এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১

আলুর প্রকৃত বীজ থেকে আলু চাষ ও বীজ বা বীচন আলু উৎপাদনের পদ্ধতি

আলুর প্রকৃত বীজ থেকে আলু চাষ বীজ বা বীচন আলু উৎপাদনের পদ্ধতি

আমরা বীজ বা বীচন আলু থেকেই আলু চাষ করে অভ্যস্থ। আমরা অনেকেই জানিনা আলুর টমেটো, বেগুনের মত ফলহয়,বীজ হয় আর তা থেকে আলু চাষও করা যায় আলুর ফল থেকে যে বীজ সংগ্রহ করা হয় তাষ্ট্রে প্রকৃত আলুবীজ বা টু পটাটো সিড বা সংক্ষেপে টি.পি.এস. বলা হয়। এই টি.পি.এস বা প্রকৃত আলুবীজ উৎপাদন করতে হলে বিশেষ ব্যবস্থা ও কৌশল দরকার হয় যা সর্বত্র সবার জন্যও সব পরিবেশে উপযুক্ত নয়। দেশের উত্তর পূর্ব ও উস্ক্রাঞ্চলের কেন্দ্রীয় আলু অনুসন্ধান সংস্থা, সিমলা ও ত্রিপুরা সরকারের উদ্যান অনুসন্ধান কেন্দ্র, নাগিছড়া এই বীজ উৎপাদন ও বিপনন করে থাকেন। ৭৫ বিঘা চাষের জন্য এক কিলাে প্রকৃত বীজ দরকার হয়। আমাদের রাজো ইলামবাজার, লাভপুর, ইটাহার, হরিরামপুর, কালচিনি ও ঝালদা-২ নং ব্লকে আন্তর্জাতিক আলু বর্ষে (২০০৭ সাল) এইচ পি এস - ১/১৩ জাতের বীজ নিয়ে বেশ কিছু চাষী এই চাষ করছে।

প্রকৃত বীজ থেকে দুটো উদ্দেশ্যে আলুর চাষ হয়:

) বীজ থেকে চারা তৈরী করে আল উৎপাদন

) বীজ থেকে চারা তৈরী করে বীজ আলু বা বীচন আলু (আলুর ছােট ছােট কন্দ) উৎপাদন

এখানে মূলত প্রকৃত আলু বীজ থেকে খাবার যােগ্য বাজারের উপযুক্ত আলু চাষ পদ্ধতি আলােচনা করা হল। এই পদ্ধতিতে চাষের জন্য নিশ্চিত সেচের প্রয়ােজন হয়

প্রকৃত বীজ থেকে ধাপে ধাপে চারা তৈরী -


ক) এক বিঘা আলু চাষের জন্য মাত্র ১৬-১৭ গ্রাম। প্রকৃত বীজ দরকার হয়। প্রথমে বীজতলায় চারা তৈরী করতে হবে। এক বিঘার জন্য ১০ বর্গ মিটার অথাৎ ১ মিটার চওড়া ১০ মিটার লম্বা নার্সারী বা বীজ তলা লাগবে। আপনার বীজতলার জায়গা অনুযায়ী বীজতলার বেড়ের দৈর্ হেরফের হবে।

খ) বীজ তলার জায়গাটির উপর থেকে ২-৩ ইঞ্চি মাটি সরিয়ে ফেলতে হবে। ২-৩ ইঞ্চি তলার মাটি বীজতলার জন্য নিতে হবে।

গ) এবার বীজতলার জন্য সার মাটি তৈরী করতে হবে।এবার মাটির সাথে সম পরিমান ভাল পচা গােবর সার বা কন্পােষ্ট বা ভা্মিকন্পােষ্ট সার বা বায়াে গ্যাসের স্লারি মিহি করে মিশিয়ে সমান ভাবে বেড তৈরীর জন্য বিছিয়ে নিতে হবে। এরপর ভাল মানের গােবরসার বা কম্পােষ্ট সার বা ভার্মি কম্পােষ্ট বা বায়ােগ্যাসের স্লারি গুঁড়াে করে চালনীতে ছেঁকে বেডের সার মাটির উপর ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে সমান ভাবে বিছিয়ে দিতে হবে। এ ভাবে বেত্রে উচ্চতা প্রায় চার ইঞ্চি দাঁড়াবে। বেডের চার পাশে ইট বা বাঁশ, কাঠের আল বেঁধে দেওয়া দরকার যাতে বেডের মাটি ধুয়ে না যায়।

 

চারা তৈরী

) বীজ বােনার আগের দিন হালকা সেচ দিয়ে বেডের মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।

খ) পরের দিন হালকা কোদালী করে মাটি কুপিয়ে ঝড়ঝুড়ে করে সমান করে সাজিয়ে নিতে হবে, যাতে মাটিতে উপযুক্ত রস থাকে। এতে বীজ একসাথে ভাল ভাবে অঙ্কুরিত হবে

গ) এবার বেডের আড়াআড়ি ১০ সেমি বা ইঞ্চি তফাতে - মি.মি. গভীর করে বাশের আঁকশি বা দাঁড়া দিয়ে দাগ টেনে দাগ বরাবর বীজ বুনতে হবে- যেমন কপি, টমেটোর বীজ বােনা হয়। বীজের দুরত্ন ঠিক রাখা কঠিন তবু আনুমানিক প্রতি সেন্টিমিটারে - ২টি করে বীজ পড়লে ভাল হয়। প্রয়ােজনে বালি মিশিয়ে নিলে বীজ ছড়াতে সুবিধা হয়।

ঘ) বীজ বােনার পর চালনী দিয়ে ছাকা ঝড়জুড়ে গােবর সার বা ভার্মি কন্পােষ্ট বা কম্পােষ্ট সার ছাকনীতে নিয়ে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে - মি.মি. পুরু করে বীজ ঢেকে দিতে হবে।

 ঙ) বীজ ঢাকার পর স্পেয়ার দিয়ে বীজতলা সাবধানে হালকা করে এমনভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে যাতে বীজ সরে না যায় জল বয়ে না যায়, সবটাই টেনে নেয়।

) খড় দিয়ে বেড ঢেকে রাখা যেতে পারে অন্যথায় প্রথম সপ্তাহে দিনে - বার স্পেয়ার দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।

ছ) ২য় সপ্তাহ থেকে (বীজ গজানাের পর থেকে) খড়ের ঢাকনা সরিয়ে দিতে হবে একইভাবে হালকা করে সেচ দিতে হবে।

 জ) বীজ বােনার পর দুই সপ্তাহ ধরে যদি দিনের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়ার্স এর বেশী চলতে থাকে তবে পাতলা কাপড় বা চট্টু দিয়ে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল টা পর্যন্ত ছায়া দেবার ব্যাবস্থা রাখতে হবে (যেমন কপি, টমেটো ইত্যাদির চারা তৈরীতে ছায়ার ব্যবস্থা থাকে) দু সপ্তাহে চারা দু পাতার হয়ে যাবে।

ঝ) চারা দু পাতার হয়ে যাবার পর থেকে দু তিন দিন পর পর গ্রাম ইউবিয়া প্রতি লিটার জলে গুলে চার পাঁচ পাতা হওয়া পর্যন্ত বিকালে স্পিকার যেতে পারে। বিকল্প হিসাবে ১৫ শতাংশ টাটকা গােবর জলের নির্যাস (১৫০ গ্রাম টাটকা গােবর লিটার জলে বেলা ভিজিয়ে টলটলে নির্যাস) ব্যবহার করে উপকার পাওয়া গেছে। এটি সারের কাজও যেমন করে তেমনি গােরা পচা, পাতা ধসা ইত্যাদি রােগও সামাল দেয়।

 ঞ) বেডে উপযুক্ত রস না থাকলে বা বীজ বেশী গভীরে দিলে চারা বেরতে দেরী হয়। চারা চার পাঁচ পাতা হলে মূল জমিতে লাগানাের উপযুক্ত হয়।

চারা তৈরী করে মূল জমিতে আলু লাগানাের পদ্ধতি

বীজতলায় চারা - পাতা হয়ে গেলে মূল জমিতে লাগানাের উপযুক্ত হয়।

মূল জমি তৈরী

) প্রথম চাষে বিঘাপ্রতি দুই-তিন হাজার কিলাে (- গরুর গাড়ি) ভাল জৈবসার দিয়ে মূল জমি - বার চাষ করে ঝুরঝুরে করে মাটি তৈরী করতে হয়। জমি শুকনাে হলে প্রয়ােজনে প্রথম চাষের - দিন আগে মূল জমিতে সেচ দিয়ে নিলে মাটি তৈরী সুবিধা হবে। 

) শেষ চাষে মােট রাসায়নিক সারের সম্পন ফসফেট পটাশ সার এবং অর্ধেক নাইট্রোজেন সার ভাল

করে মাটিতে মেশাতে হবে। 

) মই দিয়ে মাটি সমান করে নিতে হবে৷

 )এরপর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা করে ৪০-৪৫ সেমি (১৬ ১৮ ইঞ্চি) দুরত্বে ২০ সেমি বা আট ইঞ্চি উচু করে আল তুলতে হবে যার গায়ে চারা লাগানাে হবে।

ঙ)চারা লাগানাের আগের দিন আলের অর্ধেক বা ইঞ্চি পর্যন্তি সেচের জল দিতে হবে। )সেচের পরদিন দুপুরের পর আলের গায়ে উত্তর পাশে চারা লাগাতে হবে।

 

চারা লাগানো

 ) বীজতলা থেকে সাবধানে চারা তুলে মূল জমিতে চারা নেবার সময় ঝুড়িতে বসিয়ে সাবধানে নিতে হবে যাতে চারা ভেঙ্গে না যায়। 

) এবার চারা লাগানাের জন্য তৈরী আলের উত্তর পাশে সেচের জলের দাগ ধরে ১৫ সেমি (ছয় ইঞ্চি) দূরত্বের খুরপীর সাহায্যে চারা লাগাতে হবে।

চারা লাগানাের পর ভেলিতে হালকা সেচ দিতে হবে। এভাবে আলের পর আল চারা লাগাতে হবে হালকা সেচ দিতে হবে। ঝাড়ি দিয়ে দিতে পারলে ভাল হয়। 

চারা লাগানাের পর চারা বসা বা লেগে যাওয়া পর্যন্ত - দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে।

ঙ) চারা বসে গেলে বা ধরে গেলে -১০ দিন অন্তর সেচ লাগবে।

) চারা লাগানাের ৩০-৩৫ দিন পর গােড়ায় মাটি ধরানাের কাজ করতে হবে। 

গােড়ায় মাটি ধরানাের সময় বাকি অর্ধেক নাইট্রোজেন সার চাপান হিসাবে দিতে হবে।

গােড়ায় মাটি ধরানাে এমনভাবে করতে হবে যেন চারাগুলি আলোর মাঝে চলে আসে অর্থাৎ উত্তরের আলের দক্ষিনের মাটি ভেঙ্গে দক্ষিণের আলের চারার গােড়ার ধরাতে হবে (কারণ আলের গায়ে উত্তর পাশে চারা লাগানাে হয়েছিল) চারার গোড়া থেকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় গাঁট পর্যন্ত মাটি তােলা যাবে। এর বেশী নয়।

সারের পরিমাণ, অন্যান্য পলিচা ওই এলাকার আলু চাষে যা করা হয় তেমনি ভাবে করতে হবে।

সময় কাল ফলন

)চারা - পাতা হতে তিন সপ্তাহ লাগে। চারা মূল জমিতে লাগানাের পর ৬০ দিন থেকেই আলু তােলা যায়। তবে মূল জমিতে ৮০-৯০ দিন রাখলে ফলন ক্রমে বাড়তে থাকে।

) ফসল তােলার ২০ দিন আগে সেচ বন্ধ করে দিতে হবে।

) আলু তােলার ১০ দিন আগে মাটির কাছাকাছি থেকে গাছ কেটে দিতে হয়। এতে আলুর কন্দের ছাল

 শক্ত হয়,বেশী দিন সহজে রাখা যায়।

) এরপর আলু তােলা হয়। তােলার পর ৪০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের আলু পরের বছর বীচন আলুর

জন্য রাখা লাভজনক। তবে খাওয়াও চলে।

বীচন হিসাবে ছােট বীজ আলু রাখতে হলে ৩% বোরিক আ্সিডের জলীয় দ্রবণে ৩০ মিনিট ডুবিয়ে,
ছায়ায় শুকিয়ে ঠান্ডা ও অবাধে নির্মল বাতাস চলাচল করে অথচ রােদ ঢােকেনা এমন ঘরে বাশ বা কাঠের মাচায় পরের বছরের বীচনের জন্য রাখা যাবে। ১০০০ কিলাে বীচন আলু বিছিয়ে নিয়ে ১৪ লিটার ৩% বােরিক অ্যাসিডের জলীয় দ্রবণ স্প্রে করে নিলেও চলবে।

) এই বীচন আলুর মাধ্যমে নানা রােগ আসার সম্ভবনা খুবই কম থাকে।

) ৪০ গ্রামের বেশী ওজনের আলু খাবার জন্য বা বাজারে বিক্রির জন্য ব্যবহার করা যাবে।

আলু ও আলুর গাছ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts