আলুর প্রকৃত বীজ থেকে আলু চাষ ও বীজ বা বীচন আলু উৎপাদনের পদ্ধতি
প্রকৃত বীজ থেকে দুটো উদ্দেশ্যে আলুর চাষ হয়:
ক) বীজ থেকে চারা তৈরী করে আল উৎপাদন ও
খ) বীজ থেকে চারা তৈরী করে বীজ আলু বা বীচন আলু (আলুর ছােট ছােট কন্দ) উৎপাদন
এখানে মূলত প্রকৃত আলু বীজ থেকে খাবার যােগ্য বাজারের উপযুক্ত আলু চাষ পদ্ধতি আলােচনা করা হল। এই পদ্ধতিতে চাষের জন্য নিশ্চিত সেচের প্রয়ােজন হয়
প্রকৃত বীজ থেকে ধাপে ধাপে চারা তৈরী -
চারা তৈরী
ক) বীজ বােনার আগের দিন হালকা সেচ দিয়ে বেডের মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।
খ) পরের দিন হালকা কোদালী করে মাটি কুপিয়ে ঝড়ঝুড়ে করে সমান করে সাজিয়ে নিতে হবে, যাতে মাটিতে উপযুক্ত রস থাকে। এতে বীজ একসাথে ভাল ভাবে অঙ্কুরিত হবে
গ) এবার বেডের আড়াআড়ি ১০ সেমি বা ও ইঞ্চি তফাতে ৪-৫ মি.মি. গভীর করে বাশের আঁকশি বা দাঁড়া দিয়ে দাগ টেনে দাগ বরাবর বীজ বুনতে হবে- যেমন কপি, টমেটোর বীজ বােনা হয়। বীজের দুরত্ন ঠিক রাখা কঠিন তবু আনুমানিক প্রতি সেন্টিমিটারে ১- ২টি করে বীজ পড়লে ভাল হয়। প্রয়ােজনে বালি মিশিয়ে নিলে বীজ ছড়াতে সুবিধা হয়।
ঘ) বীজ বােনার পর চালনী দিয়ে ছাকা ঝড়জুড়ে গােবর সার বা ভার্মি কন্পােষ্ট বা কম্পােষ্ট সার ছাকনীতে নিয়ে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে ২-৩ মি.মি. পুরু করে বীজ ঢেকে দিতে হবে।
চ) খড় দিয়ে বেড ঢেকে রাখা যেতে পারে অন্যথায় প্রথম সপ্তাহে দিনে ৩-৪ বার স্পেয়ার দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।
ছ) ২য় সপ্তাহ থেকে (বীজ গজানাের পর থেকে) খড়ের ঢাকনা সরিয়ে দিতে হবে ও একইভাবে হালকা করে সেচ দিতে হবে।
ঝ) চারা দু পাতার হয়ে যাবার পর থেকে দু তিন দিন পর পর ১ গ্রাম ইউবিয়া প্রতি লিটার জলে গুলে চার পাঁচ পাতা হওয়া পর্যন্ত বিকালে স্পিকার যেতে পারে। বিকল্প হিসাবে ১৫ শতাংশ টাটকা গােবর জলের নির্যাস (১৫০ গ্রাম টাটকা গােবর ১ লিটার জলে ১ বেলা ভিজিয়ে টলটলে নির্যাস) ব্যবহার করে উপকার পাওয়া গেছে। এটি সারের কাজও যেমন করে তেমনি গােরা পচা, পাতা ধসা ইত্যাদি রােগও সামাল দেয়।
চারা তৈরী করে মূল জমিতে আলু লাগানাের পদ্ধতি
বীজতলায় চারা ৪-৫ পাতা হয়ে গেলে মূল জমিতে লাগানাের উপযুক্ত হয়।
মূল জমি তৈরী
ক) প্রথম চাষে বিঘাপ্রতি দুই-তিন হাজার কিলাে (৬-৭ গরুর গাড়ি) ভাল জৈবসার দিয়ে মূল জমি ৪-৫ বার চাষ করে ঝুরঝুরে করে মাটি তৈরী করতে হয়। জমি শুকনাে হলে প্রয়ােজনে প্রথম চাষের ১-২ দিন আগে মূল জমিতে সেচ দিয়ে নিলে মাটি তৈরী সুবিধা হবে।
খ) শেষ চাষে মােট রাসায়নিক সারের সম্পন ফসফেট ও পটাশ সার এবং অর্ধেক নাইট্রোজেন সার ভাল
করে মাটিতে মেশাতে হবে।
গ) মই দিয়ে মাটি সমান করে নিতে হবে৷
ঙ)চারা লাগানাের আগের দিন আলের অর্ধেক বা ৪ ইঞ্চি পর্যন্তি সেচের জল দিতে হবে। চ)সেচের পরদিন দুপুরের পর আলের গায়ে উত্তর পাশে চারা লাগাতে হবে।
চারা লাগানো
খ) এবার চারা লাগানাের জন্য তৈরী আলের উত্তর পাশে সেচের জলের দাগ ধরে ১৫ সেমি (ছয় ইঞ্চি) দূরত্বের খুরপীর সাহায্যে চারা লাগাতে হবে।
গ) চারা লাগানাের পর ভেলিতে হালকা সেচ দিতে হবে। এভাবে আলের পর আল চারা লাগাতে হবে ও হালকা সেচ দিতে হবে। ঝাড়ি দিয়ে দিতে পারলে ভাল হয়।
ঘ) চারা লাগানাের পর চারা বসা বা লেগে যাওয়া পর্যন্ত ৩-৪ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে।
ঙ) চারা বসে গেলে বা ধরে গেলে ৮-১০ দিন অন্তর সেচ লাগবে।
চ) চারা লাগানাের ৩০-৩৫ দিন পর গােড়ায় মাটি ধরানাের কাজ করতে হবে।
ছ) গােড়ায় মাটি ধরানাের সময় বাকি অর্ধেক নাইট্রোজেন সার চাপান হিসাবে দিতে হবে।
জ) গােড়ায় মাটি ধরানাে এমনভাবে করতে হবে যেন চারাগুলি আলোর মাঝে চলে আসে অর্থাৎ উত্তরের আলের দক্ষিনের মাটি ভেঙ্গে দক্ষিণের আলের চারার গােড়ার ধরাতে হবে (কারণ আলের গায়ে উত্তর পাশে চারা লাগানাে হয়েছিল)। চারার গোড়া থেকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় গাঁট পর্যন্ত মাটি তােলা যাবে। এর বেশী নয়।
ঝ) সারের পরিমাণ, অন্যান্য পলিচা ওই এলাকার আলু চাষে যা করা হয় তেমনি ভাবে করতে হবে।
সময় কাল ও ফলন
ক)চারা ৪-৫ পাতা হতে তিন সপ্তাহ লাগে। চারা মূল জমিতে লাগানাের পর ৬০ দিন থেকেই আলু তােলা যায়। তবে মূল জমিতে ৮০-৯০ দিন রাখলে ফলন ক্রমে বাড়তে থাকে।
খ) ফসল তােলার ২০ দিন আগে সেচ বন্ধ করে দিতে হবে।
গ) আলু তােলার ১০ দিন আগে মাটির কাছাকাছি থেকে গাছ কেটে দিতে হয়। এতে আলুর কন্দের ছাল
ঘ) এরপর আলু তােলা হয়। তােলার পর ৪০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের আলু পরের বছর বীচন আলুর
জন্য রাখা লাভজনক। তবে খাওয়াও চলে।
চ) এই বীচন আলুর মাধ্যমে নানা রােগ আসার সম্ভবনা খুবই কম থাকে।
ছ) ৪০ গ্রামের বেশী ওজনের আলু খাবার জন্য বা বাজারে বিক্রির জন্য ব্যবহার করা যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন