এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১

হলুদ চাষ কীভাবে করবেন? হরিদ্রা বা হলুদের কী কী গুণাবলী আছে?

অর্থকরী মশলার মধ্যে হলুদ অন্যতম। মশলার মধ্যে হলুদের চাহিদা সব চাইতে বেশি। ফল বাগানের হালকা ছায়ায় হলুদ চাষ বাড়তি আয় দেয়।

জাত: পাটনাই, কস্তুরী, আলেপ্পি। কেরালার আলেগ্নি জাতের হলুদে কুরকুমিনের পরিমাণ বেশী রং কমলা-হলদে হওয়ায় বিদেশের বাজারে খুব চাহিদা আছে।

মেয়াদ:- মাস।

বােনার সময়: চৈত্র-বৈশাখ (এপ্রিল-মে)

জমি মাটি: নিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত দোয়াশ, বেলে-দোঁয়াশ মাটি। প্রচুর জৈবসার যুক্ত দোয়াশ, এটেল দোয়াশ,এমনকি এঁটেল মাটিতেও এর চাষ হতে পারে।

সারি গাছের দূরত্ব: সারির দূরত্ব ২৫ সেমি বা ১০ ইঞ্চি সারিতে গাছের দূরত্ব ২০ সেমি বা ইঞ্চি। ডাঙা বা আলের উপর লাগানাে হয়।

হলুদ গাছ

বীজের হার: বিঘা প্রতি -. কুইন্টাল বীচন লাগে। প্রতি হেক্টরে ১০-১৮ কুইন্টাল বীচন লাগে। বীচন বপনের পর খড় বা শুকনাে পাতা দিয়ে আচ্ছাদন দিলে অঙ্কুরোদগম রােদাম ভালা হয়। মিশ্র ফসল হিসাবে ফলের বাগানে চাষ করলে রৌদ্র ছায়ার অনুপাতে - কুইন্টাল বীচন লাগতে পারে।

সেচ: সাধারণত বৃষ্টি নির্ভর চাষ করা হয়। বেলে-দোঁয়াশ মাটি খােলা জমিতে চাষ হলে (ছায়ায় নয়) শুকনাে আবহাওয়ায় -১০ টি হালকা সেচ লাগতে পারে। এরকম অবস্থায় মাল বা আচ্ছাদন ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়। সেচ কম লাগে। 

পরিচর্যা: লাগানাের - সপ্তাহ পর প্রথমবার, - সপ্তাহ পর দ্বিতীয়বার নিড়ানি দিয়ে গাছা বাছাই গােড়ার মাটি আলগা করে দেওয়া দরকর।

সার: জৈব সারের চাহিদা বেশি। বিঘাতে ১২০০ থেকে ১৫০০ কেজি দরকার হয়। এছাড়া ১৩-১৮ কেজি রাসায়নিক মিশ্র সার (১০:২৬:২৬) দিলে ভালাে। জৈব সার লাগানাের সময় অর্ধেক ৪৫ | দিন পর চার ভাগের এক ভাগ এবং ৬০ দিন পর অবশিষ্ট চার ভাগের এক ভাগ হিসাবে ভাগ ভাগ করে দিলে ভালাে হয়। খড় কুটোর আচ্ছাদন দিলে ভালাে। জমিতে সবুজ সার করে নিলে জৈব সারের খরচ কমে যায়।

সাথিফসল: অড়হর, ঢেড়শ বীজ উৎপাদনের জন্য ধনচে ইত্যাদি। চার সারি হলুদের পর এক সারি অড়হর, ঢেড়শ, ধনচে ইত্যাদি লাগানাে যাবে।

উৎপাদন: (১২-১৮ কুইন্টাল কাঁচা হলুদ বিঘা প্রতি উৎপন্ন হয় যা থেকে মােটামুটি - কুইন্টাল শুকনাে হলুদ প্রতি বিঘায় পাওয়া যায়।

রােগপােকাপােকার মধ্যে রূদ ছিদ্রকারী পােকা (রাইজোম বােরার) প্রধানত দেখা যায়। কাঠা প্রতি দেড় থেকে দুই কেজি নীম খােল লাগানাের ৪০-৪৫ দিন বয়সে প্রথমবার ৭৫-৮০ দিন বয়সে ২য় বার গােড়ায় মাটি ধরানাের সময় জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করলে সারের কাজও যেমন হয় কন্দ ছিদ্রকারী পােকাও সামাল দেওয়া যায়।

রােগের মধ্যে কন্দ পচা (সফট রট) পাতা ধ্বসা রােগ সাধারণত: দেখা যায়। এরােগ দেখা দেওয়া মাত্র ১০-১২ দিন অন্তর টাটকা গােবরের নির্যাস - বার স্প্ে করলে নিরাময় হয়। এছাড়া বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি নামে জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে নিরাময় হয়।

ব্যবহার: মশলা ছাড়াও ওষুধ, প্রসাধন এবং রং তৈরীর কাজে হলুদ ব্যবহার হয়। খাদ্য সংরক্ষণ, শস্য সংরক্ষণের কাজে ছত্রাক জীবাণুনাশক হিসাবে এর ব্যবহার হয়।

কাঁচা হলুদ


 

সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১

আদার ব্যবহার ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আদা(Ginger) চাষ

অর্থকরি কন্দ ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। বৃষ্টি নির্ভর নিকাশীযুক্ত সরষ উচু জমিতে আদা সহজেই লাভজনকভাবে চাষ হয়। পাহাড়ী এলাকায় ধাপ চাষে উপযুক্ত ফসল।
আদা

জাত: উড়িষ্যার জাত সুপ্রভা, (ছিবড়ে কম)। কেরালার জাত- বিওডি জানেইরাে (ছিবড়ে কম)। উত্তরবঙ্গের জাত গরুবাথান, ভেসি (ছিবড়ে বেশী)

মেয়াদ: ৮-১০ মাস।

বোনার সময়: বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ।

জমি ও মাটি: উঁচু জমি, বেলে-দোঁয়াশ ও দোঁয়াশ মাটি।

সেচ: সেচ লাগে না। উপযুক্ত নিকাশি বাবস্থা থাকা দরকার। গোড়ায় জল সহ্য করতে পারে না।

সারি ও গাছের দুরত্ব: সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সেমি বা ১০ ইঞ্চি সারিতে বীচনের দূরত্ব ২০ সেমি বা ৮ ইঞ্চি।

সার: জৈব সারের চাহিদা বেশি। বিঘাতে ১২০০ থেকে ১৫০০ কেজি দরকার হয়। এছাড়া ১৩-১৮ কেজি রাসায়নিক মিশ্র সার (১০:২৬:২৬) দিলে ভালাে। জৈব সার লাগানাের সময় অর্ধেক ৪৫ দিন পর চার ভাগের এক ভাগ এবং ৬০ দিন পর অবশিষ্ট চার ভাগের এক ভাগ হিসাবে ভাগ ভাগ করে দিলে ভালাে হয়। খড় কুটোর আচ্ছাদন দিলে ভালাে।। জমিতে সবুজ সার করে নিলে জৈব সারের খরচ কমে যায়।

বীচনের হার: ১৬০-১৭০ কেজি বীচন প্রতি বিঘায় লাগে।

বীচন লাগানাের আগে শােধন করে লাগানাে উচিত। ২০০-৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ১০-১৫ লিটার জলীয় দ্রবণে ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে বীচন শােধন করে লাগানাে যায়। নিরপট, ইকোফিট, গার্ড, ইকোডারমা, ট্রাইকোভারমি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে অমিল হলে ম্যাঙ্কোজের বা তাম্র ঘটিত রাসায়নিক দিয়েও শােধন করা যায়।

উৎপাদন: প্রতি বিঘায় ৩০-৩২ কুইন্টাল কন্দ পাওয়া যায়।

রােগপােকা: পােকার মধ্যে কন্দ ছিদ্রকারী পােকা (রাইজোম বােরার) প্রধানত দেখা যায়। কাঠা প্রতি দেড় থেকে দুই কেজি নীম খােল লাগানাের ৪০-৪৫ দিন বয়সে প্রথমবার ও ৭৫-৮০ দিন ব্যবহার করলে সারের কাজও যেমন হয় কন্দ ছিদ্রকারী পােকাও সামাল দেওয়া যায়। রােগের মধ্যে কন্দপচা (সফট রট) ও পাতা ধ্বসা রােগ সাধারণত দেখা যায়। এরােগ দেখা দেওয়া মাত্র ১০-১২ দিন অন্তর টাটকা গােববের নির্যাস ৩-৪ বার স্প্রে করলে নিরাময় হয়। এছাড়া বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডিনামে জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে নিরাময় হয়।

মন্তব্য: বেড করে মাল বা ঢাকনা দিয়ে বীচন লাগাতে হবে। পরের মরশুমের জন্য বীচন আলাদা করে তুলে না রেখে একই জায়গায় রেখে দেওয়া ভালাে। লাগানাের সময় তুলে লাগাতে হবে। ৪ সারি আদার পর ১০ সারি অড়হর ধনচে (বীজের জন্য) লাগানাে যায়।
আদা গাছ

আদার ব্যবহার: 
কথাই আছে, আদা নুন খেয়ে লেগে পড়ো। এটা শুধু প্রবাদ বাক্য নয়, আদার গুরুত্ব সত্যিই অতুলনীয়। 
১. ঠান্ডা এবং ফ্লু জাতীয় অসুখ কম করে 
২. প্রদাহজনক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে 
৩. প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে 
৪. আদা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে
৫. পেশী ব্যথার প্রতিকার করে
৬. গুরুতর বদহজমে সাহায্যকরে
৭. বমিভাব প্রতিরোধ করে
৮. আদা লিভারকে রক্ষা করে
৯. আদা মাসিক বা পিরিয়ডের ক্র্যাম্প বা ব্যথা হ্রাস করে
১০. আদা কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে
১১. আদা খারাপ ব্যাকটিরিয়া হত্যা করতে পারে
১২.আলঝাইমার রোগ থেকে রক্ষা করে
১৩.আদা ডিএনএ রক্ষা করে
১৪. আদা অস্টিওআর্থারাইটিস বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে  

শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১

শতমূলী কী কাজে ব্যবহৃত হয় ও কিভাবে চাষ করা হয়?

অর্থকরী কন্দ মূল ফসলের মধ্যে এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। অতিরিক্ত শ্রম নির্ভর চাষ নয়-কাজেই সহজে চাষ করা যায়।
শতমূলী

জাত: দেশী, লতাভরী।

বােনার সময়: বীজ পড়ে এমনিতেই হয় তবে বর্ষাকালে বীজ থেকে চারা তৈরী করে লাগানাে। যায়। মূল থেকে খুব ভালাে। চারা তৈরী হয়। এছাড়া ছােট ছােট শাখা কেটে বেডে বসিয়ে বর্ষাকালে চারা তৈরী করা হয়। বিঘা প্রতি চারা লাগে ১২০০-১৩০০।

জমি/মাটি: যে কোন মাটিতে হয় তবে দোঁয়াশ মাটিতে ভালাে হয়। জমিতে কোন অবস্থাতে জল না দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সেচ: সেচ লাগে না বললেই চলে, তবে বীজ থেকে চারা লাগানাের পর এক দুবার জল দিতে হয় এবং মাঝে মধ্যে খুব গরমের সময় চারা যদি ঝিমিয়ে যায় তবে এক দুবার সেচ দেওয়া যেতে পারে।

গাছের/সারির দুরত্ব: সারি থেকে সারি ও গাছ থেকে গাছ ১ মিটার দূরত্বে লাগানাে হয়। ৩০ সেমি দৈর্ঘ্য, ৩০ সেমি প্রস্থ এবং ৩০ সেমি গভীর গর্ত করতে হয়। প্রতি গর্তে আড়াই থেকে তিন কেজি গােবর অথবা আবর্জনা সার দিয়ে গর্ত ভর্তি করে রাখতে হবে। চারা লাগানাের ১৫ দিন আগে থেকে। বর্ষার শুরুতে গর্তের ঠিক মাঝখানে চারা বা বীচন লাগাতে হবে।

ফুল-ফলের সময়: ডিসেম্বর-এপ্রিল (শীতকাল –গরমকাল)।

বীজ সংগ্রহের সময়: ফেব্রুয়ারী এপ্রিল (গরমকালে)।

নার্সারি: ছােট ছােট মূল আলাদা করে প্যাকেটে বা বেডে বসাতে হবে এবং ঘন ঘন ঝারি দিয়ে জল দিতে হবে। ১০ দিনের পর থেকে শাখা মঞ্জুরী বের হতে থাকবে। এরপর মূল জমিতে সরাতে হবে।

ফসল তোলা: শতমূলী গাছ থেকে তৃতীয় বৎসরে কন্দ আলু তােলা হয়। ভালাে করে জলে পরিস্কার করে, শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে এমনভাবে যেন কন্দ মূল ছত্রাকের দ্বারা আক্রান্ত না হয়। তিন শতাংশ বরিক অ্যাসিডের দ্রবণে ২০ মিনিট ডুবিয়ে, দ্রবণ ঝড়িয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিলে ছত্রাক আক্রমণ প্রতিরােধ করা যায়।

ফলন: প্রতি গাছে কন্দ আলুর ফলন ৫-৭ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়। বিঘা প্রতি আলুর ফলন প্রায় ১০,০০০-১৩,০০০ কেজি পর্যন্ত হয়।

রােগপােকা: কাঠা প্রতি দেড় থেকে দুই কেজি নীম খােল লাগানাের ৪০-৪৫ দিন বয়সে প্রথমবার ও ৭৫-৮০ দিন বয়সে ২য় বার গােড়ায় মাটি ধরানাের সময় জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করলে সারের কাজও যেমন হয় তেমনি রােগ পােকাও সামাল দেওয়া যায়। কন্দ পচা (সফট রট) মাঝে মধ্যে দেখা যায়। এরােগ দেখা গেলে বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম টাইকোডারমা ভিরিডি নামে জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে নিরাময় হয়। টাইকোডারমা ভিরিডি অথবা সুডােমনাস ফ্লুরােসেন্স নামক রােগ নাশক স্প্রে করলে নিরাময় হয়।

শতমূলী ব্যবহার: শতমূলী গাছের মূল, কান্ড উভয় অংশ ব্যবহার করা হয়। কচি ডগা খাদ্য হিসাবে, চিনি শিল্পে সুইটমিট হিসাবে, আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। মহিলাদের জিনিটাল সমস্যা, মুত্রনালীর সমস্যা, বাচ্চা না হওয়ার সমস্যা, পাকস্থলীর আলসার, গাঁটের সমস্যা, রক্ত আমাশয়, ডাইবেটিস সমস্যা, ডাইরিয়া, বাতের ব্যাথা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সাবান শিল্পেও ব্যবহৃত হয়।

শতমূলী মায়েদের বুকের দুধ বাড়ায়, বলকারক পিত্তনাশক, রক্ত শোধন করে। কন্দ মূলের রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে, বধ হজম ও পেট খারাপ সাড়ে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে।
শতমূলী



Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts