এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০২০

গ্রিনহাউস প্রভাব বা ইফেক্ট | Greenhouse Effect in Bengali

গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট

বায়ুমণ্ডলে মূলত CO2-এর ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে বলে গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট। 

ব্যাখ্যাঃ গ্রিনহাউস প্রভাব বা এফেক্ট হল পরিবেশকে দূষিত করার একটি অন্যতম পদ্ধতি। ইংরেজি গ্রিনহাউস শব্দটির অর্থ হল গাছপালা পরিচর্যার জন্য কাচের ঘর। এই কাচের ঘরের মধ্যে দিয়ে সুর্যের আলাে যেমন ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আকারে অবাধে প্রবেশ করে এবং ওই ঘরের তাপমাত্রা বাড়ায় তেমনই পৃথিবীকে বিশাল কাচের ঘরের মতাে বা গ্রিনহাউসের মতাে ঘিরে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। সৌরশক্তি এই বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের ভিতর দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় এবং পুনরায় বৃহৎ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি (infrared ray) রূপে মহাশূনে ফিরে যাওয়ার সময় কিছু তাপশক্তি আবদ্ধ হয়। ফলে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

গ্রিনহাউস গ্যাসঃ বায়ুমণ্ডলে যে সমস্ত গ্যাসের উপস্থিতির জন্য গ্রিনহাউস ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।

যেমন CO2 (প্রধান), জলীয় বাষ্প, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে বড়াে বড়াে শহর যেমন—

দিল্লি, মুম্বই, কলকাতায় অরণ্য নিধনের ফলে অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যান চলাচলে CO-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার উষ্ণতা 4°C থেকে 6°C বেড়েছে। মনে রাখবে O2 এবং N2 গ্রিনহাউস গ্যাস নয়।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিঃ গ্রিনহাউসের প্রভাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে বেড়ে চলেছে। যেমন— 1850 থেকে 1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে 0.5°C।

আবার, 1900 থেকে 2000 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়েছে 1°C। সুতরাং, প্রাকৃতিক পরিবেশ যে ক্রমশ গরম হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান অবস্থাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।

গ্রিনহাউস প্রভাব ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলাফলঃ

  1. পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ আরও বেশি করে গলবে।
  2. বরফ গলা জল সমুদ্রের জলে যুক্ত হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি করবে।
  3. সমুদ্রপৃষ্ঠের জলতল বাড়ার জন্য উপকূলের নীচু জমি জলমগ্ন হবে।
  4. ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশের কিছু অংশ জলে ডুবে যাবে।
  5. উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে দাবানলের দ্বারা বনভূমি নষ্ট হবে।

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসে কার্যকারী এবং দৈনন্দিন জীবনে রূপায়িত করা সম্ভব এমন কিছু উপায়ঃ

  1. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমালে CO2-এর উৎপাদন হ্রাস পাবে। সেই দিকে লক্ষ রেখেই অপ্রচলিত বা পুনর্নবীকরণযােগ্য শক্তির ব্যবহারে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে।
  2. গ্রিনহাউস প্রভাবকে হ্রাস করার জন্য বনভূমি একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বনভূমি সংরক্ষণে যথেষ্ট নজর দিতে হবে। অর্থাৎ, বনভূমি ধ্বংস না করে আরও নতুন বনভূমি সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে। 
  3. ক্লোরােফ্লুরােকার্বন জাতীয় পদার্থের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। সম্ভব হলে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০

রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ (Stoichiometric Equations) | রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একটি পারমাণবিক ঘটনা বলা হয় কেন?

 রাসায়নিক গণনাঃ কোনাে রাসায়নিক সংকেত বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ থেকে বিভিন্ন পদার্থের ভর, আয়তন, বাষ্প ঘনত্ব ইত্যাদি নির্ণয় করাকে রাসায়নিক গণনা বলে।

রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ (Stoichiometric Equations) 

বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরমাণু সংখ্যার সমতা বজায় রেখে চিহ্ন ও সংকেতের সাহায্যে কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে।

উদাহরণঃ  হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়। এখানে বিক্রিয়ক হল হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থ হল হাইড্রোজেন ক্লোরাইড। বিক্রিয়াটির রাসায়নিক সমীকরণ হল H2 + Cl2= 2HCl

রাসায়নিক সমীকরণের তাৎপর্যঃ  রাসায়নিক সমীকরণ থেকে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি জানা যায়।

গুণগত তথ্যঃ রাসায়নিক সমীকরণের গুণগত তথ্য হিসেবে জানা যায় -

1) বিকারক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের সংকেত ও নাম।

2) বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থগুলো উপস্থিত মৌলের নাম ও চিহ্ন। 3 বিকারক ও বিক্রিয়ক পদার্থের আণবিক সংযুক্তি।

পরিমাণগত তথ্যঃ পরিমাণগত তথ্য হিসেবে রাসায়নিক সমীকরণ থেকে জানা যায়ঃ

1) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থের অণু ও পরমাণুর সংখ্যা।

2) বিকারক ও উৎপন্ন পদার্থসমূহের ওজন ও তাদের অনুপাত।

3) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থ গ্যাসীয় হলে সমচাপ ও উয়তায় এদের আয়তনগত অনুপাত।

4) বিক্রিয়ক ও উৎপন্ন পদার্থের ভরের সমতা সাপেক্ষে ভর সংরক্ষণ সূত্রের সত্যতা।

উদাহরণঃ 2H2 + O2=2H2O এই সমীকরণ থেকে আমরা যে যে তথ্য পাই সেগুলি নীচে দেওয়া হলঃ

গুণগত তথ্যঃ

1) বিকারকের নাম হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এবং তাদের সংকেত যথাক্রমে H2 ও O2। বিক্রিয়াজাত পদার্থ হল জল ও তার সংকেত H2O।

2) হাইড্রোজেনের চিহ্ন হল H এবং অক্সিজেনের চিহ্ন হল O।

3) জল হল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মৌলের একটি যৌগিক পদার্থ।

পরিমাণগত তথ্যঃ

1) 2-অণু হাইড্রোজেন এবং 1 -অণু অক্সিজেনের পারস্পরিক বিক্রিয়ায় 2-অণু জল গঠিত হয়। 4-পরমাণু হাইড্রোজেন এবং 2-পরমাণু অক্সিজেন, মােট 6টি পরমাণু দিয়ে 2-অণু জল সৃষ্টি হয়।

2)

2H2                +               O2      =       2H2

2x2x1= 4        +        2x16=32  =       2(2x1+16)=32

4 ভাগ ওজনের হাইড্রোজেন 32 ভাগ ওজনের অক্সিজেনের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে 36 ভাগ জল উৎপন্ন করে।H2, O2 H2O-এর ওজনগত অনুপাত হল 4: 32:36 বা 1: 8:9 ।

3) গ্যাসীয় অবস্থায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন যুক্ত হয়ে স্টিম উৎপন্ন করলে যদি প্রত্যেকটির আয়তন উষ্ণতা ও চাপে নির্ণীত হয়, তবে তাদের আয়তনগত অনুপাত হয় 2 : 1 : 2।

4) 4 ভাগ ভরের H এবং 32 ভাগ ভরের O অর্থাৎ মােট 36 ভাগ ভরের বিক্রিয়ক উৎপন্ন করে 36 ভাগ ভরের জল অর্থাৎ বিক্রিয়াজাত পদার্থ। উভয়পক্ষে মােট ভরের পরিমাণ সমান হওয়ায় নিশ্চিতরূপে জানা গেল যে, ভরের সংরক্ষণ সূত্র মান্য হয়।


কেরোসিন বা কয়লা পুড়তে অক্সিজেন চাই। কিন্তু খােলা হাওয়ায় কেরােসিন বা কয়লা কি নিজে নিজ জ্বলে ওঠে?

রাসায়নিক বিক্রিয়ার অন্যতম প্রয়ােজনীয় প্রভাবক হল তাপ। কেরোসিন বা কয়লার দহনের জন্য প্রয়ােজনীয় উষ্ণতা খােলা হাওয়ায় থাকে না, তাই উপযুক্ত তাপের অভাবে এই সকল দাহ্য পদার্থ নিজে নিজে জ্বলে ওঠে না।


রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একটি পারমাণবিক ঘটনা বলা হয় কেন?

উত্তর। 

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণু অংশগ্রহণ করে। বিক্রিয়ায় সম্পূর্ণ নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থের অণু গঠিত হলেও বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণকারী পদার্থের পরমাণুর সংখ্যা ও বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরমাণুসংখ্যা সর্বদা সমান থাকে। বিক্রিয়ার আগে ও পরে মােট ভর সমান থাকে। তাই বলা যায়, রাসায়নিক বিক্রিয়া একটি পারমাণবিক ঘটনা।

তড়িৎ প্রবাহমাত্রা কাকে বলে? তড়িৎ প্রবাহমাত্রার একক কী?

 তড়িৎ প্রবাহমাত্রা (Electric Current)

তড়িৎচালক বলের প্রভাবে কোনাে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে রক্ত ইলেকট্রনের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহই হল তড়িৎপ্রবাহ। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ধনাত্মক আধানের প্রবাহের অভিমুখ কি তড়িৎ প্রবাহমাত্রার অভিমুখ ধরা হয়। কাজেই পরিবাহীর মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহ যে অভিমুখে ঘটে তড়িৎ প্রবাহ মাত্রার অভিমুখ তার বিপরীত দিকে ধরা হয়।

Photo: Current
তড়িৎ প্রবাহমাত্রা 

তড়িৎ প্রবাহমাত্রাঃ

পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয় তাকে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা বলা হয়।

পরিবাহীর কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যদি t সেকেন্ড সময়ে Q পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তবে ওই পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা হয় I = Q/t অর্থাৎ, প্রবাহমাত্রা = আধান/সময়

রাশিঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রার শুধু মান আছে, তাই এটি একটি স্কেলার রাশি।

তড়িৎ প্রবাহমাত্রার এককঃ তড়িৎ প্রবাহমাত্রা CGS একক হল emu (Electromagnetic unit) এবং SI পদ্ধতিতে ব্যবহারিক একক হল অ্যাম্পিয়ার (A)। 

কোনাে পরিবাহীর যে-কোনাে প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে 1 সেকেন্ডে 1 কুলম্ব আধান প্রবাহিত হলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহমাত্রা হয় 1 অ্যাম্পিয়ার (A)।

1 emu প্রবাহমাত্রা = 10 A প্রবাহমাত্রা

তড়িৎ প্রবাহ দুই ধরনের হয়, যেমন-

1) সমপ্রবাহ(Direct current or DC) এবং 

2) পরবর্তী প্রবাহ(Alternating Current or AC) 

1) সমপ্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ সবসময় একই দিকে হয়।

তড়িৎকোশ সমপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। 

2) পরিবর্তী প্রবাহঃ এই ধরনের তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হয়।

AC ডায়নামোর সাহায্যে পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করা যায়।

আকার ও অবস্থান অনুসারে সৌরজগতের ধারণা

সৌরজগতের বড় বড় গ্রহগুলো দূরে অবস্থিত একথা ঠিক নয়। সূর্য থেকে আসতে আসতে দূরে গেলে যে ক্রম আমরা পাই সেটা হল, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো। যদিও বর্তমানে প্লুটোকে গ্রহের পর্যায়ে ধরা হয়না, কারণ এর আকার অন্যান্য গ্রহের তুলনায় অনেক ছোটো। একে বরং বামন গ্রহ বা Dwarf Planet বলা হয়।

যাই হোক, আকারের ক্রম অনুসারে ছোটো থেকে বড় সাজালে যে ক্রম আমরা পাই তা হলো,

প্লুটো, বুধ, মঙ্গল, শুক্র, নেপচুন, পৃথিবী, ইউরেনাস, শনি, বৃহস্পতি

পৃথিবীর তুলনায় কোন গ্রহ কতটুকু বড়ো বা ছোটো এবং প্রত্যেকটি গ্রহের আনুমানিক ব্যাস নীচে দেওয়া হলো।


গ্রহের নাম ব্যাস পৃথিবীর কত গুণ
প্লুটো(Pluto) (বামন গ্রহ) ব্যাস = 4879.4 কিমি পৃথিবীর আকারের 0.38 গুণ
মঙ্গল(Mars) ব্যাস = 6787 কিমি পৃথিবীর আকারের 0.53 গুণ
শুক্র(Venus) ব্যাস = 12,104 কিমি পৃথিবীর আকারের 0.95 গুণ
পৃথিবী(Earth) ব্যাস = 12,756 কিমি পৃথিবীর আকারের 1.00 গুণ
নেপচুন(Neptune) ব্যাস = 49,528 কিমি পৃথিবীর আকারের 3.88 গুণ
ইউরেনাস (Uranus) ব্যাস = 51,118 কিমি পৃথিবীর আকারের 4.00 গুণ
শনি(Saturn) ব্যাস = 120,660 কিমি পৃথিবীর আকারের 9.45 গুণ
বৃহস্পতি(Jupiter) ব্যাস =142,800 কিমি পৃথিবীর আকারের 11.2 গুণ
অবস্থান ও আকার অনুযায়ী সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের চিত্র।

Photo: Solar System

রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০

অনুঘটক কাকে বলে? একটি উদাহরণের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এর প্রভাব বুঝিয়ে দাও।

অনুঘটক (Catalyst) : যেসব রাসায়নিক পদার্থ কোনাে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় স্বল্প পরিমাণে উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার বেগকে ত্বরান্বিত করে, কিন্তু বিক্রিয়া শেষে নিজে ভর ও ধর্মে অপরিবর্তিত থাকে, সেইসব পদার্থকে অনুঘটক বলে। কেন O2 প্রস্তুতিতে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড, H2SO4 প্রস্তুতিতে ভ্যানাডিয়াম পেন্টক্সাইড ইত্যাদি। 

 উদাহরণঃ পরীক্ষাগারে শুধুমাত্র পটাশিয়াম ক্লোরেটকে প্রায় ৬৩০°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে, এটি খুব ধীরে ধীরে বিয়ােজিত হয়ে পটাশিয়াম ক্লোরাইড ও অল্প পরিমাণ অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এভাবে অতি উচ্চ তাপমাত্রায় অক্সিজেন উৎপাদনের সময়ে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে এবং উৎপন্ন অক্সিজেনের পরিমাণ ও তুলনামূলক ভাবে কম হয়। তাছাড়া ৬৩০°C  তাপমাত্রা সৃষ্টি করতে যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার হয়, তা অর্থনৈতিক নয়। 

দেখা গেছে , পরীক্ষাগারে ৪ ভাগ ওজনের পটাশিয়াম ক্লোরেটের সঙ্গে ১ ভাগ ওজনের ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড মিশিয়ে দিলে খুব কম তাপমাত্রায় (২৩০°C-২৫০°C) অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড এর ভর ও ধর্ম অপরিবর্তিত থাকে, শুধুমাত্র বিক্রিয়ার বেগ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, অক্সিজেন প্রস্তুতির এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড অনুঘটকের কাজ করে।

2KClO3+[MnO2,230°-250°C] = 2KCI +3O2(গ্যাস)+[MnO2]

অনুঘটকের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী জানতে এখানে ক্লিক করুন। 


কোশপর্দা (Plasma membrane) কী বা কাকে বলে ? কোশপর্দার গঠন সংক্ষেপে বর্ণনা করাে।

কোশপর্দা বা প্লাজমালেমাঃ সমস্ত সজীব কোষে প্রােটোপ্লাজমের বাইরে যে পাতলা, স্থিতিস্থাপক, প্রভেদক ভেদ্য, লাইপােপ্রােটিন নির্মিত সজীব আবরণ বর্তমান, তাকে কোষপর্দা বলে।

কোশপর্দার গঠনঃ

1. বিজ্ঞানী ডাভসন ও ড্যানিয়েলি (1935) এর মতে কোশপর্দার গঠন প্রােটিন-লিপিড-প্রােটিন নির্মিত ত্রিস্তর বিশিষ্ট।

2. এই স্যান্ডউইচ মডেল অনুযায়ী কোষ পর্দা গড়ে প্রায় 75A০ পুরু, যার মাঝের লিপিড স্তরটি 35A এবং এর দুদিকে প্রতিটি প্রােটিন স্তরের পুরুত্ব প্রায় 20-25A

3. পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী রবার্টসন (1959) কোশপর্দার এরূপ গঠন সমস্ত সজীব কোশ ও কোশীয় অঙ্গাণুর ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করেন বলে একে একক পর্দা রূপে অভিহিত করেন।

4.  বিজ্ঞানী সিঙ্গার ও নিকলসন (1972) কোশপর্দার গঠনকে ফ্লুইড মােজেইক মডেল রুপে বর্ণনা করেন। তাদের মতে কোশপর্দার মাঝখানে থাকে দ্বিস্তরীয় ফসফোলিপিড স্তর এবং লিপিড স্তরের মধ্যে মােজেইক দানার মতাে অন্তঃস্থ প্রোটিন ও বহিস্থ প্রােটিনগুলি প্রােথিত থাকে। কোশপর্দার এই গঠনটি বর্তমানে সর্বজনগৃহীত হয়েছে।

কোশপর্দা (Plasma membrane)

কোশপর্দার কাজঃ

কোশপর্দার কাজগুলি হল-

1. আকৃতি প্রদান : কোষের নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদানে (প্রধানত প্রাণী কোষ) সাহায্য করে।

2. সুরক্ষা দান : কোশের সজীব প্রােটোপ্লাজমকে বাহ্যিক আঘাত থেকে রক্ষা করে।

3. পদার্থের বিনিময় : কোষ পর্দা প্রভেদক ভেদ্য পর্দা রূপে পরিবেশ ও কোষের মধ্যে প্রয়ােজনীয় পদার্থের বিনিময়ে অংশগ্রহণ করে।

4. ফ্যাগোসাইটোসিস ও পিনােসাইটোসিস : কোশপর্দা ফ্যা-গোসাইটোসিস পদ্ধতিতে বাইরের পরিবেশ থেকে কঠিন পদার্থ ভক্ষণ ও পিনােসাইটোসিস পদ্ধতিতে তরল পদার্থ গ্রহণে অংশ নেয়।

5. ভৌত প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ : ব্যাপন, অভিস্রবণ, সক্রিয় পরিবহণে সাহায্য করে।

শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০

জলের ট্যাংক থেকে বেশি দূরের বাড়িতে জল সরবরাহ করলে আস্তে আস্তে জল পড়ে কেন?

বেশি দূরের বাড়িতে জল সরবরাহের সময় পাইপের ভিতরের দেয়ালে ও জল স্তরের মধ্যে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণ বল জলের বেগ কমিয়ে দেয়। তাই বেশি দূরত্বে জল আস্তে আস্তে পড়ে।

Featured Post

ব্রয়লার মুরগি কীভাবে তৈরি করা হয়?

উত্তর:  এটি একপ্রকার সংকর জাতের মুরগি। করনিস জাতের পুরুষ মুরগির সঙ্গে সাদা প্লিমাউথ রক জাতের স্ত্রী মুরগির মিলনে ব্রয়লার মুরগি তৈরি করা হয়...

Popular Posts