এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

মাছ সংরক্ষণের জন্য বিশুদ্ধ বরফ না দিয়ে নুন-মেশানো বরফ দেওয়া হয় কেন?

উত্তর:
বিশুদ্ধ বরফের উষ্ণতা 0°C। কিন্তু বরফ ও নুন 3:1 ওজন অনুপাতে মেশালে উৎপন্ন মিশ্রণের উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে হয় প্রায় –23°C। এই নিম্ন উষ্ণতায় ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য অণুজীব বেঁচে থাকতে পারে না বলে এই মিশ্রণের সাহায্যে মাছ-মাংস ইত্যাদি দীর্ঘ সময়ের জন্য অবিকৃত রাখা সম্ভব। এই কারণেই এক্ষেত্রে নুন-মেশানো বরফ ব্যবহার করা হয়।

থার্মোফ্লাস্কের দুই দেয়ালের অভ্যন্তর বায়ুশূন্য ও চকচকে করা হয় কেন?

থার্মোফ্লাস্কের দুই দেয়ালের অভ্যন্তর বায়ুশূন্য ও চকচকে করা হয়- কারণ,
  • কাচ তাপের কুপরিবাহী এবং কাচপাত্র ও ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যবর্তী স্থান নরম কুপরিবাহী দিয়ে পৃথক থাকার ফলে এবং পাত্রের মুখে থাকা কর্কের ছিপিও অন্তরক পদার্থ হওয়ায়, পরিবহণ পদ্ধতিতে বাইরের বায়ুর সঙ্গে ফ্লাস্কে রাখা তরলের তাপীয় আদানপ্রদান ঘটতে পারে না।
  • আবার কাচপাত্রের দুটি দেয়াল প্রায় বায়ুশূন্য থাকায় পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ ভিতরে যেতে বা ভিতর থেকে বাইরে আসতে পারে না।
  • কাচের দেয়াল দুটির মুখোমুখি অংশ পারদ বা রূপোর প্রলেপ লাগিয়ে চকচকে করা হয়। ফলে, বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ স্যালন ঘটার সময় মসৃণ পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলিত হয়ে যায়, ফলে এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনও ব্যাহত হয়।

সুতরাং, সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়াই কার্যকরী হওয়ার সুযোগ না থাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য ফ্লাস্কের অভ্যন্তর এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে তাপের গ্রহণ ও বর্জন ঘটে না। ফলে, উষ্ণতাও অপরিবর্তিত থাকে।


বাল্ব জ্বালালে সবদিকেই কি তার তাপ ছড়িয়ে যায়? এখানে কোন্ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে?

উত্তর:
বাল্ব জ্বালালে সবদিকেই তার তাপ ছড়িয়ে যায়।
এক্ষেত্রে বিকিরণ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে। পরিবহণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হবে না। কারণ — বায়ু তাপের কুপরিবাহী। এই তাপ সঞ্চালন পরিচলন পদ্ধতিতেও হবে না। কারণ, এক্ষেত্রে একই সঙ্গে সবদিকেই তাপ পরিবাহিত হয়। কিন্তু পরিচলন পদ্ধতিতে কেবলমাত্র উপরের দিকে তাপ পরিবাহিত হয়।


জলচর প্রাণীরা গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে জলের কোন্ স্তরে থাকতে আরাম বোধ করে? জলের ওপরের স্তরে নাকি নীচের স্তরে?

উত্তর:

যে সমস্ত প্রাণীরা জলে থাকে তারা গ্রীষ্মকালে এবং শীতকালে অর্থাৎ, সবসময়ই জলের নীচের স্তরে থাকতে আরাম বোধ করে। কারণ— জল তাপের কুপরিবাহী বলে গ্রীষ্মকালে পরিবেশের প্রচণ্ড তাপে জলের উপরিভাগ গরম হয়ে গেলেও সেই তাপ জলের নীচের স্তর অবধি পৌঁছোয় না। আবার, শীতকালে উপরিভাগের জল তাপ বর্জন করে ঠান্ডা হয়ে গেলেও জলের নীচের স্তর জলের উপরিস্তর পেরিয়ে তাপ বর্জন করতে পারে না। তাই জলের নীচের স্তর গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা এবং শীতকালে গরম থাকে। তাই জলচর প্রাণীরা শীতল রক্তবিশিষ্ট হওয়ায় সবসময়ই জলের নীচের স্তরে থাকে।


ফুটন্ত জলের মধ্যে একটি কাঠের স্কেল ডুবিয়ে দেওয়া হল। (i) বেশ কিছুক্ষণ পর ওই কাঠের স্কেলের যে দিকটা জল থেকে বেরিয়ে আছে সেই দিকটা হাত দিয়ে ধরতে পারা যাবে কি? (ii) ওই ফুটন্ত জলে একটি স্টিলের চামচের একপ্রান্ত ডোবালে কিছুক্ষণ পর অন্যপ্রান্তটি ধরে থাকা যাবে কি? তোমার উত্তর দুটির কারণ ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর:

(i) প্রথম ক্ষেত্রে, কাঠের স্কেলের জল থেকে বেরিয়ে আসা দিকটি হাত দিয়ে ধরা যাবে।

তাপের পরিবাহীতা

(ii) দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, স্টিলের চামচটির অন্যপ্রান্ত হাত দিয়ে ধরা যাবে না। 

কারণ— প্রথম ক্ষেত্রে কাঠের স্কেলের উষ্ণপ্রান্ত থেকে কম উষ্ণতর প্রান্তে খুব কম তাপ প্রবাহিত হয়েছে। তাই অন্যপ্রান্তটি হাত দিয়ে ধরা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু স্টিলের চামচের ক্ষেত্রে বেশি উষ্ণতর প্রান্ত থেকে কম উষ্ণতর প্রান্তে অনেক বেশি তাপ প্রবাহিত হয়েছে। ফলে, কম উষ্ণতর প্রান্তটিও উষ্ণ হয়ে গেছে। তাই স্টিলের চামচটির অন্যপ্রান্ত ধরে থাকা যায়নি। অর্থাৎ, কাঠের মধ্যে দিয়ে তাপ সহজে প্রবাহিত না হলেও স্টিলের মধ্যে দিয়ে হয়।


একটি দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের ধারণা ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর:

শীতকালে জ্বলন্ত উনুনের পাশে দাঁড়ালে বা উনুন থেকে সামান্য দূরে হাত রাখলে দেহ বা হাত উত্তপ্ত হয়। উনুনের আগুনের শিখার যে-কোনো একপাশে শিখা থেকে সামান্য দুরে দেশলাই কাঠির বারুদযুক্ত অংশটি ধরলে কিছু সময় পর সেটি জ্বলে ওঠে। এক্ষেত্রে বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে তাপ পরিবহণ পদ্ধতিতে হাত বা দেশলাই কাঠিতে আসতে পারে না।

আবার বায়ুর যে অংশ জ্বলন্ত উনুনের উপর আছে, সেই বায়ু উয় ও হালকা হয়ে আরও উপরের দিকে ওঠে এবং সাময়িকভাবে সৃষ্ট শূন্যস্থান করতে পার্শ্ববর্তী স্থানের শীতল ও ভারীপূরণ বায়ু উনুনের দিকে ছুটে আসে। সুতরাং, পরিচলন পদ্ধতিতেও হাত বা দেশলাই কাঠিতে তাপ স্থানান্তরিত হয় না।

আগুনের পাশে হাত
তাই, অনুমান করা যায় উনুন ও ব্যক্তির মাঝে থাকা মাধ্যমে সাহায্য ছাড়াই বা তাকে কোনোভাবে প্রভাবিত না করেই এক্ষেত্রে তাপ উন্নতর থেকে শীতলতর বস্তুতে সঞ্চালিত হতে সক্ষম হয়েছে। তাপীয় আদানপ্রদানের এই পদ্ধতিকে বলা হয় বিকিরণ।


জেনে রাখা ভালো : বিকীর্ণ তাপ আলোর মতোই একপ্রকার তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ। এদের মধ্যে পার্থক্য শুধুমাত্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য (দৃশ্যমান আলো : 4000Å - 7000Å , বিকীর্ণ তাপ : 8000Å - 10000Å) । আলো আমাদের চোখে দর্শন অনুভূতি সৃষ্টি করে, অন্যদিকে বিকীর্ণ তাপের প্রভাবে আমাদের শরীর উত্তপ্ত হয়।

সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১

থার্মোফ্লাস্কের(Thermoflask) গঠন ও কার্যনীতি চিত্রসহ বর্ণনা করো।

উত্তর:

থার্মোফ্লাস্ক (Thermoflask) একটি যন্ত্রব্যবস্থা, যার দ্বারা কোনো তরল পদার্থের উষ্ণতা দীর্ঘসময়ের জন্য অপরিবর্তিত রাখা যায়।

বিশেষভাবে নির্মিত এই চোঙাকৃতি পাত্রে রাখা উষ্ণ বা শীতল তরল দীর্ঘসময়ের জন্য উষ্ণ বা শীতল থাকে। আবিষ্কারক ইংরেজ বিজ্ঞানী জেমস্ ডিওয়ারের নাম অনুসারে একে অনেকসময় ডিওয়ার ফ্লাস্কও বলা হয়।


গঠন:
  • এটি একটি দুই দেয়ালবিশিষ্ট কাচের পাত্র, যাদের মধ্যবর্তী স্থান প্রায় বায়ুশূন্য।
  • ভিতরের দেয়ালের বাইরের দিকে এবং বাইরের দেয়ালের ভিতর দিকে রুপো বা পারদের প্রলেপ দেওয়া থাকে এবং তলগুলি ভালো করে পালিশ করে মসৃণ করা হয়।
  • ফ্লাস্কের সরু মুখ কর্কের তৈরি ছিপি দিয়ে বন্ধ করা হয়। কাচপাত্র ভঙ্গুর হওয়ায় সুরক্ষা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, সেটি একটি স্প্রিং-এর ওপর বসিয়ে একটি ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যে রাখা হয়।
  • বহিরাবরণ ও কাচপাত্রের মধ্যবর্তী অংশ শোলা, ফেল্ট বা তুলা ইত্যাদি নরম কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে পূর্ণ করা থাকে।
  • একটি প্যাঁচযুক্ত প্লাস্টিকের ঢাকনার সাহায্যে পাত্রের ওপরের অংশ ঢেকে রাখা হয়।





কার্যনীতি:
  • কাচ তাপের কুপরিবাহী এবং কাচপাত্র ও ধাতব বা প্লাস্টিক আবরণের মধ্যবর্তী স্থান নরম কুপরিবাহী দিয়ে পৃথক থাকার ফলে এবং পাত্রের মুখে থাকা কর্কের ছিপিও অন্তরক পদার্থ হওয়ায়, পরিবহণ পদ্ধতিতে বাইরের বায়ুর সঙ্গে ফ্লাস্কে রাখা তরলের তাপীয় আদানপ্রদান ঘটতে পারে না।
  • আবার কাচপাত্রের দুটি দেয়াল প্রায় বায়ুশূন্য থাকায় পরিবহণ ও পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ ভিতরে যেতে বা ভিতর থেকে বাইরে আসতে পারে না।
  • কাচের দেয়াল দুটির মুখোমুখি অংশ পারদ বা রূপোর প্রলেপ লাগিয়ে চকচকে করা হয়। ফলে, বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ স্যালন ঘটার সময় মসৃণ পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলিত হয়ে যায়, ফলে এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনও ব্যাহত হয়।

সুতরাং, সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়াই কার্যকরী হওয়ার সুযোগ না থাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য ফ্লাস্কের অভ্যন্তর এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে তাপের গ্রহণ ও বর্জন ঘটে না। ফলে, উষ্ণতাও অপরিবর্তিত থাকে।

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

বাড়ি বানানোর উপাদানগুলি তাপের কুপরিবাহী হওয়ার দরকার কেন?

উত্তর:

বাড়ি বানানোর উপাদানগুলি তাপের কুপরিবাহী হওয়া দরকার। কারণ— উপাদানগুলি তাপের কুপরিবাহী হলে শীতকালে ঘরের ভিতর থেকে তাপ বাইরে যেতে পারবে না, ফলে ঘর গরম থাকবে আবার গ্রীষ্মকালে বাইরের তাপ ঘরের ভিতরে আসতে পারবে না। ফলে, ঘর ঠান্ডা থাকবে। একই কারণে খড়ের চালওয়ালা মাটির বাড়ি গ্রীষ্মকালে যেমন ঠান্ডা শীতকালে তেমন গরম থাকে।

শীতকালে পাখিরা কখনো কখনো পালক ফুলিয়ে বসে থাকে কেন?

উত্তর:

পালক ফুলিয়ে বসলে ঢুকে যায়। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে দেহের তাপ বাইরে যেতে পারে না, বা বাইরের ঠান্ডা বায়ু ভিতরে আসতে পারে না। ফলে, দেহ গরম থাকে। তাই, শীতকালে পাখিরা পালক ফুলিয়ে বসে থাকে।

পাখি
ইগলু কী? এটি বরফ দিয়ে তৈরি করা হয় কেন ?

উত্তর:
গ্রিনল্যান্ডের থুলে অঞ্চলে এস্কিমোদের বাসস্থানকে ইগলু (Igloo) বলে।
ইগলু বরফ দিয়ে তৈরি করা হয়, কারণ— বরফ তাপের কুপরিবাহী এবং ওই অঞ্চলে সহজলভ্য। তাই বরফের মধ্যে দিয়ে তাপ চলাচল করে না এবং ইগলুর ভিতরটা গরম থাকে। ফলে ওই শীতল অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রচণ্ড ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পায়।
Igloo

তোমার কাছে গরম খাবার অনেকক্ষণ ধরে গরম রাখার পাত্র (যেমন— ফ্লাস্ক) নেই। অথচ কোনো গরম খাবার তোমাকে অনেকক্ষণ গরম রাখতে হবে। তুমি কী কী করবে? কেন করবে?

উত্তর:

দুই খণ্ড মোটা কাগজের টুকরোর মধ্যবর্তী অংশ শুকনো কাপড়, তুলো (ফেল্ট) বা পশম জাতীয় পদার্থ দ্বারা পূর্ণ করে একটি তাপরোধী মোড়ক তৈরি করে তার মধ্যে গরম খাবার রাখলে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য গরম থাকবে।

কারণ—কাগজ ও তুলো সহজলভ্য এবং তাপের কুপরিবাহী পদার্থ। দুটি কাগজখণ্ডের মাঝে তুলো থাকায় তার মধ্যে আবদ্ধ বায়ুও একটি কুপরিবাহী আস্তরণ গঠন করে, সুতরাং এই ব্যবস্থা অবলম্বন করলে পরিবহণ, পরিচলন ও বিকিরণ পদ্ধতিতে গরম খাদ্যবস্তু থেকে পরিবেশে তাপ সঞ্চালন হয় না। সুতরাং, ব্যবস্থাটি একটি থার্মোফ্লাস্কের মতো আচরণ করে এবং খাদ্যবস্তু দীর্ঘসময় পর্যন্ত গরম থাকে।

তুমি যে বাড়িতে থাকো তার দেয়ালগুলি ও ছাদ যদি টিনের হত, তবে কী কী সুবিধা হত আর কী কী অসুবিধা হত?

উত্তর:

সুবিধা: 
১। বাড়ির দেয়াল ও ছাদ টিনের হলে সহজেই খুব কম খরচে বাড়ি তৈরি করা যেত।
২। টিন অপেক্ষাকৃত কম সক্রিয় ধাতু হওয়ায় বায়ুর অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্পের সঙ্গে সহজে বিক্রিয়া করে না, ফলে মরচে পড়া বা প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

অসুবিধা: টিনের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা যথেষ্ট বেশি হওয়ায় গ্রীষ্মকালে বাইরের বায়ু থেকে তাপ দ্রুত ও অধিক পরিমাণে ঘরে প্রবেশ করে এবং শীতকালে ঘরের ভিতরের আবদ্ধ বায়ু থেকে তাপ দ্রুত বাইরে পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ, গ্রীষ্মকালে ঘর প্রচণ্ড গরম এবং শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়ে যাবে।

শীতকালে বদ্ধঘরে হ্যারিকেন বা আগুন জ্বালিয়ে শোয়া বিপজ্জনক কেন?

উত্তর:
হ্যারিকেন বা আগুন জ্বালালে কেরোসিন বা কয়লার দহনে কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসও তৈরি হয়। শীতকালে দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় বদ্ধঘরে অক্সিজেন চলাচলও করতে পারে না। ফলে, বিষাক্ত গ্যাসগুলির পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরের বাসিন্দাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই শীতকালে বদ্ধঘরে হ্যারিকেন বা আগুন জ্বালিয়ে শোয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক।

জ্বলন্ত উনুনের পাশের দিকে হাত রাখলে যত গরম লাগে উনুনের উপরের দিকে হাত রাখলে অনেক বেশি গরম লাগে। কেন এমন হয় বলো?

উত্তর:
জ্বলন্ত উনুনের উপরের দিকে যে বায়ুর স্তর থাকে, তা উনুনের তাপে উত্তপ্ত হয় ও আয়তনে প্রসারিত হয়। ফলে ওই বায়ুর ঘনত্ব কমে যায় ও বায়ু হালকা হয়। এই গরম ও হালকা বায়ু উপরে উঠে গেলে উপরের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ও ভারী বায়ু উনুনের পাশ দিয়ে পৃথিবীর টানে নীচে নেমে আসে। তাই জ্বলন্ত উনুনের পাশে হাত রাখলে যত গরম লাগে উনুনের উপরের দিকে হাত রাখলে তার চেয়ে অনেক বেশি গরম লাগে।

 

শীতকালে আমরা উলের তৈরি পোশাক পরি কেন?

উত্তর:

উলের পোশাকে সুতোর মাঝে মাঝে বায়ু আটকে থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে, দেহ থেকে তাপ বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে না বা বাইরের ঠান্ডা বায়ু দেহে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে, দেহ গরম থাকে। একারণে, শীতকালে আমরা উলের পোশাক পরি।


শীতকালে হাতি গায়ে ধুলো মাখে কেন?

উত্তর:

হাতি গায়ে ধুলো মাখলে তার গা ও ধুলোর মাঝে একটি বায়ুস্তর তৈরি হয়। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে দেহ থেকে বেরিয়ে আসা তাপ বায়ুর স্তর ভেদ করে বাইরে যেতে পারে না। ফলে হাতির আরাম লাগে। একারণে শীতকালে হাতি গায়ে ধুলো মাখে।


বরফ যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন বরফের গায়ে কাঠের গুঁড়ো মাখানো হয় কেন? বা চট জড়িয়ে দেওয়া হয় কেন?

উত্তর:

বরফের গায়ে কাঠের গুঁড়ো মাখালে বা চট জড়িয়ে দিলে কাঠের গুঁড়োর ফাকে ফাকে বা চটের সুতোর ফাকে ফাকে বায়ু ঢুকে যায়। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে বাইরে থেকে তাপ বরফে ঢুকতে পারে না, তাই বরফ গলে যায় না। একারণে বরফ যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন বরফের গায়ে কাঠের গুঁড়ো মাখানো হয় বা চট জড়িয়ে দেওয়া হয়।



শীতকালে সুতোর তৈরি একটি মোটা জামা পরলে গরম লাগে। কিন্তু, তার বদলে একই ধরনের সুতো দিয়ে তৈরি দুটি পাতলা জামা পরলে আরও বেশি গরম লাগে কেন?
উত্তর:

সুতোর তৈরি একটি মোটা জামা পরলে সুতোর ফাঁকে ফাকে যে পরিমাণ বায়ু আটকে থাকে, তার বদলে এই ধরনের সুতো দিয়ে তৈরি দুটি পাতলা জামা পরলে আরো বেশি পরিমাণ বায়ু আটকে থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে যত বেশি বায়ু আটকে থাকবে, দেহ থেকে তত কম তাপ বেরিয়ে আসতে পারবে। আবার দেহ থেকে যত কম তাপ বেরোবে দেহ তত গরম থাকবে। তাই শীতকালে একটি জামার পরিবর্তে দুটি জামা পরলে বেশি গরম লাগে।


দুধ গরম করলে উথলে ওঠে কেন?

উত্তর। উষ্ণতা বৃদ্ধিতে কঠিন পদার্থের আয়তনের তুলনায় তরল পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি বেশি হয়। দুধ গরম করার সময় দুধের ওপর তৈলাক্ত পদার্থের সর পড়ে। এই সর ভেদ করে জলীয়বাষ্প বাইরে আসতে পারে না, ফলে দুধ উথলে ওঠে।



ভৌত ধর্ম ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে কোন্ ধর্ম দ্বারা পদার্থের শনাক্তকরণ অধিক গ্রহণযোগ্য ও কেন?

উত্তর । ভৌত ধর্ম দ্বারা কোনো পদার্থের শনাক্তকরণে তা অপচয় বা নষ্ট হয় না কিন্তু এই ধর্মের সাহায্যে পদার্থকে আংশিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। অন্যদিকে, রাসায়নিক ধর্ম দ্বারা কোনো পদার্থের শনাক্তকরণে পদার্থের পরিবর্তন ঘটে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই ধর্মের সাহায্যে পদার্থের গঠন সংক্রান্ত ধারণা পাওয়া যায় যা পদার্থকে নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। তাই, ভৌত ধর্ম ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে রাসায়নিক ধর্ম দ্বারা পদার্থের শনাক্তকরণ অধিক গ্রহণযোগ্য৷


পুকুরের জলে একটি গাছের কী ধরনের প্রতিবিম্ব গঠিত হয়?

উত্তর | জলাশয়ের উপরিতল সমতল দর্পণের মতো আচরণ করে, তাই গাছ থেকে আগত রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে প্রতিবিম্ব গঠন করে। যেহেতু সমতল দর্পণে গঠিত প্রতিবিম্ব অসদ্ ও সমশীর্ষ হয়, তাই এক্ষেত্রেও গঠিত প্রতিবিম্ব অসদ্ ও সমশীর্ষ হবে।


বস্তুর দূরত্ব ও প্রতিবিম্বের দূরত্ব সমান হওয়াকে ব্যবহার করে প্রতিবিম্ব আঁকলে প্রতিবিম্ব আঁকা কখনও শেষ হবে কি?

উত্তর। এক্ষেত্রে গঠিত প্রতিবিম্বের সংখ্যা অসীম। তাই, বস্তু দূরত্ব = প্রতিবিম্ব দূরত্ব এই সম্পর্ক ব্যবহার করে প্রতিবিম্ব আঁকতে থাকলে প্রতিবিম্ব আঁকা কখনোই শেষ হবে না।

অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের শর্তগুলি বিবৃত করো।

উত্তর। অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের শর্ত প্রধানত দুটি। যথা—

১। আলোকরশ্মিকে অবশ্যই ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমের দিকে এসে দুই মাধ্যমের বিভেদতলে আপতিত হতে হবে।

২। নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর ক্ষেত্রে ঘন মাধ্যমে আপতন কোণের মান মাধ্যমদ্বয়ের সংকট কোণ অপেক্ষা বেশি হতে হবে।

অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন না ঘটলে আমরা কী কী দেখতে পেতাম না?

অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন না ঘটলে আলো সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে দেখা যেত না। যেমন — মরু অঞ্চলে ও শীতকালীন দেশে মরীচিকা, রত্ন হিসেবে হীরকের ঔজ্জ্বল্য, কচুপাতার উপর অবস্থিত জলের ফোঁটা চকচকে দেখানো, গ্রীষ্মের দিনে উত্তপ্ত রাস্তা জলে ভেজা ভ্রম হওয়া ইত্যাদি।


কাচের ফাটলে আলো পড়লে সেই স্থান চকচক করে কেন?

কাচে ফাটল থাকলে ওই অংশটি অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল লাগে। এর কারণ পূর্ণ প্রতিফলন। ওই ফাটলযুক্ত অংশের মধ্যে বায়ু পূর্ণ থাকে। আলোকরশ্মি কাচ (ঘনমাধ্যম) থেকে বায়ুতে (লঘুমাধ্যম) মাধ্যমদ্বয়ের সংকট কোণ অপেক্ষা বেশি কোণে আপতিত হলে বিভেদতল থেকে পূর্ণ প্রতিফলিত হয়। এই প্রতিফলনে বিভেদতলের ভূমিকা প্রতিফলকের মতো হয় বলে, ফাটল ধরা অংশটি চকচকে দেখায়।


আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক ও পরম প্রতিসরাঙ্ক বলতে কী বোঝায়?

আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক (Relative refractive index) : দুটি আলোকীয় মাধ্যমের যে-কোনো একটির সাপেক্ষে অন্য মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে প্রথম মাধ্যম সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বা আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক বলে।
যেমন— a মাধ্যম সাপেক্ষে b আলোকীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক aμb

পরম প্রতিসরাঙ্ক (Absolute refractive index): শূন্যস্থান সাপেক্ষে যে-কোনো আলোকীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক বলা হয়।

জেনে রাখো: পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে পাওয়া গেছে, বায়ুমাধ্যমে পরম প্রতিসরাঙ্কের মান1.00029, যা প্রায় শূন্যস্থানের পরম প্রতিসরাঙ্কের সমান। তাই সাধারণভাবে কোনো আলোকীয় মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক হল বায়ু মাধ্যম সাপেক্ষে তার প্রতিসরাঙ্ক।

রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১

পদার্থ (Matter) কাকে বলে?

উত্তর | যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, যাদের ভর আছে, যারা কিছুটা স্থান দখল করে, যাদের আকার পরিবর্তনে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা আছে, যারা গতিশীল বা স্থিতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইলে বাধা দেয়, তাকে পদার্থ বলে।

উদাহরণ: কাচ, কাঠ, জল, বায়ু প্রভৃতি।

জেনে রাখো : বস্তুর একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতি থাকে। কিন্তু পদার্থের নির্দিষ্ট কোনো আকার বা আকৃতি থাকে না। পদার্থ দিয়ে বস্তু গঠিত হয়। কাঠের চেয়ার হল বস্তু এবং কাঠ হল পদার্থ।


পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম কাকে বলে? রাসায়নিক ধর্মের সাহায্যে পদার্থকে কীভাবে শনাক্ত করা যায় ?

রাসায়নিক ধর্ম (Chemical properties) : যেসব ধর্ম থেকে পদার্থের মূল গঠনের এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়, সেইসব ধর্মকে পদার্থের রাসায়নিক ধর্ম বলে।

রাসায়নিক ধর্মের সাহায্যে পদার্থের শনাক্তকরণ : রাসায়নিক ধর্মের সাহায্যে কোনো পদার্থকে শনাক্ত করতে হলে পদার্থের ওপর বায়ু, জল, তাপপ্রয়োগ, তড়িৎক্রিয়া, অ্যাসিড, ক্ষার বা ক্ষারক, অন্যান্য কতকগুলি পদার্থের সংযোগে পদার্থের গঠনের কী পরিবর্তন হয় এবং কী কী নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

(i) বায়ুর ক্রিয়া : বাতাসের সংস্পর্শে এসে পদার্থের নানা ধরনের পরিবর্তন হয়। যেমন—আর্দ্র বায়ুতে একটুকরো চকচকে লোহা ফেলে রাখলে মরচে উৎপন্ন হয়। সোনা, রুপো বায়ুতে ফেলে রাখলে কোনো পরিবর্তন হয় না।

(ii) জলের ক্রিয়া : জলের সঙ্গে বিভিন্ন পদার্থের বিক্রিয়া লক্ষ করে পদার্থকে শনাক্ত করা যায়। যেমন—সোডিয়াম বা পটাশিয়াম-এর মতো ধাতু জলের সংস্পর্শে এলেই তীব্র বিক্রিয়া করে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন করে এবং আগুন জ্বলে ওঠে। একটুকরো সোনা বা রুপোকে জলে ফেললে কোনো পরিবর্তন হয় না৷


আইসোটোপ(Isotope) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

আইসাটোপ (Isotope): একই মৌলের বিভিন্ন পরমাণু যাদের পারমাণবিক সংখ্যা এক, কিন্তু নিউক্লিয়াসে ভিন্ন সংখ্যক নিউট্রন থাকার জন্য ভরসংখ্যা আলাদা হয়, তাদের পরস্পরের আইসোটোপ বা সমস্থানিক বলে। যেমন— ক্লোরিনের দুটি আইসোটোপ হল— 17Cl35 এবং 17Cl37

জেনে রাখো: গ্রিক ভাষায় ‘iso' শব্দের অর্থ হল সমান এবং ‘topes' শব্দের অর্থ হল অবস্থান। আইসোটোপগুলি পর্যায় সারণিতে একই ঘরে অবস্থান করে বলে এদের সমস্থানিক বলে।

আইসোটোপের বৈশিষ্ট্যঃ
  1. কোনো মৌলের আইসোটোপগুলির পারমাণবিক সংখ্যা অর্থাৎ, প্রোটন সংখ্যা বা ইলেকট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা আলাদা হওয়ায় ভরসংখ্যা আলাদা হয়।
  2. এদের ইলেকট্রন বিন্যাস একইরকম হওয়ায় এদের রাসায়নিক ধর্ম এক হয়। 
  3. এদের ইলেকট্রন বিন্যাস একইরকম হওয়ায় এদের যোজ্যতা সমান হয়। 
  4. এদের ভৌত ধর্ম, যেমন- ঘনত্ব, ভর, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক ইত্যাদি ভিন্ন হয়।

জেনে রাখা ভালোঃ চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যানসার ও টিউমার চিকিৎসায় আয়োডিনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ (l131) ব্যবহার করা হয়। এমনকি গাছ, পুরোনো শিলা এবং পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করতেও কার্বনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ (C14) ব্যবহৃত হয়।


প্রতিসরাঙ্ক কাকে বলে?

প্রতিসরাঙ্ক (Refractive index) : প্রতিসরাঙ্ক হল কোনো আলোকীয় মাধ্যমের উপাদানের এমন একটি ধর্ম, যার মানের ওপর ওই মাধ্যমে প্রবেশ করা অর্থাৎ, প্রতিসৃত আলোকরশ্মির গতির অভিমুখ এবং ওই মাধ্যমে আলোর বেগের মান নির্ভর করে।

প্রশ্ন | প্রতিসরাঙ্কের ভিত্তিতে আলোকীয় মাধ্যম কয় প্রকার ও কী কী? তাদের সংজ্ঞা দাও।

উত্তর  | প্রতিসরাঙ্কের ভিত্তিতে আলোকীয় মাধ্যম দুপ্রকার, যথা— (i) ঘন মাধ্যম, (ii) লঘু মাধ্যম।

ঘন মাধ্যম (Denser medium) : দুটি ভিন্ন আলোকীয় মাধ্যমের ভিতর যার পরম প্রতিসরাঙ্কের মান বেশি, তাকে ঘনতর বা ঘন মাধ্যম বলে।

লঘু মাধ্যম (Rarer medium) : যে মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্কের মান তুলনামূলকভাবে কম, তাকে লঘু মাধ্যম বলে।

অনুরূপ প্রশ্ন : আলোর ক্ষেত্রে একটি মাধ্যমের থেকে অন্য একটি মাধ্যম বেশি ঘন না লঘু তা কীভাবে ঠিক হয় ?

প্রশ্নঃ প্রতিসরাঙ্কের মান কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

উত্তর |  প্রতিসরাঙ্কের মান তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে,

(i) মাধ্যমদ্বয়ের প্রকৃতি,
(ii) ব্যবহৃত আলোর বর্ণ,
(iii) মাধ্যমদ্বয়ের উষ্ণতা

প্রশ্নঃ বায়ু সাপেক্ষে কাচের প্রতিসরাঙ্ক 1.5 বলতে কী বোঝায়?

উত্তর | বক্তব্যটির অর্থ এই যে, আলোকরশ্মি বায়ু থেকে কাচে প্রতিসৃত হলে আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত হয় 1.5। অথবা নির্দিষ্ট বর্ণের আলোকরশ্মির জন্য বায়ু মাধ্যমে ও কাচ মাধ্যমে আলোর বেগের অনুপাত হয় 1.5।

প্রশ্নঃ তৈলাক্ত কাগজকে সামান্য স্বচ্ছ দেখায় কেন?

উত্তর | সাধারণ কাগজের তল অমসৃণ বলে সেই তলে আপতিত আলোকরশ্মির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে এবং সেটি প্রায় অস্বচ্ছ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তবে তৈলাক্ত কাগজের পৃষ্ঠে পাতলা তেলের স্তর থাকে এবং এই কাগজের উপরিতলে আলোকরশ্মি এসে পড়লে তার একটি অংশ প্রতিসৃত হয়। অর্থাৎ, প্রতিসরণ ঘটার জন্যই তৈলাক্ত কাগজ অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ বলে মনে হয়।


তাপের সুপরিবাহী(Good Conductor) ও কুপরিবাহী পদার্থ(Bad Conductor) কাকে বলে উদাহরণসহ বোঝাও।

উত্তর:

তাপ পরিবহণের ভিত্তিতে পদার্থ দু-প্রকার।

সুপরিবাহী পদার্থ (Good conductor): যে সকল পদার্থ সহজে তাদের নিজেদের মধ্য দিয়ে উষ্ণ অংশ থেকে শীতল অংশে তাপ সঞ্চালিত করে, তাদের তাপের সুপরিবাহী পদার্থ বা সংক্ষেপে পরিবাহী বলে।

উদাহরণ: লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, রুপো ইত্যাদি ধাতু এবং পারদ, গ্রাফাইট, গ্যাস কার্বন ইত্যাদি অধাতু।

কুপরিবাহী পদার্থ (Bad conductor): যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সহজে এক অংশ থেকে অন্যত্র সঞ্চালিত হতে পারে না, তাদের কুপরিবাহী বা অন্তরক পদার্থ বলে। কুপরিবাহী পদার্থগুলির তাপ হস্তান্তরের ক্ষমতা নগণ্য বা উপেক্ষণীয় হয়।

উদাহরণ: কাঠ, প্লাস্টিক, মোম, রবার, বিশুদ্ধ জল, কর্ক, ইট, তুলা, কাগজ প্রভৃতি।


জাড্য (Inertia) কাকে বলে? ভৌতাবস্থানুযায়ী পদার্থ কয় প্রকার ও কী কী?

জাড্য (Inertia) কাকে বলে?

উত্তর। জাড্য (Inertia) : জড়বস্তুর ধর্ম হল এই যে, সেটি যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকতে চায়। অর্থাৎ, স্থিরবস্তু চিরকাল স্থির থাকতে চায় এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল অবস্থায় থাকতে চায়। জড়বস্তুর এই ধর্মকে জাড্য বলে। জাড্য দু-প্রকার–

(i) স্থিতি জাড্য, (ii) গতি জাড্য ।


ভৌতাবস্থানুযায়ী পদার্থ কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ পদার্থ তিন প্রকার, যথা— (i) কঠিন (Solid), (ii) তরল (Liquid), (iii) গ্যাসীয় (Gas)। যেমন— লোহা কঠিন পদার্থ, জল তরল পদার্থ, বায়ু গ্যাসীয় পদার্থ।

বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

মোটা কাগজের ঠোঙা বানিয়ে জল রেখে আগুনে শিখায় ধরলে জল ফোটানো যাবে কি?

উত্তর:

মোটা কাগজের ঠোঙা বানিয়ে তাতে জল ঢেলে আগুনের শিখায় ধরলে জল ফোটানো যাবে না। কারণ— মোটা কাগজের মধ্যে দিয়ে তাপ তাড়াতাড়ি জলে যেতে পারবে না এবং আগুনের শিখার সংস্পর্শে থাকা কাগজের অংশটি খুব তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়ে যাবে। ফলে, কাগজটি পুড়ে যাবে।


শিশির কাকে বলে?

উত্তর | রাত্রে তাপ বিকিরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ এবং তার সংলগ্ন বস্তুগুলির উষ্ণতা যখন ক্রমশ কমে তখন ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরও শীতল হয়। অবশেষে উষ্ণতা একটি নির্দিষ্ট মানে অর্থাৎ, শিশিরাঙ্কে পৌছোলে, শীতল বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়। । বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কেরও নীচে নেমে গেলে, স্বাভাবিকভাবেই বায়ু তার ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত জলীয়বাষ্পকে আর নিজের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে পারে না। বায়ু দ্বারা পরিত্যক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ছোটো ছোটো জলবিন্দুর আকারে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন ঘাস, পাতা ইত্যাদির উপরে জমা হয়। একেই শিশির (Dew) বলে।
শিশির

পাতলা কাগজের পাত্রে কীভাবে জল ফোটানো যায় ?

উত্তর:

প্রথমে খাতার পৃষ্ঠার মাপের একটি পাতলা কাগজের চোঙ বা ফানেল তৈরী করে তার মধ্যে জল রাখা হল। এবার জলসহ
কাগজের পাতলা দিকটি আগুনের শিখায় ধরলে, কিছুক্ষণের মধ্যেই জল ফুটতে থাকে অথচ কাগজটি জ্বলে যায় না। এক্ষেত্রে, পাতলা কাগজের মধ্যে দিয়ে তাপ খুব তাড়াতাড়ি জলে চলে যায়। ফলে, জল স্ফুটনাঙ্কে পৌছে গেলেও কাগজটি তার জ্বলনাঙ্কে পৌঁছোয় না। তাই পাতলা কাগজের পাত্রে জল ফোটানো যাবে।


প্রশ্ন: সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক থাকে কি? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর | সমস্ত পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক থাকে না। যেমন অনিয়তাকার বা অকেলাসিত কঠিন পদার্থের (কাচ, মোম, মাখন ইত্যাদি) এবং মিশ্র পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক থাকে না, পরিবর্তে এদের গলনাঙ্কের নির্দিষ্ট পাল্লা থাকে।

সাধারণ বায়ুচাপে উদ্বায়ী পদার্থগুলির ক্ষেত্রে গলনাঙ্কের অস্তিত্ব থাকে না।
কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থকে (HgO, CaCO) উচ্চ উষ্ণতায় উত্তপ্ত করার ফলে বিয়োজিত হয়ে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। 

এদের ক্ষেত্রে গলনাঙ্কের ধারণা প্রযোজ্য নয়।



প্রশ্ন: ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে যে মূর্তিগুলি তৈরি করা হয় তা বিশেষ ধাতু ব্যবহার করে তৈরি করা হয় কেন ?

উত্তর | ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে মূর্তি তৈরি করার সময় সেইসব বিশেষ ধাতু ব্যবহার করা হয়, যারা তরল অবস্থা থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে। এর ফলে, ছাঁচের সূক্ষ্ম কোনাগুলিতেও ধাতুগুলি পৌঁছোতে পারে ও মূর্তির ধারগুলি খুব সূক্ষ্ম হয়। যেমন—ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি।



প্রশ্ন: দুটি বরফের টুকরো একসঙ্গে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে তারা জোড়া লেগে যায়। কেন এমন হয় ?

উত্তর | বরফের গলনের ফলে যে জল উৎপন্ন হয় তার আয়তন বরফের আয়তনের তুলনায় কম। চাপ বাড়ালে গলনে সুবিধা হয়। তাই চাপ বৃদ্ধি করলে বরফের গলনাঙ্ক হ্রাস পায়। দুটি বরফের টুকরো একসঙ্গে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলে সংযোগস্থলে বরফের গলনাঙ্ক কমে ও বরফ গলে একসময় জলে পরিণত হয়। চাপ উঠিয়ে নিলে গলনাঙ্ক আবার বাড়ে ও গলে যাওয়া জল আবার বরফে পরিণত হয়। ফলে, বরফের টুকরো দুটি জুড়ে যায়।


বাষ্পায়ন (Evaporation) কাকে বলে? বাষ্পায়নের হার কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

উত্তর।
বাষ্পায়ন(Evaporation): যে-কোনো উষ্ণতায় তরলের উপরিতল থেকে তরলের ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে বাষ্পায়ন বলে।

বাষ্পায়নের হার নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে—

(i) তরলের প্রকৃতি : এক-একটি তরলের ক্ষেত্রে বাষ্পায়নের হার এক-একরকম। যে তরলের স্ফুটনাঙ্ক ঘরের উয়তার যত কাছাকাছি হয়, তার বাষ্পায়নের হার তত বেশি হয়। যেমন ইথারের স্ফুটনাঙ্ক 35°C, আর জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C।

(ii) তরলের উপরিতলের বিস্তৃতি : তরলের উপরিতলের বিস্তৃতি বা ক্ষেত্রফল যত বেশি হয়, বাষ্পায়নের হারও তত বেশি হয়।

(iii) তরলের উদ্ভূতা : তরল ও তরল সংলগ্ন বায়ুর উহ্ণতা বাড়লে বাষ্পায়ন দ্রুত হয়। তাই ভিজে কাপড় রোদের তাপে যত তাড়াতাড়ি শুকায়, শীতল ছায়ায় ততটা শুকায় না।

(iv) বায়ুর শুষ্কতা : বায়ু যত শুষ্ক হয়, তার বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতাও তত বেশি হয়।

(v) বায়ু চলাচল : তরলের ওপর বায়ু সঞ্চালন বাড়লে বাষ্পায়ন দ্রুত হারে হয়। যেমন—ঘরের ভিজে মেঝে তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য আমরা ফ্যান চালাই বা কালির লেখা তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য আমরা ফুঁ দিই।

(vi) তরলের ওপর বায়ুর চাপ : বায়ুমণ্ডলীয় চাপ যত কম হয়, বাষ্পায়নের হার তত বেশি হয়। তাই বাষ্পায়নের হার বাড়াতে তরলের ওপর বায়ুর চাপ কমাতে হয়।

রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১

বিকিরণ (Radiation) কাকে বলে? এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর:

বিকিরণ (Radiation): যে পদ্ধতিতে জড় মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই বা মাধ্যম থাকলেও সেই মাধ্যমকে উত্তপ্ত না করে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গরূপে এক স্থান থেকে অন্যত্র তাপ সঞ্চালিত হয় তাকেই বিকিরণ বলে। বিকিরণ পদ্ধতিতে সংবাহিত তাপকে বিকীর্ণ তাপ বলে।

বৈশিষ্ট্য(Characteristics):
  1. বিকীর্ণ তাপ, উৎস থেকে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের আকারে চারদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
  2. বিকীর্ণ তাপ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গতিশীল হওয়ার সময়ে মাধ্যমকে উত্তপ্ত করে না, কিন্তু যেসব বস্তু দ্বারা এটি বাধাপ্রাপ্ত হয় তাদেরকে উত্তপ্ত করে।
  3. বিকীর্ণ তাপ সরলরেখায় চলে।
  4. শূন্যস্থানে বিকীর্ণ তাপের বেগ শূন্যস্থানে আলোর বেগের (3×10 মি/সে) সমান।
  5. তাপ সঞ্চালনের দ্রুততম পদ্ধতি। বিকীর্ণ তাপ প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যস্তবর্গের সূত্র ইত্যাদি মান্য করে।
  6. বিকীর্ণ তাপ ফোটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর ক্রিয়া করে।

পরিচলন স্রোত(Convection Current) কাকে বলে? গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে তাপের পরিচলনের ফলে যে বায়ুপ্রবাহ হয় তা পরীক্ষার সাহায্যে দেখাও। 

পরিচলন স্রোত (Convection current): তরল বা গ্যাসের কোনো অংশ উত্তপ্ত হলে হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এবং ওপরের ঠান্ডা ও ভারী অংশ নীচে নেমে আসে। এর ফলে তরল বা গ্যাসের মধ্যে যে চক্রাকার স্রোত সৃষ্টি হয়, তাকে পরিচলন স্রোত বলে। যেমন— সমুদ্রবায়ু, স্থলবায়ু।

গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে তাপের পরিচলনের ফলে যে বায়ুপ্রবাহ হয় তা নিম্নলিখিত পরীক্ষা দ্বারা দেখানো যায়।

উপকরণ : (i) একটি কাচের চিমনি, (ii) জলপূর্ণ কাচের বাটি, (iii) একটি T আকৃতিযুক্ত কার্ডবোর্ডের টুকরো, (iv) মোমবাতি, (v) ধূপ।

পরীক্ষা পদ্ধতি-1
(i) কাচের বাটিটির ভিতরে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে খাড়াভাবে বসানো হল। (ii) বাটিটিকে আংশিক জলপূর্ণ করে, কাচের চিমনি দিয়ে মোমবাতিটিকে ঘিরে রাখা হল।

পর্যবেক্ষণ: কিছুক্ষণ পর দেখা গেল যে, মোমবাতিটি ক্রমশ নিষ্প্রভ হয়ে আসছে এবং একসময় নিভে গেছে।

ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত: চিমনির ভিতরের বায়ু জ্বলন্ত মোমবাতি থেকে তাপ পেয়ে উত্তপ্ত হয় এবং হালকা হয়ে উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। চিমনির নীচে জল থাকায় বাইরের বায়ু চিমনির ভিতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়, চিমনির উপর থেকে বায়ু প্রবেশ করতে পারে না। তাই অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বাতিটি নিভে যায়।পরিচলন স্রোত পরীক্ষার ছবি

পরীক্ষা পদ্ধতি-2
এই অবস্থায় চিমনিটি তুলে বাতিটি আবার জ্বালানো হল এবং বাতিটি ঘিরে চিমনিটিকে আগের মতো বসানো হল। চিমনির মুখে T আকৃতির কার্ডবোর্ডটি মাঝামাঝি অবস্থানে রেখে, ওর খোলামুখের ঠিক ওপরে একটি জ্বলন্ত ধূপ ধরা হল।

গ্যাসের মধ্যে তাপের পরিচলনের পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল, মোমবাতিটি নিভছে না এবং ধূপের ধোঁয়া কার্ডবোর্ডের একটি দিক দিয়ে চিমনির ভিতর প্রবেশ করে, অপর পাশ দিয়ে চিমনি থেকে বেরিয়ে আসছে।

ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত : T আকারের কার্ডবোর্ডটি চিমনির খোলা মুখের আয়তনকে দুটি প্রকোষ্ঠে ভাগ করে যার একটি দিয়ে মোমবাতির শিখার তাপে উত্তপ্ত গরম বায়ু হালকা হয়ে বেরিয়ে যায় এবং তার ফলে সৃষ্ট শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য বাইরের অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারী বায়ু ও ধূপের ধোঁয়া অন্য প্রকোষ্ঠ দিয়ে চিমনিতে প্রবেশ করে। এই পদ্ধতিতে বায়ুতে যে পরিচলন প্রবাহ সৃষ্টি হয়, তার প্রভাবেই চিমনির অভ্যন্তরে মোমবাতিটি জ্বলতে পারে।


বায়ুচলন (Ventilation) কী? পরিচলন স্রোতকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে ঘরের বায়ুচলন অব্যাহত রাখা হয় ?

বায়ুচলন (Ventilation):

বদ্ধঘরে নিশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত দূষিত ও অস্বাস্থ্যকর বায়ুর অপসারণ এবং ঘরের দিকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর বায়ুপ্রবাহের সরবরাহ অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে গৃহীত ব্যবস্থা বা উপায়কেই বায়ুচলন বলে।

আমাদের নিশ্বাসের সঙ্গে যে বায়ু বেরিয়ে যায় তা ঘরের বায়ুর চেয়ে বেশি উষ্ণ ও আর্দ্র হওয়ায় হালকা হয়। ফলে এই বায়ু উপরে উঠে যায় এবং ঘরের দেয়ালে, ছাদের ঠিক নীচে থাকা ফাঁক বা ঘুলঘুলি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বাইরের ঠান্ডা ও অক্সিজেনযুক্ত বায়ু দরজা ও জানলা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। ফলে, ঘরের বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক থাকে। এভাবে পরিচলন স্রোতকে কাজে লাগিয়ে ঘরের বায়ুচলন অব্যাহত রাখা হয়।


পরিচলন(Convection) পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের দুটি সীমাবদ্ধতা লেখো।

 পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের সীমাবদ্ধতাগুলি হল— 
(i) কঠিন পদার্থের অণুগুলি পরস্পর দৃঢ় সংঘবদ্ধভাবে থাকে বলে কঠিনের মধ্যে পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হয় না।
(ii) যে স্থানে অভিকর্ষ বল নেই, সেখানে পরিচলনের দ্বারা তাপ সঞ্চালন সম্ভব নয়।



পরিচলন(Convection) পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর:

পরিচলন (Convection): যে পদ্ধতিতে তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলি নিজেরা স্থান পরিবর্তন করে উষ্ণ অংশ থেকে তাপ বহন করে শীতল অংশে স্থানান্তরিত করে, তাপ সঞ্চালনের সেই পদ্ধতিকে বলা হয় পরিচলন।

বৈশিষ্ট্য:
  1. পরিচলন পদ্ধতিতে মূলত তরল ও গ্যাসীয় পদার্থে তাপ সঞ্চালন হয়।
  2. এই পদ্ধতিতে তাপ চলাচলের জন্যজড় মাধ্যমের উপস্থিতি অপরিহার্য।
  3. এক্ষেত্রে তরল বা গ্যাসের অণুগুলি নিজেরাই স্থানচ্যুত হয়ে মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যত্র তাপ বহন করে নিয়ে যায়।
  4. এই প্রণালীতে তাপ শুধুমাত্র নীচ থেকে উপরের দিকে সঞ্চালিত হতে পারে— অন্য কোনো দিকে নয়।
  5. অভিকর্ষের অনুপস্থিতিতে বা অভিকর্ষহীন স্থানে এই প্রণালীতে তাপ সঞ্চালন সম্ভব নয়।

পরিবহণ(Conduction) পদ্ধতি কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।


পরিবহণ (Conduction) : যে পদ্ধতিতে তাপ একই বস্তুর উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে সঞ্চালিত হয়, কিন্তু ওই বস্তু বা বস্তুগুলির অণুগুলি স্থানচ্যুত হয় না, সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় পরিবহণ।

বৈশিষ্ট্য:
১। তাপ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যমের উপস্থিতি অপরিহার্য।
২। শূন্যস্থানে কোনো মাধ্যম না থাকায় এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন সম্ভব নয়।
৩। কঠিন, তরল, গ্যাসীয় সবরকম পদার্থেই এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন হয়। এর মধ্যে কঠিন পদার্থের পরিবহণ ক্ষমতা সর্বাধিক।
৪। পারদ ছাড়া অন্যান্য সব তরলের তাপ পরিবহণ ক্ষমতা নগণ্য৷ গ্যাসের ক্ষেত্রে তা আরও কম।
৫। তাপ সঞ্চালনের সময় মাধ্যমের উত্তপ্ত কণাগুলির স্থানচ্যুতি হয় না।
৬। অণু, পরমাণু ও মুক্ত ইলেকট্রনগুলি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় বলে ধাতুগুলির তাপ পরিবহণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ হয়।

বৃষ্টির মধ্যে চলমান গাড়ির উইন্ড স্ক্রিন (Wind screen) ও জানলার কাচের ভিতরের পৃষ্ঠ আবছা হয়ে যায় কেন?

বৃষ্টিতে গাড়ির কাচ ঠান্ডা হয়ে যায়। এই ঠান্ডা কাচের সংস্পর্শে এসে গাড়ির ভিতরের বায়ুতে অবস্থিত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয় ও ছোটো ছোটো জলবিন্দুর আকারে সামনের গাড়ির কাচ অর্থাৎ, উইন্ড স্ক্রিনের ভিতরের দিকে জমা হয়। একইভাবে জানলার কাচের ভিতরের পৃষ্ঠেও জলীয়বাষ্প জমা হয়। তাই উইন্ড স্ক্রিন ও জানলার কাচের ভিতরের পৃষ্ঠ আবছা হয়ে যায়।


উত্তর:

কেটলির বাইরে থাকা বায়ু বা পরিবেশের উষ্ণতা কেটলির মধ্যে থাকা ফুটন্ত জলের উষ্ণতার তুলনায় অনেক কম। তাই স্টিম বর্ণহীন গ্যাসীয় পদার্থ হলেও কেটলি থেকে নির্গত হওয়ার পর আপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণাগুলি বাষ্পের সঙ্গে বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এগুলির উপর সাদা আলো পড়ে প্রতিফলিত হয় বলে স্টিম সাদা দেখায়।


বাতাসে ধূলিকণার উপস্থিতির সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্পর্ক আছে কি?

বাতাসে ধূলিকণা উপস্থিত থাকে বলেই মেঘ সৃষ্টি তথা বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। সূর্যের তাপে বড়ো জলাশয়, নদী, সমুদ্রের উপরিতল থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুতে মিশে যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু হালকা হয়ে উপরে ওঠে এবং একসময় বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে এলে ঘনীভবনের ফলে জলবিন্দুতে পরিণত হয় ও বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভেসে বেড়ায়। একেই মেঘ বলে। তাই ধূলিকণা বাতাসে না থাকলে মেঘের অস্তিত্ব থাকত না, ফলে বৃষ্টিও হত না।


অবস্থান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন কাকে বলে?এর প্রকারভেদগুলি কী কী ? 

তাপপ্রয়োগ বা অপসারণের দ্বারা পদার্থের এক ভৌত অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অবস্থান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন (Change of state)।

পদার্থের সাধারণ ভৌত অবস্থা মূলত তিনটি—কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়।
এই বিভিন্ন রূপগুলির একটি থেকে অন্যটিতে অবস্থান্তর প্রক্রিয়াকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়—

(i) গলন (Melting) : স্থির উন্নতায় কঠিন পদার্থের তাপগ্রহণের ফলে তরলে রূপান্তরের ঘটনা।

উদাহরণ : বিশুদ্ধ বরফ স্বাভাবিক বায়ুচাপে 0°C উষ্মতায় গলে জলে পরিণত হয়।

(ii) বাষ্পীভবন (Vaporization) : যে-কোনো উস্লতায় অথবা স্থির উন্নতায় তরল ফুটে বাষ্প উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া।

উদাহরণ : প্রমাণ বায়ুচাপে বিশুদ্ধ জল 100°C উষ্মতায় ফুটে বাষ্পে রূপান্তরিত হয়।

(iii) ঘনীভবন (Condensation) : নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট উন্নতায় বাষ্পের তাপ অপসারণের ফলে তরলে রূপান্তর।

উদাহরণ : স্বাভাবিক বায়ুচাপে 100°C উষ্মতায় জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলে রূপান্তরিত হয়।

(iv) কঠিনীভবন (Solidification) : নির্দিষ্ট উন্নতায় তরল পদার্থ জমে কঠিনে পরিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়া।

উদাহরণ : স্বাভাবিক বায়ুচাপে বিশুদ্ধ জল 0°C উষ্মতায় জমে বরফ উৎপন্ন করে।


(v) ঊর্ধ্বপাতন (Sublimation) : তাপপ্রয়োগের ফলে যে-কোনো উন্নতায় কঠিন পদার্থের সরাসরি বাষ্পে রূপান্তর। সংশ্লিষ্ট পদার্থগুলিকে বলা হয় ঊর্ধ্বপাতনযোগ্য পদার্থ।

উদাহরণ : কর্পূর, নিশাদল, আয়োডিন, ন্যাপথলিন ইত্যাদির কঠিন থেকে বাষ্পে পরিবর্তন।

(vi) অবক্ষেপণ(De-sublimation) : যে প্রক্রিয়ায়বাষ্পতাপবর্জন করে সরাসরি কঠিন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে অবক্ষেপণ বলে।  

উদাহরণ : CO2 বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শুষ্ক বরফ (CO2) উৎপাদন, কর্পূর, নিশাদল ইত্যাদির বাষ্প থেকে সরাসরি কঠিনে রূপান্তর।

 

 
 
স্টিম বর্ণহীন কিন্তু ফুটন্ত জলপূর্ণ কেটলির মুখ থেকে সাদা বর্ণের স্টিম নির্গত হয় কেন?

কেটলির বাইরে থাকা বায়ু বা পরিবেশের উষ্ণতা কেটলির মধ্যে থাকা ফুটন্ত জলের উষ্ণতার তুলনায় অনেক কম। তাই স্টিম বর্ণহীন গ্যাসীয় পদার্থ হলেও কেটলি থেকে নির্গত হওয়ার পর আপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণাগুলি বাষ্পের সঙ্গে বায়ুতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এগুলির উপর সাদা আলো পড়ে প্রতিফলিত হয় বলে স্টিম সাদা দেখায়। 


একই ভরের দুটি বস্তুতে নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ দেওয়া হল। ওদের উষ্ণতা কি একই হবে? কেন? 

বস্তু দুটির উষ্ণতা আলাদা হবে। তার কারণ নিম্নরূপ : ধরা যাক, দুটি বস্তুরই ভর m, Q পরিমাণ তাপ দেওয়াতে বস্তু দুটির উন্নতা বৃদ্ধি হল t1°C ও t2°C এবং ওদের আপেক্ষিক তাপ যথাক্রমে s1, ও s2, । সুতরাং, প্রথম বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ Q = ms1t1 এবং দ্বিতীয় বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ Q = ms2t2 ।

অতএব, ms1t1= ms2t2 বা, s1/t1= s2t2

বা, s1/s2 = t2/t1

সুতরাং, উম্লতা বৃদ্ধি আপেক্ষিক তাপের ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ, যে পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বেশি, তার উয়তা বৃদ্ধি কম এবং যার আপেক্ষিক তাপ কম, তার উয়তা বৃদ্ধি বেশি হবে।

Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts