উত্তর:
বিশুদ্ধ বরফের উষ্ণতা 0°C। কিন্তু বরফ ও নুন 3:1 ওজন অনুপাতে মেশালে উৎপন্ন মিশ্রণের উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে হয় প্রায় –23°C। এই নিম্ন উষ্ণতায় ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অণুজীব বেঁচে থাকতে পারে না বলে এই মিশ্রণের সাহায্যে মাছ-মাংস ইত্যাদি দীর্ঘ সময়ের জন্য অবিকৃত রাখা সম্ভব। এই কারণেই এক্ষেত্রে নুন-মেশানো বরফ ব্যবহার করা হয়।
থার্মোফ্লাস্কের দুই দেয়ালের অভ্যন্তর বায়ুশূন্য ও চকচকে করা হয় কেন?
- কাচ তাপের কুপরিবাহী এবং কাচপাত্র ও ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যবর্তী স্থান নরম কুপরিবাহী দিয়ে পৃথক থাকার ফলে এবং পাত্রের মুখে থাকা কর্কের ছিপিও অন্তরক পদার্থ হওয়ায়, পরিবহণ পদ্ধতিতে বাইরের বায়ুর সঙ্গে ফ্লাস্কে রাখা তরলের তাপীয় আদানপ্রদান ঘটতে পারে না।
- আবার কাচপাত্রের দুটি দেয়াল প্রায় বায়ুশূন্য থাকায় পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ ভিতরে যেতে বা ভিতর থেকে বাইরে আসতে পারে না।
- কাচের দেয়াল দুটির মুখোমুখি অংশ পারদ বা রূপোর প্রলেপ লাগিয়ে চকচকে করা হয়। ফলে, বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ স্যালন ঘটার সময় মসৃণ পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলিত হয়ে যায়, ফলে এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনও ব্যাহত হয়।
সুতরাং, সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়াই কার্যকরী হওয়ার সুযোগ না থাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য ফ্লাস্কের অভ্যন্তর এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে তাপের গ্রহণ ও বর্জন ঘটে না। ফলে, উষ্ণতাও অপরিবর্তিত থাকে।
বাল্ব জ্বালালে সবদিকেই কি তার তাপ ছড়িয়ে যায়? এখানে কোন্ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে?
উত্তর:
বাল্ব জ্বালালে সবদিকেই তার তাপ ছড়িয়ে যায়।
এক্ষেত্রে বিকিরণ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে। পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হবে না। কারণ — বায়ু তাপের কুপরিবাহী। এই তাপ সঞ্চালন পরিচলন পদ্ধতিতেও হবে না। কারণ, এক্ষেত্রে একই সঙ্গে সবদিকেই তাপ পরিবাহিত হয়। কিন্তু পরিচলন পদ্ধতিতে কেবলমাত্র উপরের দিকে তাপ পরিবাহিত হয়।
জলচর প্রাণীরা গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে জলের কোন্ স্তরে থাকতে আরাম বোধ করে? জলের ওপরের স্তরে নাকি নীচের স্তরে?
উত্তর:
যে সমস্ত প্রাণীরা জলে থাকে তারা গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে অর্থাৎ, সবসময়ই জলের নীচের স্তরে থাকতে আরাম বোধ করে। কারণ— জল তাপের কুপরিবাহী বলে গ্রীষ্মকালে পরিবেশের প্রচণ্ড তাপে জলের উপরিভাগ গরম হয়ে গেলেও সেই তাপ জলের নীচের স্তর অবধি পৌঁছোয় না। আবার, শীতকালে উপরিভাগের জল তাপ বর্জন করে ঠান্ডা হয়ে গেলেও জলের নীচের স্তর জলের উপরিস্তর পেরিয়ে তাপ বর্জন করতে পারে না। তাই জলের নীচের স্তর গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা এবং শীতকালে গরম থাকে। তাই জলচর প্রাণীরা শীতল রক্তবিশিষ্ট হওয়ায় সবসময়ই জলের নীচের স্তরে থাকে।
ফুটন্ত জলের মধ্যে একটি কাঠের স্কেল ডুবিয়ে দেওয়া হল। (i) বেশ কিছুক্ষণ পর ওই কাঠের স্কেলের যে দিকটা জল থেকে বেরিয়ে আছে সেই দিকটা হাত দিয়ে ধরতে পারা যাবে কি? (ii) ওই ফুটন্ত জলে একটি স্টিলের চামচের একপ্রান্ত ডোবালে কিছুক্ষণ পর অন্যপ্রান্তটি ধরে থাকা যাবে কি? তোমার উত্তর দুটির কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
(i) প্রথম ক্ষেত্রে, কাঠের স্কেলের জল থেকে বেরিয়ে আসা দিকটি হাত দিয়ে ধরা যাবে।
(ii) দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, স্টিলের চামচটির অন্যপ্রান্ত হাত দিয়ে ধরা যাবে না।
কারণ— প্রথম ক্ষেত্রে কাঠের স্কেলের উষ্ণপ্রান্ত থেকে কম উষ্ণতর প্রান্তে খুব কম তাপ প্রবাহিত হয়েছে। তাই অন্যপ্রান্তটি হাত দিয়ে ধরা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু স্টিলের চামচের ক্ষেত্রে বেশি উষ্ণতর প্রান্ত থেকে কম উষ্ণতর প্রান্তে অনেক বেশি তাপ প্রবাহিত হয়েছে। ফলে, কম উষ্ণতর প্রান্তটিও উষ্ণ হয়ে গেছে। তাই স্টিলের চামচটির অন্যপ্রান্ত ধরে থাকা যায়নি। অর্থাৎ, কাঠের মধ্যে দিয়ে তাপ সহজে প্রবাহিত না হলেও স্টিলের মধ্যে দিয়ে হয়।
একটি দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের ধারণা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
শীতকালে জ্বলন্ত উনুনের পাশে দাঁড়ালে বা উনুন থেকে সামান্য দূরে হাত রাখলে দেহ বা হাত উত্তপ্ত হয়। উনুনের আগুনের শিখার যে-কোনো একপাশে শিখা থেকে সামান্য দুরে দেশলাই কাঠির বারুদযুক্ত অংশটি ধরলে কিছু সময় পর সেটি জ্বলে ওঠে। এক্ষেত্রে বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে তাপ পরিবহণ পদ্ধতিতে হাত বা দেশলাই কাঠিতে আসতে পারে না।
আবার বায়ুর যে অংশ জ্বলন্ত উনুনের উপর আছে, সেই বায়ু উয় ও হালকা হয়ে আরও উপরের দিকে ওঠে এবং সাময়িকভাবে সৃষ্ট শূন্যস্থান করতে পার্শ্ববর্তী স্থানের শীতল ও ভারীপূরণ বায়ু উনুনের দিকে ছুটে আসে। সুতরাং, পরিচলন পদ্ধতিতেও হাত বা দেশলাই কাঠিতে তাপ স্থানান্তরিত হয় না।
তাই, অনুমান করা যায় উনুন ও ব্যক্তির মাঝে থাকা মাধ্যমে সাহায্য ছাড়াই বা তাকে কোনোভাবে প্রভাবিত না করেই এক্ষেত্রে তাপ উন্নতর থেকে শীতলতর বস্তুতে সঞ্চালিত হতে সক্ষম হয়েছে। তাপীয় আদানপ্রদানের এই পদ্ধতিকে বলা হয় বিকিরণ।
জেনে রাখা ভালো : বিকীর্ণ তাপ আলোর মতোই একপ্রকার তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ। এদের মধ্যে পার্থক্য শুধুমাত্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য (দৃশ্যমান আলো : 4000Å - 7000Å , বিকীর্ণ তাপ : 8000Å - 10000Å) । আলো আমাদের চোখে দর্শন অনুভূতি সৃষ্টি করে, অন্যদিকে বিকীর্ণ তাপের প্রভাবে আমাদের শরীর উত্তপ্ত হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন