এই ব্লগটি সন্ধান করুন

ভৌতরাশি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ভৌতরাশি লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২

জলের কয়টি অবস্থা থাকে ও কী কী ?

উত্তর। জলের তিনটি অবস্থা থাকে।

যথা— 

  • কঠিন অবস্থা — বরফ,
  • তরল অবস্থা — জল,
  • গ্যাসীয় অবস্থা— বাষ্প।

জেনে রাখো : পদার্থের চতুর্থ অবস্থা হল পদার্থের প্লাজমা (Plasma) অবস্থা— মহাবিশ্বে 99% পদার্থই এই অবস্থায় থাকে। আবার বোস-আইনস্টাইনের কনডেনসেশান তত্ত্ব অনুযায়ী পদার্থের পঞ্চম অবস্থাটি হল Super cooled অবস্থা বা বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট (BE Condensate) অবস্থা।

বুধবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২২

মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক ও ভরসংখ্যার সংজ্ঞা দাও। এদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

উত্তর। 

পরমাণু ক্রমাঙ্ক (Atomic Number): মৌলের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত মোট প্রোটন সংখ্যাকে তার কোনো পরমাণু ক্রমাঙ্ক বলে। যেমন – 6C12 মৌলে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যা 6টি। সুতরাং, এর পরমাণু ক্রমাঙ্ক 6।

ভরসংখ্যা (Mass Number) : কোনো মৌলের নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার সমষ্টিকে ওই মৌলের ভরসংখ্যা বলে। যেমন – 6C12 মৌলে 6টি প্রোটন ও 6টি নিউট্রন আছে। সুতরাং, এর ভরসংখ্যা (6 + 6) = 12। অর্থাৎ, ভরসংখ্যা = (প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা)।


পারমাণবিক সংখ্যা ও ভরসংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক :

ধরি, কোনো মৌলের পরমাণুতে p সংখ্যক প্রোটন, n সংখ্যক নিউট্রন আছে। তাহলে মৌলের ভরসংখ্যা M হলে, M = (p + n) । আবার, মৌলের প্রোটন সংখ্যা (p) = পারমাণবিক সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্ক।

সুতরাং, ভরসংখ্যা = (পারমাণবিক সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা)।

শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

তরলের স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) কাকে বলে?এটি কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়?

উত্তর।
স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো তরল পদার্থের স্ফুটন শুরু হয় এবং সমগ্র তরল বাষ্পে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত সেই উষ্ণতা স্থির থাকে, তাকে ওই তরলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক বলে।

তরলের স্ফুটনাঙ্ক নিম্নলিখিত বিষয়ের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়—
(i) তরলের প্রকৃতি : তরল পদার্থটি কী ধরনের, তার ওপর তরলের স্ফুটনাঙ্ক নির্ভর করে। উদ্বায়ী তরলের স্ফুটনাঙ্ক কম হয়। 

(ii) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : তরলে কঠিন অপদ্রব্য দ্রবীভূত অবস্থায় থাকলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়। যেমন—লবণ মিশ্রিত থাকায় সমুদ্রজলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C থেকে বেড়ে প্রায় 110°C হয়। আবার গ্যাসীয় অপদ্রব্য উপস্থিত থাকলে, তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। তরল অপদ্রব্যের ক্ষেত্রে মিশ্রণের স্ফুটনাঙ্ক উপাদান তরল দুটির স্ফুটনাঙ্কের মাঝামাঝি হয়।

(iii) তরলের উপরিস্থিত চাপ : তরলের উপরিস্থিত মাধ্যম দ্বারা প্রযুক্ত চাপ, প্রমাণ চাপ অপেক্ষা বেশি হলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি হয়। যেমন— চাপ বৃদ্ধিতে বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক প্রায় 1°C বৃদ্ধি পায়। প্রেশার কুকার, অপারেশনে ব্যবহৃত ছুরি, কাঁচি জীবাণুমুক্ত করার কাজে লাগানো হয়।

একইভাবে তরলের ওপর চাপ হ্রাস পেলে ওই তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায় অর্থাৎ, তরলটি স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা কম উষ্ণতায় ফোটে। এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ঘনীভূত দুধ তৈরি করা হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে বায়ুচাপ কম হওয়ায় জল তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা অনেক কম উষ্ণতায় ফুটতে শুরু করে। যেমন— দার্জিলিং-এ জল প্রায় 93.6°C উন্নতায় ফোটে, ফলে খাদ্যদ্রব্য ভালো সিদ্ধ হয় না। হাড়ের ধাত্রে ও দাঁতের এনামেল, ডেনটিন ও সিমেন্টামে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস মৌলগুলির যৌগ কেলাসাকারে জমা থাকে।

গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন কেন? 

উত্তর।
চাপ বাড়লে বা কমলে বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের গলনাঙ্কের মান পরিবর্তিত হয়। 76 সেমি পারদস্তম্ভের চাপে কোনো পদার্থের গলনাঙ্ক নির্ধারণ করলে তা স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হবে। কিন্তু, চাপ ওই নির্দিষ্ট মানের বেশি বা কম হলে গলনাঙ্ক আর স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হয় না। এজন্য গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন।

অনুরূপ প্রশ্ন : কোনো তরলের স্ফুটনাঙ্ক উল্লেখ করার সময় চাপ উল্লেখ করা উচিত কেন?


প্রশ্ন: বৈদ্যুতিক লাইনে ব্যবহৃত ফিউজের গলনাঙ্ক কম হওয়া দরকার কেন?

উত্তর: বৈদ্যুতিক লাইনের ভোল্টেজ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে অনেক বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হয়। ফলে, তার উত্তপ্ত হয়ে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফিউজ তারের উপাদানের গলনাঙ্ক কম হয়। সেজন্য, ওই তার অল্প উত্তাপে ফিউজ গলেে গিয়ে তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।

পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা আলোচনা করো।

উত্তর। পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্কের মান প্রত্যক্ষভাবে দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে–(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি, (ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপ।

(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের সঙ্গে যদি অন্য কোনো পদার্থ অপদ্রব্য হিসেবে মেশানো হয় তবে অপদ্রব্যের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক স্বাভাবিক গলনাঙ্কের তুলনায় কমে যায়।

উদাহরণ: (a) সোনার সঙ্গে খাদ মেশালে সোনার গলনাঙ্ক কমে। (b) বরফের সঙ্গে লবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মেশালে মিশ্রণের উষ্ণতা 0°C অপেক্ষা অনেক কম (প্রায় – 23°C) হয়। (c) ফিউজ তারে ব্যবহৃত রোজ মেটাল (Pb + Sn + Bi) একটি সংকর ধাতু, যার গলনাঙ্ক প্রায় 95°C যদিও এর উপাদান ধাতুগুলির কোনোটিরই গলনাঙ্ক 210°C-এর কম নয়।


(ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপের প্রভাব : গলনাঙ্কের মান বায়ুমণ্ডলীয় চাপের দ্বারা দু-ভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকেে। 

(a) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি হয় চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ, সেগুলি স্বাভাবিক গলনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি উষ্ণতায় গলে। এক্ষেত্রে, গলনের ফলে যেহেতু আয়তন বৃদ্ধি হয়, তাই চাপ বৃদ্ধিতে গলন প্রক্রিয়া বাধা পায়। সুতরাং, অবস্থান্তর ঘটানোর জন্য উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ গলনাঙ্ক বাড়ে।
উদাহরণ : তামা, রুপো, মোম ইত্যাদি। এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধিতে মোমের গলনাঙ্ক 0.04°C বৃদ্ধি পায়।


(b) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন হ্রাস পায়, চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক হ্রাস পায়। এজাতীয় পদার্থগুলির ক্ষেত্রে, গলনের ফলে আয়তন যেহেতু হ্রাস পায় তাই চাপ বৃদ্ধিতে তাদের আয়তন সংকোচন সহজে হয় অর্থাৎ, গলনাঙ্ক কমে।
উদাহরণ : বরফ, ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি।

লীনতাপ (Latent heat) কাকে বলে? এর প্রকারভেদগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর।
লীনতাপ (Latent heat): একক ভরের কোনো পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ বা অপসারণ করতে হয়, তাকে ওই পদার্থের অবস্থান্তরের লীনতাপ বা লীনতাপ বলা হয়।

প্রকারভেদ: অবস্থাস্তরের সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করে লীনতাপের চার রকম  বর্তমান।
(i) গলনের লীনতাপ,
(ii) কঠিনীভবনের লীনতাপ,
(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ ও
(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ।

(i) গলনের লীনতাপ (Latent heat of fusion) : প্রমাণ চাপে কোনো কঠিন পদার্থের একক ভরের উয়তা স্থির রেখে সমগ্র কঠিন পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োজন হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই পদার্থের গলনের লীনতাপ বলে। যেমন—বরফ গলনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম বা 336× 10 জুল/কেজি।

(ii)কঠিনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of solidification) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো তরল পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরল পদার্থকে কঠিনে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের কঠিনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন— জলের কঠিনীভবনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম।

(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ (Latent heat of vaporization) : প্রমাণ চাপে কোনো তরল পদার্থের একক ভরের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরলকে বাষ্পে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকেই ওই পদার্থের বাষ্পীভবনের লীনতাপ বলা হয়। যেমন— বিশুদ্ধ জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম বা মতান্তরে 540 ক্যালোরি/গ্রাম বা 2268 × 103 জুল/কেজি।

(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of condensation) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো গ্যাসীয় পদার্থের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র গ্যাসীয় পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের ঘনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন—জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম।

জেনে রাখা ভালো: লীনতাপ গ্রহণ বা বর্জনে অণুগুলির বিন্যাস পরিবর্তিত হয়। এই তাপ পদার্থের উয়তা বাড়ায় না বা কমায় না, তাই থার্মোমিটার দ্বারা লীনতাপ মাপা যায় না। ক্যালোরিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে লীনতাপ পরিমাপ করা হয়।

একটি সক্রিয়তামূলক কাজের মাধ্যমে দেখাও যে, চাপ হ্রাসে তরলের স্ফুটনাঙ্ক হ্রাস পায়।

উত্তর।
নিম্নলিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে দেখানো যায়— চাপ কমলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে।

উপকরণ : (i) একটি ইনজেকশন সিরিঞ্জ, (ii) পরিমাণমতো ফুটন্ত জল, (iii) জল গরম করার পাত্র, (iv) বার্নার।

পরীক্ষা পদ্ধতি : (i) পাত্রে পরিমাণমতো জল নিয়ে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করা হল। (ii) জল ফুটতে শুরু করার ঠিক আগের মুহূর্তে ইনজেকশন সিরিঞ্জের মুখটি জলে ডুবিয়ে পিস্টনটি নিজের দিকে টানা হল, যাতে কিছু পরিমাণ উষ্ণ জল সিরিঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে। এই অবস্থায় সিরিঞ্জের অভ্যন্তরে থাকা জলের উষ্ণতা স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অর্থাৎ, 100°C অপেক্ষা কম হয়। (iii) এবার সিরিঞ্জের মুখটি প্রদর্শিত চিত্রের মতো আঙুল দিয়ে চেপে বন্ধ করে সিরিঞ্জের পিস্টন পুনরায় পিছনের দিকে টেনে আনা হল। (iv) এই অবস্থায় জল ফুটতে শুরু করবে। কারণ আঙুল দিয়ে বন্ধ রাখার জন্যে ভেতরের চাপ কমে গেছে। 
সিরিঞ্জ


সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১

থার্মোফ্লাস্কের(Thermoflask) গঠন ও কার্যনীতি চিত্রসহ বর্ণনা করো।

উত্তর:

থার্মোফ্লাস্ক (Thermoflask) একটি যন্ত্রব্যবস্থা, যার দ্বারা কোনো তরল পদার্থের উষ্ণতা দীর্ঘসময়ের জন্য অপরিবর্তিত রাখা যায়।

বিশেষভাবে নির্মিত এই চোঙাকৃতি পাত্রে রাখা উষ্ণ বা শীতল তরল দীর্ঘসময়ের জন্য উষ্ণ বা শীতল থাকে। আবিষ্কারক ইংরেজ বিজ্ঞানী জেমস্ ডিওয়ারের নাম অনুসারে একে অনেকসময় ডিওয়ার ফ্লাস্কও বলা হয়।


গঠন:
  • এটি একটি দুই দেয়ালবিশিষ্ট কাচের পাত্র, যাদের মধ্যবর্তী স্থান প্রায় বায়ুশূন্য।
  • ভিতরের দেয়ালের বাইরের দিকে এবং বাইরের দেয়ালের ভিতর দিকে রুপো বা পারদের প্রলেপ দেওয়া থাকে এবং তলগুলি ভালো করে পালিশ করে মসৃণ করা হয়।
  • ফ্লাস্কের সরু মুখ কর্কের তৈরি ছিপি দিয়ে বন্ধ করা হয়। কাচপাত্র ভঙ্গুর হওয়ায় সুরক্ষা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, সেটি একটি স্প্রিং-এর ওপর বসিয়ে একটি ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যে রাখা হয়।
  • বহিরাবরণ ও কাচপাত্রের মধ্যবর্তী অংশ শোলা, ফেল্ট বা তুলা ইত্যাদি নরম কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে পূর্ণ করা থাকে।
  • একটি প্যাঁচযুক্ত প্লাস্টিকের ঢাকনার সাহায্যে পাত্রের ওপরের অংশ ঢেকে রাখা হয়।





কার্যনীতি:
  • কাচ তাপের কুপরিবাহী এবং কাচপাত্র ও ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যবর্তী স্থান নরম কুপরিবাহী দিয়ে পৃথক থাকার ফলে এবং পাত্রের মুখে থাকা কর্কের ছিপিও অন্তরক পদার্থ হওয়ায়, পরিবহণ পদ্ধতিতে বাইরের বায়ুর সঙ্গে ফ্লাস্কে রাখা তরলের তাপীয় আদানপ্রদান ঘটতে পারে না।
  • আবার কাচপাত্রের দুটি দেয়াল প্রায় বায়ুশূন্য থাকায় পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ ভিতরে যেতে বা ভিতর থেকে বাইরে আসতে পারে না।
  • কাচের দেয়াল দুটির মুখোমুখি অংশ পারদ বা রূপোর প্রলেপ লাগিয়ে চকচকে করা হয়। ফলে, বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ স্যালন ঘটার সময় মসৃণ পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলিত হয়ে যায়, ফলে এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনও ব্যাহত হয়।

সুতরাং, সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়াই কার্যকরী হওয়ার সুযোগ না থাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য ফ্লাস্কের অভ্যন্তর এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে তাপের গ্রহণ ও বর্জন ঘটে না। ফলে, উষ্ণতাও অপরিবর্তিত থাকে।

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

বাড়ি বানানোর উপাদানগুলি তাপের কুপরিবাহী হওয়ার দরকার কেন?

উত্তর:

বাড়ি বানানোর উপাদানগুলি তাপের কুপরিবাহী হওয়া দরকার। কারণ— উপাদানগুলি তাপের কুপরিবাহী হলে শীতকালে ঘরের ভিতর থেকে তাপ বাইরে যেতে পারবে না, ফলে ঘর গরম থাকবে আবার গ্রীষ্মকালে বাইরের তাপ ঘরের ভিতরে আসতে পারবে না। ফলে, ঘর ঠান্ডা থাকবে। একই কারণে খড়ের চালওয়ালা মাটির বাড়ি গ্রীষ্মকালে যেমন ঠান্ডা শীতকালে তেমন গরম থাকে।

শীতকালে পাখিরা কখনো কখনো পালক ফুলিয়ে বসে থাকে কেন?

উত্তর:

পালক ফুলিয়ে বসলে ঢুকে যায়। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে দেহের তাপ বাইরে যেতে পারে না, বা বাইরের ঠান্ডা বায়ু ভিতরে আসতে পারে না। ফলে, দেহ গরম থাকে। তাই, শীতকালে পাখিরা পালক ফুলিয়ে বসে থাকে।

পাখি
ইগলু কী? এটি বরফ দিয়ে তৈরি করা হয় কেন ?

উত্তর:
গ্রিনল্যান্ডের থুলে অঞ্চলে এস্কিমোদের বাসস্থানকে ইগলু (Igloo) বলে।
ইগলু বরফ দিয়ে তৈরি করা হয়, কারণ— বরফ তাপের কুপরিবাহী এবং ওই অঞ্চলে সহজলভ্য। তাই বরফের মধ্যে দিয়ে তাপ চলাচল করে না এবং ইগলুর ভিতরটা গরম থাকে। ফলে ওই শীতল অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রচণ্ড ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পায়।
Igloo

তোমার কাছে গরম খাবার অনেকক্ষণ ধরে গরম রাখার পাত্র (যেমন— ফ্লাস্ক) নেই। অথচ কোনো গরম খাবার তোমাকে অনেকক্ষণ গরম রাখতে হবে। তুমি কী কী করবে? কেন করবে?

উত্তর:

দুই খণ্ড মোটা কাগজের টুকরোর মধ্যবর্তী অংশ শুকনো কাপড়, তুলো (ফেল্ট) বা পশম জাতীয় পদার্থ দ্বারা পূর্ণ করে একটি তাপরোধী মোড়ক তৈরি করে তার মধ্যে গরম খাবার রাখলে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য গরম থাকবে।

কারণ—কাগজ ও তুলো সহজলভ্য এবং তাপের কুপরিবাহী পদার্থ। দুটি কাগজখণ্ডের মাঝে তুলো থাকায় তার মধ্যে আবদ্ধ বায়ুও একটি কুপরিবাহী আস্তরণ গঠন করে, সুতরাং এই ব্যবস্থা অবলম্বন করলে পরিবহণ, পরিচলন ও বিকিরণ পদ্ধতিতে গরম খাদ্যবস্তু থেকে পরিবেশে তাপ সঞ্চালন হয় না। সুতরাং, ব্যবস্থাটি একটি থার্মোফ্লাস্কের মতো আচরণ করে এবং খাদ্যবস্তু দীর্ঘসময় পর্যন্ত গরম থাকে।

তুমি যে বাড়িতে থাকো তার দেয়ালগুলি ও ছাদ যদি টিনের হত, তবে কী কী সুবিধা হত আর কী কী অসুবিধা হত?

উত্তর:

সুবিধা: 
১। বাড়ির দেয়াল ও ছাদ টিনের হলে সহজেই খুব কম খরচে বাড়ি তৈরি করা যেত।
২। টিন অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় ধাতু হওয়ায় বায়ুর অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্পের সঙ্গে সহজে বিক্রিয়া করে না, ফলে মরচে পড়া বা প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

অসুবিধা: টিনের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা যথেষ্ট বেশি হওয়ায় গ্রীষ্মকালে বাইরের বায়ু থেকে তাপ দ্রুত ও অধিক পরিমাণে ঘরে প্রবেশ করে এবং শীতকালে ঘরের ভিতরের আবদ্ধ বায়ু থেকে তাপ দ্রুত বাইরে পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ, গ্রীষ্মকালে ঘর প্রচণ্ড গরম এবং শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়ে যাবে।

শীতকালে বদ্ধঘরে হ্যারিকেন বা আগুন জ্বালিয়ে শোয়া বিপজ্জনক কেন?

উত্তর:
হ্যারিকেন বা আগুন জ্বালালে কেরোসিন বা কয়লার দহনে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসও তৈরি হয়। শীতকালে দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় বদ্ধঘরে অক্সিজেন চলাচলও করতে পারে না। ফলে, বিষাক্ত গ্যাসগুলির পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরের বাসিন্দাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই শীতকালে বদ্ধঘরে হ্যারিকেন বা আগুন জ্বালিয়ে শোয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক।

জ্বলন্ত উনুনের পাশের দিকে হাত রাখলে যত গরম লাগে উনুনের উপরের দিকে হাত রাখলে অনেক বেশি গরম লাগে। কেন এমন হয় বলো?

উত্তর:
জ্বলন্ত উনুনের উপরের দিকে যে বায়ুর স্তর থাকে, তা উনুনের তাপে উত্তপ্ত হয় ও আয়তনে প্রসারিত হয়। ফলে ওই বায়ুর ঘনত্ব কমে যায় ও বায়ু হালকা হয়। এই গরম ও হালকা বায়ু উপরে উঠে গেলে উপরের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ও ভারী বায়ু উনুনের পাশ দিয়ে পৃথিবীর টানে নীচে নেমে আসে। তাই জ্বলন্ত উনুনের পাশে হাত রাখলে যত গরম লাগে উনুনের উপরের দিকে হাত রাখলে তার চেয়ে অনেক বেশি গরম লাগে।

 

শীতকালে আমরা উলের তৈরি পোশাক পরি কেন?

উত্তর:

উলের পোশাকে সুতোর মাঝে মাঝে বায়ু আটকে থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে, দেহ থেকে তাপ বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে না বা বাইরের ঠান্ডা বায়ু দেহে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে, দেহ গরম থাকে। একারণে, শীতকালে আমরা উলের পোশাক পরি।


শীতকালে হাতি গায়ে ধুলো মাখে কেন?

উত্তর:

হাতি গায়ে ধুলো মাখলে তার গা ও ধুলোর মাঝে একটি বায়ুস্তর তৈরি হয়। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে দেহ থেকে বেরিয়ে আসা তাপ বায়ুর স্তর ভেদ করে বাইরে যেতে পারে না। ফলে হাতির আরাম লাগে। একারণে শীতকালে হাতি গায়ে ধুলো মাখে।


বরফ যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন বরফের গায়ে কাঠের গুঁড়ো মাখানো হয় কেন? বা চট জড়িয়ে দেওয়া হয় কেন?

উত্তর:

বরফের গায়ে কাঠের গুঁড়ো মাখালে বা চট জড়িয়ে দিলে কাঠের গুঁড়োর ফাকে ফাকে বা চটের সুতোর ফাকে ফাকে বায়ু ঢুকে যায়। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে বাইরে থেকে তাপ বরফে ঢুকতে পারে না, তাই বরফ গলে যায় না। একারণে বরফ যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন বরফের গায়ে কাঠের গুঁড়ো মাখানো হয় বা চট জড়িয়ে দেওয়া হয়।



শীতকালে সুতোর তৈরি একটি মোটা জামা পরলে গরম লাগে। কিন্তু, তার বদলে একই ধরনের সুতো দিয়ে তৈরি দুটি পাতলা জামা পরলে আরও বেশি গরম লাগে কেন?
উত্তর:

সুতোর তৈরি একটি মোটা জামা পরলে সুতোর ফাঁকে ফাকে যে পরিমাণ বায়ু আটকে থাকে, তার বদলে এই ধরনের সুতো দিয়ে তৈরি দুটি পাতলা জামা পরলে আরো বেশি পরিমাণ বায়ু আটকে থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে যত বেশি বায়ু আটকে থাকবে, দেহ থেকে তত কম তাপ বেরিয়ে আসতে পারবে। আবার দেহ থেকে যত কম তাপ বেরোবে দেহ তত গরম থাকবে। তাই শীতকালে একটি জামার পরিবর্তে দুটি জামা পরলে বেশি গরম লাগে।


দুধ গরম করলে উথলে ওঠে কেন?

উত্তর। উষ্ণতা বৃদ্ধিতে কঠিন পদার্থের আয়তনের তুলনায় তরল পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি বেশি হয়। দুধ গরম করার সময় দুধের ওপর তৈলাক্ত পদার্থের সর পড়ে। এই সর ভেদ করে জলীয়বাষ্প বাইরে আসতে পারে না, ফলে দুধ উথলে ওঠে।



ভৌত ধর্ম ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে কোন্ ধর্ম দ্বারা পদার্থের শনাক্তকরণ অধিক গ্রহণযোগ্য ও কেন?

উত্তর । ভৌত ধর্ম দ্বারা কোনো পদার্থের শনাক্তকরণে তা অপচয় বা নষ্ট হয় না কিন্তু এই ধর্মের সাহায্যে পদার্থকে আংশিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। অন্যদিকে, রাসায়নিক ধর্ম দ্বারা কোনো পদার্থের শনাক্তকরণে পদার্থের পরিবর্তন ঘটে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই ধর্মের সাহায্যে পদার্থের গঠন সংক্রান্ত ধারণা পাওয়া যায় যা পদার্থকে নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। তাই, ভৌত ধর্ম ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে রাসায়নিক ধর্ম দ্বারা পদার্থের শনাক্তকরণ অধিক গ্রহণযোগ্য৷


পুকুরের জলে একটি গাছের কী ধরনের প্রতিবিম্ব গঠিত হয়?

উত্তর | জলাশয়ের উপরিতল সমতল দর্পণের মতো আচরণ করে, তাই গাছ থেকে আগত রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে প্রতিবিম্ব গঠন করে। যেহেতু সমতল দর্পণে গঠিত প্রতিবিম্ব অসদ্ ও সমশীর্ষ হয়, তাই এক্ষেত্রেও গঠিত প্রতিবিম্ব অসদ্ ও সমশীর্ষ হবে।


বস্তুর দূরত্ব ও প্রতিবিম্বের দূরত্ব সমান হওয়াকে ব্যবহার করে প্রতিবিম্ব আঁকলে প্রতিবিম্ব আঁকা কখনও শেষ হবে কি?

উত্তর। এক্ষেত্রে গঠিত প্রতিবিম্বের সংখ্যা অসীম। তাই, বস্তু দূরত্ব = প্রতিবিম্ব দূরত্ব এই সম্পর্ক ব্যবহার করে প্রতিবিম্ব আঁকতে থাকলে প্রতিবিম্ব আঁকা কখনোই শেষ হবে না।

রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১

পদার্থ (Matter) কাকে বলে?

উত্তর | যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, যাদের ভর আছে, যারা কিছুটা স্থান দখল করে, যাদের আকার পরিবর্তনে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা আছে, যারা গতিশীল বা স্থিতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইলে বাধা দেয়, তাকে পদার্থ বলে।

উদাহরণ: কাচ, কাঠ, জল, বায়ু প্রভৃতি।

জেনে রাখো : বস্তুর একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতি থাকে। কিন্তু পদার্থের নির্দিষ্ট কোনো আকার বা আকৃতি থাকে না। পদার্থ দিয়ে বস্তু গঠিত হয়। কাঠের চেয়ার হল বস্তু এবং কাঠ হল পদার্থ।


পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম কাকে বলে? রাসায়নিক ধর্মের সাহায্যে পদার্থকে কীভাবে শনাক্ত করা যায় ?

রাসায়নিক ধর্ম (Chemical properties) : যেসব ধর্ম থেকে পদার্থের মূল গঠনের এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়, সেইসব ধর্মকে পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম বলে।

রাসায়নিক ধর্মের সাহায্যে পদার্থের শনাক্তকরণ : রাসায়নিক ধর্মের সাহায্যে কোনো পদার্থকে শনাক্ত করতে হলে পদার্থের ওপর বায়ু, জল, তাপপ্রয়োগ, তড়িৎক্রিয়া, অ্যাসিড, ক্ষার বা ক্ষারক, অন্যান্য কতকগুলি পদার্থের সংযোগে পদার্থের গঠনের কী পরিবর্তন হয় এবং কী কী নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

(i) বায়ুর ক্রিয়া : বাতাসের সংস্পর্শে এসে পদার্থের নানা ধরনের পরিবর্তন হয়। যেমন—আর্দ্র বায়ুতে একটুকরো চকচকে লোহা ফেলে রাখলে মরচে উৎপন্ন হয়। সোনা, রুপো বায়ুতে ফেলে রাখলে কোনো পরিবর্তন হয় না।

(ii) জলের ক্রিয়া : জলের সঙ্গে বিভিন্ন পদার্থের বিক্রিয়া লক্ষ করে পদার্থকে শনাক্ত করা যায়। যেমন—সোডিয়াম বা পটাশিয়াম-এর মতো ধাতু জলের সংস্পর্শে এলেই তীব্র বিক্রিয়া করে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন করে এবং আগুন জ্বলে ওঠে। একটুকরো সোনা বা রুপোকে জলে ফেললে কোনো পরিবর্তন হয় না৷


আইসোটোপ(Isotope) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

আইসাটোপ (Isotope): একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণু যাদের পারমাণবিক সংখ্যা এক, কিন্তু নিউক্লিয়াসে ভিন্ন সংখ্যক নিউট্রন থাকার জন্য ভরসংখ্যা আলাদা হয়, তাদের পরস্পরের আইসোটোপ বা সমস্থানিক বলে। যেমন— ক্লোরিনের দুটি আইসোটোপ হল— 17Cl35 এবং 17Cl37

জেনে রাখো: গ্রিক ভাষায় ‘iso' শব্দের অর্থ হল সমান এবং ‘topes' শব্দের অর্থ হল অবস্থান। আইসোটোপগুলি পর্যায় সারণিতে একই ঘরে অবস্থান করে বলে এদের সমস্থানিক বলে।

আইসোটোপের বৈশিষ্ট্যঃ
  1. কোনো মৌলের আইসোটোপগুলির পারমাণবিক সংখ্যা অর্থাৎ, প্রোটন সংখ্যা বা ইলেকট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা আলাদা হওয়ায় ভরসংখ্যা আলাদা হয়।
  2. এদের ইলেকট্রন বিন্যাস একইরকম হওয়ায় এদের রাসায়নিক ধর্ম এক হয়। 
  3. এদের ইলেকট্রন বিন্যাস একইরকম হওয়ায় এদের যোজ্যতা সমান হয়। 
  4. এদের ভৌত ধর্ম, যেমন- ঘনত্ব, ভর, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক ইত্যাদি ভিন্ন হয়।

জেনে রাখা ভালোঃ চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যানসার ও টিউমার চিকিৎসায় আয়োডিনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ (l131) ব্যবহার করা হয়। এমনকি গাছ, পুরোনো শিলা এবং পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করতেও কার্বনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ (C14) ব্যবহৃত হয়।


প্রতিসরাঙ্ক কাকে বলে?

প্রতিসরাঙ্ক (Refractive index) : প্রতিসরাঙ্ক হল কোনো আলোকীয় মাধ্যমের উপাদানের এমন একটি ধর্ম, যার মানের ওপর ওই মাধ্যমে প্রবেশ করা অর্থাৎ, প্রতিসৃত আলোকরশ্মির গতির অভিমুখ এবং ওই মাধ্যমে আলোর বেগের মান নির্ভর করে।

প্রশ্ন | প্রতিসরাঙ্কের ভিত্তিতে আলোকীয় মাধ্যম কয় প্রকার ও কী কী? তাদের সংজ্ঞা দাও।

উত্তর  | প্রতিসরাঙ্কের ভিত্তিতে আলোকীয় মাধ্যম দুপ্রকার, যথা— (i) ঘন মাধ্যম, (ii) লঘু মাধ্যম।

ঘন মাধ্যম (Denser medium) : দুটি ভিন্ন আলোকীয় মাধ্যমের ভিতর যার পরম প্রতিসরাঙ্কের মান বেশি, তাকে ঘনতর বা ঘন মাধ্যম বলে।

লঘু মাধ্যম (Rarer medium) : যে মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্কের মান তুলনামূলকভাবে কম, তাকে লঘু মাধ্যম বলে।

অনুরূপ প্রশ্ন : আলোর ক্ষেত্রে একটি মাধ্যমের থেকে অন্য একটি মাধ্যম বেশি ঘন না লঘু তা কীভাবে ঠিক হয় ?

প্রশ্নঃ প্রতিসরাঙ্কের মান কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

উত্তর |  প্রতিসরাঙ্কের মান তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে,

(i) মাধ্যমদ্বয়ের প্রকৃতি,
(ii) ব্যবহৃত আলোর বর্ণ,
(iii) মাধ্যমদ্বয়ের উষ্ণতা

প্রশ্নঃ বায়ু সাপেক্ষে কাচের প্রতিসরাঙ্ক 1.5 বলতে কী বোঝায়?

উত্তর | বক্তব্যটির অর্থ এই যে, আলোকরশ্মি বায়ু থেকে কাচে প্রতিসৃত হলে আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত হয় 1.5। অথবা নির্দিষ্ট বর্ণের আলোকরশ্মির জন্য বায়ু মাধ্যমে ও কাচ মাধ্যমে আলোর বেগের অনুপাত হয় 1.5।

প্রশ্নঃ তৈলাক্ত কাগজকে সামান্য স্বচ্ছ দেখায় কেন?

উত্তর | সাধারণ কাগজের তল অমসৃণ বলে সেই তলে আপতিত আলোকরশ্মির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে এবং সেটি প্রায় অস্বচ্ছ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তবে তৈলাক্ত কাগজের পৃষ্ঠে পাতলা তেলের স্তর থাকে এবং এই কাগজের উপরিতলে আলোকরশ্মি এসে পড়লে তার একটি অংশ প্রতিসৃত হয়। অর্থাৎ, প্রতিসরণ ঘটার জন্যই তৈলাক্ত কাগজ অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ বলে মনে হয়।


তাপের সুপরিবাহী(Good Conductor) ও কুপরিবাহী পদার্থ(Bad Conductor) কাকে বলে উদাহরণসহ বোঝাও।

উত্তর:

তাপ পরিবহণের ভিত্তিতে পদার্থ দু-প্রকার।

সুপরিবাহী পদার্থ (Good conductor): যে সকল পদার্থ সহজে তাদের নিজেদের মধ্য দিয়ে উষ্ণ অংশ থেকে শীতল অংশে তাপ সঞ্চালিত করে, তাদের তাপের সুপরিবাহী পদার্থ বা সংক্ষেপে পরিবাহী বলে।

উদাহরণ: লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, রুপো ইত্যাদি ধাতু এবং পারদ, গ্রাফাইট, গ্যাস কার্বন ইত্যাদি অধাতু।

কুপরিবাহী পদার্থ (Bad conductor): যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সহজে এক অংশ থেকে অন্যত্র সঞ্চালিত হতে পারে না, তাদের কুপরিবাহী বা অন্তরক পদার্থ বলে। কুপরিবাহী পদার্থগুলির তাপ হস্তান্তরের ক্ষমতা নগণ্য বা উপেক্ষণীয় হয়।

উদাহরণ: কাঠ, প্লাস্টিক, মোম, রবার, বিশুদ্ধ জল, কর্ক, ইট, তুলা, কাগজ প্রভৃতি।


জাড্য (Inertia) কাকে বলে? ভৌতাবস্থানুযায়ী পদার্থ কয় প্রকার ও কী কী?

জাড্য (Inertia) কাকে বলে?

উত্তর। জাড্য (Inertia) : জড়বস্তুর ধর্ম হল এই যে, সেটি যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকতে চায়। অর্থাৎ, স্থিরবস্তু চিরকাল স্থির থাকতে চায় এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল অবস্থায় থাকতে চায়। জড়বস্তুর এই ধর্মকে জাড্য বলে। জাড্য দু-প্রকার–

(i) স্থিতি জাড্য, (ii) গতি জাড্য ।


ভৌতাবস্থানুযায়ী পদার্থ কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ পদার্থ তিন প্রকার, যথা— (i) কঠিন (Solid), (ii) তরল (Liquid), (iii) গ্যাসীয় (Gas)। যেমন— লোহা কঠিন পদার্থ, জল তরল পদার্থ, বায়ু গ্যাসীয় পদার্থ।

রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১

বিকিরণ (Radiation) কাকে বলে? এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর:

বিকিরণ (Radiation): যে পদ্ধতিতে জড় মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই বা মাধ্যম থাকলেও সেই মাধ্যমকে উত্তপ্ত না করে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গরূপে এক স্থান থেকে অন্যত্র তাপ সঞ্চালিত হয় তাকেই বিকিরণ বলে। বিকিরণ পদ্ধতিতে সংবাহিত তাপকে বিকীর্ণ তাপ বলে।

বৈশিষ্ট্য(Characteristics):
  1. বিকীর্ণ তাপ, উৎস থেকে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের আকারে চারদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
  2. বিকীর্ণ তাপ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গতিশীল হওয়ার সময়ে মাধ্যমকে উত্তপ্ত করে না, কিন্তু যেসব বস্তু দ্বারা এটি বাধাপ্রাপ্ত হয় তাদেরকে উত্তপ্ত করে।
  3. বিকীর্ণ তাপ সরলরেখায় চলে।
  4. শূন্যস্থানে বিকীর্ণ তাপের বেগ শূন্যস্থানে আলোর বেগের (3×10 মি/সে) সমান।
  5. তাপ সঞ্চালনের দ্রুততম পদ্ধতি। বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যস্তবর্গের সূত্র ইত্যাদি মান্য করে।
  6. বিকীর্ণ তাপ ফোটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর ক্রিয়া করে।

পরিচলন স্রোত(Convection Current) কাকে বলে? গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে তাপের পরিচলনের ফলে যে বায়ুপ্রবাহ হয় তা পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও। 

পরিচলন স্রোত (Convection current): তরল বা গ্যাসের কোনো অংশ উত্তপ্ত হলে হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এবং ওপরের ঠান্ডা ও ভারী অংশ নীচে নেমে আসে। এর ফলে তরল বা গ্যাসের মধ্যে যে চক্রাকার স্রোত সৃষ্টি হয়, তাকে পরিচলন স্রোত বলে। যেমন— সমুদ্রবায়ু, স্থলবায়ু।

গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে তাপের পরিচলনের ফলে যে বায়ুপ্রবাহ হয় তা নিম্নলিখিত পরীক্ষা দ্বারা দেখানো যায়।

উপকরণ : (i) একটি কাচের চিমনি, (ii) জলপূর্ণ কাচের বাটি, (iii) একটি T আকৃতিযুক্ত কার্ডবোর্ডের টুকরো, (iv) মোমবাতি, (v) ধূপ।

পরীক্ষা পদ্ধতি-1
(i) কাচের বাটিটির ভিতরে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে খাড়াভাবে বসানো হল। (ii) বাটিটিকে আংশিক জলপূর্ণ করে, কাচের চিমনি দিয়ে মোমবাতিটিকে ঘিরে রাখা হল।

পর্যবেক্ষণ: কিছুক্ষণ পর দেখা গেল যে, মোমবাতিটি ক্রমশ নিষ্প্রভ হয়ে আসছে এবং একসময় নিভে গেছে।

ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত: চিমনির ভিতরের বায়ু জ্বলন্ত মোমবাতি থেকে তাপ পেয়ে উত্তপ্ত হয় এবং হালকা হয়ে উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। চিমনির নীচে জল থাকায় বাইরের বায়ু চিমনির ভিতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়, চিমনির উপর থেকে বায়ু প্রবেশ করতে পারে না। তাই অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বাতিটি নিভে যায়।পরিচলন স্রোত পরীক্ষার ছবি

পরীক্ষা পদ্ধতি-2
এই অবস্থায় চিমনিটি তুলে বাতিটি আবার জ্বালানো হল এবং বাতিটি ঘিরে চিমনিটিকে আগের মতো বসানো হল। চিমনির মুখে T আকৃতির কার্ডবোর্ডটি মাঝামাঝি অবস্থানে রেখে, ওর খোলামুখের ঠিক ওপরে একটি জ্বলন্ত ধূপ ধরা হল।

গ্যাসের মধ্যে তাপের পরিচলনের পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল, মোমবাতিটি নিভছে না এবং ধূপের ধোঁয়া কার্ডবোর্ডের একটি দিক দিয়ে চিমনির ভিতর প্রবেশ করে, অপর পাশ দিয়ে চিমনি থেকে বেরিয়ে আসছে।

ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত : T আকারের কার্ডবোর্ডটি চিমনির খোলা মুখের আয়তনকে দুটি প্রকোষ্ঠে ভাগ করে যার একটি দিয়ে মোমবাতির শিখার তাপে উত্তপ্ত গরম বায়ু হালকা হয়ে বেরিয়ে যায় এবং তার ফলে সৃষ্ট শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য বাইরের অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু ও ধূপের ধোঁয়া অন্য প্রকোষ্ঠ দিয়ে চিমনিতে প্রবেশ করে। এই পদ্ধতিতে বায়ুতে যে পরিচলন প্রবাহ সৃষ্টি হয়, তার প্রভাবেই চিমনির অভ্যন্তরে মোমবাতিটি জ্বলতে পারে।


বায়ুচলন (Ventilation) কী? পরিচলন স্রোতকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে ঘরের বায়ুচলন অব্যাহত রাখা হয় ?

বায়ুচলন (Ventilation):

বদ্ধঘরে নিশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত দূষিত ও অস্বাস্থ্যকর বায়ুর অপসারণ এবং ঘরের দিকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর বায়ুপ্রবাহের সরবরাহ অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে গৃহীত ব্যবস্থা বা উপায়কেই বায়ুচলন বলে।

আমাদের নিশ্বাসের সঙ্গে যে বায়ু বেরিয়ে যায় তা ঘরের বায়ুর চেয়ে বেশি উষ্ণ ও আর্দ্র হওয়ায় হালকা হয়। ফলে এই বায়ু উপরে উঠে যায় এবং ঘরের দেয়ালে, ছাদের ঠিক নীচে থাকা ফাঁক বা ঘুলঘুলি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বাইরের ঠান্ডা ও অক্সিজেনযুক্ত বায়ু দরজা ও জানলা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। ফলে, ঘরের বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক থাকে। এভাবে পরিচলন স্রোতকে কাজে লাগিয়ে ঘরের বায়ুচলন অব্যাহত রাখা হয়।


পরিচলন(Convection) পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের দুটি সীমাবদ্ধতা লেখো।

 পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের সীমাবদ্ধতাগুলি হল— 
(i) কঠিন পদার্থের অণুগুলি পরস্পর দৃঢ় সংঘবদ্ধভাবে থাকে বলে কঠিনের মধ্যে পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হয় না।
(ii) যে স্থানে অভিকর্ষ বল নেই, সেখানে পরিচলনের দ্বারা তাপ সঞ্চালন সম্ভব নয়।



পরিচলন(Convection) পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর:

পরিচলন (Convection): যে পদ্ধতিতে তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলি নিজেরা স্থান পরিবর্তন করে উষ্ণ অংশ থেকে তাপ বহন করে শীতল অংশে স্থানান্তরিত করে, তাপ সঞ্চালনের সেই পদ্ধতিকে বলা হয় পরিচলন।

বৈশিষ্ট্য:
  1. পরিচলন পদ্ধতিতে মূলত তরল ও গ্যাসীয় পদার্থে তাপ সঞ্চালন হয়।
  2. এই পদ্ধতিতে তাপ চলাচলের জন্যজড় মাধ্যমের উপস্থিতি অপরিহার্য।
  3. এক্ষেত্রে তরল বা গ্যাসের অণুগুলি নিজেরাই স্থানচ্যুত হয়ে মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যত্র তাপ বহন করে নিয়ে যায়।
  4. এই প্রণালীতে তাপ শুধুমাত্র নীচ থেকে উপরের দিকে সঞ্চালিত হতে পারে— অন্য কোনো দিকে নয়।
  5. অভিকর্ষের অনুপস্থিতিতে বা অভিকর্ষহীন স্থানে এই প্রণালীতে তাপ সঞ্চালন সম্ভব নয়।

পরিবহণ(Conduction) পদ্ধতি কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।


পরিবহণ (Conduction) : যে পদ্ধতিতে তাপ একই বস্তুর উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে সঞ্চালিত হয়, কিন্তু ওই বস্তু বা বস্তুগুলির অণুগুলি স্থানচ্যুত হয় না, সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় পরিবহণ।

বৈশিষ্ট্য:
১। তাপ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যমের উপস্থিতি অপরিহার্য।
২। শূন্যস্থানে কোনো মাধ্যম না থাকায় এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন সম্ভব নয়।
৩। কঠিন, তরল, গ্যাসীয় সবরকম পদার্থেই এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হয়। এর মধ্যে কঠিন পদার্থের পরিবহণ ক্ষমতা সর্বাধিক।
৪। পারদ ছাড়া অন্যান্য সব তরলের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা নগণ্য৷ গ্যাসের ক্ষেত্রে তা আরও কম।
৫। তাপ সঞ্চালনের সময় মাধ্যমের উত্তপ্ত কণাগুলির স্থানচ্যুতি হয় না।
৬। অণু, পরমাণু ও মুক্ত ইলেকট্রনগুলি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় বলে ধাতুগুলির তাপ পরিবহণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ হয়।

বৃষ্টির মধ্যে চলমান গাড়ির উইন্ড স্ক্রিন (Wind screen) ও জানলার কাচের ভিতরের পৃষ্ঠ আবছা হয়ে যায় কেন?

বৃষ্টিতে গাড়ির কাচ ঠান্ডা হয়ে যায়। এই ঠান্ডা কাচের সংস্পর্শে এসে গাড়ির ভিতরের বায়ুতে অবস্থিত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয় ও ছোটো ছোটো জলবিন্দুর আকারে সামনের গাড়ির কাচ অর্থাৎ, উইন্ড স্ক্রিনের ভিতরের দিকে জমা হয়। একইভাবে জানলার কাচের ভিতরের পৃষ্ঠেও জলীয়বাষ্প জমা হয়। তাই উইন্ড স্ক্রিন ও জানলার কাচের ভিতরের পৃষ্ঠ আবছা হয়ে যায়।


উত্তর:

কেটলির বাইরে থাকা বায়ু বা পরিবেশের উষ্ণতা কেটলির মধ্যে থাকা ফুটন্ত জলের উষ্ণতার তুলনায় অনেক কম। তাই স্টিম বর্ণহীন গ্যাসীয় পদার্থ হলেও কেটলি থেকে নির্গত হওয়ার পর আপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণাগুলি বাষ্পের সঙ্গে বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এগুলির উপর সাদা আলো পড়ে প্রতিফলিত হয় বলে স্টিম সাদা দেখায়।


বাতাসে ধূলিকণার উপস্থিতির সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্পর্ক আছে কি?

বাতাসে ধূলিকণা উপস্থিত থাকে বলেই মেঘ সৃষ্টি তথা বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। সূর্যের তাপে বড়ো জলাশয়, নদী, সমুদ্রের উপরিতল থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুতে মিশে যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু হালকা হয়ে উপরে ওঠে এবং একসময় বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে এলে ঘনীভবনের ফলে জলবিন্দুতে পরিণত হয় ও বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভেসে বেড়ায়। একেই মেঘ বলে। তাই ধূলিকণা বাতাসে না থাকলে মেঘের অস্তিত্ব থাকত না, ফলে বৃষ্টিও হত না।


অবস্থান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন কাকে বলে?এর প্রকারভেদগুলি কী কী ? 

তাপপ্রয়োগ বা অপসারণের দ্বারা পদার্থের এক ভৌত অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অবস্থান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন (Change of state)।

পদার্থের সাধারণ ভৌত অবস্থা মূলত তিনটি—কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়।
এই বিভিন্ন রূপগুলির একটি থেকে অন্যটিতে অবস্থান্তর প্রক্রিয়াকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—

(i) গলন (Melting) : স্থির উন্নতায় কঠিন পদার্থের তাপগ্রহণের ফলে তরলে রূপান্তরের ঘটনা।

উদাহরণ : বিশুদ্ধ বরফ স্বাভাবিক বায়ুচাপে 0°C উষ্মতায় গলে জলে পরিণত হয়।

(ii) বাষ্পীভবন (Vaporization) : যে-কোনো উস্লতায় অথবা স্থির উন্নতায় তরল ফুটে বাষ্প উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া।

উদাহরণ : প্রমাণ বায়ুচাপে বিশুদ্ধ জল 100°C উষ্মতায় ফুটে বাষ্পে রূপান্তরিত হয়।

(iii) ঘনীভবন (Condensation) : নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট উন্নতায় বাষ্পের তাপ অপসারণের ফলে তরলে রূপান্তর।

উদাহরণ : স্বাভাবিক বায়ুচাপে 100°C উষ্মতায় জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলে রূপান্তরিত হয়।

(iv) কঠিনীভবন (Solidification) : নির্দিষ্ট উন্নতায় তরল পদার্থ জমে কঠিনে পরিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়া।

উদাহরণ : স্বাভাবিক বায়ুচাপে বিশুদ্ধ জল 0°C উষ্মতায় জমে বরফ উৎপন্ন করে।


(v) ঊর্ধ্বপাতন (Sublimation) : তাপপ্রয়োগের ফলে যে-কোনো উন্নতায় কঠিন পদার্থের সরাসরি বাষ্পে রূপান্তর। সংশ্লিষ্ট পদার্থগুলিকে বলা হয় ঊর্ধ্বপাতনযোগ্য পদার্থ।

উদাহরণ : কর্পূর, নিশাদল, আয়োডিন, ন্যাপথলিন ইত্যাদির কঠিন থেকে বাষ্পে পরিবর্তন।

(vi) অবক্ষেপণ(De-sublimation) : যে প্রক্রিয়ায়বাষ্পতাপবর্জন করে সরাসরি কঠিন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে অবক্ষেপণ বলে।  

উদাহরণ : CO2 বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শুষ্ক বরফ (CO2) উৎপাদন, কর্পূর, নিশাদল ইত্যাদির বাষ্প থেকে সরাসরি কঠিনে রূপান্তর।

 

 
 
স্টিম বর্ণহীন কিন্তু ফুটন্ত জলপূর্ণ কেটলির মুখ থেকে সাদা বর্ণের স্টিম নির্গত হয় কেন?

কেটলির বাইরে থাকা বায়ু বা পরিবেশের উষ্ণতা কেটলির মধ্যে থাকা ফুটন্ত জলের উষ্ণতার তুলনায় অনেক কম। তাই স্টিম বর্ণহীন গ্যাসীয় পদার্থ হলেও কেটলি থেকে নির্গত হওয়ার পর আপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণাগুলি বাষ্পের সঙ্গে বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এগুলির উপর সাদা আলো পড়ে প্রতিফলিত হয় বলে স্টিম সাদা দেখায়। 


একই ভরের দুটি বস্তুতে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ দেওয়া হল। ওদের উষ্ণতা কি একই হবে? কেন? 

বস্তু দুটির উষ্ণতা আলাদা হবে। তার কারণ নিম্নরূপ : ধরা যাক, দুটি বস্তুরই ভর m, Q পরিমাণ তাপ দেওয়াতে বস্তু দুটির উন্নতা বৃদ্ধি হল t1°C ও t2°C এবং ওদের আপেক্ষিক তাপ যথাক্রমে s1, ও s2, । সুতরাং, প্রথম বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ Q = ms1t1 এবং দ্বিতীয় বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ Q = ms2t2 ।

অতএব, ms1t1= ms2t2 বা, s1/t1= s2t2

বা, s1/s2 = t2/t1

সুতরাং, উম্লতা বৃদ্ধি আপেক্ষিক তাপের ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ, যে পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বেশি, তার উয়তা বৃদ্ধি কম এবং যার আপেক্ষিক তাপ কম, তার উয়তা বৃদ্ধি বেশি হবে।

শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১

জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে—এই ঘটনার দুটি করে সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ করো।

সুবিধা :
১। জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে। তাই জল জমে বরফে পরিণত হলে উৎপন্ন বরফের ঘনত্ব জল অপেক্ষা কম হওয়ায় বরফ জলে ভাসে। এই ঘটনার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে দেখা যায়, শীতকালীন দেশগুলিতে বড়ো নদী বা হ্রদের জলের উপরিতল বরফে পরিণত হলেও নীচের অংশে সর্বোচ্চ 4°C উষ্ণতায় জল থাকে। বরফ ও জল উভয়েই তাপের কুপরিবাহী হওয়ার ফলে ওই অংশের জল তাপ বর্জন করে আরও ঠান্ডা হয়ে বরফে পরিণত হতে পারে না। ফলে ওই স্থানের জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণীরা চরম শীতার্ত পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে।


২। কৃষিজমির ফাক বা ফাটলের মাঝে জমে থাকা জল প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হলে, আয়তনে বৃদ্ধি পেতে চায় এবং সংশ্লিষ্ট মাটির স্তরের গায়ে বল প্রয়োগ করে। এই বলের ক্রিয়ায় মাটি প্রাকৃতিক উপায়ে নরম ও ঝুরঝুরে হয়ে যায়, ফলে কৃষিকাজের সুবিধা হয়।


অসুবিধা :
১। শীতপ্রধান দেশে মোটরগাড়ির রেডিয়েটর পাইপে থাকা জল জমে বরফে পরিণত হয়। ওই বরফ আয়তনে প্রসারিত হয়ে পাইপের দেয়ালে চাপ দেয়। সেই চাপে অনেকসময় ওই পাইপ ফেটে যায়। একই কারণে শীতের দেশগুলিতে জল সরবরাহের পাইপগুলি (মূলত গরম জল সরবরাহকারী) ফেটে গিয়ে থাকে।


২। পাহাড়ি অঞ্চলে পাথরের ফাক বা ফাটলে জমে থাকা জল উষ্ণতা হ্রাসের ফলে বরফে পরিণত হয় এবং আয়তনে বাড়তে চায়। পাথরের ভিতরের তলগুলিতে প্রচণ্ড বল প্রয়োগ করে। এই বলের প্রভাবে পাথর অনেকসময় ফেটে যায়, যে কারণে পাহাড়ি স্থানে মাঝেমাঝেই ধস নামতে দেখা যায়।


গলনাঙ্ক(Melting Point) ও হিমাঙ্ক(Freezing Point) বলতে কী বোঝায়? এদের মধ্যে সম্পর্ক কী? 

গলনাঙ্ক (Melting point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় সমসত্ত্ব কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হতে শুরু করে এবং গলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে উন্নতা স্থির থাকে, সেই উয়তাকে ওই পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। যেমন—প্রমাণ বায়ুচাপে বিশুদ্ধ বরফের গলনাঙ্ক 0°C বা 273KI

হিমাঙ্ক (Freezing point) : প্রমাণ বায়ুচাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বিশুদ্ধ তরল পদার্থ সম্পূর্ণ জমে কঠিনে পরিবর্তিত হতে শুরু করে এবং সমগ্র তরলের অবস্থান্তর সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত উয়তা অপরিবর্তিত থাকে, তাকে ওই তরলের হিমাঙ্ক বলে। যেমন—বিশুদ্ধ জলের প্রমাণ বায়ুচাপে হিমাঙ্ক বা স্বাভাবিক হিমাঙ্ক হল 0°C বা 273K।

গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের সম্পর্ক : বিশুদ্ধ এবং কেলাসাকার গঠনযুক্ত পদার্থের ক্ষেত্রে গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের মান সাধারণভাবে সমান (যেমন—বরফ ও জলের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের মান 0°C) ।

কিন্তু মিশ্র পদার্থ এবং অনিয়তাকার গঠনসম্পন্ন অর্থাৎ, অকেলাসাকার কঠিন পদার্থের (যেমন— কাচ, মোম, পিচ, মাখন | ইত্যাদি) নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্কের অস্তিত্ব নেই।


একটি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার সাহায্যে দেখাও যে, গলনে পদার্থের আয়তন পরিবর্তন হয়।


গলনে পদার্থের আয়তন পরিবর্তিত হয়— তা নিম্নলিখিত পরীক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে দেখানো যায়।

উপকরণ : (i) দুটি টেস্টটিউব, (ii) কিছু পরিমাণ মোম, (iii) পরিমাণমতো জল, (iv) বরফ, (v) বার্নার।

পরীক্ষা পদ্ধতি : (i) দুটি টেস্টটিউবের মধ্যে একটিতে কিছুটা মোম এবং অন্যটিতে একটি বড়ো বরফের টুকরো নেওয়া হল। (ii) দুটি টেস্টটিউবকে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করে মোম ও বরফকে সম্পূর্ণ গলানো হল এবং প্রথমটিতে, একটুকরো মোম ও দ্বিতীয়টিতে, একটি ছোটো বরফের টুকরো ফেলে দেওয়া হল।

মোমবাতি ও বরফের গলন

পর্যবেক্ষণ : কঠিন মোমের টুকরোটি তরল মোমের মধ্যে ফেলা মাত্র নিমজ্জিত হয় এবং গলিত মোমের সংস্পর্শে থেকে দ্রুত গলে তরলে রূপান্তরিত হয়। বরফের টুকরোটি বরফগলা জলের ওপর আয়তনের সামান্য (প্রায় 12 অংশ) বাইরে রেখে ভেসে থাকে।

ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত : কঠিন মোমের টুকরো গলিত মোমে সম্পূর্ণ ডুবে যায়, সুতরাং, কঠিন মোমের ঘনত্ব তরল মোম অপেক্ষা বেশি। যেহেতু, আয়তন বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট ভরের পদার্থের ঘনত্ব হ্রাস পায়। সুতরাং, সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, গলনের ফলে মোমের আয়তন বৃদ্ধি ঘটেছে।

একইভাবে বরফের টুকরো জলে ফেললে তা আংশিক নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসে। যা প্রমাণ করে, বরফের ঘনত্ব জল অপেক্ষা কম। সুতরাং, বোঝা যায় যে, জল জমে বরফ হলে আয়তনে বাড়ে অর্থাৎ, বরফের গলনে আয়তন সংকুচিত হয়।



পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রমী উদাহরণ দাও।

কর্পূর, ন্যাপথলিন, নিশাদল প্রভৃতি কঠিন পদার্থ তাপ প্রয়োগে তরল না হয়ে, সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। এদের বাষ্পকে শীতল করলে, এগুলি পুনরায় কঠিন অবস্থায় ফিরে আসে।

উল্লেখ্য, প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ঊর্ধ্বপাতনযোগ্য পদার্থগুলির ক্ষেত্রে তরল অবস্থার অস্তিত্ব না থাকলেও বায়ুমণ্ডলীয় চাপের তারতম্য ঘটিয়ে এদের প্রত্যেকটিকেই তরল অবস্থায় প্রকৃতিতে পাওয়া সম্ভব।


সেঁক দেওয়ার বোতলে তরল হিসেবে গরম জল ব্যবহার করা হয় কেন?

তরল পদার্থগুলির মধ্যে জলের আপেক্ষিক তাপ সর্বোচ্চ এবং কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় সকল পদার্থের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই কারণে, একই ভরের অন্যান্য তরলের তুলনায় সমপরিমাণ উয়তা বৃদ্ধি ঘটাতে জল বেশি পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে। সেই কারণে সেঁক দেওয়ার বোতল বা হটব্যাগে ব্যবহৃত হওয়ার সময় নির্দিষ্ট হারে তাপ বর্জন করলেও, উচ্চ আপেক্ষিক তাপের কারণে জলের উয়তা হ্রাস হয় সব থেকে কম। অর্থাৎ, তাপগ্রহণ এবং ধারণক্ষমতা উভয়ই বেশি হওয়ায় গরম জল ঠান্ডা হতে বেশি সময় নেয়। তা ছাড়াও একই পরিমাণ তাপগ্রহণে উষ্ণতা বৃদ্ধি কম হওয়ায় জলকে শরীরের সংস্পর্শে রাখাও সুবিধাজনক হয়। তাই সেঁক দেওয়ার কাজে জল ব্যবহৃত হয়।


একটি কেটলি ও তার মধ্যে রাখা জল 80°C উন্নতা থেকে শীতল হয়ে 40°C উষ্মতায় এল। কেটলি ও জল কি সমপরিমাণে তাপ বর্জন করল?

ধরা যাক, কেটলির ভর m1 কেটলির উপাদানের আপেক্ষিক তাপ = s এবং কেটলিতে রাখা জলের ভর =m2

সুতরাং, কেটলি কর্তৃক বর্জিত তাপ = m1s*(80–40) = 40m1s ক্যালোরি,

এবং জল কর্তৃক বর্জিত তাপ = m2s*(80–40) = 40m2s ক্যালোরি

এখানে 40 m1s ক্যালোরি ও 40m2s ক্যালোরি আলাদা আলাদা পরিমাণ তাপকে নির্দেশ করছে। সুতরাং, কেটলি ও জল কখনোই সমপরিমাণ তাপ বর্জন করবে না।


 আপেক্ষিক তাপকে আপেক্ষিক বলা হয় কেন?

আপেক্ষিক তাপের মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পদার্থের (জলের) আপেক্ষিক তাপের মান (1)-কে প্রামাণ্য (Reference) ধরা হয়। এখন প্রমাণ পদার্থটি জল ছাড়া অন্য কিছু হলে পরীক্ষাধীন পদার্থের আপেক্ষিক তাপও ভিন্ন হবে। কোনো পদার্থের আপেক্ষিক তাপ (s) অর্থাৎ, সমানুপাতিক ধ্রুবক Q/mt -র মান জলের উপাদানগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তুলনা করে নির্ণয় করা হয় বলে, এই ধ্রুবকটিকে আপেক্ষিক তাপ বলা হয়।


গলন ও কঠিনীভবনের ফলে আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয় বোঝাও। 

গলন ও কঠিনীভবনের ফলে আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয় বোঝাও। 

উত্তরঃ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলে অধিকাংশ পদার্থের আয়তন বেড়ে যায় এবং তরল থেকে কঠিন হলে আয়তন কমে যায়।

যেমন – মোম

কিন্তু কিছু কিছু পদার্থ কঠিন থেকে তরলে পরিণত হলো আয়তন কমে যায় ও তরল থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তন বেড়ে যায়।

যেমন— জল ।


হিমমিশ্র(Freezing mixture) কী? উদাহরণ দাও। এর কয়েকটি ব্যবহার লেখো। 

হিমমিশ্র (Freezing mixture)

একাধিক পদার্থের উপযুক্ত মিশ্রণ ঘটিয়ে মিশ্রণের উপাদানগুলি অপেক্ষা অনেক নিম্ন উন্নতার সৃষ্টি করা সম্ভব। এই জাতীয় মিশ্রণগুলিকে সাধারণভাবে হিমমিশ্র বা Freezing mixture বলে অভিহিত করা হয়।

উদাহরণঃ বরফচূর্ণ ও খাদ্যলবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মিশিয়ে হিমমিশ্র উৎপন্ন করা যায়, যার উষ্ণতা প্রায় – 23°C হয়।





রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

হাজার'-এর ইংরেজি 'থাউস্যান্ড', কিন্তু হাজারকে সংক্ষেপে 'T' না বলে 'K' কেন বলা হয়?

k meaning

এটি মেট্রিক পদ্ধতির সংক্ষিপ্তকরণ। আসল শব্দটি হলো একটি গ্রীক শব্দ, কিলো যার অর্থ হলো হাজার। মেট্রিক পদ্ধতিতে কিলো ব্যবহার করা হয়: এক কিলোগ্রাম বা 1k গ্রাম অর্থাৎ এক হাজার গ্রাম। সেই একই ধারণা থেকে K অক্ষরটি তুলে নেওয়া হয়েছে এবং শুধুমাত্র ইউনিট বা একক বদল করে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহৃত হয়।

যেমন:

5k গ্রাম মানে 5000 গ্রাম, তেমনি

5k টাকা মানে 5000 টাকা।

5k বাইট মানে 5000 বাইট।

সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০

কুলম্বের সূত্র (Coulomb's law) | তড়িৎ বিভব কাকে বলে, বুঝিয়ে দাও। তড়িৎ বিভবের মাত্রা

কুলম্বের সূত্র (Coulomb's law)

i) দুটি স্থির বিন্দু আধানের মধ্যে কার্যকর আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল আধানদ্বয়ের পরিমাণের গুণফলের সমানুপাতিক এবং

ii) তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক।

এই বল আধানদ্বয়ের সংযােজী রেখা বরাবর ক্রিয়া করে এবং এর মান আধানগুলি যে মাধ্যমে অবস্থিত হয় তার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
Photo : Coulomb's Law

ধরা যাক, দুটি আধান q1, ও q2 পরস্পর থেকে r দূরত্বে অবস্থিত। এদের মধ্যে কার্যকর বলের মান F হলে, কুলম্বের সূত্রানুযায়ী,

F ∝ q1q2  এবং F ∝ 1/r2 অর্থাৎ F ∝ q1q2/r2,

গাণিতিক ভাবে, 

Photo : Mathematical Expression of Coulomb's Law
যেখানে k একটি ধ্রুবক যার মান F, q1, q2, ও r-এর এককের উপর এবং যে মাধ্যমে আধান দুটি অবস্থিত তার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এই  ধ্রুবকটিকে বলা হয় স্থির তড়িৎ বল ধ্রুবক বা কুলম্ব ধ্রুবক। বায়ুর ক্ষেত্রে CGS পদ্ধতিতে k = 1 হয়। সেক্ষেত্রে সূত্রটিকে লেখা যায়, F =(q1q2)/r2 


তড়িৎ বিভব কাকে বলে, বুঝিয়ে দাও। 

তড়িৎ বিজ্ঞানে তড়িৎ বিভব’-এর ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তড়িৎ প্রবাহমাত্রা মান ও প্রবাহের অভিমুখ নির্ধারণের জন্য তড়িৎ বিভব’ তথা বিভব পার্থক্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রয়োজন।

তড়িৎ বিভবঃ কোনাে পরিবাহী তড়িদাহিত হলে ওই পরিবাহী অন্য কোনাে পরিবাহীকে তড়িৎ দিতে পারে কিংবা অন্য কোনাে পরিবাহী থেকে তড়িৎ নিতে পারে। পরিবাহীর এই রকম তড়িৎ অবস্থাকে ওর তড়িৎ বিভব বলা হয়।

উচ্চ বিভব ও নিম্ন বিভবঃ কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ধনাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি উচ্চবিভবে আছে বলা হয় এবং অনুরূপভাবে কোনাে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ঋণাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি নিম্নবিভবে আছে বলা হয়। এখন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সর্বদা ইলেকট্রন (ঋণাত্মক আধানে আহিত)-এর গতির অভিমুখ বিপরীত দিকে হয়।

বিভবপার্থক্যঃ দুটি সমজাতীয় বা বিপরীত জাতীয় তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর মধ্যে বিভবের যে পার্থক্য হয়, তাকে ওদের বিভব প্রভেদ বা বিভব পার্থক্য (potential difference) বলা হয়।

কার্যের ধারণা থেকে বিভবের ধারণাঃ
অসীম দূরত্ব থেকে একটি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কার্য করতে হয় তাকে ওই বিন্দুর তড়িৎ বিভব বলে। 

গাণিতিকভাবে, অসীম দূরত্ব থেকে +Q একক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যদি একক কার্য করতে W কৃতকার্য হয় তবে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব হয়, V=W/Q একক।
অতএব, তড়িৎ বিভব = কৃতকার্য/আধান।

রাশিঃ কার্য এবং আধান উভয়ই স্কেলার রাশি হওয়ায় তড়িৎ বিভব স্কেলার রাশি।

তড়িৎ বিভবের মাত্রা=
[কার্যের মাত্রা/আধানের মাত্রা] =[ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1]

তড়িৎ বিভবের এককঃ তড়িৎ বিভবের CGS একক হল esu বা স্ট্যাটভােল্ট (statvolt) এবং SI ও ব্যবহারিক একক হল ভোল্ট (volt)।

তড়িৎবিভব মাপক যন্ত্রের নামঃ ভোল্টামিটার(Voltameter)

একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।
এই কোশের বিভব পার্থক্য নির্ভর করবে কোশের অভ্যন্তরীণ রোধ এবং সংযুক্ত রোধের উপর। 

1 volt = 1/300 esu বিভব।

কোনাে বিন্দুর তড়িৎবিভব 1 V বলতে বােঝায় অসীম দূরত্ব থেকে একটি 1 C ধনাত্মক আধানকে ওই বিন্দুতে আনতে 1 জুল কার্য করতে হবে।
1 ভোল্ট = 1 জুল /1 কুলম্ব 

কার্যের ধারণা থেকে বিভবভেদের ধারণাঃ দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভবপার্থক্য হল একটি বিন্দু থেকে অপর বিন্দুটিতে একক ধনাত্মক আধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ।

বিভবভেদের এককঃ বিভবপ্রভেদের SI ও ব্যবহারিক একক হল ভােল্ট (Volt)।

দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভবপ্রভেদ 1 V বলতে বােঝায় এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে 1C ধনাত্মক আধান নিয়ে যেতে 1 জুল কার্য করতে হয়। 

জেনে রাখা ভালো, পৃথিবীর তড়িৎবিভবের মান শূন্য ধরা হয়। একটি বস্তু ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বলতে বােঝায় বস্তুটির বিভব পৃথিবীর বিভবের তুলনায় বেশি এবং একটি বস্তু ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বলতে বােঝায় বস্তুটির বিভব পৃথিবীর বিভবের তুলনায় কম।


স্থির তড়িৎ ও চল তড়িৎ। তড়িৎ আধানের একক ও মাত্রা। 

তড়িদাধান (Electric charge)

দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণে বস্তু দুটিতে তড়িতের সঞ্চার হয় এবং যখনই কোনাে বস্তুতে তড়িতের সঞ্চার ঘটে, তখন বলা হয় যে, বস্তুটি তড়িদাহিত হয়েছে।

তড়িৎ দুই ধরনের, যথা

(i) স্থির তড়িৎ (Static electricity) এবং

(ii) চলতড়িৎ (Current electricity)।

যে তড়িৎ উৎপত্তিস্থলেই স্থির অবস্থায় আবদ্ধ থাকে এবং সেই স্থান থেকে অন্যত্র যেতে পারে না তাকে বলা হয় স্থির তড়িৎ এবং যে তড়িৎ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে তাকে বলা হয় চল তড়িৎ। 

যে ভৌত ধর্মের জন্য কোনাে বস্তু কণাকে একটি তড়িৎচৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে কণাটি একটি বল অনুভব করে তাকেই তড়িদাধান বলে। তড়িদাধান দুই প্রকার হয়- (i) ধনাত্মক ও (ii) ঋণাত্মক

যে-কোনাে বস্তুর আহিতকরণের ব্যাখ্যা করা যায় ইলেকট্রনের আধিক্য বা ঘাটতির সাহায্যে। দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণের ফলে একটি বস্তু থেকে অন্যটিতে ইলেকট্রনের স্থানান্তর ঘটে। যে বস্তুটি ইলেকট্রন হারায় সেই বস্তুটি ধনাত্মক আধান গ্রস্ত হয়। যে বস্তুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেটি ঋণাত্মক আধানগ্রস্ত হয়।

আধানের মাত্রা ও এককঃ

  • গাণিতিক ভাবে তড়িৎ আধানকে Ampere*Second দ্বারা প্রকাশ করা যায়। তাই তড়িদাধানের মাত্রা [IT];
  • তড়িদাধানের CGS একক esu বা স্ট্যাটকুলম্ব
  • তড়িদাধানের SI একক হল কুলম্ব (C)।

1 C = 3 x 109 esu বা স্ট্যাটকুলম্ব

তড়িৎ আধান কী ধরণের রাশিঃ স্কেলার রাশি 


তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা EMF।

তড়িচ্চালক বল এবং তড়িৎচালক বলের উৎস হিসেবে তড়িৎ কোষ (Electromotive force and electric cell as a source of EMF)।

কোনাে স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে হলে যেমন বল প্রয়ােগ করতে হয়, তেমনই কোনাে পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহমাত্রা সৃষ্টি করার জন্য বা প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি বলের প্রয়ােজনীয়তার কথা ভাবা যায়। একেই বলা হয় তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা সংক্ষেপে EMF।

একথা মনে রাখা আবশ্যক যে, ভিন্ন বিভবযুক্ত দুটি বস্তুকে একটি পরিবাহী দ্বারা যুক্ত করলে উচ্চ বিভবযুক্ত বস্তু থেকে নিম্ন বিভবযুক্ত বস্তুতে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয়ে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার সৃষ্টি করবে। সুতরাং, বিভব পার্থক্যের কারণে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। কাজেই তড়িচ্চালক বল কে নিম্নলিখিতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়—

তড়িৎচালক বলের সংজ্ঞাঃ যার প্রভাবে বা যে কারণে তড়িৎ বর্তনীর কোনাে অংশে রাসায়নিক শক্তি বা অন্য কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় তড়িচ্চালক বল (EMF)।

তড়িচ্চালক বলের এককঃ তড়িচ্চালক বলের SI এবং ব্যবহারিক একক ভােল্ট(Volt)। 

তড়িচ্চালক বল কোন ধরনের রাশিঃ এটি একটি স্কেলার রাশি। 

তড়িচ্চালক বলের মাত্রাঃ তড়িৎচালক বলকে গাণিতিক ভাবে SI পদ্ধতিতে জুল/কুলম্ব বলা যেতে পারে। অর্থাৎ তড়িৎচালক বলের মাত্রা হবে [কার্যের মাত্রা]/[আধাানের মাত্রা] = [ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1

তড়িৎচালক বলের উৎসঃ তড়িৎচালক বলের উৎস হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কোনাে না কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ডায়নামাে, তাপযুগ্ম, তড়িৎ কোশ, আলোক-তড়িৎ কোশ প্রভৃতি হল তড়িচ্চালক বলের উৎস।

তড়িচ্চালক বল মাপার যন্ত্রঃ পোটেনশিওমিটার ।

কার্য করার জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তির উৎস হিসেবে তড়িৎকোশঃ

সচল যন্ত্রাংশবিহীন তড়িৎ উৎসই হল তড়িৎকোশ। তড়িৎকোশ রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে বর্তনীতে স্থায়ী তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে।

বিচ্ছিন্ন বা মুক্ত অবস্থায় কোনাে তড়িৎকোশের তড়িদ্দার দুটির মধ্যে যে বিভবপার্থক্যের সৃষ্টি হয় তাকেই বলা হয় কোশটির তড়িৎচ্চালক বল। একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।

কোনাে কোষের তড়িচ্চালক বল 1.5 ভোল্ট বলতে বােঝায় যে, কোষের ধনাত্মক মেরু থেকে ঋণাত্মক মেরুতে 1 কুলম্ব তড়িদাধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ হয় 1.5 জুল।


বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০২০

গ্রিনহাউস প্রভাব বা ইফেক্ট | Greenhouse Effect in Bengali

গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট

বায়ুমণ্ডলে মূলত CO2-এর ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে বলে গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট। 

ব্যাখ্যাঃ গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট হল পরিবেশকে দূষিত করার একটি অন্যতম পদ্ধতি। ইংরেজি গ্রিনহাউস শব্দটির অর্থ হল গাছপালা পরিচর্যার জন্য কাচের ঘর। এই কাচের ঘরের মধ্যে দিয়ে সুর্যের আলাে যেমন ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আকারে অবাধে প্রবেশ করে এবং ওই ঘরের তাপমাত্রা বাড়ায় তেমনই পৃথিবীকে বিশাল কাচের ঘরের মতাে বা গ্রিনহাউসের মতাে ঘিরে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। সৌরশক্তি এই বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের ভিতর দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় এবং পুনরায় বৃহৎ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি (infrared ray) রূপে মহাশূনে ফিরে যাওয়ার সময় কিছু তাপশক্তি আবদ্ধ হয়। ফলে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

গ্রিনহাউস গ্যাসঃ বায়ুমণ্ডলে যে সমস্ত গ্যাসের উপস্থিতির জন্য গ্রিনহাউস ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।

যেমন CO2 (প্রধান), জলীয় বাষ্প, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে বড়াে বড়াে শহর যেমন—

দিল্লি, মুম্বই, কলকাতায় অরণ্য নিধনের ফলে অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যান চলাচলে CO-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার উষ্ণতা 4°C থেকে 6°C বেড়েছে। মনে রাখবে O2 এবং N2 গ্রিনহাউস গ্যাস নয়।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিঃ গ্রিনহাউসের প্রভাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে বেড়ে চলেছে। যেমন— 1850 থেকে 1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে 0.5°C।

আবার, 1900 থেকে 2000 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়েছে 1°C। সুতরাং, প্রাকৃতিক পরিবেশ যে ক্রমশ গরম হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান অবস্থাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।

গ্রিনহাউস প্রভাব ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলাফলঃ

  1. পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ আরও বেশি করে গলবে।
  2. বরফ গলা জল সমুদ্রের জলে যুক্ত হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি করবে।
  3. সমুদ্রপৃষ্ঠের জলতল বাড়ার জন্য উপকূলের নীচু জমি জলমগ্ন হবে।
  4. ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশের কিছু অংশ জলে ডুবে যাবে।
  5. উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে দাবানলের দ্বারা বনভূমি নষ্ট হবে।

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে কার্যকারী এবং দৈনন্দিন জীবনে রূপায়িত করা সম্ভব এমন কিছু উপায়ঃ

  1. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমালে CO2-এর উৎপাদন হ্রাস পাবে। সেই দিকে লক্ষ রেখেই অপ্রচলিত বা পুনর্নবীকরণযােগ্য শক্তির ব্যবহারে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।
  2. গ্রিনহাউস প্রভাবকে হ্রাস করার জন্য বনভূমি একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বনভূমি সংরক্ষণে যথেষ্ট নজর দিতে হবে। অর্থাৎ, বনভূমি ধ্বংস না করে আরও নতুন বনভূমি সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে। 
  3. ক্লোরােফ্লুরােকার্বন জাতীয় পদার্থের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। সম্ভব হলে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০

তড়িৎ প্রবাহমাত্রা কাকে বলে? তড়িৎ প্রবাহমাত্রার একক কী?

 তড়িৎ প্রবাহমাত্রা (Electric Current)

তড়িৎচালক বলের প্রভাবে কোনাে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে রক্ত ইলেকট্রনের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহই হল তড়িৎপ্রবাহ। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ধনাত্মক আধানের প্রবাহের অভিমুখ কি তড়িৎ প্রবাহমাত্রার অভিমুখ ধরা হয়। কাজেই পরিবাহীর মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহ যে অভিমুখে ঘটে তড়িৎ প্রবাহ মাত্রার অভিমুখ তার বিপরীত দিকে ধরা হয়।

Photo: Current
তড়িৎ প্রবাহমাত্রা 

তড়িৎ প্রবাহমাত্রাঃ

পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয় তাকে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা বলা হয়।

পরিবাহীর কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যদি t সেকেন্ড সময়ে Q পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তবে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা হয় I = Q/t অর্থাৎ, প্রবাহমাত্রা = আধান/সময়

রাশিঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রার শুধু মান আছে, তাই এটি একটি স্কেলার রাশি।

তড়িৎ প্রবাহমাত্রার এককঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রা CGS একক হল emu (Electromagnetic unit) এবং SI পদ্ধতিতে ব্যবহারিক একক হল অ্যাম্পিয়ার (A)। 

কোনাে পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে 1 সেকেন্ডে 1 কুলম্ব আধান প্রবাহিত হলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহমাত্রা হয় 1 অ্যাম্পিয়ার (A)।

1 emu প্রবাহমাত্রা = 10 A প্রবাহমাত্রা

তড়িৎ প্রবাহ দুই ধরনের হয়, যেমন-

1) সমপ্রবাহ(Direct current or DC) এবং 

2) পরবর্তী প্রবাহ(Alternating Current or AC) 

1) সমপ্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সবসময় একই দিকে হয়।

তড়িৎকোশ সমপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। 

2) পরিবর্তী প্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হয়।

AC ডায়নামোর সাহায্যে পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করা যায়।

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০

অনুঘটক কাকে বলে? একটি উদাহরণের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এর প্রভাব বুঝিয়ে দাও।

অনুঘটক (Catalyst) : যেসব রাসায়নিক পদার্থ কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় স্বল্প পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার বেগকে ত্বরান্বিত করে, কিন্তু বিক্রিয়া শেষে নিজে ভর ও ধর্মে অপরিবর্তিত থাকে, সেইসব পদার্থকে অনুঘটক বলে। কেন O2 প্রস্তুতিতে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড, H2SO4 প্রস্তুতিতে ভ্যানাডিয়াম পেন্টক্সাইড ইত্যাদি। 

 উদাহরণঃ পরীক্ষাগারে শুধুমাত্র পটাশিয়াম ক্লোরেটকে প্রায় ৬৩০°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে, এটি খুব ধীরে ধীরে বিয়ােজিত হয়ে পটাশিয়াম ক্লোরাইড ও অল্প পরিমাণ অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এভাবে অতি উচ্চ তাপমাত্রায় অক্সিজেন উৎপাদনের সময়ে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে এবং উৎপন্ন অক্সিজেনের পরিমাণ ও তুলনামূলক ভাবে কম হয়। তাছাড়া ৬৩০°C  তাপমাত্রা সৃষ্টি করতে যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার হয়, তা অর্থনৈতিক নয়। 

দেখা গেছে , পরীক্ষাগারে ৪ ভাগ ওজনের পটাশিয়াম ক্লোরেটের সঙ্গে ১ ভাগ ওজনের ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড মিশিয়ে দিলে খুব কম তাপমাত্রায় (২৩০°C-২৫০°C) অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড এর ভর ও ধর্ম অপরিবর্তিত থাকে, শুধুমাত্র বিক্রিয়ার বেগ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, অক্সিজেন প্রস্তুতির এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড অনুঘটকের কাজ করে।

2KClO3+[MnO2,230°-250°C] = 2KCI +3O2(গ্যাস)+[MnO2]

অনুঘটকের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী জানতে এখানে ক্লিক করুন। 


শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০

জলের ট্যাংক থেকে বেশি দূরের বাড়িতে জল সরবরাহ করলে আস্তে আস্তে জল পড়ে কেন?

বেশি দূরের বাড়িতে জল সরবরাহের সময় পাইপের ভিতরের দেয়ালে ও জল স্তরের মধ্যে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণ বল জলের বেগ কমিয়ে দেয়। তাই বেশি দূরত্বে জল আস্তে আস্তে পড়ে।

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২০

বায়ুর চাপ কাকে বলে? প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কী? এর মান নির্ণয় করো।

 বায়ুর চাপ(Air Pressure):

কোনো বিন্দুর চারিদিকে একক ক্ষেত্রফলের ওপর বায়ুমণ্ডল লম্বভাবে নিজ ওজনের সমান যে বল প্রয়োগ করে, তাকেই বায়ুর চাপ বলে।

অর্থাৎ বায়ুর চাপ = লম্বভাবে প্রযুক্ত বল÷ক্ষেত্রফল

প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ (Standard atmospheric pressure) : 45° অক্ষাংশে সমুদ্রপৃষ্ঠে 0°C উয়তায় 76 সেমি উঁচু পারদস্তম্ভ যে চাপ প্রয়ােগ করে, তাকে প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বলা হয়।

প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের মান, P0= 76 cm পারদস্তম্ভের চাপ = (0.76 x 13.6 x 9.80) N/m² =1.013 x 105 Pascal(পাস্কাল)। 




সাধারণত জল সরবরাহের ট্যাংক বাড়ির সবচেয়ে উঁচু স্থানে রাখা হয় কেন?

উত্তরঃ

বাড়ির জল সরবরাহের ট্যাংক বাড়ির সবচেয়ে উঁচু স্থানে রাখা হয়, যাতে বাড়ির সমস্ত কলগুলি ট্যাংকের জলতলের চেয়ে কম উচ্চতায় থাকে। ফলে বাড়ির যে-কোনাে জায়গার কল খুললে সমােচ্চশীলতা ধর্মের জন্য ট্যাংকের জল কলের জলের উচ্চতায় আসতে চায় ও তীব্রবেগে পড়ে। এতে দৈনন্দিন কাজে সুবিধা হয়।

Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts