অর্থকরি কন্দ ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। বৃষ্টি নির্ভর নিকাশীযুক্ত সরষ উচু জমিতে আদা সহজেই লাভজনকভাবে চাষ হয়। পাহাড়ী এলাকায় ধাপ চাষে উপযুক্ত ফসল।
জাত: উড়িষ্যার জাত সুপ্রভা, (ছিবড়ে কম)। কেরালার জাত- বিওডি জানেইরাে (ছিবড়ে কম)। উত্তরবঙ্গের জাত গরুবাথান, ভেসি (ছিবড়ে বেশী)
মেয়াদ: ৮-১০ মাস।
বোনার সময়: বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ।
জমি ও মাটি: উঁচু জমি, বেলে-দোঁয়াশ ও দোঁয়াশ মাটি।
সেচ: সেচ লাগে না। উপযুক্ত নিকাশি বাবস্থা থাকা দরকার। গোড়ায় জল সহ্য করতে পারে না।
সারি ও গাছের দুরত্ব: সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সেমি বা ১০ ইঞ্চি সারিতে বীচনের দূরত্ব ২০ সেমি বা ৮ ইঞ্চি।
সার: জৈব সারের চাহিদা বেশি। বিঘাতে ১২০০ থেকে ১৫০০ কেজি দরকার হয়। এছাড়া ১৩-১৮ কেজি রাসায়নিক মিশ্র সার (১০:২৬:২৬) দিলে ভালাে। জৈব সার লাগানাের সময় অর্ধেক ৪৫ দিন পর চার ভাগের এক ভাগ এবং ৬০ দিন পর অবশিষ্ট চার ভাগের এক ভাগ হিসাবে ভাগ ভাগ করে দিলে ভালাে হয়। খড় কুটোর আচ্ছাদন দিলে ভালাে।। জমিতে সবুজ সার করে নিলে জৈব সারের খরচ কমে যায়।
বীচনের হার: ১৬০-১৭০ কেজি বীচন প্রতি বিঘায় লাগে।
বীচন লাগানাের আগে শােধন করে লাগানাে উচিত। ২০০-৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ১০-১৫ লিটার জলীয় দ্রবণে ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে বীচন শােধন করে লাগানাে যায়। নিরপট, ইকোফিট, গার্ড, ইকোডারমা, ট্রাইকোভারমি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে অমিল হলে ম্যাঙ্কোজের বা তাম্র ঘটিত রাসায়নিক দিয়েও শােধন করা যায়।
উৎপাদন: প্রতি বিঘায় ৩০-৩২ কুইন্টাল কন্দ পাওয়া যায়।
রােগপােকা: পােকার মধ্যে কন্দ ছিদ্রকারী পােকা (রাইজোম বােরার) প্রধানত দেখা যায়। কাঠা প্রতি দেড় থেকে দুই কেজি নীম খােল লাগানাের ৪০-৪৫ দিন বয়সে প্রথমবার ও ৭৫-৮০ দিন ব্যবহার করলে সারের কাজও যেমন হয় কন্দ ছিদ্রকারী পােকাও সামাল দেওয়া যায়। রােগের মধ্যে কন্দপচা (সফট রট) ও পাতা ধ্বসা রােগ সাধারণত দেখা যায়। এরােগ দেখা দেওয়া মাত্র ১০-১২ দিন অন্তর টাটকা গােববের নির্যাস ৩-৪ বার স্প্রে করলে নিরাময় হয়। এছাড়া বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডিনামে জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে নিরাময় হয়।
মন্তব্য: বেড করে মাল বা ঢাকনা দিয়ে বীচন লাগাতে হবে। পরের মরশুমের জন্য বীচন আলাদা করে তুলে না রেখে একই জায়গায় রেখে দেওয়া ভালাে। লাগানাের সময় তুলে লাগাতে হবে। ৪ সারি আদার পর ১০ সারি অড়হর ধনচে (বীজের জন্য) লাগানাে যায়।
আদার ব্যবহার:
কথাই আছে, আদা নুন খেয়ে লেগে পড়ো। এটা শুধু প্রবাদ বাক্য নয়, আদার গুরুত্ব সত্যিই অতুলনীয়।
১. ঠান্ডা এবং ফ্লু জাতীয় অসুখ কম করে ২. প্রদাহজনক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
৩. প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
৪. আদা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে
৫. পেশী ব্যথার প্রতিকার করে
৬. গুরুতর বদহজমে সাহায্যকরে
৭. বমিভাব প্রতিরোধ করে
৮. আদা লিভারকে রক্ষা করে
৯. আদা মাসিক বা পিরিয়ডের ক্র্যাম্প বা ব্যথা হ্রাস করে
১০. আদা কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে
১১. আদা খারাপ ব্যাকটিরিয়া হত্যা করতে পারে
১২.আলঝাইমার রোগ থেকে রক্ষা করে
১৩.আদা ডিএনএ রক্ষা করে
১৪. আদা অস্টিওআর্থারাইটিস বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন