অর্থকরি ফসল হিসাবে এর চাহিদা প্রচুর। শিশু খাদ্য হিসাবে বিস্কুট শিল্পে এরারুটের ব্যবহার হয়ে আসছে। পাট ও সতী বস্ত্র শিল্পে এর ব্যবহার অপরিহার্য।
জাত: দেশী, গুইনা এরারুট, সুইট কর্ন রুট, টাম্বু, টপিটাম্বু, ডেলডেল, তিরিটি, ইত্যাদি।
দেখতে কেমন: এরারুট গাছ দেখতে ঠিক হলুদের মতাে। লম্বা লম্বা পাতা, দুহাত মতাে উচ্চতা এবং মাটির নীচে হলুদের মতাে বা আদার মতাে বা তারচেয়ে একটু মোটা ও লম্বা শাখা প্রশাখা যুক্ত আঙুলের মত কন্দ হয়।
বোনার সময়: বর্ষার একমাস আগে থেকে গর্তের মাটি তৈরী করে বীচন কন্দ (টিউবার অংশ রাইজোম) লাগানাে হয়ে থাকে। ফলন বাড়ানাের জন্য বেড তৈরী করে তাতে রাইজোম বা শাখা কন্দ লাগানাে হয়। কোনও কোনও অঞ্চলে শীতকালে এর চাষ করা হয়ে থাকে।
জমি/মাটি: পড়ে থাকা পতিত জমি যেখানে জল জমবে না এবং ২-৩ বছর ফেলে রাখা যাবে এমন আওতা জায়গায় এই চাষ হয়ে থাকে। যে কোন ও মাটিতে হয় তবে বেলে দোঁয়াশ বা এটেল মাটি হলে জৈব সার মিশিয়ে হালকা ঝুরঝুরে উর্বর করে নিতে হয়, মাটিতে কোনও অবস্থায় যাতে জল না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়।
গাছের ও সারির দূরত্ব: সারি থেকে সারির দূরত্ব ৮০-৯০ সেমি এবং সারিতে ৪৫ সেমি দূরে দূরে বীচন কন্দ লাগানাে হয়। বীচন লাগানাের ১৫ দিন আগে বেড়ে গর্ত করে প্রতি গর্তে ২-৩ মুঠো করে গােবর বা কম্পােস্ট সার ভর্তি করে রাখতে হবে। বর্ষার ১৫-২০ দিন আগে গর্তের মাঝখানে বাঁচন কন্দ লাগাতে হবে এবং প্রয়ােজনে অল্প জল দিতে হবে।
সেচ: সেচ একেবারে লাগে না বললেই চলে। গাছ লাগানাে থেকে ফসল তােলা পর্যন্ত আড়াই থেকে ৩ বছর সময় লাগে। তাই প্রথম ২ বছর গাছের অবস্থা দেখে প্রচন্ড জলের টান দেখা দিলে এক দুবার সেচ দেওয়া যেতে পারে।
ফলন: গাছ প্রতি ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ফলন হয় তবে ঠিকমতো জৈব সার, জল ইত্যাদি পরিচর্যা করলে আড়াই কেজি পর্যন্ত প্রতি গাছে ফলন পাওয়া যায়।
রােগপােকা: পােকার মধ্যে কান্ড ছিদ্রকারী পােকা (রাইজোম বােরার) প্রধানত দেখা যায়। কাঠা প্রতি দেড় থেকে দুই কেজি নাম খােল লাগানাের ৪০-৪৫ দিন বয়সে প্রথমবার ও ৭৫-৮০ দিন বয়সে ২য় বার গোড়ায় মাটি ধরানাের সময় জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করলে সারের কাজও যেমন হয় কান্ড ছিদ্রকারী পােকাও সামাল দেওয়া যায়। রােগের মধ্যে কন্দ পচা (সফট বট) ও পাতা ধ্বসা রােগ সাধারণত: দেখা যায়। এরােগ দেখা দেওয়া মাত্র ১০-১২ দিন অন্তর টাটকা গােবরের নির্যাস ৩-৪ বার স্প্রে করলে নিরাময় হয়। এছাড়া বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম টাইকোডারমা ভিরিডি নামে জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে নিরাময় হয়।
ব্যবহার: কন্দে ১৩-১৫ শতাংশ স্টার্চ, ৬.৬ শতাংশ প্রােটিন এবং অ্যামাইনাে অ্যাসিড (ট্রাইনােকান) থাকে। প্রত্যহ বাচ্চা ও বড়দের সহজ পাচ্য খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হওয়া ছাড়াও পােষাক-এর কলপ দিতে ব্যবহার হয়। এর সুগন্ধি স্যালাড টাটুকা খাবার হিসাবে ব্যবহার হয়। এর পাতার রং ঔষধ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে ক্ষত, পুঁজ হলে, মৃত্র নালীর অসুখে-ব্যবহার করা যায়। সবুজ পাতা সদ্যজাত বাচ্চার বিছানার চাদর তৈরীতে ব্যবহৃত হয় কারণ এর পাতা খুবই শক্ত এবং অনেকদিন রাখা যায়। পম্মিবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে এর পাতা বিভিন্ন রকমারি পণ্যের যেমন মাংস,মাছ ইত্যাদির মােড়ক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা বিভিন্ন হােটেলের শালপাতা, পদুনপাতা বা কলাপাতার বিকল্প হিসাবেও ব্যবহার করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন