অর্থকরী মশলার মধ্যে হলুদ অন্যতম। মশলার মধ্যে হলুদের চাহিদা সব চাইতে বেশি। ফল বাগানের হালকা ছায়ায় হলুদ চাষ বাড়তি আয় দেয়।
জাত: পাটনাই, কস্তুরী, আলেপ্পি। কেরালার আলেগ্নি জাতের হলুদে কুরকুমিনের পরিমাণ বেশী ও রং কমলা-হলদে হওয়ায় বিদেশের বাজারে খুব চাহিদা আছে।
মেয়াদ: ৭-৮ মাস।
বােনার সময়: চৈত্র-বৈশাখ (এপ্রিল-মে)।
জমি ও মাটি: নিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত দোয়াশ, বেলে-দোঁয়াশ মাটি। প্রচুর জৈবসার যুক্ত দোয়াশ, এটেল দোয়াশ,এমনকি এঁটেল মাটিতেও এর চাষ হতে পারে।
সারি ও গাছের দূরত্ব: সারির দূরত্ব ২৫ সেমি বা ১০ ইঞ্চি সারিতে গাছের দূরত্ব ২০ সেমি বা ৮ ইঞ্চি। ডাঙা বা আলের উপর লাগানাে হয়।
বীজের হার: বিঘা প্রতি ২-২.৫ কুইন্টাল বীচন লাগে। প্রতি হেক্টরে ১০-১৮ কুইন্টাল বীচন লাগে। বীচন বপনের পর খড় বা শুকনাে পাতা দিয়ে আচ্ছাদন দিলে অঙ্কুরোদগম রােদাম ভালা হয়। মিশ্র ফসল হিসাবে ফলের বাগানে চাষ করলে রৌদ্র ছায়ার অনুপাতে ২-৫ কুইন্টাল বীচন লাগতে পারে।
সেচ: সাধারণত বৃষ্টি নির্ভর চাষ করা হয়। বেলে-দোঁয়াশ মাটি ও খােলা জমিতে চাষ হলে (ছায়ায় নয়) শুকনাে আবহাওয়ায় ৭-১০ টি হালকা সেচ লাগতে পারে। এরকম অবস্থায় মালচ বা আচ্ছাদন ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়। সেচ কম লাগে।
পরিচর্যা: লাগানাের ২-৩ সপ্তাহ পর প্রথমবার, ৪-৫ সপ্তাহ পর দ্বিতীয়বার নিড়ানি দিয়ে গাছা বাছাই ও গােড়ার মাটি আলগা করে দেওয়া দরকর।
সার: জৈব সারের চাহিদা বেশি। বিঘাতে ১২০০ থেকে ১৫০০ কেজি দরকার হয়। এছাড়া ১৩-১৮ কেজি রাসায়নিক মিশ্র সার (১০:২৬:২৬) দিলে ভালাে। জৈব সার লাগানাের সময় অর্ধেক ৪৫ | দিন পর চার ভাগের এক ভাগ এবং ৬০ দিন পর অবশিষ্ট চার ভাগের এক ভাগ হিসাবে ভাগ ভাগ করে দিলে ভালাে হয়। খড় কুটোর আচ্ছাদন দিলে ভালাে। জমিতে সবুজ সার করে নিলে জৈব সারের খরচ কমে যায়।
সাথিফসল: অড়হর, ঢেড়শ বীজ উৎপাদনের জন্য ধনচে ইত্যাদি। চার সারি হলুদের পর এক সারি অড়হর, ঢেড়শ, ধনচে ইত্যাদি লাগানাে যাবে।
উৎপাদন: (১২-১৮ কুইন্টাল কাঁচা হলুদ বিঘা প্রতি উৎপন্ন হয় যা থেকে মােটামুটি ৫-৭ কুইন্টাল শুকনাে হলুদ প্রতি বিঘায় পাওয়া যায়।
রােগপােকা: পােকার মধ্যে রূদ ছিদ্রকারী পােকা (রাইজোম বােরার) প্রধানত দেখা যায়। কাঠা প্রতি দেড় থেকে দুই কেজি নীম খােল লাগানাের ৪০-৪৫ দিন বয়সে প্রথমবার ও ৭৫-৮০ দিন বয়সে ২য় বার গােড়ায় মাটি ধরানাের সময় জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করলে সারের কাজও যেমন হয় কন্দ ছিদ্রকারী পােকাও সামাল দেওয়া যায়।
রােগের মধ্যে কন্দ পচা (সফট রট) ও পাতা ধ্বসা রােগ সাধারণত: দেখা যায়। এরােগ দেখা দেওয়া মাত্র ১০-১২ দিন অন্তর টাটকা গােবরের নির্যাস ৩-৪ বার স্প্ে করলে নিরাময় হয়। এছাড়া বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি নামে জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে নিরাময় হয়।
ব্যবহার: মশলা ছাড়াও ওষুধ, প্রসাধন এবং রং তৈরীর কাজে হলুদ ব্যবহার হয়। খাদ্য সংরক্ষণ, শস্য সংরক্ষণের কাজে ছত্রাক ও জীবাণুনাশক হিসাবে এর ব্যবহার হয়।