ্চম অবস্থাটি হল Super cooled অবস্থা বা বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট (BE Condensate) অবস্থা।

বুধবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২২

মাড়াই (Threshing) কাকে বলে? মাড়াই-এর কাজে লাগানো হয় এমন দুটি পশুর নাম লেখো।

মাড়াই (Threshing) কাকে বলে? মাড়াই-এর কাজে লাগানো হয় এমন দুটি পশুর নাম লেখো।

উত্তর : যে পদ্ধতিতে দানাজাতীয় ফসলের ভোজ্য অংশ (দানাশস্য, যেমন—ধান, গম প্রভৃতি) থেকে ফসল উদ্ভিদের অন্যান্য অংশকে আলাদা করা হয়, তাকে মাড়াই বা থ্রেসিং বলে।

মাড়াই:




মাড়াই-এর কাজে লাগানো হয় এমন দুটি পশু হল— বলদ এবং গাধা।

কম্বাইন হারভেস্টার কাকে বলে?

উত্তর: বর্তমানে বৃহৎ শস্য উৎপাদন ক্ষেত্রে চাষের জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ফসলি উদ্ভিদ কাটা, মাড়াই করা এবং দানাশস্যকে অন্যান্য উদ্ভিদ অংশ থেকে আলাদা করার জন্য যে বৃহৎ আকৃতির চলমান যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাকে কম্বাইন হারভেস্টার (Combine Harvester) বলে।


কম্বাইন হারভেস্টারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি কী কী?


কম্বাইন হারভেস্টারের সুবিধা : এই যন্ত্র ব্যবহার করলে আলাদাভাবে ঝাড়াই করার প্রয়োজন হয় না। দানাশস্যকে যন্ত্র দ্বারাই অন্যান্য উদ্ভিদ অংশ থেকে আলাদা করা সম্ভব হয়।


কম্বাইন হারভেস্টারের অসুবিধা : কম্বাইন যন্ত্র ফসলি উদ্ভিদের উপর দিকের অংশ কেটে নেয় বলে পশুখাদ্য (Fodder) উৎপাদন কম হয়। অর্থাৎ, খড় অংশের বেশিরভাগটাই চাষের জমিতে থেকে যায়। এ ছাড়া, যন্ত্রটির ব্যবহার খরচ সাপেক্ষ।


ঝাড়াই (Winnowing) কী ? বর্তমানে ওই কাজের জন্য কোন্ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়?

উত্তর। ফসলি উদ্ভিদ থেকে পৃথকীকৃত দানাশস্যকে যে পদ্ধতি দ্বারা ভুসি থেকে আলাদা করা হয়, তাকে ঝাড়াই করা বা Winnowing বলে। অল্পপরিমাণে উৎপাদনের ক্ষেত্রে উঁচু জায়গা থেকে ফেললে হালকা ভুসি হাওয়ায় উড়ে যায় এবং ভারী দানাশস্য মাটিতে জমা হয়।

 

বর্তমানে ওই কাজের জন্য ফ্যানিং মিল(Fanning Mill) যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।


বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১

বয়ঃসন্ধি: কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকাল । তোমার কী কী কাজ করতে ভালো লাগে? । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ছুটি' গল্পের ফটিক

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ছুটি' গল্পের ফটিকের মতো বন্ধু পেলে তোমরা তাকে কীভাবে সাহায্য করতে?

উত্তর । ফটিকের মতো বন্ধু পেলে আমরা তাকে নিম্নলিখিতভাবে সাহায্য করতাম—

১। বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের ও মনের যে পরিবর্তন ঘটে সে বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত কারণগুলি বন্ধুকে বোঝাতাম।

২। মনের এই পরিবর্তনগুলি যে অস্বাভাবিক নয় তা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর যে স্বাভাবিক পরিবর্তনে পরিণত হয় সে বিষয়ে বন্ধুকে জানাতাম।
৩। পড়াশোনার কোনো বিষয়ে অসুবিধা সৃষ্টি হলে সে বিষয়ে বন্ধুকে বুঝতে সাহায্য করতাম। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাকে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করতাম।

৪। বন্ধু হিসেবে তার পাশে থেকে তাকে মানসিক দিক থেকে একা অনুভব করতে দিতাম না।


তোমার কী কী কাজ করতে ভালো লাগে?

উত্তর।

১। পড়াশোনা ও খেলাধুলা করতে।

২। বাড়ির কাজ করতে।

৩। বাবা-মাকে সাহায্য করতে।

৪। পুকুরে সাঁতার কাটতে।

৫। বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ও সুখ, দুঃখ, আনন্দ ভাগ করে নিতে।
৬। অসহায়, পঙ্গু মানুষদের সাহায্য করতে।
৭। যে-কোনো মানুষের বিপদে তার পাশে দাঁড়াতে।

তুমি বয়ঃসন্ধিকালে যে সমস্ত মানসিক পরিবর্তন ও অনুভূতিগুলো অনুভব করো তোমার ছোটোবেলাতেও কি সেরকম মনে হত?

উত্তর। না, এই বয়সে (অর্থাৎ, 12–14 বছর বয়স) যে-সমস্ত মানসিক পরিবর্তন ও অনুভূতিগুলি অনুভব করি তা ছোটোবেলাতে অনুভূত হত না।

কারণ : বয়ঃসন্ধিকালে আমাদের দেহে বিশেষ কয়েকটি হরমোন ক্ষরণ শুরু হয়। এই সমস্ত হরমোনের প্রভাবে আমাদের যেমন শারীরিক পরিবর্তন ঘটেছে। তেমনি মানসিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে, যা ছোটোবেলাতে ছিল না। আমাদের বিভিন্ন পরিস্থিতি বোঝার এবং বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে ফলে কার্যকারণ সম্পর্কিত অনুভূতিগুলি অনুভূত হয়। যেমন—রাগ, দুঃখ, ভয়, আনন্দ, হাসি, কান্না প্রভৃতি। তবে আবেগ এবং অনুভূতিগুলিকে আমরা এখন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, যেটা ছোটোবেলাতে করতে পারতাম না।

শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

তরলের স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) কাকে বলে?এটি কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়?

উত্তর।
স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো তরল পদার্থের স্ফুটন শুরু হয় এবং সমগ্র তরল বাষ্পে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত সেই উষ্ণতা স্থির থাকে, তাকে ওই তরলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক বলে।

তরলের স্ফুটনাঙ্ক নিম্নলিখিত বিষয়ের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়—
(i) তরলের প্রকৃতি : তরল পদার্থটি কী ধরনের, তার ওপর তরলের স্ফুটনাঙ্ক নির্ভর করে। উদ্বায়ী তরলের স্ফুটনাঙ্ক কম হয়। 

(ii) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : তরলে কঠিন অপদ্রব্য দ্রবীভূত অবস্থায় থাকলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়। যেমন—লবণ মিশ্রিত থাকায় সমুদ্রজলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C থেকে বেড়ে প্রায় 110°C হয়। আবার গ্যাসীয় অপদ্রব্য উপস্থিত থাকলে, তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। তরল অপদ্রব্যের ক্ষেত্রে মিশ্রণের স্ফুটনাঙ্ক উপাদান তরল দুটির স্ফুটনাঙ্কের মাঝামাঝি হয়।

(iii) তরলের উপরিস্থিত চাপ : তরলের উপরিস্থিত মাধ্যম দ্বারা প্রযুক্ত চাপ, প্রমাণ চাপ অপেক্ষা বেশি হলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি হয়। যেমন— চাপ বৃদ্ধিতে বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক প্রায় 1°C বৃদ্ধি পায়। প্রেশার কুকার, অপারেশনে ব্যবহৃত ছুরি, কাঁচি জীবাণুমুক্ত করার কাজে লাগানো হয়।

একইভাবে তরলের ওপর চাপ হ্রাস পেলে ওই তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায় অর্থাৎ, তরলটি স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা কম উষ্ণতায় ফোটে। এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ঘনীভূত দুধ তৈরি করা হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে বায়ুচাপ কম হওয়ায় জল তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা অনেক কম উষ্ণতায় ফুটতে শুরু করে। যেমন— দার্জিলিং-এ জল প্রায় 93.6°C উন্নতায় ফোটে, ফলে খাদ্যদ্রব্য ভালো সিদ্ধ হয় না। হাড়ের ধাত্রে ও দাঁতের এনামেল, ডেনটিন ও সিমেন্টামে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস মৌলগুলির যৌগ কেলাসাকারে জমা থাকে।

গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন কেন? 

উত্তর।
চাপ বাড়লে বা কমলে বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের গলনাঙ্কের মান পরিবর্তিত হয়। 76 সেমি পারদস্তম্ভের চাপে কোনো পদার্থের গলনাঙ্ক নির্ধারণ করলে তা স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হবে। কিন্তু, চাপ ওই নির্দিষ্ট মানের বেশি বা কম হলে গলনাঙ্ক আর স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হয় না। এজন্য গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন।

অনুরূপ প্রশ্ন : কোনো তরলের স্ফুটনাঙ্ক উল্লেখ করার সময় চাপ উল্লেখ করা উচিত কেন?


প্রশ্ন: বৈদ্যুতিক লাইনে ব্যবহৃত ফিউজের গলনাঙ্ক কম হওয়া দরকার কেন?

উত্তর: বৈদ্যুতিক লাইনের ভোল্টেজ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে অনেক বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হয়। ফলে, তার উত্তপ্ত হয়ে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফিউজ তারের উপাদানের গলনাঙ্ক কম হয়। সেজন্য, ওই তার অল্প উত্তাপে ফিউজ গলেে গিয়ে তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।

পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা আলোচনা করো।

উত্তর। পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্কের মান প্রত্যক্ষভাবে দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে–(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি, (ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপ।

(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের সঙ্গে যদি অন্য কোনো পদার্থ অপদ্রব্য হিসেবে মেশানো হয় তবে অপদ্রব্যের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক স্বাভাবিক গলনাঙ্কের তুলনায় কমে যায়।

উদাহরণ: (a) সোনার সঙ্গে খাদ মেশালে সোনার গলনাঙ্ক কমে। (b) বরফের সঙ্গে লবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মেশালে মিশ্রণের উষ্ণতা 0°C অপেক্ষা অনেক কম (প্রায় – 23°C) হয়। (c) ফিউজ তারে ব্যবহৃত রোজ মেটাল (Pb + Sn + Bi) একটি সংকর ধাতু, যার গলনাঙ্ক প্রায় 95°C যদিও এর উপাদান ধাতুগুলির কোনোটিরই গলনাঙ্ক 210°C-এর কম নয়।


(ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপের প্রভাব : গলনাঙ্কের মান বায়ুমণ্ডলীয় চাপের দ্বারা দু-ভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকেে। 

(a) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি হয় চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ, সেগুলি স্বাভাবিক গলনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি উষ্ণতায় গলে। এক্ষেত্রে, গলনের ফলে যেহেতু আয়তন বৃদ্ধি হয়, তাই চাপ বৃদ্ধিতে গলন প্রক্রিয়া বাধা পায়। সুতরাং, অবস্থান্তর ঘটানোর জন্য উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ গলনাঙ্ক বাড়ে।
উদাহরণ : তামা, রুপো, মোম ইত্যাদি। এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধিতে মোমের গলনাঙ্ক 0.04°C বৃদ্ধি পায়।


(b) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন হ্রাস পায়, চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক হ্রাস পায়। এজাতীয় পদার্থগুলির ক্ষেত্রে, গলনের ফলে আয়তন যেহেতু হ্রাস পায় তাই চাপ বৃদ্ধিতে তাদের আয়তন সংকোচন সহজে হয় অর্থাৎ, গলনাঙ্ক কমে।
উদাহরণ : বরফ, ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি।

লীনতাপ (Latent heat) কাকে বলে? এর প্রকারভেদগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর।
লীনতাপ (Latent heat): একক ভরের কোনো পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ বা অপসারণ করতে হয়, তাকে ওই পদার্থের অবস্থান্তরের লীনতাপ বা লীনতাপ বলা হয়।

প্রকারভেদ: অবস্থাস্তরের সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করে লীনতাপের চার রকম  বর্তমান।
(i) গলনের লীনতাপ,
(ii) কঠিনীভবনের লীনতাপ,
(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ ও
(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ।

(i) গলনের লীনতাপ (Latent heat of fusion) : প্রমাণ চাপে কোনো কঠিন পদার্থের একক ভরের উয়তা স্থির রেখে সমগ্র কঠিন পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োজন হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই পদার্থের গলনের লীনতাপ বলে। যেমন—বরফ গলনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম বা 336× 10 জুল/কেজি।

(ii)কঠিনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of solidification) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো তরল পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরল পদার্থকে কঠিনে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের কঠিনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন— জলের কঠিনীভবনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম।

(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ (Latent heat of vaporization) : প্রমাণ চাপে কোনো তরল পদার্থের একক ভরের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরলকে বাষ্পে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকেই ওই পদার্থের বাষ্পীভবনের লীনতাপ বলা হয়। যেমন— বিশুদ্ধ জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম বা মতান্তরে 540 ক্যালোরি/গ্রাম বা 2268 × 103 জুল/কেজি।

(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of condensation) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো গ্যাসীয় পদার্থের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র গ্যাসীয় পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের ঘনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন—জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম।

জেনে রাখা ভালো: লীনতাপ গ্রহণ বা বর্জনে অণুগুলির বিন্যাস পরিবর্তিত হয়। এই তাপ পদার্থের উয়তা বাড়ায় না বা কমায় না, তাই থার্মোমিটার দ্বারা লীনতাপ মাপা যায় না। ক্যালোরিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে লীনতাপ পরিমাপ করা হয়।

একটি সক্রিয়তামূলক কাজের মাধ্যমে দেখাও যে, চাপ হ্রাসে তরলের স্ফুটনাঙ্ক হ্রাস পায়।

উত্তর।
নিম্নলিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে দেখানো যায়— চাপ কমলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে।

উপকরণ : (i) একটি ইনজেকশন সিরিঞ্জ, (ii) পরিমাণমতো ফুটন্ত জল, (iii) জল গরম করার পাত্র, (iv) বার্নার।

পরীক্ষা পদ্ধতি : (i) পাত্রে পরিমাণমতো জল নিয়ে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করা হল। (ii) জল ফুটতে শুরু করার ঠিক আগের মুহূর্তে ইনজেকশন সিরিঞ্জের মুখটি জলে ডুবিয়ে পিস্টনটি নিজের দিকে টানা হল, যাতে কিছু পরিমাণ উষ্ণ জল সিরিঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে। এই অবস্থায় সিরিঞ্জের অভ্যন্তরে থাকা জলের উষ্ণতা স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অর্থাৎ, 100°C অপেক্ষা কম হয়। (iii) এবার সিরিঞ্জের মুখটি প্রদর্শিত চিত্রের মতো আঙুল দিয়ে চেপে বন্ধ করে সিরিঞ্জের পিস্টন পুনরায় পিছনের দিকে টেনে আনা হল। (iv) এই অবস্থায় জল ফুটতে শুরু করবে। কারণ আঙুল দিয়ে বন্ধ রাখার জন্যে ভেতরের চাপ কমে গেছে। 
সিরিঞ্জ


বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

বরফের চাঁই খোলা অবস্থায় রাখলে তা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় কেন?

উত্তর।
বরফের চাঁই-এর সংলগ্ন বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় এবং বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকে। বরফের চারপাশে এই ভাসমান জলকণাগুলিকেই বরফখণ্ড থেকে নির্গত ধোঁয়া বলে মনে হয়।

তাপ সঞ্চালন কাকে বলে? কী কী পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়?

উত্তর।

তাপ সঞ্চালন (Transmission of heat) : উন্নতর স্থান থেকে অপেক্ষাকৃত কম উস্ন স্থানে তাপ সঞ্চালিত হবার ঘটনাকে তাপ সঞ্চালন বলে। তাপ সঞ্চালন তিনভাবে হতে পারে, যথা—পরিবহণ, পরিচলন ও বিকিরণ।

বাতাসে ধূলিকণার উপস্থিতির সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্পর্ক আছে কি?

উত্তর।
বাতাসে ধূলিকণা উপস্থিত থাকে বলেই মেঘ সৃষ্টি তথা বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। সূর্যের তাপে বড়ো জলাশয়, নদী, সমুদ্রের উপরিতল থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুতে মিশে যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু হালকা হয়ে উপরে ওঠে এবং একসময় বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে এলে ঘনীভবনের ফলে জলবিন্দুতে পরিণত হয় ও বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভেসে বেড়ায়। একেই মেঘ বলে। তাই ধূলিকণা বাতাসে না থাকলে মেঘের অস্তিত্ব থাকত না, ফলে বৃষ্টিও হত না।

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থাকলে শিশির জমে না কেন?

উত্তর।

মেঘমুক্ত আকাশ শিশির জমার পক্ষে উপযুক্ত। কারণ— মেঘের অনুপস্থিতিতে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়। কিন্তু মেঘলা আকাশে ভূপৃষ্ঠ দ্বারা বিকীর্ণ তাপ মেঘের স্তরে প্রতিফলিত হয়ে আবার ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। ফলে, ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বাতাসের উদ্ভূতা কমে শিশিরাঙ্কের নীচে নামতে পারে না। ফলে সহজে শিশির জমে না।

ভালো শিশির পড়ার শর্ত কী?

উত্তর।

ভালো শিশির পড়ার শর্ত হল—
  1. আকাশ পরিষ্কার ও মেঘহীন থাকবে
  2. বায়ুর আর্দ্রতা বেশি হতে হবে,
  3. বাতাস স্থির থাকতে হবে,
  4. তাপের ভালো বিকিরক ও কুপরিবাহী পদার্থের সংস্পর্শে থাকা বস্তু
  5. ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বস্তুর উপস্থিতি।
জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্ক অপেক্ষা কম হলে কী হবে?

উত্তর।
জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ুর উন্নতা শিশিরাঙ্কের নীচে এলে ওই উন্নতার বায়ু আরও কম জলীয়বাষ্প ধরে রাখতে পারবে। জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় রূপান্তরিত হবে। ফলে শিশির, কুয়াশা ইতাদি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটবে।

সন্ধেবেলা শিশির পড়ে না, অথচ গভীর রাতে বা ভোরের দিকে শিশির পড়ে কেন?

উত্তর।
সারাদিন সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ গরম হয় এবং সংলগ্ন বায়ুও গরম হয়। ভূপৃষ্ঠ ঠান্ডা হতে কিছুটা সময় লাগে, সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই ঠান্ডা হয় না। ফলে, ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নামে না, তাই সন্ধেবেলায় শিশির পড়ে না। গভীর রাতে বা ভোরের দিকে ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়। ফলে বায়ুর উষ্ণতা একসময় শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে যায় ও শিশির পড়ে।

শরৎকালের ভোরে খোলা আকাশের নীচে রাখা লোহা ও কাঠের চেয়ারের মধ্যে কোনটিতে প্রথম শিশির জমবে?

উত্তর।
তাপের কুপরিবাহী বস্তুর উপর শিশির দ্রুত জমে। কারণ— এক্ষেত্রে বস্তু দ্রুত তাপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় সংলগ্ন বায়ু সহজে শীতল হয় এবং উয়তা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে শিশির পড়ে। কাঠ কুপরিবাহী পদার্থ হওয়ায় কাঠের উপর প্রথম শিশির দেখা যাবে।

মেঘলা রাতে ভালো শিশির পড়ে না কেন?

উত্তর।
আকাশ মেঘলা থাকলে, ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর থেকে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর ভেদ করে যেতে পারে না, বরং বেশিরভাগ তাপই মেঘ দ্বারা প্রতিফলিত হয়। ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী বায়ুস্তরের উয়তা সহজে শিশিরাঙ্কের নীচে নামতে পারে না। তাই মেঘলা রাতে ভালো শিশির পড়ে না।

বড়ো বড়ো শহরে বা শিল্পাঞ্চলে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয় কেন?

উত্তর।
বড়ো বড়ো শহরে বা শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত বায়ুতে ধুলো ছাড়াও কার্বন, সালফার ইত্যাদির কণা থাকে। এ ছাড়া, কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়াও বায়ুতে এসে মেশে। ফলে, ওই সব অঞ্চলে কুয়াশা হলে তা ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা মিলিয়ে যায় কেন?

উত্তর। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়, ফলে ভূত্বক সংলগ্ন বায়ুর উয়তাও বাড়ে। বর্ধিত উন্নতায় বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ু পুনরায় অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। উত্তপ্ত বায়ু থেকে লীনতাপ সংগ্রহ করে কুয়াশা হিসেবে ভাসমান জলবিন্দুগুলি আবার বাষ্পে পরিণত হয়। তাই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা মিলিয়ে যায়৷

জেনে রাখা ভালো: উৎপত্তিগতভাবে অভিন্ন হওয়ায় মেঘ ও কুয়াশার মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। প্রাকৃতিক ঘনীভবনের ফলেই দুইয়ের উৎপত্তি। শুধুমাত্র তফাত এই যে, কুয়াশার তুলনায় মেঘ বায়ুমণ্ডলের অনেক উপরের স্তরে অবস্থান করে। প্রকৃতপক্ষে মেঘ হল ঊর্ধ্বাকাশের কুয়াশা।

তোমাকে 50°C উষ্ণতার সম্পৃক্ত নুনের দ্রবণ দেওয়া হল। তুমি ওই দ্রবণের উষ্ণতা ধীরে ধীরে কমাতে থাকলে। কী হবে বলো? 

উত্তর:সম্পৃক্ত নুনের দ্রবণের উয়তা কমাতে থাকলে ওই দ্রবণে নুনের দ্রাব্যতা কমে যাবে। ফলে, কিছুটা নুন থিতিয়ে পড়বে। তবে দ্রবণটি এই অবস্থাতেও সম্পৃক্ত থাকবে।

কোনো মহাকাশচারী 20°C উষ্ণতায় জল ফ্লাস্কে করে চাঁদের পৃষ্ঠে নিয়ে গিয়ে ওই জল একটি বিকারে ঢাললে তিনি কী দেখবেন?

উত্তর।
চাঁদে বায়ুমণ্ডলে না থাকায় সেখানে বায়ুচাপ শূন্য। বায়ুশূন্য স্থানে জলের স্ফুটনাঙ্ক তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা অনেক কম। তাই মহাকাশে থাকাকালীন বিকারে জল ঢালার সময় জলের উপর চাপ শুধুমাত্র 20°C উষ্মতার জলীয়বাষ্প চাপের সমান হয়, যা অতি নগণ্য। এই উপেক্ষণীয় চাপে জল দ্রুত ফুটে বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে এবং বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় লীনতাপ বিকারের জল থেকেই সংগ্রহ করে। ফলে বিকারের অবশিষ্ট জলের উষ্ণতা দ্রুত হ্রাস পায় এবং একসময় তা বরফে পরিণত হয়।

রান্নার সময় পাত্রের মুখে ঢাকনা দিয়ে চেপে রান্না করলে খাদ্যবস্তু তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যায় কেন?

উত্তর: পাত্রের মুখে ঢাকনা দিয়ে রাখলে তাপের ফলে উৎপন্ন জলীয়বাষ্প পাত্রের মধ্যেই জমা হয়, বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে না। আর জলীয়বাষ্প যত বাড়ে, বাষ্পচাপও তত বাড়ে। ফলে জলের স্ফুটনাঙ্কও বেড়ে যায় ও খাদ্যবস্তু তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যায়।
যেমন : প্রেশার কুকার

একটি জলপূর্ণ বিকার টেবিলের উপর রেখে বিকারের জলে বাষ্প চালনা করলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপে জল ফোটানো যাবে কি?

উত্তর: এক্ষেত্রে বিকারের জল, সরবরাহ করা বাষ্প থেকে তাপগ্রহণ করে নিজের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। এভাবে যে মুহূর্তে জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অর্থাৎ, 100°C হবে তখন জল ও বাষ্প উভয়ের উষ্ণতা সমান হয়ে যাওয়ায় তাপীয় আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ওই জল বাষ্প থেকে আর তাপ গ্রহণ করতে পারবে না। তাই ওই জল 100°C উষ্ণতায় থেকে যাবে, ফুটবে না ৷

প্রেশার কুকারে খাদ্যবস্তু তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয় কেন?

উত্তর: চাপ বাড়ালে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বাড়ে-প্রেশার কুকারে এই নীতি কাজে লাগানো হয়। প্রেশার কুকারে জলসহ খাদ্যবস্তু নিয়ে ঢাকনাটি বায়ু নিরুদ্ধভাবে বন্ধ করে তাপ দেওয়া হয়। এর ফলে উৎপন্ন জলীয়বাষ্প পাত্রের মধ্যে জমা হতে থাকে ও বাষ্পচাপ ক্রমশ বাড়ে। এখন পিন ভাল্বটিকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে ভিতরের বাষ্পচাপ 2 বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সমান হয়। এই চাপে জলের স্ফুটনাঙ্ক প্রায় 120°C হয়। এই উচ্চ তাপমাত্রায় ফুটন্ত জলে খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয় ও রান্না দ্রুত হয়।

চাপ বাড়ালে স্ফুটন প্রক্রিয়া বাধা পাবে, নাকি স্ফুটন প্রক্রিয়ার সাহায্য হবে?

উত্তর।
স্ফুটনে তরল বাষ্পীভূত হয়। অর্থাৎ, আয়তনে প্রসারিত হয়। চাপ বাড়ালে আয়তন প্রসারণ বাধা পাবে। তাই চাপ বাড়ালে স্ফুটন প্রক্রিয়া বাধা পাবে এবং স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যাবে।

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

মাছ সংরক্ষণের জন্য বিশুদ্ধ বরফ না দিয়ে নুন-মেশানো বরফ দেওয়া হয় কেন?

উত্তর:
বিশুদ্ধ বরফের উষ্ণতা 0°C। কিন্তু বরফ ও নুন 3:1 ওজন অনুপাতে মেশালে উৎপন্ন মিশ্রণের উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে হয় প্রায় –23°C। এই নিম্ন উষ্ণতায় ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অণুজীব বেঁচে থাকতে পারে না বলে এই মিশ্রণের সাহায্যে মাছ-মাংস ইত্যাদি দীর্ঘ সময়ের জন্য অবিকৃত রাখা সম্ভব। এই কারণেই এক্ষেত্রে নুন-মেশানো বরফ ব্যবহার করা হয়।

থার্মোফ্লাস্কের দুই দেয়ালের অভ্যন্তর বায়ুশূন্য ও চকচকে করা হয় কেন?

থার্মোফ্লাস্কের দুই দেয়ালের অভ্যন্তর বায়ুশূন্য ও চকচকে করা হয়- কারণ,
  • কাচ তাপের কুপরিবাহী এবং কাচপাত্র ও ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যবর্তী স্থান নরম কুপরিবাহী দিয়ে পৃথক থাকার ফলে এবং পাত্রের মুখে থাকা কর্কের ছিপিও অন্তরক পদার্থ হওয়ায়, পরিবহণ পদ্ধতিতে বাইরের বায়ুর সঙ্গে ফ্লাস্কে রাখা তরলের তাপীয় আদানপ্রদান ঘটতে পারে না।
  • আবার কাচপাত্রের দুটি দেয়াল প্রায় বায়ুশূন্য থাকায় পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ ভিতরে যেতে বা ভিতর থেকে বাইরে আসতে পারে না।
  • কাচের দেয়াল দুটির মুখোমুখি অংশ পারদ বা রূপোর প্রলেপ লাগিয়ে চকচকে করা হয়। ফলে, বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ স্যালন ঘটার সময় মসৃণ পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলিত হয়ে যায়, ফলে এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনও ব্যাহত হয়।

সুতরাং, সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়াই কার্যকরী হওয়ার সুযোগ না থাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য ফ্লাস্কের অভ্যন্তর এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে তাপের গ্রহণ ও বর্জন ঘটে না। ফলে, উষ্ণতাও অপরিবর্তিত থাকে।


বাল্ব জ্বালালে সবদিকেই কি তার তাপ ছড়িয়ে যায়? এখানে কোন্ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে?

উত্তর:
বাল্ব জ্বালালে সবদিকেই তার তাপ ছড়িয়ে যায়।
এক্ষেত্রে বিকিরণ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে। পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হবে না। কারণ — বায়ু তাপের কুপরিবাহী। এই তাপ সঞ্চালন পরিচলন পদ্ধতিতেও হবে না। কারণ, এক্ষেত্রে একই সঙ্গে সবদিকেই তাপ পরিবাহিত হয়। কিন্তু পরিচলন পদ্ধতিতে কেবলমাত্র উপরের দিকে তাপ পরিবাহিত হয়।


জলচর প্রাণীরা গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে জলের কোন্ স্তরে থাকতে আরাম বোধ করে? জলের ওপরের স্তরে নাকি নীচের স্তরে?

উত্তর:

যে সমস্ত প্রাণীরা জলে থাকে তারা গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে অর্থাৎ, সবসময়ই জলের নীচের স্তরে থাকতে আরাম বোধ করে। কারণ— জল তাপের কুপরিবাহী বলে গ্রীষ্মকালে পরিবেশের প্রচণ্ড তাপে জলের উপরিভাগ গরম হয়ে গেলেও সেই তাপ জলের নীচের স্তর অবধি পৌঁছোয় না। আবার, শীতকালে উপরিভাগের জল তাপ বর্জন করে ঠান্ডা হয়ে গেলেও জলের নীচের স্তর জলের উপরিস্তর পেরিয়ে তাপ বর্জন করতে পারে না। তাই জলের নীচের স্তর গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা এবং শীতকালে গরম থাকে। তাই জলচর প্রাণীরা শীতল রক্তবিশিষ্ট হওয়ায় সবসময়ই জলের নীচের স্তরে থাকে।


ফুটন্ত জলের মধ্যে একটি কাঠের স্কেল ডুবিয়ে দেওয়া হল। (i) বেশ কিছুক্ষণ পর ওই কাঠের স্কেলের যে দিকটা জল থেকে বেরিয়ে আছে সেই দিকটা হাত দিয়ে ধরতে পারা যাবে কি? (ii) ওই ফুটন্ত জলে একটি স্টিলের চামচের একপ্রান্ত ডোবালে কিছুক্ষণ পর অন্যপ্রান্তটি ধরে থাকা যাবে কি? তোমার উত্তর দুটির কারণ ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর:

(i) প্রথম ক্ষেত্রে, কাঠের স্কেলের জল থেকে বেরিয়ে আসা দিকটি হাত দিয়ে ধরা যাবে।

তাপের পরিবাহীতা

(ii) দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, স্টিলের চামচটির অন্যপ্রান্ত হাত দিয়ে ধরা যাবে না। 

কারণ— প্রথম ক্ষেত্রে কাঠের স্কেলের উষ্ণপ্রান্ত থেকে কম উষ্ণতর প্রান্তে খুব কম তাপ প্রবাহিত হয়েছে। তাই অন্যপ্রান্তটি হাত দিয়ে ধরা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু স্টিলের চামচের ক্ষেত্রে বেশি উষ্ণতর প্রান্ত থেকে কম উষ্ণতর প্রান্তে অনেক বেশি তাপ প্রবাহিত হয়েছে। ফলে, কম উষ্ণতর প্রান্তটিও উষ্ণ হয়ে গেছে। তাই স্টিলের চামচটির অন্যপ্রান্ত ধরে থাকা যায়নি। অর্থাৎ, কাঠের মধ্যে দিয়ে তাপ সহজে প্রবাহিত না হলেও স্টিলের মধ্যে দিয়ে হয়।


একটি দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের ধারণা ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর:

শীতকালে জ্বলন্ত উনুনের পাশে দাঁড়ালে বা উনুন থেকে সামান্য দূরে হাত রাখলে দেহ বা হাত উত্তপ্ত হয়। উনুনের আগুনের শিখার যে-কোনো একপাশে শিখা থেকে সামান্য দুরে দেশলাই কাঠির বারুদযুক্ত অংশটি ধরলে কিছু সময় পর সেটি জ্বলে ওঠে। এক্ষেত্রে বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে তাপ পরিবহণ পদ্ধতিতে হাত বা দেশলাই কাঠিতে আসতে পারে না।

আবার বায়ুর যে অংশ জ্বলন্ত উনুনের উপর আছে, সেই বায়ু উয় ও হালকা হয়ে আরও উপরের দিকে ওঠে এবং সাময়িকভাবে সৃষ্ট শূন্যস্থান করতে পার্শ্ববর্তী স্থানের শীতল ও ভারীপূরণ বায়ু উনুনের দিকে ছুটে আসে। সুতরাং, পরিচলন পদ্ধতিতেও হাত বা দেশলাই কাঠিতে তাপ স্থানান্তরিত হয় না।

আগুনের পাশে হাত
তাই, অনুমান করা যায় উনুন ও ব্যক্তির মাঝে থাকা মাধ্যমে সাহায্য ছাড়াই বা তাকে কোনোভাবে প্রভাবিত না করেই এক্ষেত্রে তাপ উন্নতর থেকে শীতলতর বস্তুতে সঞ্চালিত হতে সক্ষম হয়েছে। তাপীয় আদানপ্রদানের এই পদ্ধতিকে বলা হয় বিকিরণ।


জেনে রাখা ভালো : বিকীর্ণ তাপ আলোর মতোই একপ্রকার তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ। এদের মধ্যে পার্থক্য শুধুমাত্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য (দৃশ্যমান আলো : 4000Å - 7000Å , বিকীর্ণ তাপ : 8000Å - 10000Å) । আলো আমাদের চোখে দর্শন অনুভূতি সৃষ্টি করে, অন্যদিকে বিকীর্ণ তাপের প্রভাবে আমাদের শরীর উত্তপ্ত হয়।

সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১

থার্মোফ্লাস্কের(Thermoflask) গঠন ও কার্যনীতি চিত্রসহ বর্ণনা করো।

উত্তর:

থার্মোফ্লাস্ক (Thermoflask) একটি যন্ত্রব্যবস্থা, যার দ্বারা কোনো তরল পদার্থের উষ্ণতা দীর্ঘসময়ের জন্য অপরিবর্তিত রাখা যায়।

বিশেষভাবে নির্মিত এই চোঙাকৃতি পাত্রে রাখা উষ্ণ বা শীতল তরল দীর্ঘসময়ের জন্য উষ্ণ বা শীতল থাকে। আবিষ্কারক ইংরেজ বিজ্ঞানী জেমস্ ডিওয়ারের নাম অনুসারে একে অনেকসময় ডিওয়ার ফ্লাস্কও বলা হয়।


গঠন:
  • এটি একটি দুই দেয়ালবিশিষ্ট কাচের পাত্র, যাদের মধ্যবর্তী স্থান প্রায় বায়ুশূন্য।
  • ভিতরের দেয়ালের বাইরের দিকে এবং বাইরের দেয়ালের ভিতর দিকে রুপো বা পারদের প্রলেপ দেওয়া থাকে এবং তলগুলি ভালো করে পালিশ করে মসৃণ করা হয়।
  • ফ্লাস্কের সরু মুখ কর্কের তৈরি ছিপি দিয়ে বন্ধ করা হয়। কাচপাত্র ভঙ্গুর হওয়ায় সুরক্ষা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, সেটি একটি স্প্রিং-এর ওপর বসিয়ে একটি ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যে রাখা হয়।
  • বহিরাবরণ ও কাচপাত্রের মধ্যবর্তী অংশ শোলা, ফেল্ট বা তুলা ইত্যাদি নরম কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে পূর্ণ করা থাকে।
  • একটি প্যাঁচযুক্ত প্লাস্টিকের ঢাকনার সাহায্যে পাত্রের ওপরের অংশ ঢেকে রাখা হয়।





কার্যনীতি:
  • কাচ তাপের কুপরিবাহী এবং কাচপাত্র ও ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যবর্তী স্থান নরম কুপরিবাহী দিয়ে পৃথক থাকার ফলে এবং পাত্রের মুখে থাকা কর্কের ছিপিও অন্তরক পদার্থ হওয়ায়, পরিবহণ পদ্ধতিতে বাইরের বায়ুর সঙ্গে ফ্লাস্কে রাখা তরলের তাপীয় আদানপ্রদান ঘটতে পারে না।
  • আবার কাচপাত্রের দুটি দেয়াল প্রায় বায়ুশূন্য থাকায় পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ ভিতরে যেতে বা ভিতর থেকে বাইরে আসতে পারে না।
  • কাচের দেয়াল দুটির মুখোমুখি অংশ পারদ বা রূপোর প্রলেপ লাগিয়ে চকচকে করা হয়। ফলে, বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ স্যালন ঘটার সময় মসৃণ পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলিত হয়ে যায়, ফলে এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনও ব্যাহত হয়।

সুতরাং, সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়াই কার্যকরী হওয়ার সুযোগ না থাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য ফ্লাস্কের অভ্যন্তর এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে তাপের গ্রহণ ও বর্জন ঘটে না। ফলে, উষ্ণতাও অপরিবর্তিত থাকে।

বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

মোটা কাগজের ঠোঙা বানিয়ে জল রেখে আগুনে শিখায় ধরলে জল ফোটানো যাবে কি?

উত্তর:

মোটা কাগজের ঠোঙা বানিয়ে তাতে জল ঢেলে আগুনের শিখায় ধরলে জল ফোটানো যাবে না। কারণ— মোটা কাগজের মধ্যে দিয়ে তাপ তাড়াতাড়ি জলে যেতে পারবে না এবং আগুনের শিখার সংস্পর্শে থাকা কাগজের অংশটি খুব তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়ে যাবে। ফলে, কাগজটি পুড়ে যাবে।


শিশির কাকে বলে?

উত্তর | রাত্রে তাপ বিকিরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ এবং তার সংলগ্ন বস্তুগুলির উষ্ণতা যখন ক্রমশ কমে তখন ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরও শীতল হয়। অবশেষে উষ্ণতা একটি নির্দিষ্ট মানে অর্থাৎ, শিশিরাঙ্কে পৌছোলে, শীতল বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়। । বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কেরও নীচে নেমে গেলে, স্বাভাবিকভাবেই বায়ু তার ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত জলীয়বাষ্পকে আর নিজের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে পারে না। বায়ু দ্বারা পরিত্যক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ছোটো ছোটো জলবিন্দুর আকারে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন ঘাস, পাতা ইত্যাদির উপরে জমা হয়। একেই শিশির (Dew) বলে।
শিশির

পাতলা কাগজের পাত্রে কীভাবে জল ফোটানো যায় ?

উত্তর:

প্রথমে খাতার পৃষ্ঠার মাপের একটি পাতলা কাগজের চোঙ বা ফানেল তৈরী করে তার মধ্যে জল রাখা হল। এবার জলসহ
কাগজের পাতলা দিকটি আগুনের শিখায় ধরলে, কিছুক্ষণের মধ্যেই জল ফুটতে থাকে অথচ কাগজটি জ্বলে যায় না। এক্ষেত্রে, পাতলা কাগজের মধ্যে দিয়ে তাপ খুব তাড়াতাড়ি জলে চলে যায়। ফলে, জল স্ফুটনাঙ্কে পৌছে গেলেও কাগজটি তার জ্বলনাঙ্কে পৌঁছোয় না। তাই পাতলা কাগজের পাত্রে জল ফোটানো যাবে।


প্রশ্ন: সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক থাকে কি? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর | সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক থাকে না। যেমন অনিয়তাকার বা অকেলাসিত কঠিন পদার্থের (কাচ, মোম, মাখন ইত্যাদি) এবং মিশ্র পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক থাকে না, পরিবর্তে এদের গলনাঙ্কের নির্দিষ্ট পাল্লা থাকে।

সাধারণ বায়ুচাপে উদ্বায়ী পদার্থগুলির ক্ষেত্রে গলনাঙ্কের অস্তিত্ব থাকে না।
কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থকে (HgO, CaCO) উচ্চ উষ্ণতায় উত্তপ্ত করার ফলে বিয়োজিত হয়ে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। 

এদের ক্ষেত্রে গলনাঙ্কের ধারণা প্রযোজ্য নয়।



প্রশ্ন: ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে যে মূর্তিগুলি তৈরি করা হয় তা বিশেষ ধাতু ব্যবহার করে তৈরি করা হয় কেন ?

উত্তর | ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে মূর্তি তৈরি করার সময় সেইসব বিশেষ ধাতু ব্যবহার করা হয়, যারা তরল অবস্থা থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে। এর ফলে, ছাঁচের সূক্ষ্ম কোনাগুলিতেও ধাতুগুলি পৌঁছোতে পারে ও মূর্তির ধারগুলি খুব সূক্ষ্ম হয়। যেমন—ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি।



প্রশ্ন: দুটি বরফের টুকরো একসঙ্গে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে তারা জোড়া লেগে যায়। কেন এমন হয় ?

উত্তর | বরফের গলনের ফলে যে জল উৎপন্ন হয় তার আয়তন বরফের আয়তনের তুলনায় কম। চাপ বাড়ালে গলনে সুবিধা হয়। তাই চাপ বৃদ্ধি করলে বরফের গলনাঙ্ক হ্রাস পায়। দুটি বরফের টুকরো একসঙ্গে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে সংযোগস্থলে বরফের গলনাঙ্ক কমে ও বরফ গলে একসময় জলে পরিণত হয়। চাপ উঠিয়ে নিলে গলনাঙ্ক আবার বাড়ে ও গলে যাওয়া জল আবার বরফে পরিণত হয়। ফলে, বরফের টুকরো দুটি জুড়ে যায়।


বাষ্পায়ন (Evaporation) কাকে বলে? বাষ্পায়নের হার কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

উত্তর।
বাষ্পায়ন(Evaporation): যে-কোনো উষ্ণতায় তরলের উপরিতল থেকে তরলের ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে বাষ্পায়ন বলে।

বাষ্পায়নের হার নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে—

(i) তরলের প্রকৃতি : এক-একটি তরলের ক্ষেত্রে বাষ্পায়নের হার এক-একরকম। যে তরলের স্ফুটনাঙ্ক ঘরের উয়তার যত কাছাকাছি হয়, তার বাষ্পায়নের হার তত বেশি হয়। যেমন ইথারের স্ফুটনাঙ্ক 35°C, আর জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C।

(ii) তরলের উপরিতলের বিস্তৃতি : তরলের উপরিতলের বিস্তৃতি বা ক্ষেত্রফল যত বেশি হয়, বাষ্পায়নের হারও তত বেশি হয়।

(iii) তরলের উদ্ভূতা : তরল ও তরল সংলগ্ন বায়ুর উহ্ণতা বাড়লে বাষ্পায়ন দ্রুত হয়। তাই ভিজে কাপড় রোদের তাপে যত তাড়াতাড়ি শুকায়, শীতল ছায়ায় ততটা শুকায় না।

(iv) বায়ুর শুষ্কতা : বায়ু যত শুষ্ক হয়, তার বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতাও তত বেশি হয়।

(v) বায়ু চলাচল : তরলের ওপর বায়ু সঞ্চালন বাড়লে বাষ্পায়ন দ্রুত হারে হয়। যেমন—ঘরের ভিজে মেঝে তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য আমরা ফ্যান চালাই বা কালির লেখা তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য আমরা ফুঁ দিই।

(vi) তরলের ওপর বায়ুর চাপ : বায়ুমণ্ডলীয় চাপ যত কম হয়, বাষ্পায়নের হার তত বেশি হয়। তাই বাষ্পায়নের হার বাড়াতে তরলের ওপর বায়ুর চাপ কমাতে হয়।

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১

"হীরে চুম্বন করলে মানুষের মৃত্যু হয়" - এই কথাটি কতটা যুক্তিযুক্ত?


ছোটো উত্তর : কথাটা যতোটা সত্য ততটাই মিথ্যে।

বড় উত্তর :

পৃথিবীর সব থেকে কঠিন মৌলিক পদার্থের নাম কি জানেন? হীরে বা হীরা। চুম্বন তো দূরের কথা, হীরে চুষে চুষে আপনার প্রাণ পাখি বেরিয়ে যেতে পারে কিন্তু হীরের একটা অণু বা পরমাণু আপনি সেখান থেকে বের করতে পারবেন না।

আরেকটু উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি। হাইড্রোক্লোরিক/সালফিউরিক এসিডের 50 শতাংশ দ্রবণ মানুষের হাত পুড়িয়ে দিতে পারে, মুহূর্তের মধ্যে। কিন্তু এই এসিডের 100 শতাংশের দ্রবণে হীরে ডুবিয়ে রাখলেও হীরের গায়ে দাগ কাটতে পারে না। সাধারন ঘরের তাপ ও চাপে হীরা কোনো রাসায়নিকের সাথে বিক্রিয়া করে না। এমনকী, একটা হীরা কাটার জন্যে আরেকটা শক্ত হীরা ব্যবহার করা হয়।

তবে, আগেকার মুভি বা গল্পের বইয়ে কেন দেখাতো, হীরের আংটি চুম্বন করলে মানুষ মারা যায়। আসলে, সেখানে অর্ধসত্য বলা হয়। আগেকার দিনে গুপ্তচর বা রাজা বা রানীরা হীরার বা সাধারণ আংটির মধ্যে খুবই বিষাক্ত বিষ লুকিয়ে রাখতেন।

বিষ রাখার জন্যে এর থেকে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে বলুন। ধরুন কোনো গুপ্তচর ফাঁদে পড়ে গেলো, চারিদিক ঘিরে নেওয়া হয়েছে। গুপ্তচর বৃত্তির সাজা কিন্তু খুব কঠিন হতো। তাই তারা ধরা পড়ার আগেই হাতের আংটি চুম্বন করে নিতো, খুব তাড়াতাড়ি। শরীরের অন্য অংশে বিষ লুকিয়ে রাখা ও প্রয়োজনে তার ব্যবহার করা খুব দুঃসাধ্যের।

একইভাবে রাজা বা রানীরা অন্য রাজার হাতে বন্দি হওয়ার আগে, আত্মসম্মান রক্ষার জন্যে, আংটি চুম্বন করে আত্মহত্যা করতেন।

যেহেতু অধিকাংশ মুভি বা গল্পে এইরকম দৃশ্যে রাজা বা রানীকে আংটি চুম্বন করে মরতে দেখা যেতো, সাধারণ মানুষের মনে হতো, হীরার আংটি চুম্বন করে মরলেন, রাজা বা রানী(রাজা বা রানীর হাতের আংটি হীরার হবে, এমন চিন্তা মাথায় আসা নিরর্থক নয়)।

তবে প্রাচীন কালে অনেকে দাঁতের মাঝে বা জামা/পোশাকের কলারের কোনায় বিশেষ "থলির" সাহায্যে বিষ লুকিয়ে রাখতেন। শোনা যায় পটাশিয়াম সায়ানাইড রাখা হতো, যেটা খেলে মানুষ মুহূর্তের মধ্যে মারা যেতে পারে।

শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১

শাঁকালু বা শাক আলু বা শাখ আলু কিভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করবেন?

অর্থকরী কন্দ ফসল হিসাবে শাঁকালু ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের উস্থাবনের ফলে উৎপাদন যথেষ্ট বেড়েছে। ফলে চাষের আয় বেশ বাড়ছে চাহিদার সাথে সাথে।

 জাত: উচ্চ ফলনশীল জাত আর. এন , এল-১৯, এছাড়া দেশী জাতের চাষ হয়।

মেয়াদ: ১২০ দিন।

বোনার সময়: সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ।

জমি ও মাটি: উঁচু মাঝারি জমি দোঁয়াশ, বেলে-দোঁয়াশ মাটি পছন্দ। এটেল মাটিতেও ভালাে হয়। নােনা সহ্য করতে পারে।

সেচ: নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে মাটি অনুযায়ী সেচ দেওয়া দরকার।

সারি/গাছের দুরত্ব: সারির দূরত্ব ৩০ সেমি বা ফুট এবং সারিতে গাছের দূরত্ব ১৫ সেমি বা ইঞ্চি রাখা হয়। -.২৫ কেজি প্রতি বিঘায় (২০-২২ কেজি প্রতি হেক্টরে) বীজ লাগে।

সার: জৈব সার বিঘা প্রতি ১২০০-১৫০০ কেজি (১০ থেকে ১৫ টন হেক্টরে) সঙ্গে বিঘা প্রতি -১০ কেজি রাসায়নিক যৌগ সার (১০:২৬:২৬) দেওয়া যেতে পারে। 

উৎপাদন: বিঘা প্রতি ৪০-৪৫ কুইন্টাল উৎপাদন হয়। উত্তর ২৪ পরগণার বাদুড়িয়া ব্লক এলাকায় জমিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, দেশী জাতের শাঁকালু কাঠা প্রতি ১০০ কেজি পর্যন্ত উৎপন্ন হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল (আর এন -, এল-১৯ ইত্যাদি) বিঘা প্রতি ৪০ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন দিয়েছে। বােলপুবের আশপাশের গ্রামগুলিতে এর চাষ বাড়ছে। কাঠা প্রতি প্রায় মন অর্থাৎ ২৪০ কেজি (বিঘায় ৮কুইন্টাল) ফলছে।

রোগপকা: রােগের মধ্যে কান্ড বা কন্দ পচা (সফট রট) পাতা ধ্বসা রােগ দেখা যায়। এরােগ দেখা দেওয়া মাত্র ১০-১২ দিন অন্তর টাটকা গােবরের নির্য্যাস - বার স্প্রে করলে নিরাময় হয়। এছাড়া বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম টাইকোডারমা ভিরিডি নামে জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে নিরাময় হয়।

মন্তব্য: শিল্পগােত্রীয় ফসল, কিন্তু শিকড়ে গুটি হয় না। জলনিকাশী ভাল থাকা দরকার। বীজ লাগানাের - দিনের মধ্যে অনুর বের হয়। ফুল আসার সময় পুস্প মঞ্জরী ভেঙ্গে দিতে হয়। অন্যথায় কন্দ উৎপাদন কমে যায়। বীজ বিষাক্ত। কাঁচা পাকা অবস্থায় বীজ খাওয়া নিষিদ্ধ। বীজ কীটনাশক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

কেশর আলু, শাখালু, শাখা আলু, শাক আলু, শাকালু


 

Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts