এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

তরলের স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) কাকে বলে?এটি কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়?

উত্তর।
স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) : প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো তরল পদার্থের স্ফুটন শুরু হয় এবং সমগ্র তরল বাষ্পে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত সেই উষ্ণতা স্থির থাকে, তাকে ওই তরলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক বলে।

তরলের স্ফুটনাঙ্ক নিম্নলিখিত বিষয়ের দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়—
(i) তরলের প্রকৃতি : তরল পদার্থটি কী ধরনের, তার ওপর তরলের স্ফুটনাঙ্ক নির্ভর করে। উদ্বায়ী তরলের স্ফুটনাঙ্ক কম হয়। 

(ii) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : তরলে কঠিন অপদ্রব্য দ্রবীভূত অবস্থায় থাকলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়। যেমন—লবণ মিশ্রিত থাকায় সমুদ্রজলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C থেকে বেড়ে প্রায় 110°C হয়। আবার গ্যাসীয় অপদ্রব্য উপস্থিত থাকলে, তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। তরল অপদ্রব্যের ক্ষেত্রে মিশ্রণের স্ফুটনাঙ্ক উপাদান তরল দুটির স্ফুটনাঙ্কের মাঝামাঝি হয়।

(iii) তরলের উপরিস্থিত চাপ : তরলের উপরিস্থিত মাধ্যম দ্বারা প্রযুক্ত চাপ, প্রমাণ চাপ অপেক্ষা বেশি হলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি হয়। যেমন— চাপ বৃদ্ধিতে বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক প্রায় 1°C বৃদ্ধি পায়। প্রেশার কুকার, অপারেশনে ব্যবহৃত ছুরি, কাঁচি জীবাণুমুক্ত করার কাজে লাগানো হয়।

একইভাবে তরলের ওপর চাপ হ্রাস পেলে ওই তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায় অর্থাৎ, তরলটি স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা কম উষ্ণতায় ফোটে। এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ঘনীভূত দুধ তৈরি করা হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে বায়ুচাপ কম হওয়ায় জল তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা অনেক কম উষ্ণতায় ফুটতে শুরু করে। যেমন— দার্জিলিং-এ জল প্রায় 93.6°C উন্নতায় ফোটে, ফলে খাদ্যদ্রব্য ভালো সিদ্ধ হয় না। হাড়ের ধাত্রে ও দাঁতের এনামেল, ডেনটিন ও সিমেন্টামে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস মৌলগুলির যৌগ কেলাসাকারে জমা থাকে।

গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন কেন? 

উত্তর।
চাপ বাড়লে বা কমলে বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের গলনাঙ্কের মান পরিবর্তিত হয়। 76 সেমি পারদস্তম্ভের চাপে কোনো পদার্থের গলনাঙ্ক নির্ধারণ করলে তা স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হবে। কিন্তু, চাপ ওই নির্দিষ্ট মানের বেশি বা কম হলে গলনাঙ্ক আর স্বাভাবিক গলনাঙ্কের সমান হয় না। এজন্য গলনাঙ্ক নির্ধারণ করার সময় চাপ উল্লেখ করার প্রয়োজন।

অনুরূপ প্রশ্ন : কোনো তরলের স্ফুটনাঙ্ক উল্লেখ করার সময় চাপ উল্লেখ করা উচিত কেন?


প্রশ্ন: বৈদ্যুতিক লাইনে ব্যবহৃত ফিউজের গলনাঙ্ক কম হওয়া দরকার কেন?

উত্তর: বৈদ্যুতিক লাইনের ভোল্টেজ হঠাৎ করে বেড়ে গেলে অনেক বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হয়। ফলে, তার উত্তপ্ত হয়ে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফিউজ তারের উপাদানের গলনাঙ্ক কম হয়। সেজন্য, ওই তার অল্প উত্তাপে ফিউজ গলেে গিয়ে তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।

পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয় দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয়, তা আলোচনা করো।

উত্তর। পদার্থের গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্কের মান প্রত্যক্ষভাবে দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে–(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি, (ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপ।

(i) অপদ্রব্যের উপস্থিতি : বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের সঙ্গে যদি অন্য কোনো পদার্থ অপদ্রব্য হিসেবে মেশানো হয় তবে অপদ্রব্যের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক স্বাভাবিক গলনাঙ্কের তুলনায় কমে যায়।

উদাহরণ: (a) সোনার সঙ্গে খাদ মেশালে সোনার গলনাঙ্ক কমে। (b) বরফের সঙ্গে লবণ 3 : 1 ওজন অনুপাতে মেশালে মিশ্রণের উষ্ণতা 0°C অপেক্ষা অনেক কম (প্রায় – 23°C) হয়। (c) ফিউজ তারে ব্যবহৃত রোজ মেটাল (Pb + Sn + Bi) একটি সংকর ধাতু, যার গলনাঙ্ক প্রায় 95°C যদিও এর উপাদান ধাতুগুলির কোনোটিরই গলনাঙ্ক 210°C-এর কম নয়।


(ii) বায়ুমণ্ডলীয় চাপের প্রভাব : গলনাঙ্কের মান বায়ুমণ্ডলীয় চাপের দ্বারা দু-ভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকেে। 

(a) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি হয় চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ, সেগুলি স্বাভাবিক গলনাঙ্ক অপেক্ষা বেশি উষ্ণতায় গলে। এক্ষেত্রে, গলনের ফলে যেহেতু আয়তন বৃদ্ধি হয়, তাই চাপ বৃদ্ধিতে গলন প্রক্রিয়া বাধা পায়। সুতরাং, অবস্থান্তর ঘটানোর জন্য উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ গলনাঙ্ক বাড়ে।
উদাহরণ : তামা, রুপো, মোম ইত্যাদি। এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বৃদ্ধিতে মোমের গলনাঙ্ক 0.04°C বৃদ্ধি পায়।


(b) গলনের ফলে যেসব পদার্থের আয়তন হ্রাস পায়, চাপ বৃদ্ধিতে তাদের গলনাঙ্ক হ্রাস পায়। এজাতীয় পদার্থগুলির ক্ষেত্রে, গলনের ফলে আয়তন যেহেতু হ্রাস পায় তাই চাপ বৃদ্ধিতে তাদের আয়তন সংকোচন সহজে হয় অর্থাৎ, গলনাঙ্ক কমে।
উদাহরণ : বরফ, ঢালাই লোহা, পিতল ইত্যাদি।

লীনতাপ (Latent heat) কাকে বলে? এর প্রকারভেদগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর।
লীনতাপ (Latent heat): একক ভরের কোনো পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ বা অপসারণ করতে হয়, তাকে ওই পদার্থের অবস্থান্তরের লীনতাপ বা লীনতাপ বলা হয়।

প্রকারভেদ: অবস্থাস্তরের সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করে লীনতাপের চার রকম  বর্তমান।
(i) গলনের লীনতাপ,
(ii) কঠিনীভবনের লীনতাপ,
(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ ও
(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ।

(i) গলনের লীনতাপ (Latent heat of fusion) : প্রমাণ চাপে কোনো কঠিন পদার্থের একক ভরের উয়তা স্থির রেখে সমগ্র কঠিন পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োজন হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই পদার্থের গলনের লীনতাপ বলে। যেমন—বরফ গলনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম বা 336× 10 জুল/কেজি।

(ii)কঠিনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of solidification) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো তরল পদার্থের উয়তা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরল পদার্থকে কঠিনে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের কঠিনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন— জলের কঠিনীভবনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম।

(iii) বাষ্পীভবনের লীনতাপ (Latent heat of vaporization) : প্রমাণ চাপে কোনো তরল পদার্থের একক ভরের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র তরলকে বাষ্পে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকেই ওই পদার্থের বাষ্পীভবনের লীনতাপ বলা হয়। যেমন— বিশুদ্ধ জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম বা মতান্তরে 540 ক্যালোরি/গ্রাম বা 2268 × 103 জুল/কেজি।

(iv) ঘনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of condensation) : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো গ্যাসীয় পদার্থের উন্নতা অপরিবর্তিত রেখে সমগ্র গ্যাসীয় পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশিত হয়, তাকে ওই পদার্থের ঘনীভবনের লীনতাপ বলে। যেমন—জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম।

জেনে রাখা ভালো: লীনতাপ গ্রহণ বা বর্জনে অণুগুলির বিন্যাস পরিবর্তিত হয়। এই তাপ পদার্থের উয়তা বাড়ায় না বা কমায় না, তাই থার্মোমিটার দ্বারা লীনতাপ মাপা যায় না। ক্যালোরিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে লীনতাপ পরিমাপ করা হয়।

একটি সক্রিয়তামূলক কাজের মাধ্যমে দেখাও যে, চাপ হ্রাসে তরলের স্ফুটনাঙ্ক হ্রাস পায়।

উত্তর।
নিম্নলিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে দেখানো যায়— চাপ কমলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে।

উপকরণ : (i) একটি ইনজেকশন সিরিঞ্জ, (ii) পরিমাণমতো ফুটন্ত জল, (iii) জল গরম করার পাত্র, (iv) বার্নার।

পরীক্ষা পদ্ধতি : (i) পাত্রে পরিমাণমতো জল নিয়ে বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করা হল। (ii) জল ফুটতে শুরু করার ঠিক আগের মুহূর্তে ইনজেকশন সিরিঞ্জের মুখটি জলে ডুবিয়ে পিস্টনটি নিজের দিকে টানা হল, যাতে কিছু পরিমাণ উষ্ণ জল সিরিঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে। এই অবস্থায় সিরিঞ্জের অভ্যন্তরে থাকা জলের উষ্ণতা স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অর্থাৎ, 100°C অপেক্ষা কম হয়। (iii) এবার সিরিঞ্জের মুখটি প্রদর্শিত চিত্রের মতো আঙুল দিয়ে চেপে বন্ধ করে সিরিঞ্জের পিস্টন পুনরায় পিছনের দিকে টেনে আনা হল। (iv) এই অবস্থায় জল ফুটতে শুরু করবে। কারণ আঙুল দিয়ে বন্ধ রাখার জন্যে ভেতরের চাপ কমে গেছে। 
সিরিঞ্জ


বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

বরফের চাঁই খোলা অবস্থায় রাখলে তা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় কেন?

উত্তর।
বরফের চাঁই-এর সংলগ্ন বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় এবং বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকে। বরফের চারপাশে এই ভাসমান জলকণাগুলিকেই বরফখণ্ড থেকে নির্গত ধোঁয়া বলে মনে হয়।

তাপ সঞ্চালন কাকে বলে? কী কী পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়?

উত্তর।

তাপ সঞ্চালন (Transmission of heat) : উন্নতর স্থান থেকে অপেক্ষাকৃত কম উস্ন স্থানে তাপ সঞ্চালিত হবার ঘটনাকে তাপ সঞ্চালন বলে। তাপ সঞ্চালন তিনভাবে হতে পারে, যথা—পরিবহণ, পরিচলন ও বিকিরণ।

বাতাসে ধূলিকণার উপস্থিতির সঙ্গে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্পর্ক আছে কি?

উত্তর।
বাতাসে ধূলিকণা উপস্থিত থাকে বলেই মেঘ সৃষ্টি তথা বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। সূর্যের তাপে বড়ো জলাশয়, নদী, সমুদ্রের উপরিতল থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুতে মিশে যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু হালকা হয়ে উপরে ওঠে এবং একসময় বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেয়ে শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে এলে ঘনীভবনের ফলে জলবিন্দুতে পরিণত হয় ও বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভেসে বেড়ায়। একেই মেঘ বলে। তাই ধূলিকণা বাতাসে না থাকলে মেঘের অস্তিত্ব থাকত না, ফলে বৃষ্টিও হত না।

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থাকলে শিশির জমে না কেন?

উত্তর।

মেঘমুক্ত আকাশ শিশির জমার পক্ষে উপযুক্ত। কারণ— মেঘের অনুপস্থিতিতে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়। কিন্তু মেঘলা আকাশে ভূপৃষ্ঠ দ্বারা বিকীর্ণ তাপ মেঘের স্তরে প্রতিফলিত হয়ে আবার ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। ফলে, ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বাতাসের উদ্ভূতা কমে শিশিরাঙ্কের নীচে নামতে পারে না। ফলে সহজে শিশির জমে না।

ভালো শিশির পড়ার শর্ত কী?

উত্তর।

ভালো শিশির পড়ার শর্ত হল—
  1. আকাশ পরিষ্কার ও মেঘহীন থাকবে
  2. বায়ুর আর্দ্রতা বেশি হতে হবে,
  3. বাতাস স্থির থাকতে হবে,
  4. তাপের ভালো বিকিরক ও কুপরিবাহী পদার্থের সংস্পর্শে থাকা বস্তু
  5. ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বস্তুর উপস্থিতি।
জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্ক অপেক্ষা কম হলে কী হবে?

উত্তর।
জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ুর উন্নতা শিশিরাঙ্কের নীচে এলে ওই উন্নতার বায়ু আরও কম জলীয়বাষ্প ধরে রাখতে পারবে। জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় রূপান্তরিত হবে। ফলে শিশির, কুয়াশা ইতাদি প্রাকৃতিক ঘটনাগুলি ঘটবে।

সন্ধেবেলা শিশির পড়ে না, অথচ গভীর রাতে বা ভোরের দিকে শিশির পড়ে কেন?

উত্তর।
সারাদিন সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ গরম হয় এবং সংলগ্ন বায়ুও গরম হয়। ভূপৃষ্ঠ ঠান্ডা হতে কিছুটা সময় লাগে, সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই ঠান্ডা হয় না। ফলে, ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নামে না, তাই সন্ধেবেলায় শিশির পড়ে না। গভীর রাতে বা ভোরের দিকে ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়। ফলে বায়ুর উষ্ণতা একসময় শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে যায় ও শিশির পড়ে।

শরৎকালের ভোরে খোলা আকাশের নীচে রাখা লোহা ও কাঠের চেয়ারের মধ্যে কোনটিতে প্রথম শিশির জমবে?

উত্তর।
তাপের কুপরিবাহী বস্তুর উপর শিশির দ্রুত জমে। কারণ— এক্ষেত্রে বস্তু দ্রুত তাপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় সংলগ্ন বায়ু সহজে শীতল হয় এবং উয়তা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে শিশির পড়ে। কাঠ কুপরিবাহী পদার্থ হওয়ায় কাঠের উপর প্রথম শিশির দেখা যাবে।

মেঘলা রাতে ভালো শিশির পড়ে না কেন?

উত্তর।
আকাশ মেঘলা থাকলে, ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর থেকে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর ভেদ করে যেতে পারে না, বরং বেশিরভাগ তাপই মেঘ দ্বারা প্রতিফলিত হয়। ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী বায়ুস্তরের উয়তা সহজে শিশিরাঙ্কের নীচে নামতে পারে না। তাই মেঘলা রাতে ভালো শিশির পড়ে না।

বড়ো বড়ো শহরে বা শিল্পাঞ্চলে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয় কেন?

উত্তর।
বড়ো বড়ো শহরে বা শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত বায়ুতে ধুলো ছাড়াও কার্বন, সালফার ইত্যাদির কণা থাকে। এ ছাড়া, কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়াও বায়ুতে এসে মেশে। ফলে, ওই সব অঞ্চলে কুয়াশা হলে তা ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা মিলিয়ে যায় কেন?

উত্তর। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়, ফলে ভূত্বক সংলগ্ন বায়ুর উয়তাও বাড়ে। বর্ধিত উন্নতায় বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ু পুনরায় অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। উত্তপ্ত বায়ু থেকে লীনতাপ সংগ্রহ করে কুয়াশা হিসেবে ভাসমান জলবিন্দুগুলি আবার বাষ্পে পরিণত হয়। তাই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা মিলিয়ে যায়৷

জেনে রাখা ভালো: উৎপত্তিগতভাবে অভিন্ন হওয়ায় মেঘ ও কুয়াশার মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। প্রাকৃতিক ঘনীভবনের ফলেই দুইয়ের উৎপত্তি। শুধুমাত্র তফাত এই যে, কুয়াশার তুলনায় মেঘ বায়ুমণ্ডলের অনেক উপরের স্তরে অবস্থান করে। প্রকৃতপক্ষে মেঘ হল ঊর্ধ্বাকাশের কুয়াশা।

তোমাকে 50°C উষ্ণতার সম্পৃক্ত নুনের দ্রবণ দেওয়া হল। তুমি ওই দ্রবণের উষ্ণতা ধীরে ধীরে কমাতে থাকলে। কী হবে বলো? 

উত্তর:সম্পৃক্ত নুনের দ্রবণের উয়তা কমাতে থাকলে ওই দ্রবণে নুনের দ্রাব্যতা কমে যাবে। ফলে, কিছুটা নুন থিতিয়ে পড়বে। তবে দ্রবণটি এই অবস্থাতেও সম্পৃক্ত থাকবে।

কোনো মহাকাশচারী 20°C উষ্ণতায় জল ফ্লাস্কে করে চাঁদের পৃষ্ঠে নিয়ে গিয়ে ওই জল একটি বিকারে ঢাললে তিনি কী দেখবেন?

উত্তর।
চাঁদে বায়ুমণ্ডলে না থাকায় সেখানে বায়ুচাপ শূন্য। বায়ুশূন্য স্থানে জলের স্ফুটনাঙ্ক তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষা অনেক কম। তাই মহাকাশে থাকাকালীন বিকারে জল ঢালার সময় জলের উপর চাপ শুধুমাত্র 20°C উষ্মতার জলীয়বাষ্প চাপের সমান হয়, যা অতি নগণ্য। এই উপেক্ষণীয় চাপে জল দ্রুত ফুটে বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে এবং বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় লীনতাপ বিকারের জল থেকেই সংগ্রহ করে। ফলে বিকারের অবশিষ্ট জলের উষ্ণতা দ্রুত হ্রাস পায় এবং একসময় তা বরফে পরিণত হয়।

রান্নার সময় পাত্রের মুখে ঢাকনা দিয়ে চেপে রান্না করলে খাদ্যবস্তু তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যায় কেন?

উত্তর: পাত্রের মুখে ঢাকনা দিয়ে রাখলে তাপের ফলে উৎপন্ন জলীয়বাষ্প পাত্রের মধ্যেই জমা হয়, বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে না। আর জলীয়বাষ্প যত বাড়ে, বাষ্পচাপও তত বাড়ে। ফলে জলের স্ফুটনাঙ্কও বেড়ে যায় ও খাদ্যবস্তু তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যায়।
যেমন : প্রেশার কুকার

একটি জলপূর্ণ বিকার টেবিলের উপর রেখে বিকারের জলে বাষ্প চালনা করলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপে জল ফোটানো যাবে কি?

উত্তর: এক্ষেত্রে বিকারের জল, সরবরাহ করা বাষ্প থেকে তাপগ্রহণ করে নিজের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। এভাবে যে মুহূর্তে জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক অর্থাৎ, 100°C হবে তখন জল ও বাষ্প উভয়ের উষ্ণতা সমান হয়ে যাওয়ায় তাপীয় আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ওই জল বাষ্প থেকে আর তাপ গ্রহণ করতে পারবে না। তাই ওই জল 100°C উষ্ণতায় থেকে যাবে, ফুটবে না ৷

প্রেশার কুকারে খাদ্যবস্তু তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয় কেন?

উত্তর: চাপ বাড়ালে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বাড়ে-প্রেশার কুকারে এই নীতি কাজে লাগানো হয়। প্রেশার কুকারে জলসহ খাদ্যবস্তু নিয়ে ঢাকনাটি বায়ু নিরুদ্ধভাবে বন্ধ করে তাপ দেওয়া হয়। এর ফলে উৎপন্ন জলীয়বাষ্প পাত্রের মধ্যে জমা হতে থাকে ও বাষ্পচাপ ক্রমশ বাড়ে। এখন পিন ভাল্বটিকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে ভিতরের বাষ্পচাপ 2 বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সমান হয়। এই চাপে জলের স্ফুটনাঙ্ক প্রায় 120°C হয়। এই উচ্চ তাপমাত্রায় ফুটন্ত জলে খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয় ও রান্না দ্রুত হয়।

চাপ বাড়ালে স্ফুটন প্রক্রিয়া বাধা পাবে, নাকি স্ফুটন প্রক্রিয়ার সাহায্য হবে?

উত্তর।
স্ফুটনে তরল বাষ্পীভূত হয়। অর্থাৎ, আয়তনে প্রসারিত হয়। চাপ বাড়ালে আয়তন প্রসারণ বাধা পাবে। তাই চাপ বাড়ালে স্ফুটন প্রক্রিয়া বাধা পাবে এবং স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যাবে।

মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১

বরফ গলনের লীনতাপ 80 ক্যালোরি/গ্রাম হলেও জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম এই পার্থক্যের কারণ কী ?

উত্তর। কোনো পদার্থের কঠিন থেকে তরলে রূপান্তরিত হওয়ার সময় আন্তরাণবিক ব্যবধান বৃদ্ধি যতটা হয়, তরল থেকে গ্যাসে পরিণত হলে ওই ব্যবধান অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, দ্বিতীয়ক্ষেত্রে এই আন্তরাণবিক আকর্ষণের বিরুদ্ধে অনেক বেশি কৃতকার্য করতে হয়। এই কার্যের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয় লীনতাপ। তাই গলন অপেক্ষা বাষ্পীভবনের লীনতাপের মান যে-কোনো পদার্থের ক্ষেত্রেই বেশি হয়।

শীতকালে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগানো হয় কেন?

উত্তর:
শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকে। জলীয়বাষ্পের ঘাটতি পূরণ করার জন্য বায়ুমণ্ডল আমাদের দেহের উন্মুক্ত মাংসল অংশ, যেমন ঠোঁট, চামড়া ইত্যাদি থেকে জলীয়বাষ্প শোষণ করে। ফলে অংশগুলির আর্দ্রতা কমে যায় এবং অংশগুলি শুষ্ক ও খসখসে হয়ে পড়ে। তাই ঠোঁট ফাটে। গ্লিসারিন অনুদ্বায়ী তরল বলে ফাটা ঠোটে বা চামড়ায় লাগালে তা বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প শোষণ করে এবং ঠোট থেকে জলীয়বাষ্পের বাষ্পায়নে বাধা দেয়। ফলে ঠোঁট ও চামড়ার আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং সেগুলি ফেটে যায় না বা খসখসে হয় না।


গ্রীষ্মকালে কুকুর জিভ বের করে হাঁপায় কেন?

উত্তর:

কুকুরের স্বেদগ্রন্থি(ঘর্মগ্রন্থী) তার জিভে থাকে। শারীরিক পরিশ্রমে বিক্রিয়াজাত পদার্থ হিসেবে উৎপন্ন জল বা রেচনের মাধ্যমে বিপাকজাত পদার্থ হিসেবে উৎপন্ন জলীয় পদার্থ (ঘাম) অপসারণের জন্য কুকুর তার জিভ বাইরে বের করে রাখে। ওই জল জিভ সংলগ্ন অংশ থেকে প্রয়োজনীয় লীনতাপ শোষণ করে বাষ্পীভূত হয়, ফলে দেহের অতিরিক্ত তাপ অপসারিত হয়, যা শরীরের উষ্ণতা কমায়। এতে কুকুর আরাম বোধ করে।


গরম চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করার জন্য তুমি কী করবে? কেন করবে?

উত্তর। গরম চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করার জন্য ডিশে বা প্লেটে ঢেলে নিতে হবে। এতে চায়ের উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেড়ে যাওয়ায় বাষ্পায়ন দ্রুত হবে। বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীনতাপ মুলত গরম চা থেকেই সংগৃহীত হয় বলে চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যাবে।

গরমকালে ঘামে ভেজা শরীরে হাওয়ার সামনে দাঁড়ালে আরাম হয় কেন? সেই সময় ঘাম কি শুকিয়ে যায়? ঘামের এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য কী দরকার? এবং তা কোথা থেকে পায়? 

উত্তর।
গরমকালে ঘামে ভেজা শরীরে হাওয়ার সামনে দাঁড়ালে দেহে শীতলতার অনুভূতি হয়। তাই আরাম লাগে। সেই সময় ঘাম শুকিয়ে যায় অর্থাৎ, বাষ্পীভূত হয়। ঘামের এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য লীনতাপ দরকার।
ঘাম বাষ্প হওয়ার জন্য যে লীনতাপের দরকার হয়, ঘাম তা দেহ থেকে শোষণ করে।

বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১

বর্ষাকালে ভিজে জামাকাপড় শুকোতে দেরি হয়। কিন্তু শীতকালে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় কেন?

উত্তর:
বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় বাষ্পীভবনের হার কমে যায় তাই ভিজে জামাকাপড় শুকোতে দেরি হয়। কিন্তু শীতকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্প কম থাকে বলে বাষ্পীভবনের হার বেশি হয়। তাই ভিজে জামাকাপড় থেকে জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে, শীতকালে ভিজে জামাকাপড় বর্ষাকালের তুলনায় তাড়াতাড়ি শুকোয় ৷

দুটি একই মাপের কাপড়কে একইরকমভাবে জলে ডোবাও। দুটি টুকরোকেই একইরকমভাবে নিংড়ে নাও। এবার একটি কাপড়ের টুকরোকে কয়েকটি ভাজ করে শুকোতে দাও। তার পাশে অন্য কাপড়ের টুকরোটিকে না ভাঁজ করে সম্পূর্ণ খুলে শুকোতে দাও। কোন্ কাপড়টি আগে শুকিয়ে গেল? ঘটনাটি থেকে কী সিদ্ধান্ত নিতে পারো?

উত্তর:
সম্পূর্ণ খুলে শুকোতে দেওয়া কাপড়টি আগে শুকিয়ে যাবে।

ঘটনাটি থেকে বলা যায়, জল তার উপরিতল থেকে বাষ্পে পরিণত হয়। তরলের উপরিতলের ক্ষেত্রফল যত বাড়ে তরলের বাষ্পীভবন তত দ্রুত হয়। একারণে ভাজ করা কাপড়টি পরে শুকাবে, কারণ তার উপরিতলের ক্ষেত্রফল কম। আর খুলে শুকোতে দেওয়া কাপড়টি দ্রুত শুকোবে, কারণ তার উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেশি।

পারদ থার্মোমিটারের কুণ্ডে ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখলে কী দেখা যায়? 

উত্তর। থার্মোমিটারের কুণ্ডে ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখলে ভিজে কাপড়ের জল কুণ্ড ও কুণ্ডে থাকা পারদ থেকে লীনতাপ শোষণ করে বাষ্পীভূত হয়। ফলে, পারদের উষ্ণতা কমে গিয়ে পারদসূত্র নীচে নেমে আসে।


একটি পাত্রে জল নিয়ে তা উনুনে বসিয়ে ফোটাতে থাকলে কী দেখা যাবে? কেন? 

উত্তর:

একসময় সমস্ত জল ফুটতে ফুটতে শেষ হয়ে যায় ও পাত্রটি খালি হয়ে যায়।
উনুনে বসিয়ে পাত্রের জল ফোটালে সমস্ত জল ফুটতে ফুটতে বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। তাই পাত্রটি খালি হয়ে যায়।


বাষ্পায়নের ফলে শীতলতার উৎপত্তির কারণ কী?

উত্তর:
তরল বাষ্পে রূপান্তরিত হওয়ার সময় তাকে বাষ্পীভবনের লীনতাপ সরবরাহ করতে হয়। বাষ্পায়নের সময় বাইরে থেকে তাপ সরবরাহের সুযোগ না থাকায় তরল নিজ দেহ বা সংলগ্ন পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় লীনতাপ সংগ্রহ করে বাষ্পীভূত হয়। তাই তরল বা তার কাছাকাছি অংশের বায়ু বা অন্যান্য বস্তু শীতল হয়ে পড়ে।


পারিপার্শ্বিক উষ্ণতা 0°C বা তার কম হলে বিশুদ্ধ বরফ গলতে পারে না কেন(ধরে নেওয়া যাক অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত আছে)? 

উত্তর:
বিশুদ্ধ বরফ গলনের লীনতাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম। বরফ গলার সময় এই প্রয়োজনীয় লীনতাপ পরিপার্শ্ব থেকে গ্রহণ করে। কিন্তু পরিপার্শ্বের উষ্ণতা 0°C বা তার কম হলে বরফ লীনতাপ সংগ্রহ করতে পারে না। তাই বরফ গলতে পারে না।


বরফ টুকরোর মধ্যে গর্ত করে জল রাখলে ওই জল জমে বরফ হয় না কেন?

উত্তর:
বরফ টুকরোর মধ্যে গর্ত করে জল রাখলে, ওই গর্তে ঢালা জল এবং বরফের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য থাকায়, ওই জল তাপ বর্জন করে শীতল হবে এবং সেই তাপ গ্রহণ করে কিছু পরিমাণ বরফ গলবে। এই তাপীয় আদানপ্রদানের ফলে, উষ্ণতা কমতে কমতে যখন 0°C হয়, তখন জল আর তাপ বর্জন করতে সক্ষম হবে না, কারণ উষ্ণতা সমান হলে তাপীয় সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাপের আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় 0°C উষ্ণতায় থাকা জল কঠিনে অর্থাৎ, বরফে রূপান্তরিত হতে প্রয়োজনীয় লীনতাপ সংলগ্ন পরিবেশে অর্থাৎ বরফে বর্জন করতে ব্যর্থ হবে, ফলে ওই জল জমে বরফ হয় না।


সূর্য থেকে পৃথিবীতে কোন্ পদ্ধতিতে তাপ আসে? তোমার সিদ্ধান্তের কারণ কী?

উত্তর:

সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে বিকিরণ পদ্ধতিতে। সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে বেশিরভাগ অংশেই কোনো জড় মাধ্যমের অস্তিত্ব নেই। একমাত্র বিকিরণ পদ্ধতিতেই কোনো মাধ্যম ছাড়া তাপ সঞ্চালিত হয় ৷ পরিবহণও পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যমের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে, সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ আসে বিকিরণ প্রণালীতে।


আইসক্রিমের বাক্সে বা রেফ্রিজারেটরের(Refrigerator) দেয়ালে দুটি স্তর থাকে কেন?

উত্তর:
আইসক্রিমের বাক্স বা রেফ্রিজারেটরের(Refrigerator) বহিরাবরণ দুই দেয়ালবিশিষ্ট হয়। এই দুই দেয়ালের মধ্যবর্তী অংশ তাপের কুপরিবাহী কাচতন্তু (Glasswood) দ্বারা পূর্ণ থাকে। কাচতন্তুর মধ্যবর্তী ফাকা অংশে থাকে বায়ু। বায়ু ও কাচতন্তু উভয়ই তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় পরিবহণ বা পরিচলন পদ্ধতিতে বাইরে থেকে তাপ সহজে বাক্স বা রেফ্রিজারেটরের ভিতর আসতে পারে না। তাই আইসক্রিম সহজে গলে যায় না এবং রেফ্রিজারেটরের অভ্যন্তরও দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠান্ডা থাকে।



শীতপ্রধান দেশগুলিতে গ্রিন হাউসে (Green house) গাছপালা সতেজ থাকে কেন? 

উত্তর:
শীতপ্রধান দেশগুলিতে শৌখিন গাছপালা, সবজি, ফল ইত্যাদি সতেজ রাখার জন্য কাচের ঘর বা গ্রিন হাউসে(Green House) রাখা হয়। কাচ মাধ্যমে তাপীয় বিকিরণ ঘটায় দিনেরবেলায় সূর্য থেকে আসা ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য কাচ ভেদ করে ঘরের ভিতর আসে ও গাছপালা সালোকসংশ্লেষ করে। কিন্তু ঘরের ভিতরে থাকা গাছপালা অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণতায় বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাপ বিকিরণ করে যা কাচ ভেদ করে বাইরে যেতে পারে না, ফলে ঘরের ভেতর যথেষ্ট গরম থাকে এবং উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকে। এ কারণে গ্রিন হাউসের মধ্যে গাছপালা সতেজ থাকে।

Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts