সুবিধা :
১। জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে। তাই জল জমে বরফে পরিণত হলে উৎপন্ন বরফের ঘনত্ব জল অপেক্ষা কম হওয়ায় বরফ জলে ভাসে। এই ঘটনার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে দেখা যায়, শীতকালীন দেশগুলিতে বড়ো নদী বা হ্রদের জলের উপরিতল বরফে পরিণত হলেও নীচের অংশে সর্বোচ্চ 4°C উষ্ণতায় জল থাকে। বরফ ও জল উভয়েই তাপের কুপরিবাহী হওয়ার ফলে ওই অংশের জল তাপ বর্জন করে আরও ঠান্ডা হয়ে বরফে পরিণত হতে পারে না। ফলে ওই স্থানের জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণীরা চরম শীতার্ত পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে।
২। কৃষিজমির ফাক বা ফাটলের মাঝে জমে থাকা জল প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হলে, আয়তনে বৃদ্ধি পেতে চায় এবং সংশ্লিষ্ট মাটির স্তরের গায়ে বল প্রয়োগ করে। এই বলের ক্রিয়ায় মাটি প্রাকৃতিক উপায়ে নরম ও ঝুরঝুরে হয়ে যায়, ফলে কৃষিকাজের সুবিধা হয়।
অসুবিধা :
১। শীতপ্রধান দেশে মোটরগাড়ির রেডিয়েটর পাইপে থাকা জল জমে বরফে পরিণত হয়। ওই বরফ আয়তনে প্রসারিত হয়ে পাইপের দেয়ালে চাপ দেয়। সেই চাপে অনেকসময় ওই পাইপ ফেটে যায়। একই কারণে শীতের দেশগুলিতে জল সরবরাহের পাইপগুলি (মূলত গরম জল সরবরাহকারী) ফেটে গিয়ে থাকে।
২। পাহাড়ি অঞ্চলে পাথরের ফাক বা ফাটলে জমে থাকা জল উষ্ণতা হ্রাসের ফলে বরফে পরিণত হয় এবং আয়তনে বাড়তে চায়। পাথরের ভিতরের তলগুলিতে প্রচণ্ড বল প্রয়োগ করে। এই বলের প্রভাবে পাথর অনেকসময় ফেটে যায়, যে কারণে পাহাড়ি স্থানে মাঝেমাঝেই ধস নামতে দেখা যায়।
গলনাঙ্ক(Melting Point) ও হিমাঙ্ক(Freezing Point) বলতে কী বোঝায়? এদের মধ্যে সম্পর্ক কী?
গলনাঙ্ক (Melting point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় সমসত্ত্ব কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হতে শুরু করে এবং গলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে উন্নতা স্থির থাকে, সেই উয়তাকে ওই পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। যেমন—প্রমাণ বায়ুচাপে বিশুদ্ধ বরফের গলনাঙ্ক 0°C বা 273KI
হিমাঙ্ক (Freezing point) : প্রমাণ বায়ুচাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বিশুদ্ধ তরল পদার্থ সম্পূর্ণ জমে কঠিনে পরিবর্তিত হতে শুরু করে এবং সমগ্র তরলের অবস্থান্তর সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত উয়তা অপরিবর্তিত থাকে, তাকে ওই তরলের হিমাঙ্ক বলে। যেমন—বিশুদ্ধ জলের প্রমাণ বায়ুচাপে হিমাঙ্ক বা স্বাভাবিক হিমাঙ্ক হল 0°C বা 273K।
গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের সম্পর্ক : বিশুদ্ধ এবং কেলাসাকার গঠনযুক্ত পদার্থের ক্ষেত্রে গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের মান সাধারণভাবে সমান (যেমন—বরফ ও জলের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের মান 0°C) ।
কিন্তু মিশ্র পদার্থ এবং অনিয়তাকার গঠনসম্পন্ন অর্থাৎ, অকেলাসাকার কঠিন পদার্থের (যেমন— কাচ, মোম, পিচ, মাখন | ইত্যাদি) নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের অস্তিত্ব নেই।
একটি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার সাহায্যে দেখাও যে, গলনে পদার্থের আয়তন পরিবর্তন হয়।
গলনে পদার্থের আয়তন পরিবর্তিত হয়— তা নিম্নলিখিত পরীক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে দেখানো যায়।
উপকরণ : (i) দুটি টেস্টটিউব, (ii) কিছু পরিমাণ মোম, (iii) পরিমাণমতো জল, (iv) বরফ, (v) বার্নার।
পরীক্ষা পদ্ধতি : (i) দুটি টেস্টটিউবের মধ্যে একটিতে কিছুটা মোম এবং অন্যটিতে একটি বড়ো বরফের টুকরো নেওয়া হল। (ii) দুটি টেস্টটিউবকে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করে মোম ও বরফকে সম্পূর্ণ গলানো হল এবং প্রথমটিতে, একটুকরো মোম ও দ্বিতীয়টিতে, একটি ছোটো বরফের টুকরো ফেলে দেওয়া হল।
পর্যবেক্ষণ : কঠিন মোমের টুকরোটি তরল মোমের মধ্যে ফেলা মাত্র নিমজ্জিত হয় এবং গলিত মোমের সংস্পর্শে থেকে দ্রুত গলে তরলে রূপান্তরিত হয়। বরফের টুকরোটি বরফগলা জলের ওপর আয়তনের সামান্য (প্রায় 12 অংশ) বাইরে রেখে ভেসে থাকে।
ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত : কঠিন মোমের টুকরো গলিত মোমে সম্পূর্ণ ডুবে যায়, সুতরাং, কঠিন মোমের ঘনত্ব তরল মোম অপেক্ষা বেশি। যেহেতু, আয়তন বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট ভরের পদার্থের ঘনত্ব হ্রাস পায়। সুতরাং, সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, গলনের ফলে মোমের আয়তন বৃদ্ধি ঘটেছে।
একইভাবে বরফের টুকরো জলে ফেললে তা আংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসে। যা প্রমাণ করে, বরফের ঘনত্ব জল অপেক্ষা কম। সুতরাং, বোঝা যায় যে, জল জমে বরফ হলে আয়তনে বাড়ে অর্থাৎ, বরফের গলনে আয়তন সংকুচিত হয়।
পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রমী উদাহরণ দাও।
কর্পূর, ন্যাপথলিন, নিশাদল প্রভৃতি কঠিন পদার্থ তাপ প্রয়োগে তরল না হয়ে, সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। এদের বাষ্পকে শীতল করলে, এগুলি পুনরায় কঠিন অবস্থায় ফিরে আসে।
উল্লেখ্য, প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ঊর্ধ্বপাতনযোগ্য পদার্থগুলির ক্ষেত্রে তরল অবস্থার অস্তিত্ব না থাকলেও বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তারতম্য ঘটিয়ে এদের প্রত্যেকটিকেই তরল অবস্থায় প্রকৃতিতে পাওয়া সম্ভব।
সেঁক দেওয়ার বোতলে তরল হিসেবে গরম জল ব্যবহার করা হয় কেন?
তরল পদার্থগুলির মধ্যে জলের আপেক্ষিক তাপ সর্বোচ্চ এবং কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় সকল পদার্থের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই কারণে, একই ভরের অন্যান্য তরলের তুলনায় সমপরিমাণ উয়তা বৃদ্ধি ঘটাতে জল বেশি পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে। সেই কারণে সেঁক দেওয়ার বোতল বা হটব্যাগে ব্যবহৃত হওয়ার সময় নির্দিষ্ট হারে তাপ বর্জন করলেও, উচ্চ আপেক্ষিক তাপের কারণে জলের উয়তা হ্রাস হয় সব থেকে কম। অর্থাৎ, তাপগ্রহণ এবং ধারণক্ষমতা উভয়ই বেশি হওয়ায় গরম জল ঠান্ডা হতে বেশি সময় নেয়। তা ছাড়াও একই পরিমাণ তাপগ্রহণে উষ্ণতা বৃদ্ধি কম হওয়ায় জলকে শরীরের সংস্পর্শে রাখাও সুবিধাজনক হয়। তাই সেঁক দেওয়ার কাজে জল ব্যবহৃত হয়।
একটি কেটলি ও তার মধ্যে রাখা জল 80°C উন্নতা থেকে শীতল হয়ে 40°C উষ্মতায় এল। কেটলি ও জল কি সমপরিমাণে তাপ বর্জন করল?
ধরা যাক, কেটলির ভর m1 কেটলির উপাদানের আপেক্ষিক তাপ = s এবং কেটলিতে রাখা জলের ভর =m2সুতরাং, কেটলি কর্তৃক বর্জিত তাপ = m1s*(80–40) = 40m1s ক্যালোরি,এবং জল কর্তৃক বর্জিত তাপ = m2s*(80–40) = 40m2s ক্যালোরি
এখানে 40 m1s ক্যালোরি ও 40m2s ক্যালোরি আলাদা আলাদা পরিমাণ তাপকে নির্দেশ করছে। সুতরাং, কেটলি ও জল কখনোই সমপরিমাণ তাপ বর্জন করবে না।
আপেক্ষিক তাপকে আপেক্ষিক বলা হয় কেন?
আপেক্ষিক তাপের মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পদার্থের (জলের) আপেক্ষিক তাপের মান (1)-কে প্রামাণ্য (Reference) ধরা হয়। এখন প্রমাণ পদার্থটি জল ছাড়া অন্য কিছু হলে পরীক্ষাধীন পদার্থের আপেক্ষিক তাপও ভিন্ন হবে। কোনো পদার্থের আপেক্ষিক তাপ (s) অর্থাৎ, সমানুপাতিক ধ্রুবক Q/mt -র মান জলের উপাদানগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তুলনা করে নির্ণয় করা হয় বলে, এই ধ্রুবকটিকে আপেক্ষিক তাপ বলা হয়।
গলন ও কঠিনীভবনের ফলে আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয় বোঝাও।
গলন ও কঠিনীভবনের ফলে আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয় বোঝাও।
উত্তরঃ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলে অধিকাংশ পদার্থের আয়তন বেড়ে যায় এবং তরল থেকে কঠিন হলে আয়তন কমে যায়।
যেমন – মোম।
কিন্তু কিছু কিছু পদার্থ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলো আয়তন কমে যায় ও তরল থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তন বেড়ে যায়।
যেমন— জল ।
হিমমিশ্র(Freezing mixture) কী? উদাহরণ দাও। এর কয়েকটি ব্যবহার লেখো।
হিমমিশ্র (Freezing mixture)
একাধিক পদার্থের উপযুক্ত মিশ্রণ ঘটিয়ে মিশ্রণের উপাদানগুলি অপেক্ষা অনেক নিম্ন উন্নতার সৃষ্টি করা সম্ভব। এই জাতীয় মিশ্রণগুলিকে সাধারণভাবে হিমমিশ্র বা Freezing mixture বলে অভিহিত করা হয়।
উদাহরণঃ বরফচূর্ণ ও খাদ্যলবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মিশিয়ে হিমমিশ্র উৎপন্ন করা যায়, যার উষ্ণতা প্রায় – 23°C হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন