এই ব্লগটি সন্ধান করুন

মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০২০

ইনজেকশন দেওয়ার সময় হাওয়া ঢুকে গেলে কী সমস্যা হয়?


 ইনজেকশান বা স্যালাইন নেওয়ার সময়ে ওষুধের সাথে সাথে, রক্তের মধ্যে হাওয়া, বুদবুদের আকারে ঢুকে যেতে পারে। খুব কম পরিমাণ হাওয়া ঢুকলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

কিন্তু বড়ো আকারের হাওয়ার বুদবুদ ঢুকে গেলে, ভয়ের কারণ হতেও পারে।

এবার দেখা যাক, "বড়ো আকার" মানে কতো বড়ো। সেটাও নির্ভর করে কোন ধরণের রক্তনালীতে হাওয়া ঢুকছে।

আমাদের শরীরে সাধারণত দুই ধরণের রক্তনালী আছে।ধমনী(Artery) ও শিরা(Vein)। ধমনীর সাধারণ সংজ্ঞা হলো, যে রক্তবাহী নালী দিয়ে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে তাকে ধমনী(Artery) বলে । অন্যদিকে যে রক্তবাহী নালী দিয়ে সারা শরীর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত বাহিত হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায়(আবার শুদ্ধ হয়ে অক্সিজেন সমৃদ্ধ হওয়ার জন্যে) তাকে শিরা(Vein) বলে ।

শিরা আর ধমনীর গঠনগত পার্থক্যও আছে। কার্যগত এবং গঠনগত পার্থক্যের জন্যে হাওয়ার বুদবুদ ধমনী বা শিরাতে প্রবেশ করলে আলাদা আলাদা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এবার ধরা যাক হাওয়ার বুদবুদের আকার "খুব" বড়ো। মানে বুদবুদটি রক্তবাহী নালী রুদ্ধ বা ব্লক করে দিতে পারে, যেটা কখনোই কাম্য নয়। নিচের ছবিটা লক্ষ্য করুন।


দেখে আন্দাজ করাই যায়, বুদবুদ যদি এতটাই বড়ো হয়, যেটা সাধারণ রক্ত চলাচল ব্যাহত করে তাহলে সেটা প্রাণঘাতি হতেও পারে। আর এই বুদবুদের কারণে রক্তবাহ বন্ধ হওয়ার ঘটনা কে মেডিকেল টার্মে Air Embolism বা Gas Embolism বলা হয়।

যদি বুদবুদের আকার ছোটো হয় তাহলে বুদবুদ পুরো রক্তনালী( শিরা হোক বা ধমনী) বন্ধ করতে পারেনা, এবং কোনো সমস্যা হওয়ার কথাও না।

এখানে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার। শিরা বা ধমনীর ভেতরের ব্যাস শরীরের একেক জায়গায় একেক রকম।

মানে বুদবুদ শরীরের এক অংশে "ছোটো" হলেও হয়তো অন্য অংশে গিয়ে সেখানে ব্লকেজ করতে পারে। সে ক্ষেত্রেও embolism ঘটতে পারে।

তাহলে কি Embolism হলেই মৃত্যু অনিবার্য?

এর ছোটো উত্তর হলো, "না"। বড়ো উত্তর এরকম।

ধরা যাক, হাতের নালীতে ইনজেকশন দেওয়ার সময় "বড়ো" আকারের বুদবুদ চলে গেলো রক্তের মধ্যে, এবং সেটা হাতের মধ্যেই Embolism সৃষ্টি করলো। মানে হাতের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো। আপনি কি মরে যাবেন? কখনোই না, হয় তো হাত অসাড় হয়ে যাবে কিছুক্ষণের জন্যে। হাওয়ার বুদবুদ বের করে নিলেই আবার হাত সুস্থ হয়ে যাবে।

Photo of Injection

এবার ধরা যাক, কোনোভাবে এই বুদবুদ শরীরের সেই অঙ্গগুলোতে পৌঁছলো যেখানে এক মিনিটের জন্যে রক্ত না গেলে প্রাণ সংশয় হতে পারে। যেমন ধরা যাক, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড বা কিডনি। যেহেতু এই সমস্ত অঙ্গগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল তাই এগুলোতে Air বা Gas Embolism হলে মানুষের মৃত্যু ঘটতেই পারে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের রক্তসংহনতন্ত্রের মধ্যে দুই-তিন মিলিলিটার আকারের হাওয়ার বুদবুদ প্রাণঘাতি হতে পারে। ফুসফুসীয় শিরাতে 0.৫ থেকে এক মিলি মিললিটার আকারের হাওয়ার বুদবুদ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে, যেটা মৃত্যুর কারণ ও হতে পারে।

বুদবুদের আকারের ধারণা দেওয়ার জন্যে উপরে একটি অতি প্রচলিত ৩ মিলিলিটার সিরিঞ্জের ছবি দেওয়া হলো।

সমীক্ষায় দেখা গেছে শতকরা ৫৭ ভাগ হাড়ের সার্জন (Orthopedic surgeon) ছোটো বা বড়ো Air Embolism এর ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। যারা স্কুবা ডাইভিং করে থাকেন, তাদের মধ্যে এই Air বা Gas Embolism এর ঘটনা সব থেকে বেশি লক্ষ্য করা যায়।


এই ধরণের আরও অনেক কিছু জানতে পড়তে থাকুন আমাদের ব্লগ সহজ পাঠ । 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts