কুলম্বের সূত্র (Coulomb's law)
i) দুটি স্থির বিন্দু আধানের মধ্যে কার্যকর আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল আধানদ্বয়ের পরিমাণের গুণফলের সমানুপাতিক এবং
ii) তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক।
এই বল আধানদ্বয়ের সংযােজী রেখা বরাবর ক্রিয়া করে এবং এর মান আধানগুলি যে মাধ্যমে অবস্থিত হয় তার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
ধরা যাক, দুটি আধান q1, ও q2 পরস্পর থেকে r দূরত্বে অবস্থিত। এদের মধ্যে কার্যকর বলের মান F হলে, কুলম্বের সূত্রানুযায়ী,
F ∝ q1q2 এবং F ∝ 1/r2 অর্থাৎ F ∝ q1q2/r2,
গাণিতিক ভাবে,
যেখানে k একটি ধ্রুবক যার মান F, q1, q2, ও r-এর এককের উপর এবং যে মাধ্যমে আধান দুটি অবস্থিত তার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এই ধ্রুবকটিকে বলা হয় স্থির তড়িৎ বল ধ্রুবক বা কুলম্ব ধ্রুবক। বায়ুর ক্ষেত্রে CGS পদ্ধতিতে k = 1 হয়। সেক্ষেত্রে সূত্রটিকে লেখা যায়, F =(q1q2)/r2
তড়িৎ বিভব কাকে বলে, বুঝিয়ে দাও।
তড়িৎ বিজ্ঞানে তড়িৎ বিভব’-এর ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তড়িৎ প্রবাহমাত্রা মান ও প্রবাহের অভিমুখ নির্ধারণের জন্য তড়িৎ বিভব’ তথা বিভব পার্থক্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রয়োজন।
তড়িৎ বিভবঃ কোনাে পরিবাহী তড়িদাহিত হলে ওই পরিবাহী অন্য কোনাে পরিবাহীকে তড়িৎ দিতে পারে কিংবা অন্য কোনাে পরিবাহী থেকে তড়িৎ নিতে পারে। পরিবাহীর এই রকম তড়িৎ অবস্থাকে ওর তড়িৎ বিভব বলা হয়।
উচ্চ বিভব ও নিম্ন বিভবঃ কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ধনাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি উচ্চবিভবে আছে বলা হয় এবং অনুরূপভাবে কোনাে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ ঋণাত্মক আধান উপস্থিত থাকলে সেই ক্ষেত্রটি নিম্নবিভবে আছে বলা হয়। এখন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সর্বদা ইলেকট্রন (ঋণাত্মক আধানে আহিত)-এর গতির অভিমুখ বিপরীত দিকে হয়।
বিভবপার্থক্যঃ দুটি সমজাতীয় বা বিপরীত জাতীয় তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর মধ্যে বিভবের যে পার্থক্য হয়, তাকে ওদের বিভব প্রভেদ বা বিভব পার্থক্য (potential difference) বলা হয়।
কার্যের ধারণা থেকে বিভবের ধারণাঃ
অসীম দূরত্ব থেকে একটি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কার্য করতে হয় তাকে ওই বিন্দুর তড়িৎ বিভব বলে।
গাণিতিকভাবে, অসীম দূরত্ব থেকে +Q একক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনাে বিন্দুতে আনতে যদি একক কার্য করতে W কৃতকার্য হয় তবে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব হয়, V=W/Q একক।
অতএব, তড়িৎ বিভব = কৃতকার্য/আধান।
রাশিঃ কার্য এবং আধান উভয়ই স্কেলার রাশি হওয়ায় তড়িৎ বিভব স্কেলার রাশি।
তড়িৎ বিভবের মাত্রা=
[কার্যের মাত্রা/আধানের মাত্রা] =[ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1]
তড়িৎ বিভবের এককঃ তড়িৎ বিভবের CGS একক হল esu বা স্ট্যাটভােল্ট (statvolt) এবং SI ও ব্যবহারিক একক হল ভোল্ট (volt)।
তড়িৎবিভব মাপক যন্ত্রের নামঃ ভোল্টামিটার(Voltameter)
একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।
এই কোশের বিভব পার্থক্য নির্ভর করবে কোশের অভ্যন্তরীণ রোধ এবং সংযুক্ত রোধের উপর।
1 volt = 1/300 esu বিভব।
কোনাে বিন্দুর তড়িৎবিভব 1 V বলতে বােঝায় অসীম দূরত্ব থেকে একটি 1 C ধনাত্মক আধানকে ওই বিন্দুতে আনতে 1 জুল কার্য করতে হবে।
1 ভোল্ট = 1 জুল /1 কুলম্ব
কার্যের ধারণা থেকে বিভবভেদের ধারণাঃ দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভবপার্থক্য হল একটি বিন্দু থেকে অপর বিন্দুটিতে একক ধনাত্মক আধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ।
বিভবভেদের এককঃ বিভবপ্রভেদের SI ও ব্যবহারিক একক হল ভােল্ট (Volt)।
দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভবপ্রভেদ 1 V বলতে বােঝায় এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে 1C ধনাত্মক আধান নিয়ে যেতে 1 জুল কার্য করতে হয়।
জেনে রাখা ভালো, পৃথিবীর তড়িৎবিভবের মান শূন্য ধরা হয়। একটি বস্তু ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বলতে বােঝায় বস্তুটির বিভব পৃথিবীর বিভবের তুলনায় বেশি এবং একটি বস্তু ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বলতে বােঝায় বস্তুটির বিভব পৃথিবীর বিভবের তুলনায় কম।
স্থির তড়িৎ ও চল তড়িৎ। তড়িৎ আধানের একক ও মাত্রা।
তড়িদাধান (Electric charge)
দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণে বস্তু দুটিতে তড়িতের সঞ্চার হয় এবং যখনই কোনাে বস্তুতে তড়িতের সঞ্চার ঘটে, তখন বলা হয় যে, বস্তুটি তড়িদাহিত হয়েছে।
তড়িৎ দুই ধরনের, যথা
(i) স্থির তড়িৎ (Static electricity) এবং
(ii) চলতড়িৎ (Current electricity)।
যে তড়িৎ উৎপত্তিস্থলেই স্থির অবস্থায় আবদ্ধ থাকে এবং সেই স্থান থেকে অন্যত্র যেতে পারে না তাকে বলা হয় স্থির তড়িৎ এবং যে তড়িৎ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে তাকে বলা হয় চল তড়িৎ।
যে ভৌত ধর্মের জন্য কোনাে বস্তু কণাকে একটি তড়িৎচৌম্বক ক্ষেত্রে রাখলে কণাটি একটি বল অনুভব করে তাকেই তড়িদাধান বলে। তড়িদাধান দুই প্রকার হয়- (i) ধনাত্মক ও (ii) ঋণাত্মক।
যে-কোনাে বস্তুর আহিতকরণের ব্যাখ্যা করা যায় ইলেকট্রনের আধিক্য বা ঘাটতির সাহায্যে। দুটি বস্তুর মধ্যে ঘর্ষণের ফলে একটি বস্তু থেকে অন্যটিতে ইলেকট্রনের স্থানান্তর ঘটে। যে বস্তুটি ইলেকট্রন হারায় সেই বস্তুটি ধনাত্মক আধান গ্রস্ত হয়। যে বস্তুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে সেটি ঋণাত্মক আধানগ্রস্ত হয়।
আধানের মাত্রা ও এককঃ
- গাণিতিক ভাবে তড়িৎ আধানকে Ampere*Second দ্বারা প্রকাশ করা যায়। তাই তড়িদাধানের মাত্রা [IT];
- তড়িদাধানের CGS একক esu বা স্ট্যাটকুলম্ব
- তড়িদাধানের SI একক হল কুলম্ব (C)।
1 C = 3 x 109 esu বা স্ট্যাটকুলম্ব
তড়িৎ আধান কী ধরণের রাশিঃ স্কেলার রাশি
তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা EMF।
তড়িচ্চালক বল এবং তড়িৎচালক বলের উৎস হিসেবে তড়িৎ কোষ (Electromotive force and electric cell as a source of EMF)।
কোনাে স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে হলে যেমন বল প্রয়ােগ করতে হয়, তেমনই কোনাে পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহমাত্রা সৃষ্টি করার জন্য বা প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি বলের প্রয়ােজনীয়তার কথা ভাবা যায়। একেই বলা হয় তড়িৎচালক বল (electromotive force) বা সংক্ষেপে EMF।
একথা মনে রাখা আবশ্যক যে, ভিন্ন বিভবযুক্ত দুটি বস্তুকে একটি পরিবাহী দ্বারা যুক্ত করলে উচ্চ বিভবযুক্ত বস্তু থেকে নিম্ন বিভবযুক্ত বস্তুতে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয়ে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার সৃষ্টি করবে। সুতরাং, বিভব পার্থক্যের কারণে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। কাজেই তড়িচ্চালক বল কে নিম্নলিখিতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়—
তড়িৎচালক বলের সংজ্ঞাঃ যার প্রভাবে বা যে কারণে তড়িৎ বর্তনীর কোনাে অংশে রাসায়নিক শক্তি বা অন্য কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় তড়িচ্চালক বল (EMF)।
তড়িচ্চালক বলের এককঃ তড়িচ্চালক বলের SI এবং ব্যবহারিক একক ভােল্ট(Volt)।
তড়িচ্চালক বল কোন ধরনের রাশিঃ এটি একটি স্কেলার রাশি।
তড়িচ্চালক বলের মাত্রাঃ তড়িৎচালক বলকে গাণিতিক ভাবে SI পদ্ধতিতে জুল/কুলম্ব বলা যেতে পারে। অর্থাৎ তড়িৎচালক বলের মাত্রা হবে [কার্যের মাত্রা]/[আধাানের মাত্রা] = [ML2T-2]/[IT]=[ML2T-3I-1]
তড়িৎচালক বলের উৎসঃ তড়িৎচালক বলের উৎস হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে কোনাে না কোনাে প্রকার শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ডায়নামাে, তাপযুগ্ম, তড়িৎ কোশ, আলোক-তড়িৎ কোশ প্রভৃতি হল তড়িচ্চালক বলের উৎস।
তড়িচ্চালক বল মাপার যন্ত্রঃ পোটেনশিওমিটার ।
কার্য করার জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তির উৎস হিসেবে তড়িৎকোশঃ
সচল যন্ত্রাংশবিহীন তড়িৎ উৎসই হল তড়িৎকোশ। তড়িৎকোশ রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে বর্তনীতে স্থায়ী তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করে।
বিচ্ছিন্ন বা মুক্ত অবস্থায় কোনাে তড়িৎকোশের তড়িদ্দার দুটির মধ্যে যে বিভবপার্থক্যের সৃষ্টি হয় তাকেই বলা হয় কোশটির তড়িৎচ্চালক বল। একটি সরল ভােল্টীয় কোশের তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.08 ভােল্ট,একটি নির্জল কোশ (Dry cell)-এর তড়িৎচালক বলের মান হয় 1.5 ভােল্ট।
কোনাে কোষের তড়িচ্চালক বল 1.5 ভোল্ট বলতে বােঝায় যে, কোষের ধনাত্মক মেরু থেকে ঋণাত্মক মেরুতে 1 কুলম্ব তড়িদাধান নিয়ে যেতে কৃতকার্যের পরিমাণ হয় 1.5 জুল।